somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাগলী তোমার সঙ্গে চরম অশান্তি জীবন কাটাব, পাগলী তোমার সঙ্গে 'কী সুখ' কাটাব জীবন ....

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কন্ঠে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে আশিক সাহেব শেষমেষ বলেই ফেললেন ..
- আররে কি আশ্চর্য ! একটা ওষুধই তো , একদিন না খেলে কি আসে যায় ! এটা নিয়ে খামোখা সংসারের শান্তি নষ্ট করা কেন ??
: ওভাবে যে বললে কিছুই না । কিন্তু যখন কেউ প্লেটের পাশে ওষুধটা স্ট্রিপ থেকে খুলে দিয়ে রাখলেও সেটা খেতে ভুলে যায় , তখন অবশ্যই অশান্তি করার যথেষ্ট কারণ আছে !
-তাই বলে রোজ রোজ !
: তা করবো না ??? ঘরের কোন রাজকার্যটা সামলাও তুমি হ্যা যে নিজের ওষুধটা খেতেই ভুলে যাও ??
- কিহ ! আমি বাসার কোনো কাজ করি না ?? সপ্তাহে সপ্তাহে বাজারটা কি পাশের বাসার কর্তা করে দিয়ে যায় তোমায়?
: চিন্তা করসিলাম মুখ খুলবো না কিন্তু তুমি খোলায়েই ছাড়লা । বাজার করো তাই না ? ধুন্দুলের কেজি ৫০ টাকা , কে জানি গত সপ্তাহে ৮০ টাকায় কিনে আনসিলো ?? তাও আবার নিজের মতই বুড়ো হাবড়া !
- হ্যা হ্যা এই বুড়ো হাবড়া বলেই চলে গেল তোমার ! অন্য কেউ হলে তোমায় নিয়ে ঘর করতে পারত নাকি !
এই বলেই গজরাতে গজরাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন আশিক সাহেব । মেজাজ এখন মহাখাপ্পা তার । দোতলা থেকে নিচে নামতেই দেখেন ৩ তলার বি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা মোশতাক সাহেব খবরের কাগজ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে । আশিক সাহেবকে দেখেই তিনি উৎফুল্ল হলেন বোধ হয় , কিন্তু পরক্ষণেই আশিক সাহেবের চেহারার হাল-হকিকত দেখে চিন্তিত হয়ে পড়লেন । বেশ নীচু গলায়ই আশিক সাহেবকে বললেন তিনি ," আশিক ভাই , কোনো সমস্যা ??" নিজের ঘরে চিল্লাচিল্লি করেও আশিক সাহেবের রাগ নামেনি , তাই মোশতাক সাহেবকে হাত ধরে টেনে নিয়ে দোতলার রান্নাঘরের প্রায় বরাবর নিচে দাড়িয়ে তারস্বরে বলতে লাগলেন ,
" আররে আর বইলেন ই না ভাই ! জীবনটা তছনছ হয়ে গেল একদম আমার ! কিছুর মধ্যে কিছু না , রোজ দিন সকালে একই বিষয় নিয়ে একই রকম চিল্লাচিল্লি । ভদ্রলোকের বউ কত্ত নরম সরম হয় , এ কী নমুনা ! মিলিয়ে নিয়েন , এর ১৪ পুরুষ ঠিক আফ্রিকার জঙলী ছিল !আররে বাবা , আমার পেনশনের টাকা দিয়ে আমি ওষুধ কিনবো নাকি গাঞ্জা কিনবো এটা আমার ব্যাপার ! আর ওষুধ কিনলেও আমি খাবো নাকি ফকিরকে বিলাবো সেটাও আমার ব্যাপার ! ওর কি তাতে ! নাহ আপনি থামায়েন না আমাকে আজকে , বলতে দ্যান , ' লোকজনের' জানা দরকার এইগুলা ! ৪৩ বছর ধরে দেখতেসি ,আমি বলেই উৎরে গেল , অন্যকেউ হলে কবেই প্যাক করে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিত ! বাব্বাহ , এটা মেয়েমানুষ নাকি রণচন্ডী !"

টানা অনেকক্ষণ ধরে চিল্লাচিল্লি করার পর এখন কিছুটা শান্তি লাগছে আশিক সাহেবের । রাতুলের আম্মার এখন রান্নাঘরেই থাকার কথা , নিশ্চয়ই সব শুনেছে । শোনাই দরকার ! আশিক সাহেব রাগ দেখাতে পারে না , এই চিন্তা থেকে এখন রাতুলের আম্মার বেরিয়ে আসা দরকার ! বিপক্ষের সেনাপতি উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে ব্যাপক আনন্দিত আশিক সাহেব , কিন্তু বয়সের কারণেই কি না জানা নেই , আশিক সাহেব নিউটনের ৩য় সূত্র ভুলে গেছেন " প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে ।" একটু আগে ক্রিয়া হয়েছিল , এবার প্রতিক্রিয়া । কলোনির সবাই অবাক হয়ে দেখলো দোতলার রান্নাঘরের জানালা দিয়ে প্রায় পুরো ময়লার বালতিটাই উল্টে আশিক সাহেবের মাথার উপর ফেলা হল ! বিষয়টা এতটাই অপ্রত্যাশিত যে আশিক সাহেবের কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো বিষয়টা বোঝার জন্য । কিন্তু বিষয়টা বোঝার পর যে স্পিডে আশিক সাহেব যে স্পিডে নিচে নেমেছিলেন তার প্রায় দ্বিগুণ স্পিডে উপরে গেলেন । দরজা খুলেই দেখেন রাতুলের আম্মা চাল ধুচ্ছেন । এবার চিৎকার করেই বললেন ,
- কি হ্যা ! কি পাইসো টা কি তুমি ! স্বামীর মাথায় ময়লা ফেলাটা কোন দেশের নীতি ??!!
: ( নির্লিপ্ত গলায় ) স্ত্রী ভালো চায় জেনেও স্ত্রীর নামে বাইরে দূর্নাম করাটা যে দেশের নীতি , স্বামীর মাথায় ময়লা ফেলাটাও সেদেশের আইন ।
- সে কি আমি মন থেকে বলেছি নাকি ??
: কি থেকে বলেছ তুমি ই না জানো ! যার ১৪ পুরুষ আফ্রিকার জংলী , সে কি করে তোমার মত " মানুষের " কথার মানে বুঝবে বলো ?? শোনো , বেশি বেলা হয়নি , স্টেশনে যাও তো দেখি ।
- স্টেশনে ক্যান ??
: বিকেলের কুস্টিয়ার ট্রেনের একটা টিকিট আনবে ।
- বিকেলে ? কুস্টিয়ায় ? ক্যান ??
: তাহলে কি এখনি যাইতে বলতেসো নাকি ? আমি তো ভাবছিলাম এইবেলার রান্নাটা করে দিয়ে যাব । তারপর না হ্য় তুমি তোমার সাথে থাকতে পারবে এমন নরম সরম মেয়ে খুজে বিয়ে করে নিবে , ঘটকের নাম্বার ক্যালেন্ডারে লেখা আছে । ভাবছিলাম তুমি প্যাক করে পাঠানোর আগেই ভাইয়ের বাসায় চলে যাই , শতহোক , তোমার প্যাক করার ধরণ তো ভালো না , ৪৩ বছর ধরে দেখছি , তার আগে আরো ৮ বছর দেখেছি , সুতরাং আমি জানি ।

এবার কোণঠাসা আশিক সাহেব । ক্ষেপণাস্ত্রটা যে এইভাবে বুমেরাং হবে এটা তার কল্পনার বাইরে ছিল । বিটকেল বুড়িটা মারাত্মক খচে আছে । তাহলে কি এবারও ট্রাম্প কার্ডটা ছেড়ে দেবেন ? এত্ত তাড়াতাড়ি ? বুড়িটা চুলায় ভাত বসাচ্ছে এখন । আর ভাবার কিছু নেই , এবার ট্রাম্প কার্ড ফেলা ছাড়া উপায় নেই । পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রাতুলের আম্মার গালে সশব্দে চুমু বসিয়ে দিলেন তিনি । হাত ঝাড়া দিয়ে আশিক সাহেবের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলেন রাতুলের আম্মা । তাহলে কি এবার ট্রাম্প কার্ড ও ব্যার্থ ?? ভয়ই পাচ্ছেন এখন আশিক সাহেব। রাতুলের আম্মা তরকারির বাটি উঠিয়ে সিঙ্কের দিকে যাচ্ছেন , হঠাৎ ই আশিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন " অসভ্য , নির্লজ্জ , বেহায়া লোক ! বয়স বাড়ছে না রস জানি ফিনকি দিয়ে উঠছে ! মরে যাই আদিখ্যেতা দেখে ! "

কি হলো ? চোখে ভুল দেখলেন নাকি আশিক সাহেব ?? বিটকেল বুড়িটা মুচকি হাসি দিলো কি ? আহ , তাহলেই শান্তি ! রাগ গলে গেছে মহারাণীর ! "আচ্ছা , তুলতুলি টাকে বলবো নাকি যে ও লজ্জা পেলে সেই ১৬/১৭ বছরের মত এখনো ওর গাল দুটো লাল হয়ে ওঠে ?" পরক্ষণেই আবার ভাবলেন " না বাবা , আর বাড় বাড়িয়ে কাজ নেই ! এই সামলাতেই জান যায় যায় !"
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:০০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×