somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নট রিসাইক্লেবল

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"তাহলে তুমি আর আমার সাথে থাকতে চাইছো না ?"- টেবিলে রাখা পেপারওয়েটটা নাড়াচাড়া করতে করতে সমীর বললো । আমি কফিতে চুমুক দিতে দিতে বললাম ," দেখো , তোমাকে তো সব বুঝিয়ে বললামই । সো তোমার বোঝা উচিত , তুমি যথেষ্ট ম্যাচিউরড। " অনেকটা বেপরোয়া হয়ে জবাব দিল সমীর
-" দেখো , এতদিনের একটা ফিলিং কি মিথ্যে ?? অল অন আ সাডেন , ইউ ফেল্ট সামথিং তারজন্য কি সব বদলে যাবে ?"
: আমার জীবনের যেকোনো ভাল মন্দ বোঝার ক্ষমতা , সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আমার আছে। এতদিন যা-ই ছিল , কিন্তু এখন আমার মনে হয় , আমি ভবিষ্যতে তোমার সাথে ভাল থাকবো না ।
- কিন্তু কেন ? আমি তো কখনো তোমার সাথে থাকতে কোনো প্রবলেম ফেস করিনি ।
: তুমি না-ই করতে পারো , কিন্তু আমি করেছি ।
- কি প্রবলেম ?
: দেখো , আমাদের কিছুই মেলে না । আমি মুভি দেখতে ভালোবাসি , তুমি বই পড়তে ভালোবাসো । আমার রক মিউজিক ভালো লাগে , ইউ আর মোর ইনটু হেমন্ত-কিশোর এন্ড অল ...
- এইটা তো কোনো ব্যবধানই না ... চয়েজ একেকজনের একেক রকম হবেই ... শুধু সেটা ক্ল্যাশ না করলেই চলে ।
: এই যে এখানেও আমাদের ভিউ মেলে না .... আর সব কথার এক কথা হল আমি রাকিনের সাথে সেই বন্ডৎা , সেই হ্যাপিনেসটা ফিল করেছি যেটা তোমার সাথে আদৌ সম্ভব না , এন্ড আই আম ডিপলি ইন লাভ উইথ হিম । সো আই ওয়ান্ট আ ব্রেক আপ ।

সমীর একটা ছোট্ট নি:শ্বাস ছাড়লো ... বিশাল একটা স্কাইস্ক্র‌্যাপারের ২০ তলায় ওর অফিস। কেবিনের দক্ষিণ দিকটায় একটা জানালা আছে বড়সড় , সামনে দাড়ালে গোটা ঢাকা শহরটাই যেন চোখে পড়ে ... ভাবুক সমীরের এই জানালাটা বরাবরই পছন্দন। হাতে করে কফি মগটা নিয়ে জানালার সামনে আমার দিকে পেছন দিয়ে দাড়ালো সে । আমি ফিসফিস করে ডাকলাম ," সমীর ?" .... কন্ঠে অযাচিত গাম্ভীর্য নিয়ে সমীর জবাব দিল " ব্রেক আপ এত মুখে বলে বলে করা লাগে না লিলি .... " আমি আর দাড়ালাম না ওখানে , কেবিন থেকে বেরিয়ে লিফট বেয়ে নেমে গেলাম । নিচে রাকিন তার প্রিয় স্করপিয়নটা নিয়ে দাড়িয়ে আছে । আমাকে দেখেই বললো ,
- কি ? কানাবাবা কি কয় ?
: কি আর বলবে ? ব্রেক আপ করেছে ...
-ইয়েস , আই নিউ ইট ... তোমাকে বলেছিলাম না যে ও এমনিতে হেভি জেন্টেলম্যান , বাড়াবাড়ি করবে না .... কিন্তু , কান্নাকাটি করে নাই তো ??
: করলেই আমার কি ???
- হ , তাও ঠিক .... তো এবার কি জান্ ?
: এবার শুভস্য শীঘ্রম ....
বলেই আমিও হেসে ফেললাম , রাকিনও হেসে ফেলল.... কি জানি ? হয়তো উপর থেকে তখনো অভ্যাসবশত সমীর নিচেই তাকিয়ে আছে ..!


১০ বছর হতে চললো এসব ঘটনার । হঠাৎ করে এসব মনে পড়ার কোনো কারণ থাকার কথা না , নেই ও । সমীরের ভালোবাসাটা ছিল অত্যন্ত শৈল্পিক , খুবই গভীর যার প্রকাশ ছিল কম , অনুভব ছিল বেশি । আর রাকিনের ভালবাসা ছিল উদ্দাম ধরণের । তার মোহেই ওকে বিয়ে করেছিলাম । একটা ৮ বছরের মেয়েও আছে আমাদের , নাম ধারা । মেয়ের বয়স যখন ৪ বছর তখন আমাদের ডিভোর্স হয় । অবশ্য এটা হবে বোঝাই যাচ্ছিল , আমাদের পছন্দের ফারাক খুব কমই , তবুও কখনো সেভাবে বনিবনা হয়নি আমাদের । তাই হয়তো ডিভোর্স , আর তার ৫ মাসের মাথায়ই রাকিন এক রাশিয়ান মেয়েকে বিয়ে করে জার্মানিতে চলে গেল । এখন আর যোগাযোগ সেভাবে হয়ও না । আমিও বিজি থাকি অফিসের কাজে আর মেয়েকে নিয়ে । পুরোনো স্মৃতি ঘাটার ফুরসৎ কই ! আজ মেয়েকে পড়তে বসিয়ে দিয়ে বইয়ের শেলফটা ঘাটতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের "শেষের কবিতা " পেলাম , সমীরের দেয়া । তাই হঠাৎ ১০ বছর আগের ফ্ল্যাশব্যাক চোখে সামনে । বইটা কখনো পড়িনি আমি , গিফট পেয়ে সাজিয়ে রেখে দিয়েছি। আজ প্রথমবার খুলে দেখি গোটা গোটা অক্ষরে লেখা-
" ভালোবাসা মানে পরষ্পরের ভিন্নতাটাকে মুছে দেয়া নয় ,
বরং সেই ভিন্নতাটা উপলব্ধি করা ,
ভালোবাসা মানে পরষ্পরের প্রতিবিম্ব হওয়া নয় ,
বরং একটা শরীরের ছায়া হয়ে ওঠা .... ভালবাসি তোমাকে ... "
অনেকক্ষণ চেয়ে রইলাম লেখাগুলোর দিকে , নির্বাক । হ্য়তো বুকের ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাসও সন্তর্পনে বেরিয়ে গেল , জানি না , কিংবা জানলেও স্বীকার করতে চাই না আমি । ধারা শুনছি আওয়াজ করে পড়ছে " ফসিল ফুয়েলস আর নট রিসাইক্লেবল ...."
শুধু কি ফসিল ফুয়েল , কতকিছুই তো আমরা চেয়েও রিসাইকেল কর‌তে পারি না । তবু খুব জানতে ইচ্ছে করছে আজ । সমীর , তুমি কি এখনো স্কাইস্ক্র্যাপারের জানালায় আমার অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকো ?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০২
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×