somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিপন্ন রোহিঙ্গাদের মঙ্গল কামনায় সকলের সহযোগীতা ও সর্ব শক্তিমান আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্য প্রার্থনা

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গত মাসখানেক ধরে সামুর পাতাসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগ্যোগ মাধ্যম ও সংবাদ পত্রে নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগুষ্ঠি প্রসঙ্গে লোমহর্ষক অনেক তথ্যচিত্র উঠে আসছে । গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলার অযুহাত দেখিয়ে সেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দি ধরে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিম জাতি সত্বার উপরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান চলে আসছে। রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। দমন-পীড়ন চলে নারী পুরুষ শিশুদের উপর। সহিংসতা থেকে বাঁচতে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সোয়া চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে।

ছবি - ২ : মিয়ানমার সরকার রাখাইনে গনহত্যা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়ীঘর পুড়িয়ে দিয়ে দেশ হতে বিতারণ করছে



এর আগেও মিয়ানমার হতে নির্যাচিত রোহিঙ্গা জাতিগুষ্ঠির লক্ষ লক্ষ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসে । এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং প্রতিদিনই এ সংখ্যা হাজারে হাজারে বেড়েই চলেছে । মানবতার প্রশ্নে বাংলাদেশ তাদেরকে আশ্রয় দিয়ে মাথাগুজার ব্যবস্থাসহ খাদ্য ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ সেবা দিচ্ছে । রোহিঙ্গাদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্রে ঘর করে দেয়ার জন্য বৈদেশিক সহায়তাও পাওয়া যাচ্ছে । ইতিমধ্যে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরোদগান একলক্ষ রোহিঙ্গার জন্য কক্সবাজারে তাবুর কেম্প তৈরীর পরিকল্পনা নিয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমে দেখা যায় ।

ছবি -৩ : টেকনাফের শহরের অদুরে উনচিপ্রাং এ রোহিঙ্গা রিফুজিদের জন্য একটি আশ্রয় শিবির



বাংলাদেশ সরকার , বিভিন্ন সরকারী - বেসরকারী সংস্থা এবং রাজনৈতিক দলসমুহ এবং দেশের দানশীল ব্যক্তি বর্গ নীজ নীজ সাধ্যমত ত্রান কাজে সহায়তা করছেন । বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থা সহ অনেক বিদেশী সরকার সাহায্য সহযোগীতার হস্ত প্রসারিত করছেন । তাদের কাছ প্রতিশ্রুত ত্রান সামগ্রীর কিছু চালান ইতিমধ্যে এসে পৌঁছেছে । তবে ঘরবাড়ী ছেড়ে আসা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সার্বিক আশ্রয় দান কর্মসুচীর জন্য এগুলি পর্যাপ্ত নয় । রোহিঙ্গা প্রশ্নে এ সকলই একটি সাময়িক প্রচেষ্টামাত্র ।

রোহিঙ্গাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজন তাদের আবাসভুমি মিয়ানমারের রাখাইনে সকলপ্রকার নির্যাতনমুলক কার্যক্রম বন্ধ করে তাদেরকে সেখানে ফেরত পাঠিয়ে নিরাপদে ও শান্তিতে বসবাসের ব্যবস্থা করা । কিন্তু বিপত্তিটা এখানেই । জাতিসংঘ সহ বিশ্বের প্রায় সকলেই মিয়ানমার সরকারকে এই নির্যাতন বন্ধ করার জন্য বলার পরেও মিয়ানমান সরকার কারো কথাই শুনছেনা , তারা পুর্ণ গতিতে আরাকানকে রোহিঙ্গা শুন্য করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে । রোহিঙ্গা বিষয়ে এ পোষ্টের প্রায় অধিকাংশ লেখাতেই দেখা যায় মিয়ানমারের পক্ষে রয়েছে বিশ্বের শক্তিশালী দেশ চীন , রাশিয়া ও ভারত , আমিরিকাও তেমন কোন জোরালো ভুমিকা পালন করছেনা ।

অপরদিকে অনেক লেখাতেই দেখা যায় বলা হয়েছে সামরিক দিক হতে বিশ্ব রেংকিং এ মিয়ানমারের অবস্থান ৩১ আর বাংলাদেশের অবস্থান ৫৭ । তাই বাংলাদেশকে তারা থোরাই কেয়ার করে রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে । শুধু তাই নয় সীমান্তে একটি যুদ্ধংদেহী অস্থিরতা সৃস্টির জন্য মিয়ানমার প্রায় ১৮ বারের মত হেলিকপ্টার ও ড্রোনের মাধ্যমে বাংলাদেশের আকাশ সীমা লঙ্গন করেছে এবং সীমান্ত জুরে স্থল মাইন পুতছে ও বাংকার বানাচ্ছে । এটা পরিস্কারভাবে মায়ানমারের পক্ষ হতে একটি যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃস্টির জন্য উস্কানীর সামীল । বাংলাদেশ এ বিষয়ে ধৈর্য ধরে মায়ানমারের পাতা ফাদে পা না দিয়ে বিষয়টির কুটনৈতিক সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্চে । অনেকেই এ কথাও বলছেন বাংলাদেশের সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে মিয়ানমারের সমকক্ষ করার জন্য । এটা বাংলাদেশের জন্য সম্ভবত তেমন একটা কঠীন কাজ নয় , যে পরিমান অলস বৈদেশিক মুত্রা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্টে পরে আছে তার কিঞ্চিত পরিমান দিয়ে চীন, রাশিয়া , আমিরিকা হতে অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান , যুদ্ধ জাহাজ ও ট্যাংক সহ সাজুয়া যান বহর সংগ্রহ করা যাবে , আর এগুলি দীর্ঘ মেয়াদী ৠণের আওতাতেও সংগ্রহ করা যায় । এদিকে উন্নতমানের সামরিক সরজ্ঞাম ক্রয়ের ব্যপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিবিধ ধরনের সংবাদভাষ্য ভেসে আসতেছে । এটা মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই আসতেছে । ইন্টারনেটে অনলাইনে এমনি একটি ভিডিউ চিত্রে দেখা গেল সুচির মাথায় হাত .....

ছবি -৪ : সুচির মাথায় হাত!! গোপনে রাশিয়া থেকে ৮টি সুপারসনিক মিগ-৩৫ যুদ্ধবিমান বাংলাদেশে এসে পৌঁচেছে !!



এ ধরণের যুদ্ধ বিমান নাকি এখনো ভারতের কাছেও নেই । বিশ্বাস আর অবিশ্বাস্য কত ধরনের সংবাদ‌ই না অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে ।
অনুরুপভাবে মিয়ানমারও গোপনে উত্তর কোরিয়ার সহায়তায় পারমানবিক বোমা বানাচ্ছে বলেও বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ ভাষ্যে দেখা যাচ্ছে ।

এ ধরণের সংবাদসমুহের গ্রহনযোগ্যতা না থকলেও যুদ্ধের উন্মাদনার কথা ছড়িয়ে পড়ায় এখন সর্বাধুনিক মারনাস্র ক্রয়ের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিণী না চাইতেই একটি বড় মাত্রার জনসমর্থন পেয়ে গেছে যা ইতিপুর্বে ছিলনা , এর প্রমান ইতিপুর্বে রাশিয়া হতে মিগ-২৯ ও চীন হতে সাবমেরিন ক্রয় করার যৌক্তিকতা নিয়ে সরকারকে বেশ সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল । এখন মন খুলে সামরিক খাতে বড় অংকের অর্থ্ বরাদ্ধ ও ব্যয় করতে আর কোন অসুবিধা থাকলনা ।

কিন্তু মনে রাখতে হবে ঋণ করে অস্র কেনার অর্থ দীর্ঘ দিন ধরে সুদসহ পরিশোধ করতে হয় যা জাতীয় আয়ের বা মোট জাতীয় বাজেটের সিংহভাগ দখল করে নেয় । যার কুফল এখন ভোগ করছে পাকিস্তান ও মিয়ানমার , ফলে সামরিক খাত ব্যতিত উন্নয়নের প্রায় সকল সুচকেই এখন তারা বাংলাদেশ হতে পিছিয়ে আছে । এখন বাংলাদেশও যদি সামরিক খাতে অস্বাভাবিকভাবে ব্যয় বৃদ্ধি করে তাহলে অর্থনীতির অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাতের উপর বিরোপ প্রভাব পড়বে ।

তার পরেও আরো কথা আছে , অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের সাথে বৃহৎ শক্তি এখন কেও নেই, এর মধ্যে প্রতিবেশী ভারতও পড়ে । ভারত একসময়ে কিছু বাংলাভাষাভাষিকে পুশ করেছিল এদেশে । সে রকম যদি কিছু হয় তা হলে তা ঠেকানোর জন্য বাংলাদেশকেতো ভারতের সমকক্ষ সামরিক শক্তিও গড়ে তুলতে হবে !!!, এটা যে কত বড় কঠীন কর্ম সেটা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে ।

অপরদিকে প্রভুত সামরিক ক্ষমতা অর্জনটাই কি একটা দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে !!!! আমিরিকা ও ধনী ইউরোপীয় দেশগুলির দিকে তাকালে বুঝা যায় তারা নীজেদেরকে কতটুকু অনিরাপদ ভেবে নীজ দেশে ন্যাটো বাহিণী মোতায়েন করতে দিতে বাধ্য হয়েছে , আমিরিকান সামরিক ঘাটি ইউরূপের ন্যটোভুক্ত দেশ সমুহে কাটার মত বিধে আছে , তারপরেও তারা বিপদের ভয়ে সব সময় কুকরে থাকে ।

ছবি -৫ : ইউরোপে ন্যটোভুক্ত দেশ সমুহে আমিরিকার সামরিক উপস্থিতি



উত্তর কোরিয়ার হাতে থাকা গুটিকয়েক পারমানবিক ও হাইড্রোজেন বোমার ভয়ে আমিরিকার শক্তিমান পুরুষ ট্রাম্প এখন সকাল বিকাল বিকার গ্রস্থের মত উত্তর কোরিয়াকে ধংস করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার প্রলাপ বকে । উত্তর কোরিয়ার হাতে যে নিউক্লিয়ার ও হাইড্রোজেন বোমার মজুদ আছে তা যদি আমিরিকার বোমার আঘাতে ফুটে তার চোটে সারা পৃথবীতেই কেয়ামতের প্রলয় নেমে আসতে পারে বিশেষজ্ঞদের ধারণা । অতি সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া কতৃক টেস্ট কৃত হাইড্রোজেন বোমাটির ক্ষমতা নাকি হিরোসিমায় নিক্ষিপ্ত আনবিক বোমার থেকে ১০০০গুনেরও বেশি শক্তিশালী !!!

ছবি -৬ : উত্তর কোরিয়ার হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরণ টেস্ট



পারমানবিক অস্র নিরস্রিকরন চুক্তিতে বিশ্বের কোন পারমানবিক শক্তিধর দেশই স্বাক্ষর করেনি , তার মানে তারা প্রয়োজনে এই অস্রটি প্রয়োগ করবেই করবে । যুদ্ধের কৌশলগত অবস্থানের কারণে মাথা গরম হয়ে কে যে কখন কার মাথায় সে বোমা ফুটাবে তা কে আগে ভাগে জানে , আর এক একটা বোমার যে ক্ষমতা তার মাত্র গুটিকয়েকই সারা দুনিয়ার বিপর্যয়ের জন্য যথেষ্ট ।

অতএব শক্তিধর দেশ সমুহ কতৃক সংখ্যালঘু জাতি সত্তা সহ সকল প্রকার মানবতার বিপর্যয় রোধে যে কোন ধরনের কুটনৈতিক প্রচেষ্টা ও সামরিক শক্তির মহরা কোনটাই কার্যকরী নয় এমনকি শক্তিধরদের নিজেদের জন্যও নয় । এমন অবস্থায় আমাদের জন্য একমাত্র আশ্রয়স্থল হলেন মহান শক্তিধর আল্লাহ ।

তাঁর হাতে ভুপৃষ্ট, আকাশ ও পাতালে থাকা তাজা মারনাস্রগুলির সন্ধান ও নমুনা বিশ্ববাসী দেখছে প্রতি নিয়ত ।
আল্লাহ তার বিধানের সামান্য একটু হেরফের করলে যথা ছোট একটা ধুমকেতুর আঘাতে পৃথিবী হয়ে যেতে পারে মহুর্তে চুর্ণ বিচুর্ণ , উড়ে যেতে পারে তুলার মত ।

ছবি -৭ : সৌর জগতে ধুমকেতুর উল্টা কক্ষপথ



ছবি -৮ : ভুগর্ভ ও সাগরতলের ম্যগমাসমৃদ্ধ অগ্নোৎপাতের ফলে মহুর্তের মধ্যে মহাপ্রলয় হয়ে যেতে পারে বিশ্ব চরাচরে



ছবি- ৯ : সাগরের বুকে জন্ম নেয়া সাইক্লোন , ঘুর্ণীঝড় কিংবা ইরমার আঘাতে ধুলিস্যাত হয়ে যেতে পারে বিশাল জনপদ সমুহ



ছবি-১০: দাবানলে পুরে যেতে পারে কালিফোর্ণিয়ার পার্বত্য এলাকার মত বিশাল অরন্য ( ৫ লাখ একর বনভুমি পুড়ে গিয়েছিল )



বিশ্বজগতের সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছেন নিরাকার মহান আল্লাহ্‌ ।
ছবি – ১১ : বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার নামের একটি কেলিগ্রাফ



তিনিই আদি, তিনিই অন্ত । তিনি সর্বস্রষ্টা, জগতের একচ্ছত্র অধিপতি ও সর্বশক্তিমান। তিনি সদা সর্বত্র বিরাজমান, সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। সকল প্রশংসার একমাত্র অধিকারী তিনিই, সমস্ত উত্তম গুণ তাঁরই। তাঁর তুলনা একমাত্র তিনিই। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্‌ স্বয়ং নিজের যে পরিচয় দিয়েছেন তাঁর সেই পরিচয়ই হচ্ছে সবচেয়ে স্বচ্ছ ও সঠিক। মহান আল্লাহ্‌ নিজের পরিচয় দিয়ে বলেছেনঃ
الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ* الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ * مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ
সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব-জগতের একমাত্র প্রতিপালক-প্রভূ আল্লাহ্‌র। যিনি অযাচিত অসীম দানকারী, পরম দয়াময়। বিচার দিবসের মালিক। (সূরা ফাতেহাঃ ২-৪)
এরপর সূরা বাকারায় আল্লাহ্‌ তা'আলা একপর্যায়ে নিজের সম্বন্ধে বলেছেনঃ
اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ
“আল্লাহ্‌ তিনি - যিনি ছাড়া কোন উপাস্য নাই। তিনি চিরঞ্জীব-জীবনদাতা, তিনি নিজ সত্তায় স্থায়ী অপরকে স্থিতিদাতা। তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করে না। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা-ই আছে সবই তাঁর ” (সূরা বাকারাঃ ২৫৬)
ছবি -১২ : সর্বশেষ্ট আল্লার নামের একটি কেলিগ্রাফ



সমস্ত গুণের আধার মহান আল্লাহ্‌ সূরা হাশরের শেষভাগে নিজ গুণাবলী সম্পর্কে নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি বলেনঃ
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ *
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ *
هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ *
“তিনিই আল্লাহ্‌ যিনি ছাড়া কোন উপাস্য নাই। তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সকল বিষয়ে পরিজ্ঞাত। তিনি অযাচিত অসীম দানকারী, পরম দয়াময়। তিনিই আল্লাহ্‌ যিনি ছাড়া কোন উপাস্য নাই। তিনি সর্বাধিপতি, অতিব পবিত্র, সমস্ত শান্তি ও নিরাপত্তার উৎস, পূর্ণ নিরাপত্তাদাতা, সর্বোত্তম রক্ষাকর্তা, মহা পরাক্রমশালী, প্রবল-প্রতিবিধায়ক, অতিব গরিয়ান। তারা যা শিরক করে আল্লাহ্‌ তা থেকে পবিত্র। তিনিই আল্লাহ্‌ যিনি একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, আদি সুনিপুন স্রষ্টা, সর্বোত্তম আকৃতিদাতা, সমস্ত সুন্দর নাম একমাত্র তাঁরই। আকাশ এবং পৃথিবীতে যা-ই আছে সবই তাঁর গুণ ও পবিত্রতা ঘোষণা করছে । এবং তিনি মহা পরাক্রমশালী, পরম প্রজ্ঞাময়।” (সূরা হাশরঃ ২৩-২৫)


আল্লাহ্‌ তা'লার অসংখ্য গুনবাচক নাম রয়েছে । এক হিসেবে এ গুণবাচক নামের সংখ্যা ৯৯টি। তাঁর মূল নাম হচ্ছে 'আল্লাহ্‌' বাকি সব তার গুন-প্রকাশক নাম। আল্লাহ্‌ যেমন অবিনশ্বর ঠিক তেমনি তাঁর সমস্ত গুন অক্ষয় অমর। তিনি যেমন দয়ালু অতীতে ছিলেন আজও তেমনি দয়ালু এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন। আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের কাতর হৃদয়ের প্রার্থনা শ্রবণ করেন এবং তার ডাকে সাড়া দেন। আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দার সাথে ইতিবাচক এক আত্মিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য নিজেই দোয়ার পথ উম্মুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেনঃ
ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ
অর্থাৎঃ তোমরা আমাকে ডাকার মত ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। (আল-মুমিনঃ ৬১)

ছবি- ১৪ : আল্লার কাছে হাত তুলে মোনাজাত



আল্লাহ্ অগণিত আশ্চর্য গুণের অধিকারী কিন্তু কেবল সে ব্যক্তিই তা দর্শন করতে পারে, যে সততা ও বিশ্বস্ততার সাথে তাঁর মাঝে বিলীন হয়ে যায়। যে ব্যক্তি তাঁর অসীম শক্তিতে বিশ্বাসী নয় এবং তাঁর খাঁটি এবং বিশ্বস্ত সেবক নয়, তাকে তিনি সেসব আশ্চর্য লীলা প্রদর্শন করেন না। কত হতভাগ্য সে ব্যক্তি যে আজও জানে না, তার এমন এক আল্লাহ আছেন যিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান!

অল্লাহ বলেন :
“তিনি আলেমুশ শাহাদাহ” অর্থাৎ কোন জিনিষ তাঁর দৃষ্টির অগোচর নহে। আবার বলেছেন তিনি “হুওয়ার রহমান”। অর্থাৎ তিনি প্রাণী সকলের অস্তিত্ব ও উহাদের কর্মের পূর্বে শুধু আপন দয়ায় কোন স্বার্থ কিংবা কাহারও কর্ম ফলের মুখাপেক্ষি না হয়ে তাদের জন্য আরামের সমগ্রী যোগাইয়া থাকেন। যেমন সূর্য ও পৃথিবী এবং অন্য সব জিনিষ পৃথিবীতে আমাদের আসা ও কার্য সাধনের পূর্বেই আমাদের জন্য সৃষ্টি করে রেখেছেন । তিনি পুনরায় বলেছেন “আর্‌ রহীম” যিনি উত্তম কাজের সর্বোত্তম পুরস্কার দেন। কাহারও শ্রমকে বিনষ্ট করেন না। তিনি বলেছেন “মালেকে ইয়াওমিদ্‌দীন” অর্থাৎ আল্লাহ প্রত্যেকের পুরস্কার বা শাস্তি স্বহস্তে ধারণ করেন। তাঁহার এমন কার্য নির্বাহক নাই, যাকে তিনি আকাশ ও পৃথিবীর শাসন ক্ষমতা সঁপে দিয়ে নিজে পৃথক হয়ে বসে আছেন এবং নিজে কিছুই করেন না। এমনও নহে যে সেই কার্য নির্বাহকই যতসব পুরস্কার ও শাস্তি দেয় কিংবা ভবিষ্যতেও দিবে।

আল্লাহ্ তো তিনি , যিনি সকল শক্তিমান হতেও অধিক শক্তিশালী এবং সকলের উপর প্রাধান্য বিস্তারকারী। যারা ভ্রমে নিপতিত, তারা আল্লার মর্যাদা বুঝে না এবং জানেও না যে আল্লাহ কেমন ।
আল্লাহ্ বলেনঃ
السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ
অর্থাৎ “তিনি সকলের রক্ষক, পরাক্রমশালী, নষ্ট হওয়া কাজকেও সুসম্পন্নকারী; তাঁহার সত্তা চূড়ান্তভাবে অভাবের অতীত” (৫৯:২৪)

তিনি আরও বলেন عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ অর্থাৎ “ আল্লাহ সর্বশক্তিমান” (২:১৪৯)

ছবি-১৫ : আল্লাহু আকবার লেখা একটি কেলিগ্রাফ



এই নাম তার প্রতি বিশ্বাসীদের জন্য বড়ই শান্তি প্রদায়ক। কারণ এই সর্বশক্তিমান আল্লাই পারেন বিশ্বের বুকে সকলের জন্য শান্তি দিতে । তিনি আরো বলেন-
رَبِّ الْعَالَمِينَ * الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ * مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ
অর্থাৎঃ তিনিই আল্লা যিনি সকল জগতের পালনকর্তা রহমান, রহীম এবং বিচার দিনের স্বয়ং মালিক। এই দিনের কর্তৃত্ব তিনি কাহারো হাতে দেন নাই। (১:২-৪)

أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ
তিনি “প্রত্যেক আহ্বানকারীর আহ্বান শ্রবণকারী এবং জবাব দানকারী অর্থাৎ প্রার্থনা মঞ্জুরকারী”। (২:১৮৭)

আল্লাহ্ প্রদত্ত সকল ধর্মের যাবতীয় বিধি-বিধানের মূখ্য উদ্দেশ্যই হলো মানবের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মঙ্গল বিধান করা । ধর্মে গ্রন্থে বর্ণীত বিধান সমুহ ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মঙ্গলের লক্ষ্যে আল্লার প্রতি মানুষের ভালবাসা জাগ্রত করে । কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন আয়াত আল্লার ক্ষমতা , গুণাবলী ও সৌন্দর্য বর্ণনা করে, আবার কখনো তাঁর অনুগ্রহ মানুষকে স্মরণ করায় । মানুষের অন্তরে ভালবাসা সৃস্টি হয় তার সৌন্দর্যের কারণে কিংবা তার অনুগ্রহের কারণে। তিনি পূর্ণ গুণাবলীর সমষ্টি আর পবিত্র শক্তিসমূহের আধার। তিনি সমস্ত সৃষ্টির ভিত্তি এবং যাবতীয় কল্যাণের উৎস। তিনি সর্বপ্রকার পুরস্কার ও শাস্তি-প্রদানের মালিক এবং যাবতীয় কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু। এমন কিছুই নেই যা তাঁকে ছাড়াই নিজে নিজে সৃষ্ট কিংবা তাঁর সাহায্য ছাড়া নিজেই বেঁচে থাকতে পারে। তিনি প্রত্যেকটি বস্তুর পরিবেষ্টনকারী কিন্তু এই বেষ্টনী বোঝানো দুস্কর। তিনি আকাশ এবং পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুর জ্যোতি এবং প্রত্যেকটি জ্যোতি তাঁর দ্বারা আলোকিত এবং তাঁরই সত্তার প্রতিবিম্ব। তিনি সমস্ত জগতের প্রতিপালক। এমন কোন আত্মা নেই যা তাঁর দ্ধারা পালিত না হয়ে নিজ সত্তায় বর্তমান।

এই সুমহান বিশাল অস্তিত্ব তথা আল্লাই আমাদের সবার আশ্রয়। আমাদের উৎস, তিনি আমাদের জীবন, আমাদের চৈতন্য, আমাদের যাবতীয় ইন্দ্রীয় ও শক্তি সব তাঁরই দান। সবশেষে আমাদের সবার প্রত্যাবর্তণ তাঁরই কাছে। তিনিই আমাদের হিসেব নিকেশ ও বিচার করবেন। আমরা তাঁর কাছে দয়া, ক্ষমা ও মার্জনা প্রত্যাশা করি ।

এটাও সত্য যে বিপদের সময় আশু করনীয় বিষয়ে ধর্মীয় গ্রন্থের বিধানের আলোকে করনীয় যথা নির্যাতিতদের কে আশ্রয় , গৃহ , খাদ্য এবং চিকিৎসা সেবা দেয়া । ঘরবাড়ী ছেড়ে আসা ছিন্নমুল রোহিঙ্গাদেরতে আল্লার অশেষ রহমতে সীমিত সস্পদের মধ্যে নিপতিত থেকেও আমরা এদেশবাসী তাদের সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছে । তাদেরকে এদেশে আশ্রয় দানের বিষয়ে সরকারী ও বিরোধিদল সহ সকলে ঐক্যবদ্ধ , জাতির এই ক্রান্তি লগ্নে এটা একটা বিশাল ইতিবাক দিক ।

রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দিতে গিয়ে যদিউ আমরা বিবিধভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি তদুপরি মানবিক দৃষ্টিকোন হতে বংলাদেশ
সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অআবাসনের জন্য । পাহাড়ের আশপাশের জায়গা ধরলে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য বস্তির জায়গার পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার একর হবে বলে স্থানীয় পরিবেশবাদীদের হিসাব হতে জানা যায় ।

ছবি – ১৬ : পাহার কেটে তৈরী রোহিঙ্গাদের জন্য আশ্রয় শিবির



নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আবাসনের জন্য আরও দুই হাজার একর জায়গা চাওয়া হয়েছে। বিপুল পরিমাণে পাহাড় কেটে আস্রয় কেন্দ্র এলাকায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা। যেকোনো সময় বড় রকমের পাহাড়ধস ঘটার আশঙ্কায় তাঁরা উদ্বিগ্ন।কক্সবাজার থেকে টেকনাফের দিকে উখিয়া বাসস্ট্যান্ড পার হওয়ার পর পথের দুপাশের পাহাড়ে রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ির সারি চোখে পড়বে সবার। তাই দেশের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের সকলের সাথে ঐক্যমতের ভিত্তিতে পরিবেশ বিপন্ন না হয় এমন স্থানে তাদেরকে সরিয়ে নেয়া আশু কর্তব্য বলে প্রতিয়মান হয় ।

আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পুর্ণবাসনের জন্য যথাযথ সহযোগীতা করা পাশাপাশি নির্যাতনকারী জালেমকে বিধিসম্মত ভাবে প্রতিহত করাও অবশ্যই পালনীয় । এ লক্ষ্যে দেশবাসী , সরকার , বিভিন্ন রাজনৈতিক দল , বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান , ব্যক্তিবর্গ , বিদেশী সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সমুহ তাদের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ নিয়েছেন । এখানে রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারকে এই নির্যাতন বন্ধ ও তাদেরকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যথাযথভাবে সকল প্রকার নাগরিক অধিকার ও সুযোগ সুবিধা দিয়ে পুর্ণবাসনের জন্য কর্ম প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার বিষয়টি এখন একটি বিশ্বজনিন দাবীতে পরিনত হয়েছে ।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যথা , তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সৌদি আরব, কাতার, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ভাটিক্যান, রাশিয়া, মালয়েশিয়া, ফ্রান্স, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধান যথা জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা প্রধান, আই সি মহাসচিব, ১২জন নোবেল লরেটি ও বিশ্বনন্দিত ব্যক্তিত্বের সমর্থনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সর্ব সম্মত ভাবে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বন্ধের বিষয়ে মায়ান সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে ।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদেও বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে । গত ২২শে সপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাছিনা তাঁর ভাষনে বিষয়টির স্থায়ী সমাধান চেয়ে ভাষণ দিয়েছেন ।

ছবি -১৭: জাতিসংঘে সাধারণ অধিবেশনে প্রধান মন্ত্রী : সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই



দেশের প্রবীন রাজনীতিবিদ সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা: বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও গনফোরাম সভাপতি ড.কামাল হোসেন
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন ও রাশিয়ায় যেতে পরামর্শ দিয়েছেন ।

ছবি -১৮ : ড.কামাল হোসেন ও ডা: বদরুদ্দোজা চৌধুরী



দেশের বৃহত্তম বিরোধি রাজনৈতিক দল বিএনপি মহাসচিব মির্যা ফকরুল ইসলাম আলমগীর রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন ।
ছবি -১৯ : বিএনপি মহাসচিব মির্যা ফকরুল ইসলাম আলমগীর


রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বন্ধের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শান্তিতে নোবেল জয়ী ড: ইউনুস ১২ জন নোবেল বিজয়ী সহ ২২ জন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব জাতি সংঘের প্রতি খোলা চিঠিতে আবেদন জানিয়েছেন ।
ছবি -২০ : শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুস



ছবি -২১ : রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ঘোষনা , শুধু কথায় নয় কাজেও তিনি তা দেখাচ্ছেন



রাশিয়া ও চীনের তুলনায় রোহিঙ্গা প্রশ্নে মার্কিন অবস্থান অবশ্য অনেক স্পষ্ট। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স নিরাপত্তা পরিষদে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রশ্নে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হামলাকে ‘ভয়াবহ বর্বরতা’ হিসেবে অভিহিত করে সহিংসতা বন্ধ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে অবশ্য রোহিঙ্গা প্রশ্নে এখন পর্যন্ত কিছু বলেননি। সাধারণ পরিষদে তাঁর ৪২ মিনিটের ভাষণে তিনি একবারের জন্যও রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেননি। এ ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে কতটা সাহায্য পাওয়া যাবে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও নিশ্চিত নন বলে জানিয়েছেন ।

তবে জাতিসংঘে মার্কিন স্থায়ী প্রতিনিধি নিকি হেলির বরাতে জানা যায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং রোহিঙ্গা প্রশ্নে কথা বলার দায়িত্ব তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্সের ওপর দিয়েছেন। রাখাইনে সহিংসতা বন্ধে, রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’র পাশাপাশি মিয়ানমার সেনাবাহিনীকেও চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ২১ শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে মার্কিন স্থায়ী প্রতিনিধি নিকি হ্যালি এ কথা বলেন ।

ছবি-২২: জাতিসংঘে মার্কিন স্থায়ী প্রতিনিধি নিকি হ্যালি



কেবল সু চি নয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকেও রাখাইন সংকট নিরসনে চাপ দেয়া হচ্ছে বলে নিকির কথা বার্তায় জানা যায় । এরই মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ জেনারেল ডানফোর্ড মিয়ানমারের সেনাপ্রধানকে জানিয়েছেন যে এতোদিন সুসম্পর্ক থাকলেও, চলমান সংকটের কারণে সেটি বজায় রাখা তাদের পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না । কারণ, সমাধানের লক্ষ্যে তারা কি করছে, সেটা জানা দরকার।

জাতি সংঘের সাধারণ অধিবেশনে মিয়ানমারের বিষয়ে চীন রাশিয়া এবং ভারত নিরব থাকলেও তাদের কথা বার্তা বলার স্টাইল কিছুটা পাল্টিয়েছে বলে দেখা যায় । আর রোহিঙ্গা সমস্যাটির বিষয়ে অং সাং সুচীর দেয়া ভাষণের প্রতি বিশ্ববাসীর তিব্র প্রতিক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে মিডিয়াতে । এমনকি গত শুক্রবারে মাল এশিয়াতে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক গন আদালত রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর দায়ে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি ও সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হিলাইং সহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের দোষী সাব্যস্ত করেছেন । শুক্রবার সকালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে রোম ভিত্তিক সংগঠন পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনালের (পিপিটি) সাত সদস্যের বিচারকের প্যানেল এ প্রতীকী রায় ঘোষণা করা হয় ।

ছবি-২৩ : পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনালের বিচারকবৃন্দ



তবে এত কিছুর পরেও মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপরে নির্যাতনের মাত্রা না কমে বরং তা একই গতিতে অব্যাহত আছে, তদুপরি রোহিঙ্গারা যেন নিরাপদে কোন মতেই আরাকানে ফিরতে না পারে সে লক্ষ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মীমান্ত জুরে স্থল মাইন পুতে রাখছে । অবস্থা দৃশ্যে মনে হয় মনুষ্য সৃষ্ট এই নারকীয় বর্বর কর্মকান্ড বন্ধ ও নিরাপদে তাদের নীজ আবাসভুমে ফিরে যাওয়ার আশা রয়ে যাবে সেই তিমিরেই । সাফল্য ও ব্যর্থতার বোজা কাধে নিয়ে যার যার দৃস্টিকোন হতে সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছেন দেশে বিদেশে অনেকেই তাতে কোন সন্দেহ নেই । আমরা সাধারণ মানুষ, আমাদের শুভানুধায়ীদের মহতি প্রচেষ্টার সাথে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি জগতের সর্বশ্রেষ্ট আশ্রয় ও মুক্তিদাতা আল্লা তায়ালার স্বরনাপন্ন তো হতেই পারি । মিয়ানমারসহ বিশ্বের বুক হতে সকল প্রকার অশুভ শক্তিকে চিরদিনের মত দমন করে নির্যাতিত ও নিগৃহীত রাস্ট্রবিহীন এই রোহিঙ্গা জাতিগুষ্ঠির মঙ্গলের লক্ষ্যে জাতি ধর্ম ও বর্ণ নির্বশেষে সকলে মিলে সর্ব শক্তিমান আল্লার কাছে খোলামনে কাতর কন্ঠে আবেদন নিবেদন ও প্রার্থনা জানাই তিনি যেন ছিণ্নমুল বিপন্ন রোহিঙ্গা সাহায্যপ্রার্থীদের সর্বময় কল্যান সাধন করেন ।



আল্লাহ আমাদের সকলের দোয়া কবুল করুন , আমীন ।

ছবিসুত্র : গুগল অন্তর্জাল
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:১৬
৩৩টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×