somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিয়ানমারের হারানো রাজ্যের পুরাকির্তী রক্ষার স্বপ্ন এখন রোহিঙ্গা নির্মুলে রাস্ট্রিয় সহিংসতার চারণভুমি

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মাত্র শত বর্ষ আগেও মিয়ানমারের আরাকানে মারুক ইউ ( বলা হয়ে থাকে Maruk U এর আক্ষরিক অর্থ হল‘বানরের ডিম ) নামে ইতিহাস খ্যাত রাজ্যটিতে বিরাজমান ছিল জাতিগত সৌহার্দতা। মরক ইউ এর প্রাচীন ইতিহাস সাক্ষ দেয় রোহিঙ্গাদের পূর্বপুরুষরা শতাব্দিকাল ধরে আরাকানের সাংস্কৃতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আরাকানের সুবর্ণ যুগে সেখানকার বৌদ্ধ রাজাগন মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও বনিকদের সাংস্কৃতিক প্রভাব, পর্তুগিজ, খ্রিস্টান মিশনারীদের শিক্ষা, হিন্দু কারুশিল্পীদের সুনিপুন শিল্পকর্ম, ধন-সম্পদশালী বৌদ্ধ ও যোদ্ধাদের সন্মিলিত প্রয়াসে মরোক ইউ রাজ্যটিকে একটি সমৃদ্ধ সাম্রাজ্যে পরিনত করেছিল ।

পুরাতন মরক ইউ এর রাজধানী শহরের একপ্রান্তে ‘৮০০০০ বৌদ্ধের প্যাগোডা’ নামে প্রসিদ্ধ শিটথং মন্দির আর তারই অন্য পাশে ১৪৩০ সনে নির্মিত ইতিহাস খ্যাত শান্তিখান নামে মসজিদটি ছিল সে সময়কার জাতিগত ও ধর্মীয় সৌহার্দতার উজ্বল উদাহরণ ।

ছবি- ২ : মারোক- ইউ এর একটি প্রাচীন মন্দির



ছবি-৩ : বিখ্যাত শান্তিখান মসজিদটির মত আরো অনেক মসজিদই এখন আরাকানে বিলীন হওয়ার পথে



মিয়ানমার সরকার মারোক- ইউ এ অবস্থিত ৩৮০ টি প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির ও প্যগোডার স্থাপত্য পুরাকির্তির জন্য ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ মর্যাদা লাভের প্রতিযোগীতায় নেমেছে অল্প কিছুদিন আগে । ঈরাবতী নিউজ হতে জানা যায় আগামী বছর সেপ্টেমবরে তারা ইউনেস্কোর কাছে এর জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেশ করবে । প্রাচীন আরাকান রাজ্যের এই স্থানটির অবস্থান ছিল বর্তমান রাখাইন স্টেটের রাজধানী শিটো হতে ৬০ কিলোমিটার দুরে কালদান নদীর তীরে ।

ঐতিহ্যময় মরোক- ইউ রাজ্যটি কালের পরিক্রমায় সামরিক জান্তা নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমার সরকার ও রাখাইন বৌদ্ধদের কলাবরেসনে পাশবিক তান্ডবলীলার কারণে পরিনত হয়েছে একটি জাতিসত্তা নির্মুলের বর্বর সহিংসতার চারণ ভুমিতে।

ছবি -৪: মরোক-ইউয়ের প্রাচীন অঞ্চলটি পরিনত হয়েছে এখন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার একটি জলন্ত অগ্নিকুন্ডে ।


অতীতের স্বর্নালী আলো নিভে গিয়ে মিয়ানমারের এককালের সেই সমৃদ্ধ মরোক -ইউ রাজ্যটি আজ পরিনত হয়েছে ছোট্ট একটি গ্রামীন জনপদে, যেখানকার শত শত বছরের পুরোনো কির্তীগুলি চলে গেছে ইতিহাসের হারানো এক সাম্রাজ্যের তালিকাতে যেখানে এখন গবাদি পশুর পাল চরে।

ছবি -৫ : অযত্ন অবহেলায় মন্দির প্রাঙ্গন এখন গোচারণভুমি


ছবি-৬ : দারিদ্র পিড়ীত জনগুষ্ঠি বসবাস করে এখন প্রাচীন মন্দির ও প্যাগোডাগুলির পাশে জরাজীর্ণ কুটিরে


ছবি-৭ : ভগ্ন মন্দিরগুলিতে গজিয়ে উঠা ঝোপ ঝাড়ে ছেলে মেয়রা কৌতুহল ও রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে আরোহন করে ।


সেখানে ইট পাথর এবং শক্ত দেয়াল বেষ্টিত হুক্কাথীন এবং শিয়াট থাং এর মত দৃষ্টি নন্দন অনেক মন্দির ছিল । মন্দির গুলি নির্মান করা হয়েছিল পাহাড় চুড়া হতে যেন আশপাশের এলাকায় শত্রু আগমন করা যায় পর্যবেক্ষন এবং যুদ্ধকালীন কিংবা পাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে সেখানে আশ্রয় নিতে পারে জনগন। সেখানকার পুর নির্মাণ কৌশল এমনিই অপুর্ব ছিল যে জলাসয়ের বাধ কেটে দিয়ে গিরিপথে আসা শত্রু সেনাদেরকে পানিতে ভাসিয়ে দেয়া যেতো অনায়া-সে।

ছবি -৮ : মারোক ইউ তে অবস্থিত শিয়াট থাং মন্দির



প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ শক্ত প্রাচীর দ্ধারা বেষ্টিত ছিল মরোক- ইউ এর রাজধানী শহরটি যার কেন্দ্রে ছিল রাজ প্রাসাদ । কিন্তু এখন এর কিছুই আর অবশিষ্ট নেই, ভগ্ন স্তুপের মাঝে শুধু শহড়টির জীর্ণ প্রাচীর ও তার ফটকের ভংগ্নাশ্য দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে ।

ছবি -৯ : প্রাচীন মারোক- ইউ রাজধানীর সীমানা প্রাচীর


সেখানকার শত শত মধ্যযুগীয় মন্দির এবং প্যগোডা গুলি প্রায় সময়ই থাকে কুয়াশচ্ছন্ন পতিত হয় তাতে নিশ্প্রভ সুর্যের কিরণ । কালের পরিক্রমায় এটি এখন একটি মিথ্যেবাদী ও ব্যর্থ সাম্রাজ্যের রাজধানীর চিহ্ন বিশেষ বৈ আর কিছুই নয় । আরাকানের শক্তিশালী রাজারা প্রায় ২০ বর্গমাইলের এক লক্ষ ষাট হাজার জনবসতির সমৃদ্ধশালী এক নগরী গড়ে তুলেছিলেন মরোক- ইউ সাম্রাজ্যের রাজধানীতে, যেখান হতে দক্ষিন এশিয়ার বানিজ্যিক রুট পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হতো । আজ সেখানে ৬০০ বছরের পুরাতন ঐতিহ্যময় স্থাপত্য কির্তীগুলী পরিনত হয়েছে শুধুই প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনের ভগ্নস্তুপে।

ছবি-১০ : মারোক- ইউ এর একটি মন্দিরের ধংসাবশেষ


ছবি -১১ : মারোক- ইউ এলাকাটি প্রায়ই কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে, সকালে এটি পরিনত হয় এক রহস্যময় জগতে ।



এলাকাটিতে সহয্র বছর ধরে বসবাসকারী নাগরিত্বহীন রোহিঙ্গা জাতিগুষ্ঠিকে নির্মুল করার জন্য মিয়ানমার সরকারের বর্বর হত্যা যজ্ঞ চালানোর কারণে মরোক- ইউ এর এই প্রাচীন নগরীর ইউনেস্কো হেরিটেজ মর্যাদা লাভের বিষয়টি মিয়ানমারের জন্য এখন কেবলি দু:স্বপ্নে পরিনত হতে চলেছে। মিয়ানমার সামরিক জান্তা সমর্থিত সরকার ও স্থানীয় রাখাইনদের যৌথ উদ্দোগে এখন সেখানে চলছে গনহত্যা, নির্যাতন ও জাতিসত্তা নির্মুল অভিযান, হাজার হাজার রোহিঙ্গা হচ্ছে নিধন এবং প্রায় ১৫ লক্ষ রোহিঙ্গাকে নীজ বাসভূমি হতে করা হয়েছে বিতারণ । তাদের নির্মম অত্যাচারে গত মাসাধিক কাল সময়ে প্রায় ৫ লক্ষ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে ।
মিয়ানমারের এই হারানো সাম্রাজ্যের করুন ইতিহাস, সে সাথে বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দেয়া সেখানকার আদিবাসী রোহিঙ্গা জাতিগুষ্ঠির শিকড় অনুসন্ধানের কিছু সচিত্র বিবরন তুলে ধরা হলো নীচে ।

বঙ্গোপসাগরের কুল ঘেষে প্রায় ৩৫০ মাইল বিস্তৃত উপকুলীয় এলাকা নিয়ে রোহাঙ্গ নামে পরিচিত ঐতিহাসিক আরাকান অঞ্চলটি বর্তমানে রাখাইন নামে মিয়ানমারের একটি প্রদেশে পরিনত হয়েছে । স্থল ও জলভাগ মিলিয়ে বাংলাদেশের সাথে এর ১৬৭ মাইল সীমান্ত রয়েছে । স্মরনাতীত কাল হতেই আরাকানে রোহিঙ্গারা বসবাস করে আসছে । নীজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে তারা একটি পৃথক জাতি সত্তা । তাদের পুর্ব পুরুষের ইতিহাস আরব, মুর, পাঠান, মুঘল, বাংগালি এবং ইন্দো- আরিয়ান জাতিগুষ্ঠিতে নিহিত ।

বর্তমানে মিয়ানমার ১৪০টির মত নৃতাতাত্বিক জাতি গুষ্ঠির একটি দেশ, যা ১৯৪৮ সনে বৃটিশদের কাছ হতে স্বাধীনতা লাভ করেছে । মিয়ানমারের ৫৩ মিলিয়ন জন সংখ্যার মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা ৮ মিলিনিয়নের উপরে । এই ৮ মিলিয়ন মুসলমানের মধ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম জনসংখ্যা ৩.৫০ মিলিয়ন ( দেশে এবং বিদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরনার্থী মিলিয়ে ) । রোহিঙ্গারা আরাকানে সংখ্যাগরিষ্ট জনগুষ্ঠি, যদিও মিয়ানমার সরকার তাদেরকে স্থান দেয়নি নৃতাত্বিক জাতিগুষ্ঠির তালিকাতে ।

১৯৪৮ সনে মিয়ানমারের স্বাধিনতা লাভের পর হতে ব্যাপকহারে নির্যাতন ও জাতিগত নির্মূল অভিযান এবং গনহত্যার কারণে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন রোহিঙ্গা এখন বেশ কয়েকটি দেশে শরনার্থী হিসাবে আশ্রিত । এই সংখ্যার মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১ মিলিয়ন । অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা পাকিস্তান, সৌদি আরব, ভারত, থাইল্যান্ড, মালএশিয়া, সহ আরো বেশ কয়েকটি দেশে রয়েছে ,যাদেরকে মিয়ানমার নিচ্ছেনা ফিরিয়ে।

কৃষিই রোহিঙ্গাদের মুল পেশা । বহু বছর ধরে নির্যাতন ও নিপিরণ মুলক আচরণের ফলে তাদের সিংহভাগই নীজ দেশে ভুমিহীন ও গৃহহীন । মিয়ানমারের অন্য প্রদেশ হতে আগত সেটেলার বুদ্দিষ্টগন রোহিঙ্গাদের ক্ষেতখামার দখলে নেয়ায় তারা মুলত দাসদের মত নীজ দেশে কৃষিকাজসহ অন্যান্য কায়িক পরিশ্রমী দিন মজুরে পরিনত হয়েছে ।

ছবি -১২ : রোহিঙ্গা জনগুষ্ঠির শ্রমজিবী মানুষের কায়িক পরিশ্রমী কর্মের একটি চিত্র


১৯৮২ সালের বার্মিজ নাগরিকত্ব আইন অনুসারে তাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যমতে, ১৯৮২ সালের আইনে “রোহিঙ্গাদের’’ জাতীয়তা অর্জনের সম্ভাবনা কার্যকরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ৮ম শতাব্দী পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া সত্ত্বেও, বার্মার আইন এই সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে তাদের জাতীয় নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করছে। এছাড়াও স্তব্ধ করা হয়েছে তাদের অধিকার আদায় আন্দোলনের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রীয় শিক্ষা সুযোগ বন্ধ করা সহ সরকারি চাকুরীর ক্ষেত্র হয়েছে নিষিদ্ধ । রোহিঙ্গারা ১৯৭৮, ১৯৯১-১৯৯২, ২০১২, ২০১৫ , ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সামরিক নির্যাতন এবং দমনের সম্মুখীন হয়েছে। যেখানে গণহত্যার মত অপরাধের ভুরী ভুরী তথ্য প্রমাণ এখন বিশ্ব মিডিয়ার শিরোনাম হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে । রোহিঙ্গা বসতিপু্র্ণ গ্রাম গুলি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধংসস্তুপে পরিনত করা হয়েছে ।

ছবি-১৩ : রাখাইন প্রদেশে মুসলমান অধ্যুসিত গ্রামে ৭০০ বাড়ীঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধংস করে দেয়ার একটি সেটেলাইট চিত্র


রোহিঙ্গারা বলছেন তারা পশ্চিম মায়ানমারে অনেক আগে থেকেই বসবাস করে আসছেন। তাদের বংশধররগন প্রাক ঔপনিবেশিক ও ঔপনিবেশিক আমল থেকেই আরাকানের বাসিন্দা ছিল । বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে নিপীড়ন শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রোহিঙ্গারা আইন প্রণেতা ও সংসদ সদস্য হিসেবে মিয়ানমারের সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। পূর্বে যদিও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করত কিন্তু হঠাৎ করেই মিয়ানমারের সরকারি মনোভাব বদলে যায় এবং রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের অফিসিয়াল ভাষ্য হলো তারা জাতীয় জনগোষ্ঠী নয় বরং তারা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী। মিয়ানমার সরকার তখন থেকেই “রোহিঙ্গা” শব্দটির ব্যবহার বন্ধ করে তাদের বাঙ্গালী বলে সম্বোধন করে আসছে । রোহিঙ্গাদের অধিকার আন্দোলনের বিভিন্ন সংগঠন বিশেষ করে আরাকান ‘রোহিঙ্গা জাতীয় সংস্থা’ তাদেরকে মিয়ানমারের মধ্যে জাতিসত্ত্বার পরিচয় দেওয়ার দাবি করে আসছে।

২৫ আগস্ট ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলায় ১২ জন নিরাপত্তা কর্মী নিহত হওয়ার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরোদ্ধে “ক্লিয়ারেন্স অপারেশ” শুরু করে। এই অপারেশনে ৪০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করার পাশাপাশি ৩০০০ রোহিঙ্গা বাড়ীঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়, এ নিবন্ধটি লিখা পর্যন্ত পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে , মানবতার প্রশ্নে সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় শিবির তৈরী করে তাদেরকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।

ছবি – ১৪ : বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি আশ্রয় কেন্দ্র



রোহিঙ্গা নাম করণ প্রসঙ্গ

অধুনা বহুল উচ্চারিত এই রোহিঙ্গা শব্দটি ঔপনিবেশিক ও প্রাক-ঔপনিবেশিক পদ রুইঙ্গা ও রওয়াঙ্গিয়া থেকে এসেছে। রোহিঙ্গারা নিজেদেরকে রুয়াংগা হিসাবে অভিহিত করে। ঐ অঞ্চলের বার্মিজ ভাষায় বলা রুইংগা, বাংলা ভাষায় রোহিঙ্গা এবং আরাকানী ভাষায় রাখাঙ্গা বা রসঙ্গা থেকে রোহিঙ্গা শব্দটির উদ্ভব হতে পারে বলে অনেকেই বলছেন । অনেক ঐতিহাসিকদের মতে রোহিঙ্গা শব্দটি আরবীয় বনিকগন আরাকানের "রোহং" এর বাসিন্দা’’ বুজানোর জন্য ব্যবহার করেছেন যা মুলত আরাকানের প্রথম মুসলিম নাম ছিল। ঐতিহাসিক অ্যান্ড্রু ট্যান এর মতে এটি আরবি শব্দ রহম (ঈশ্বরের আশীর্বাদ) থেকে আসতে পারে এবং ধারণা করা হয় আরাকানের আদি মুসলমানরা নিজেদেরকে "ঈশ্বরের আশীর্বাদযুক্ত মানুষ" বলে গন্য করতেন । বার্মিজরা ঐ অঞ্চলটিকে রাখিয়াং হিসাবে অভিহিত করত, তাই খুব সম্ভবত সেখান হতেও রোহিঙ্গা শব্দটির উদ্ভব হতে পারে ।

ফ্রান্সিস বুকানন-হ্যামিলটন ১৭৯৯ সালে প্রকাশিত তাঁর "বার্মা সাম্রাজ্যের কয়েকটি কথ্যভাষার একটি তুলনামূলক শব্দভান্ডার" শীর্ষক নিবন্ধে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্রিটিশ রাজদের দলীল পত্রে নথিভুক্ত ছিল বলে উল্লেখ করেছেন যা ঐতিহাসিক ভাবে সত্য বলে প্রমানীত হয়েছে । পরবর্তীকালে মিয়ানমার সরকার এটা বেমালুম চেপে গিয়েছে ভভিষ্যতে এই জাতিগুষ্ঠিকে নির্মুল করার দুরভিসন্ধি নিয়ে, যা এখন প্রমানীত হচ্ছে । শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে আরাকানে বসকারী এই জনগুষ্ঠি নীজেদেরকে রুইঙ্গা বা আরাকানের জাতিগুষ্ঠি বলে অভিহিত করে আসছে । ১৮১১ সালে জার্মানীর ক্লাসিক্যাল জার্নালে বার্মা সাম্রাজ্যে রুইঙ্গাকে সেখানকার কথ্যভাষায় "রুয়েঙ্গা" নামে পরিচিত একটি জনগুষ্ঠি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে । একটি স্বতন্ত্র ভাষা সমৃদ্ধ জাতিগোষ্ঠী হিসেবে "রুইঙ্গা" বৃটিশ রাজের দলীলপত্রে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে বলে ১৮১৫ সালে জার্মানিতে প্রকাশিত জোহান সেভেরিন ভ্যাট্টার গবেশনামুলক গ্রন্থেও উল্লেখ রয়েছে ।

জ্যাকস লাইডারের মতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে রোহিঙ্গাদেরকে " চাটগায়া তথা Chittagonians " হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে তবে ১৯৯০ এর দশকে তাদেরকে "বাঙালি" হিসেবে উল্লেখ করার একটা তৎপরতা দেখা গেলেও সেসময় একটি বিতর্কিত বিষয় হিসাবে এটি তেমনভাবে আলোচনায় উঠে আসেনি । লাইডার আরো বলেন রোহিঙ্গাদেরকে "রোহিঙ্গা মুসলমান", " আরাকানি মুসলিম " এবং "বার্মিজ মুসলিম" বলা হতো । ক্রিস্টিনা ফিং এর মত অনেক বিখ্যাত নৃতাত্ত্বিক মনে করেন যে রোহিঙ্গা শব্দটি কোনও জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী হিসাবে নয় বরং রোহিঙ্গা শব্দটিকে একটি রাজনৈতিক শব্দ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে । লাইডারও বিশ্বাস করেন রোহিঙ্গা শব্দটিকে ১৯৯০ সন হতে রাখাইনে একটি ‘’স্বশাসিত মুসলিম অঞ্চল " প্রতিষ্ঠার লক্ষে দুরভিসন্ধিমুলক একটি রাজনৈতিক আন্দোলন কারী জাতিগুষ্টি হিসাবে চিহ্নিত করার মানসে ব্যবহার শুরু হয়েছে ।

প্রকৃত পক্ষে এই জনগুষ্ঠী মুলত মিয়ানমারের রাখাইনে হাজার বছর ধরে বসবাসকারী আরাকানী জনগুষ্ঠি, শুধু ধর্মবিশ্বাসের দিক দিয়ে যাদের অধিকাংশই মুসলমান । সে হিসাবে এদেরকে আদি আরাকানী এবং এখনকার পরিবর্তিত অবস্থায় (আরাকানী অঞ্চলটি বার্মা/মিয়ানমার রাস্ট্রে অন্তর্ভুক্ত এবং মিয়ানমারের সকল অধিবাসী বার্মিজ হিসাবে গন্য হওয়ার কারণে ) এদেরকে রোহিঙ্গা না বলে সরাসরি মিয়ানমারী/বার্মিজ নামে অভিহিত করাই সঙ্গত বলে মনে হয় ।হাজার বছর ধরে সেখানে বসবাসকারীদেরকে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিতা, সংখ্যালঘু জনগুষ্ঠী কিংবা ধর্মীয় বিদ্ধেষের কারণে তাদের নাগরিকত্য হরণ করার বিষয়টি একান্তই মিয়ানমারের নিজস্ব সৃস্টি । বিশ্ব নিন্দিত এই গর্হিত কাজের যাবতীয় দায় তাদেরই বহন করতে হবে । তা না হলে ইতিহাসের অমোঘ বিধানে এমনো দিন তো আসতেই পারে যখন মিয়ানমারের বার্মিজদেরে ঘারে ধরে তাদের মুল উৎসস্থল মঙ্গোলীয়া কিংবা তিব্বতি আর্য দ্রাবির এলাকায় তাড়িয়ে দেবার প্রবনতা অচীরেই দেখা দিতে পারে । কার কপালে কি আছে তা কে বলতে পারে । যেমন করে রোহিঙ্গারা কস্নিনকালেও ভাবতে পারনি তাদের কপালে এমন দশা ঘটতে পারে, গাছ তলায় বসে গভীর উৎকন্ঠায় পরিবার পরিজনসহ দিন কাটাতে হতে পারে ।

ছবি-১৫ : নীজেদের দুর্গতীর বিষয়ে দু:শ্চিন্তা গ্রস্থ রোহিঙ্গা জনগুষ্ঠি


১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত মায়ানমারের গনতান্ত্রিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী ইউ নু এর আমলে "রোহিঙ্গা" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। মায়ু ফ্রন্টিয়ার জেলা যখন রোহিঙ্গা-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে পরিগনিত হয় তখন "রোহিঙ্গা" শব্দটি বার্মিজ সরকার কর্তৃকও স্বীকৃত ছিল। শব্দটি বার্মিজ রেডিওতে সম্প্রচারিত হয় এবং বার্মিজ শাসকদের বক্তৃতাতেও তা বেশ জোরের সাথেই উচ্চারিত হত । তবে অপারেশন কিং ড্রাগন এর আওতায় সর্বশান্ত আরাকানী শরণার্থীদেরকে ইউএনএইচসিআর রিপোর্ট "বেঙ্গল মুসলিম" হিসাবে তুলে ধরা হয়ছিল । ১৯৯০ দশকের পুর্বে রোহিঙ্গা শব্দটি কখনো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়নি।

ছবি – ১৬ : মাত্র কিছুদিন আগেও রোহিঙ্গানা নিরাপদে স্বচ্ছন্দে তাদের দৈনন্দিন জীবন যপন করতে পারত



ছবি -১৭ : এখন তারা নিরাপদ আশ্রয়ের খুজে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে নীজ প্রিয় বাসভুমি ছাড়তে হচ্ছে বাধ্য



একবুক হাতাশা ও ভয়ভীতি বুকে নিয়ে পরিবার পরিজন সহ মাথা গুজার জন্য ঠাই নিতে ছুটে চলেছে বিদেশ বিভুই এ ।

ছবি- ১৮ : অনেক কষ্টে কোন মতে ঠাই হচ্ছে এমনি সব জড়াজীর্ণ আশ্রয় শিবিরে



অধুনা রোহিঙ্গা নামটির মেরুকরন করা হয়েছে । মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা নামের কোন জনগুষ্টীর অস্তিত্ব এখন পুরাপুরি অস্বীকার করছে। ২০১৪ সালের আদমশুমারি চলাকালে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদেরকে "বাঙালি" বলে চিহ্নিত করতেও বাধ্য করেছে । অনেক রোহিঙ্গা চরম নিপিড়নের মুখে তাদের মৌলিক অধিকারের সহিত নীজেকেও রোহিঙ্গা হিসাবে অস্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে । মিয়ানমারে অবস্থানরত জাতিসংঘের অনেক মানবাধিকার কর্মীও বিষয়টির সাথে সহমত পোষন করছেন । মিয়ানমার সরকার অস্বিকার করলেও রেঙ্গুনে মার্কিন দূতাবাস "রোহিঙ্গা" নামটি ব্যবহার করছে, তবে এর বিপক্ষে বার্মিজ মগেরা রেঙ্গুনে মার্কিন দুতাবাসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে ।

ছবি-১৯ : রেঙ্গুনে মার্কিন দুতাবাস সম্মুখে বার্মিজ উগ্রবাদীদের বিক্ষোভ প্রদর্শন রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করার দাবীতে


বিক্ষোভকারীরা বলছে মিয়ানমারে কোন রোহিঙ্গা জনগুষ্ঠি নেই , ফলে তারা মার্কিন যুক্তরাস্ট্র, পাষ্চাত্ত এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশ সমুহকে ‘’রোহিঙ্গা’’ শব্দটি ব্যবহার না করার জন্য এক অযৌক্তিক দাবী জানাচ্ছে ।

আরাকানে বসবাসকারী রাখাইন প্রসঙ্গ

বর্তমান রাখাইন প্রদেশে থাকা রাখা্ইনেরা সেখানকার আদি বাসিন্দা ছিল কিনা তা স্পস্ট করে কোথাও বিবৃত নয় , কিছু ঐতিহাসিক বিশ্বাস করেন রাখাইরা প্রাচীন বার্মিজ ‘ম্রো’ উপজাতি অন্তর্ভুক্ত ছিল, কিন্তু ইতিহাসে এদের কোন স্বতন্ত্র ঐতিহ্য , লিখিত প্রমান বা রেকর্ড নেই ।

বার্মিজরা তাদের মনগড়া ইতিহাস টেনে যদিও বলেছে আরাকানে ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে রাখাইনী উপজাতির বসবাস ছিল , কিন্তু এই দাবির সমর্থনে কোন প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ নেই । ব্যপকভাবে বার্মার ইতিহাস অনুসন্ধানকারী হিসাবে খ্যাত বৃটিশ ইতিহাসবিদ ড্যানিয়েল জর্জ এডওয়ার্ড হলের মতে বার্মিজরা দশম শতাব্দীর পুর্বে আরাকানে বসতি স্থাপন করে নি ।

পক্ষান্তরে ইতিহাসের স্পষ্ট নিদর্শনগুলি বলছে বর্তমানে রোহিঙ্গা নামে পরিচিত জনগোষ্ঠী ঐতিহাসিকভাবে দক্ষিনপুর্ব এশিয়ার পুরনো উপকূলীয় অঞ্চল আরাকানে কেন্দ্রীভূত হয়েছে হাজার বছরেও পুর্বে । চতুর্থ শতাব্দীর দিকে আরাকান দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রাচীন ভারতীয় রাজ্যগুলির মধ্যে একটি অন্যতম রাজ্য হিসাবে ছিল স্বীকৃত। প্রথম আরাকানি রাজ্যটির রাজধানীর নাম ‘ধনিয়াওয়াদি’। এলাকাটি আরাকানের বর্তমান শিটো (Sittwe) শহড় হতে প্রায় ১৮০ মাইল উত্তর পুর্ব দিকে অবস্থিত , সেখানে গড়ে উঠেছিল বেশ কিছু বৌদ্ধ মন্দির।

ছবি-২০ : একটি ধনিয়াওয়াদি বৌদ্ধ মন্দিরের আভ্যন্তরীন দৃশ্য



আরাকানের আদি ইতিহাস অনুযায়ী, ৫৫৪ খ্রিষ্রপুর্বাদ্ধে মহামুনি গৌতম বুদ্ধ প্রাচীন ধনিয়াওয়াদি শহরে আগমন করেন। আরাকান রাজা ‘সুন্দর সুরিয়া’ সেখানে একটি বৌদ্ধ মন্দির নির্মান করে তার মধ্যে একটি বুদ্ধ মুর্তী স্থাপন করেন । বৌদ্ধ মন্দিরটি মিয়ানমারের সবচেয়ে সম্মানিত প্রাচীন সাইটগুলির মধ্যে অন্যতম একটি। মহামুনি বুদ্ধ মুর্তীটি ব্রোঞ্জ, রূপা ও সোনা সহ পাঁচ প্রকারের মূল্যবান ধাতু সমাহারে গড়া হয়েছিল ।

ছবি -২১ : পঞ্চ ধাতুতে গড়া বৌদ্ধ মন্দিরে স্থাপিত মহামুনি বৌদ্ধ মুর্তী



১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে, রাজা বোডাপা কর্তৃক আরাকান দখলে নেয়ার পরে বৌদ্ধ মুর্তীটি আরাকান হতে হরণ করে অমরাপুরা (বর্তমানে মান্দালয়) নিয়ে যাওয়া হয় ।

ছবি-২২ : বার্মিজ রাজা বোডাপার রাজ প্রাসাদ



এ অঞ্চলের শহড়গুলিতে প্রাপ্ত সংস্কৃত শিলালিপি ইঙ্গিত দেয় যে প্রথম আরাকানি রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ভারতীয়রা। দশম শতকে আরাকান অঞ্চলটি পুর্ব বঙ্গের চন্দ্র রাজবংশের শাসনাধীন ছিল প্রায় ১৫০ বছর ।
সে সময়কার হস্তি দন্ত আইভরির উপর তৈরী চন্ত্র সদৃশ্য একটি বিখ্যাত শিল্প কর্ম রক্ষিত আছে Los Angeles County Museum of Art গ্যলারীতে ।
ছবি -২৩ : বর্তমানে চন্ত্র রাজ আমলের চিত্র কর্মটি Los Angeles County Museum of Art গ্যলারীতে রক্ষিত



আরাকানে ইসলাম আগমন পর্ব

বঙ্গোপসাগরের উপকুলবর্তী হওয়ায় মৌর্য সাম্রাজ্যকাল হতেই বার্মার সাথে সমুদ্র পথে বানিজ্য এবং বর্হিবিশ্বের সংস্কৃতি , রীতি নীতি ও প্রথা বিনিময়ের জন্য আরাকান একটি গুরুত্বপুর্ণ কেন্দ্র বিন্দুতে পরিগনিত হয়েছিল । উল্লেখ্য যে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য প্রতিষ্ঠিত মৌর্য সাম্রাজ্য ৩২২ - ১৮৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত ভৌগোলিকভাবে প্রাচীন ভারতবর্ষের প্রায় সকল অশংই শাসন করেছিল । পাতালিপুত্র (আধুনিক পাটনা) ছিল এর রাজধানী । আরব বণিকেরাও তৃতীয় শতাব্দী থেকে আরাকানে পৌঁছানোর জন্য বঙ্গোপসাগর ব্যবহার করত।

ছবি -২৪ : আরব বণিকরা তৃতীয় শতাব্দী থেকে আরাকানে পৌঁছানোর জন্য বঙ্গোপসাগর ব্যবহার করত।



ইসলামের আর্বিভাবের পর আরব বণিকরা ৮ ম শতকে সেখানে বসবাসকারী আরাকানীদের মধ্যে ধর্ম প্রচার কার্যক্রম শুরু করে এবং অনেক স্থানীয় আরাকানী জনগুষ্ঠির লোকজন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। কিছু গবেষক ধারণা করেছেন মুসলমানরা ভারত এবং চীন অঞ্চলে ভ্রমণের জন্য বাণিজ্য পথ ব্যবহার করেছে সিল্ক রোডের একটি দক্ষিণ শাখা ভারত চীন ও বার্মার সাথে যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত হত ।

ছবি-২৫ : সিল্ক রুট / সিল্ক রোডের সীমা (লাল চিহ্ন ভূমি রুট এবং নীল চিহ্ন সমুদ্র / জল পথ নির্দেশ করছে )


ছবি-২৬ : সিল্ক রুটে চলা একটি বানিজ্য কাফেলা


ছবি-২৭ : সিল্ক রুটে নৌপথে চলাচলকারী পাল তোলা একটি সামুদ্রিক জনযান


নবম শতকের পর থেকে আরাকানের সীমান্তবর্তী দক্ষিণপূর্ব বঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে আরব বনিকদের বানিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর রেকর্ড রয়েছে । ঐতিহাসিকভাবে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ইতিহাস এখান হতেই চিহ্নিত করা হয়েছে ।

স্থানীয়দের ইসলাম গ্রহণের পাশাপাশি আরব বণিকরা স্থানীয় মহিলাদের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং পরে আরাকানে বসতি স্থাপন করে। ইসলামে ধর্মান্তকরণ ও বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের ফলে আরাকানের মুসলিম জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। তবে সেখানকার বেশীরভাগ রোহিঙ্গারাই বিশ্বাস করে যে তাদের অনেকের পুর্বপুরুষ এই ধর্মান্তরিত প্রাথমিক মুসলিমদের বংশধর হলেও তাদের বৃহত্তম অংশই মুলত আদি আরাকানী জনগুষ্ঠি।

অস্টম শতাদ্বির শেষার্ধ হতে ঐথালী রাজবংশ( ৭৮৮-১০১৮),লেমব্রো রাজবংশ ( ১০১৮-১১০৩), পারিন রাজবংশ ( ১১০৩-১১৬৭), রিট রাজবংশ ( ১১৬৭-১১৮০), পিনসা রাজবংশ ( ১১৮০-১২৩৭),ল্যাংঘিট রাজবংশ ( ১২৩৭-১৪০৬ ) আরাকানে রাজত্ব করেছে । এরা সকলেই ছিলেন বৌদ্ধ রাজা। এই ল্যাংঘিট রাজবংশের শেষ রাজা হলেন মিং মন স, তিনি ২৪ বছর বাংলায় সুলতানদের জিন্মায় নির্বাসিত থেকে বাংলার মুঘল শাসকদের সহায়তায় আরাকানে মারোক –ইউ বাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন । মারোক - ইউ রাজত্বের বর্তমান দুরাবস্থার কিছু কথা এই পোষ্টের প্রারম্ভে সুচনা পর্বে বলা হয়েছে । এই বিষয়ে পরবর্তীতে আরো কিছু কথা বলা হবে তবে এর মাঝে আরাকানে ঢুকে পরা রাখাইনদের বিষয়ে কিছু কথা এখানে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে বলতেই হয় ।

নবম হতে পঞ্চদশ শতকে মুল বার্মা অঞ্চল হতে আরাকানে আগত রাখাইন জনগুষ্ঠি

আপার বার্মা/মিয়ানমার অঞ্চলে কয়েকটি নগর নিয়ে খ্রিষ্টীয় ২য় হতে ১১তম শতকে পিইউ –সিটি স্টেটস(Pyu city states) নামে একটি রাজ্য গড়ে উঠেছিল । এই সিটি স্টেটটি গড়ে উঠেছিল পিউ পিপল নামে পরিচিত তিব্বতি –বামান অভিবাসনকৃত জাতিগুষ্ঠি দিয়ে, যার সঠিক ইতিহাস বলতে গেলে এখন বিলুপ্ত । হাজার বছরের এই যুগকে পিউ সহস্রাব্দ(Pyu millennium) হিসাবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে । এই নগড় রাজ্যে প্রাচীর বেষ্টিত পাঁচটি বড় বড় শহড় ছাড়াও খনন কার্যের মাধ্যমে ছোট ছোট আরো কয়েকটি শহড়ের সন্ধানও সেখানে পাওয়া গেছে ।

ছবি- ২৮ : প্রাচীন পিইউ সিটি স্টেটস (Pyu city-states.)



চীন ও ভারতের সাথে এই নগর রাজ্যের ব্যবসা বানিজ্যের কারণে সেখানকার বৌদ্ধ এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ধারণার আমদানি ঘটে পিউ রাজ্যে, যা বার্মার সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক সংগঠনের উপর একটি স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করে।
ছবি-২৯ : প্রাচীন পিইউ প্যগোডা ডিজাইনের উপর ভিত্তি করে ১১শতকে পিইউ সিটি স্টেটের পাগানে নির্মিত শিউজন প্যাগুডা



প্রাচীন বার্মিজ পিইউ সিটি স্টেটে বসবাসকারীদের মধ্যে রাখাইন ছিল অন্যতম একটি জাতিগুষ্ঠি । খ্রিস্টিয় ৯ম শতকে আরাকান পর্বতমালার গিরিপথ বেয়ে আরাকানে রাখাইনদের আগমন ঘটে ।

ছবি-৩০ : আরাকান পর্বতমালা


এখানে উল্লেখ্য যে দশম শতাব্দী পর্যন্ত বার্মিজরা আরাকানে কোন বসতি স্থাপন করেনি, তাই রাখাইনরা হল আরাকানে আগত সর্বশেষ গুরুত্বপুর্ণ জাতিগুষ্ঠি । তাদেরকে মুলত বামানদেরই একটি অগ্রবর্তী বাহিনী বলে মনে করা হয় যারা নবম শতাব্দীতে আরাকানে এসে বসবাস শুরু করে। তারা কোনক্রমেই "ধন্যাওদীয়া, ওয়াদি ও ওয়াইটলি রাজবংশের মত বংশানুক্রমিকভাবে একই রকম আদি আরাকানী হতে পারেনা। রাখাইন জনগুষ্ঠির নাম প্রথম পাওয়া যায় দ্বাদশতম শতকে আরাকানে প্রাপ্ত শিলালিপীতে । ডঃএস বি কানানগুর মতে বামানরা প্রথম রাখাইন নামটি চালু করে ১২ হতে ১৫ তম শতকে যা তোপারাং সাগিয়াং শিলালিপিতে দেখতে পাওয়া যায় । এর আগের প্রাচীন যুগের কোন শিলালিপি কিংবা পান্ডুলিপিতে রাখাইন নামে কোন কিছুরই উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়নি । আজকের যুগের রাখাইন ভাষা কিংবা বার্মিজ ভাষার কোন চিহ্নই খুঁজে পাওয়া যায়নি । বরং সে যুগের শিলালিপি গুলিতে বাংলার আদি লিপি পালি ও সংস্কৃত দেখতে পাওয়া যায় যা সেময়ে সেখানে বাংলা সংস্কৃতিরই ইঙ্গীত বহন করে ।

ছবি-৩১ : বাংলার আদি লিপি পালি ও সংস্কৃত খোদিত শিলালিপি



ছবি -৩২ : প্রাচীন আরাকানে রোহিঙ্গা ইসলামিক মুদ্রা প্রচলণের নিদর্শন রয়েছে ভুরী ভুরী



তা্ই বিবিধ প্রামান্য কারণে রোহিঙ্গারা হল আরাকানে আদি ভারতীয় অধিবাসী যাদেরকে দেখতেই কেবল বাংগালীর মত দেখায় , মুলত তারা একটি সম্পুর্ণ পৃথক আরাকানী আদিবাসী জাতিসত্তা ।

প্রাচীন বার্মিজরা রাখাইন নামটি প্রথমে ১২ শতকের শিলালিপিতে দেখার কথা উল্লেখ করে। ঐতিহাসিক এস.বি. কারাঙ্গো বলেন রাখাইন নামটি বার্মান কর্তৃক দেওয়া হয়েছিল এবং এটি ১২ হতে ১৫শ শতকের তুপরান সাগাইং শিলালিপিতে দেখতে পাওয়া যায়। প্রাথমিক পর্যায়ের রাখাইন ভাষার উপর কোন প্রাচীন শিলালিপি এখনো পাওয়া যায় নি, বরং আরাকানে পাওয়া প্রাচীন শিলা লিপিগুলিতে খোদাই করা যে লিপি দেখা যায় তা পালি, সংস্কৃত ও ব্রাম্মী ভাষা লিপি যা সেখানে বাংলা ভাষারই আদি লিপি ও সংস্কৃতিরই ঈঙ্গীত দেয় । অতএব আগের রাজবংশগুলি ভারতীয় বলেই মনে করা হয় এবং তার প্রজারাও ছিল বাংলা সংস্কৃতির প্রাধান্য বিস্তারকারী সংখ্যাধিক্য জনগুষ্ঠি । বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে রাখাইন উগ্রবাদী বৌদ্ধ ও মিয়ানমার সরকার এবং তাদের বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায় অনেক আগে হতেই আরাকান ও বার্মিজ মিউজিয়াম সমুহে প্রদর্শিত প্রাচীন শিলালিপীতে খুদিত লিপি গুলিকে রাখাইন ভাষার ( যা মুলত বার্মিজ ভাষাররই নামান্তর মাত্র) প্রাচীন আদিলিপি হিসাবে দর্শকদের কাছে পরিচিত করার জন্য শিলালিপি গুলির ইতিহাস বিবরনীতে উল্লেখ করে আসছে, মোটা দাগে এটাকে সজ্ঞানে ইতিহাস বিকৃতি বলা যায়, আর মিথ্যুক আর নীতি বর্জিত বার্মিজ মগেরা পারেনা এ হেন কোন কাজ নেই জগতে যা তাদের বর্তমান কর্মকান্ড হতে আজ বিশ্বের সর্বত্র পরিচিতি পেয়েছে ।

লেমব্রো নদী অববাহিকায় আদি আরাকানী রোহিঙ্গা জাতিগুষ্ঠির লোকেরা অনেক বড় বড় শহড়ের পত্তন ঘটায় । এই শহড়গুলির মধ্যে সাম্বোক, পিনসা, পেরটাঙগু, লাংগ্রিট অন্যতম । ১৪০৬ সালে বার্মিজ রাজা মিংখাউন ১০০০০ সৈন্যের এক শক্তিশালি বাহিনী নিয়ে আরাকান সিটিগুলিতে আক্রমন করে । বার্মার আক্রমণে মারোক –ইউ রাজ্যের আরাকানী শাসক মিন মন স প্রতিবেশী দেশ বাংলায় আশ্রয় নেন। আরাকান দখলের পর বার্মিজ অনুগত নৃপতি আনারাথাকে বার্মিজরা আরাকানের শাসক হিসাবে নিয়োজিত করে ।

রাজা মিন মন স বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দীন আজম শাহের আশ্রয়ে নির্বাসিত জীবন যাপন করেন । রাজা মিন মন স এর সাথে এক বিশাল অনুসারীও বাংলায় আশ্রয়ের জন্য তার সহগামী হয় । এটাই আরাকান হতে ব্যাপক আকারে আরাকানীদের বাংলায় আশ্রয় গ্রহন ।

মিন মন স দির্ঘ ২৪ বছর বাংলায় রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন । ১৪৩০ সনে সুলতান গিয়াউদ্দীন তার সেনাপতি ওয়ালী খানের অধীনে ২০০০০ সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী আরাকানে প্রেরণ করে মিং সন মনের হারানো সিংহাসন পনুরুদ্ধার করে দিতে সক্ষম হন । রাজা মিন মন স তার সিংহাসন ফিরে পেয়ে ১৪৩০ সনে আরাকানে মারোক- ইউ নামে একটি রাজ বংশের পত্তন ঘটান, মারোক- ইউ রাজ্যের স্থপতি হিসাবেও ইতিহাসে তিনি স্বিকৃতি পান । ১৪০৬ হতে ১৪৩০ পর্যন্ত বার্মিজ অনুগত রাজারা আরাকানে রাজত্ব করেছে , তবে এই স্বল্প সময়ে সেখানে ঘন ঘন রাজা বা শাসকের পরিবর্তন হয়েছে, যার অর্থ হলো সেখানে একটি রাজনৈতিক অস্থিতীশীল অবস্থা সতত বিরাজমানছিল, এটা মুলত বার্মিজ অনুগত রাখাইন জনগুষ্ঠিরর কুট কৌশলেরই ফসল । বার্মিজদের প্ররোচনায় আরাকানী রাখাইনেরা এ ধরনের কুটকৌশল পুর্বেও যেমন করেছে এখনো তেমনি অমানবিকভাবে রোহিরঙ্গাদের উপর করে যাচ্ছে । যাহোক এবার নজর দেয়া যাক মারোক- ইউ রাজ্যে রোহিঙ্গা উপাক্ষনে ।

মারোক- ইউ রাজ্য

রাজা মিন মন স কতৃক প্রতিষ্ঠিত রাজ্যটির ব্যপ্তিকাল ছিল ১৪৩০ থেকে ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ৩৫৫ বছর । এই রাজ্যটি আরাকান (বর্তমান মিয়ানমার এর রাখাইন রাজ্য এবং বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ নিয়ে গঠিত ছিল ।

ছবি-৩৩ : মারোক- ইউ রাজ্যের সীমানা চিহ্নিত ( ডট চিহ্নিত অংশ) ম্যাপ


রাজা মিন মন স বঙ্গের সুলতানদের কিছু অঞ্চল সমর্পন করেন এবং এলাকাগুলিতে তাঁর সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেন। সামন্ত রাজার স্বীকৃতির প্রেক্ষিতে আরাকানের বৌদ্ধ রাজারা ইসলামিক শিরোনাম গ্রহণ করেন এবং রাজ্যে মুঘল বাংলার মুদ্রা দিনার ( স্বর্ন মুদ্রা) ব্যবহার করেন। মিন মন স এক পিঠে বার্মিজ বর্ণমালা এবং এবং অপর পাশে ফার্সি বর্ণমালার দিয়ে তাঁর নিজস্ব মুদ্রাও তৈরি করেছিলেন।

আরাকানে মুঘল বাংলার সামন্ত রাজত্ব সংক্ষিপ্ত ছিল। ১৪৩৩ সালে সুলতান জালালুদ্দীন মুহম্মদ শাহের মৃত্যুর পর মারোক –ইউ এর রাজা নারায়িখেল্লার উত্তরাধিকারীরা বাংলাকে আক্রমণ করে এবং ১৪৩৭ সনে রামু এবং ১৪৫৯ সনে চট্টগ্রাম দখল করে নেয়। আরাকান রাজ ১৬৬৬ সন পর্যন্ত চট্টগ্রামকে ধরে রাখে।

বাংলার সুলতানদের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পরও আরাকানি রাজারা মুসলমানদের পদবী বজায় রাখার প্রথা অব্যাহত রাখে। বৌদ্ধ রাজারা নীজদেরকে মুঘল সুলতানদের সাথে তুলনা করে এবং মুগল শাসকগণের কাঠামোতে নিজেদের গঠন করে। তারা রাজকীয় প্রশাসনে মর্যাদাপূর্ণ পদে মুসলমানদের চাকরি অব্যাহত রাখে। তাদের মধ্যে কয়েকজন আরাকানি আদালতে বাংলা, ফার্সি ও আরবি লেখক হিসেবে কাজ করেছেন, তারা বৌদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও, প্রতিবেশী বাংলার সুলতানাত থেকে ইসলামিক ফ্যাশান গ্রহণ করেছেন।

উল্লেখ্য যে সে সময়ে চট্টগ্রামে ঘাটি করে বসা পর্তুগিজ উপস্থিতি বেশীদিন স্থায়ী হতে পারেনি । বাংলার সুলতানের পতন এবং আরাকান রাজ্যের মরোক ইউের উত্থানের ফলে ভূ-রাজনৈতিক অবস্থার উপর একটি বড় ধরণের প্রভাব পরে । সে সময়ে জটিল রাজনৈতিক সমীকরনের কারণে মুঘল সাম্রাজ্য, মরোক ইউ রাজ্য, বার্মিজ সাম্রাজ্য এবং ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রধান একটি কেন্ত্র বিন্দু হয়ে ঊঠে চট্টগ্রাম । উল্লেখ্য যে পর্তুগীজরা আরাকানের ডিয়াঙ্গাতে ক্রিতদাস বেচা কেনার জন্য পর্তুগাল বসতি স্থাপন করেছিল । তারা মারোক ইউ রাজ্যের উপকুলীয় অঞ্চল হতে লোকজন অপহরন করে আরাকানের ডিয়াঙ্গা, ওড়িষ্যার পিপলি ও দাক্ষিনাত্যে দাস হিসাবে চালান করে দিত ।

ছবি -৩৪ : অরাকানের দিয়াঙ্গিরিতে পর্তুগীজ সেটেলমেন্ট


মারোক ইউ এর রাজা ১৬০৭ সালে আরাকানের ডিয়াঙ্গায় অবস্থিত পর্তুগিজ বসতীর ৬০০ জন সদস্যকে হত্যা করে।
পর্তুগিজ বসতির দাস নির্যাতন কেন্দ্রটি কালের নিষ্ঠুর কষাঘাতে আজ একটি ধংসস্তুপে পরিনত ।

ছবি -৩৫ : পর্তুগীজ সেটেলমেন্টে দাস নির্যাতন কেন্দ্রের ধংসাবশেষ


উক্ত ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় পরবর্তীকালে পর্তুগিজরা আরাকানী রাখাইন মগদের সাথে আতাত গড়ে তুলে । মুগল বঙ্গের বিরুদ্ধে পর্তুগিজ-আরাকানী মগ জলদস্যুতা ১৭ শতকে প্রবলভাবে বৃদ্ধি পায়। পর্তুগিজরা আরাকান উপকূলকে বিপন্ন করে তুলে, তারা বাংলার বরিশালের রাজার সম্পদও লুন্ঠন করে নিয়ে যায় ।

ছবি – ৩৬ : বঙ্গোপসাগরের উপকুল জোরে ভাসমান পর্তুগীজ জল দস্যুদের সমুদ্র তরী


প্রসঙ্গ ক্রমে উল্লেখ্য যে, মুঘল সুলতান এবং হিন্দু সামন্ত রাজাদের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহের কারণে মুঘল আমলে বরিশাল একটি আধা-স্বাধীন অঞ্চল হিসাবে থাকার সুবিধা ভোগ করে । বাকলা বা চন্দ্রদ্বীপ নামেও সেসময়ে বাংলার শস্য ভান্ডার হিসাবে বরিশাল পরিচিত ছিল ।

ছবি – ৩৭ : প্রাচ্চের ভেনিস হিসাবে খ্যাত বরিশালের একটি মসজিদ



ষোরষ শতকে মুঘল সাম্রাজ্যের ময়ূর সিংহাসনের দাবিদার বঙ্গের গভর্নর যুবরাজ শাহ সুজা ১৬৫৯ সনে তাঁর ভাই সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছে খাজার যুদ্ধ ক্ষেত্রে পরাজিত হয়ে পরিবার পরিজনসহ পালিয়ে আরাকানে আশ্রয় নেয়ার পরে আরাকানের ইতিহাসে ঘটে বেশ উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তারকারী অনেক ঘটনা ।

ছবি-৩৮ : বাংলার সুবেদার মুঘল যুবরাজ শাহ সুজা


ছবি -৩৯ : ১৬৬০ সনে উত্তর প্রদেশের ফতেপুরে খাজা রণক্ষত্রে সুজা ও আওরঙ্গজেবের মধ্যে যুদ্ধ ।


সুজা এবং তাঁর পরিবারসহ বিশাল এক লটবহর নিয়ে ২৬ আগস্ট ১৬৬০ তারিখে আরাকানে পৌঁছান। রাজা সাদু থুদহ্মা আরাকানে তাঁকে আশ্রয় দেন । ডিসেম্বর ১৬৬০ সনে আরাকানি রাজা নির্বাসিত যুবরাজ শাহ সুজার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাঁর স্বর্ণালঙ্কার হরণ করে নেয়, ফলে রাজকীয় মুঘল শরণার্থীগন একটি বিদ্রোহের দিকে অগ্রসর হয়। যদিও সুজার পক্ষে পাশ্ববর্তী মনীপুর রাজ্যে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল তথাপি বিভিন্ন অসর্থিতসুত্রের তথ্য অনুযায়ী শাহ সুজা এবং তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্য আরাকানিদের দ্বারা নিহত হয় বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে ।

যাহোক , আরাকানে থেকে যাওয়া সুজা ও তাঁর বহরের লোকজনদেরকে আরাকানের রাজকীয় সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয় এবং তাদের দিয়ে আরাকানীরা একটি শক্তিশালী তিরন্দাজ বাহিনী গঠন করে । বার্মীজ বাহিনীর বিজয়ের পুর্ব পর্যন্ত তারাই ছিল আরাকানের কিং মেকার।

তবে আরাকানীরা মুঘল বাংলার প্রতি তাদের বিদ্বেশ ও আক্রমনধারা অব্যাহত রাখে এবং ১৬২৫ সালে ঢাকা অভিমুখে একটি আক্রমন পরিচালনা করে । চট্টগ্রাম সহ বাংলার উপকুলীয় অঞ্চলে আরাকানী মগ ও পর্তুগীজ জল দস্যুদের উৎপাত ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। আরাকানী পর্তুগীজ জলদস্যুদেরকে কঠৌর হস্তে দমনের জন্য সম্রাট আওরঙ্গজেব বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খানকে নির্দেশ দেন ।

ছবি -৪০ : ময়ুর সিংহাসনে সমাসীন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব


শায়েস্তা খান ৬০০০ সৈন্যের এক বিশাল পদাতিক বাহিনী ও ২৪৪টি রনতরী নিয়ে মরোক ইউ রাজ্যাধীন চট্টগ্রামকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ পরিচালনা করেন ।

ছবি-৪১ : ১৬৬৬ সনে কর্ণফুলী নদীতে মুঘল ও পর্তুগীজদের মধ্যে সংগঠিত যুদ্ধের একটি চিত্র কর্ম


চট্টগ্রামকে আরাকানিদের হাত হতে দখলমুক্ত করার পর শায়েস্তাখান তার বাহিনী নিয়ে আরাকানের কালাদান নদীর পার পর্যন্ত অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখেন । সমগ্র আরাকানের উত্তরাংশ তাদের হস্তগত হয় ও সেখানে তারা সামন্ত রাজার অধীনে আরাকানের বিজিত অংশকে মুঘলদের করদ রাজ্যে পরিনত করেন । উত্তর আরাকানে সেখানকার মুসলিমরা কেন্দ্রিভুত হয় । মরুক ইউ ডাইনিস্টি অবশ্য আরাকানের অবশিষ্ট অংশে ১৮ শতক পর্যন্ত রাজত্ব করে । এটা বলা হয়ে থাকে যে মায়ু নদী অববাহিকার আরাকানী মুলমানেরা পাকিস্তানের সাথে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য কায়েদ আজম জিন্নার কাছে আবেদন জানিয়েছিল, কিন্তু ১৯৩৫ সনের ভারত শাসন আইনের বলে ভারত ও বর্মার বিষয়ে বৃটিশ রাজের তৎকালীন রাজনৈতিক জটিল অবস্থার কারণে জিন্না তাতে সায় দেন নি। দেশী বিদেশী বিভিন্ন ব্লগের লেখায় আরাকানী মুসলমানদের এই দাবীর কথাটা দেখা যায়, কিন্তু তারা সকলেই মুশি ইয়াগারের The Muslims in Burma গ্রন্থটিকে সুত্র হিসাবে ব্যবহার করেন । কিন্তু গ্রন্থটি যত্ন সহকারে পাঠান্তে এ বিষয়ে পরিস্কার কিছুর উল্লেখ আছে বলে দেখতে পাওয়া যায়নি, তবে আমার ভুলও হতে পারে । লিংক ফলো করে যে কেও ইচ্ছে করলে দেখে নিতে পারেন, কিছু পেলে পৃষ্ঠা উল্লেখ করে জানালে বাধিত হব ।

আরাকানে বার্মিজ আগ্রাসন

১৭৮৫ সালে বার্মিজ রাজা বোদাপা ৩০০০০ সৈন্য নিয়ে আরাকান আক্রমন ও তা দখল করার পরে ২০০০০ হাজার আরাকানীকে বন্দী করে নিয়ে যায়, ধংস করে দেয় অনেক মন্দির, উপসনালয়, মসজিদ, শিক্ষালয় ও মুল্যবান রাজকীয় গ্রন্থাগার । মহামুনীকে কেন্দ্র করে সেখানে গড়ে উঠা বৌদ্ধ স্পিরিটকে তারা স্তিমিত করে দেয়, সেখানে বৌদ্ধ মন্দিরে থাকা আরাকানী স্বাধিনতার প্রতিক মহামুনী বৌদ্ধ মুর্তীটিকে তারা হরন করে নিয়ে যায় অমরাপালে ।

বাংলার সুলতানদের নিকট হতে আরাকানীরা পরবর্তীতে পুর্ণ স্বাধিনতা পেলেও আরাকানী রাজারা পালি টাইটেলের পরিবর্তে মুসলিম টাইটেল ব্যাবহার করে । এটা মুঘলদের অনুকরনে নীজেদেরকে সুলতান হিসাবে পরিচয় দানের চেয়ে সেখানে বসবাসরত মুসলমান জনাধিক্যের কারণেই ব্যবহার করেছিল বলে ঐতিহাসিকদের ধারণা । কোর্ট কাচারী এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাতেও প্রাধান্য ছিল মুসলিম প্রথা ও রীতি নীতির । বৌদ্ধ রাজ্য হওয়া সত্বেও সেখানে রাজকীয় পদগুলি অধিষ্ঠিত করে রেখেছিল মুসলামানেরা ।

এটা সত্য বলে প্রতীয়মান যে মুসলিম সংস্কৃতি আরাকানে দীর্ঘদিন প্রাধান্য বজায় রেখেছিল । রাখাইন বৌদ্ধরা মুসলমানদের( রোহিঙ্গা) সাথে রোহিঙ্গা ভাষায় যোগাযোগ রক্ষা করত । তাই রোহিঙ্গারা কখনো রাখাইন ভাষা শিখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি অথবা তারা মুসলিম নামের পরিববর্তে রাখাইন কিংবা বার্মিজ নাম রাখার বিষয়টি বাধ্যবাধকতা হিসাবে ভাবেনি । তাই এ কথাটা একেবারেই সঠিক নয় যে রোহিঙ্গারা সদ্য আগত বিদেশী বিধায় বাখাইন আরাকানী ভাষায় কথা বলতে জানেনা , বরং এটাই সত্যি যে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি রাখাইনদের থেকেও ছিল সুপারিয়র । রোহিঙ্গাদের কোন বার্মিজ নাম নেই, তারা সুন্দরভাবে বার্মিজ ভাষায় কথা বলতে পারেনা, বার্মিজ হওয়ার প্রবনতা তাদের নেই, রোহিঙ্গাদেরকে বিদেশী ও নাগরিত্বহীন ইত্যাদি প্রবচন মিয়ানমারের স্বাধিনতা পরবর্তীকালে বার্মিজ মগদের একটি নতুন সংযোজন । বরং আরাকানে মারোক ইউ রাজাদের আমলে (যদিও দিল্লীর মুসলমান রাজাদের সাথে শেষদিকে তাদের সুসম্পর্ক ছিলনা ) মুসলিমরা আরাকানী শাসকদের দ্বারা বৈষম্যের শিকার হয়নি বরং আরাকান রাজ সভায় তারা উচ্চ পদে রাজ কর্মচারী হিসাবে নিয়োজিত ছিল । এই সমস্ত মুসলিম রাজ কর্মচারী ব্যতিত তাদের সুষ্ঠ রাষ্ট পরিচালনা সম্ভবপর ছিলনা মধ্যযুগীয় মারোক -ইউ পরিনত হতে পারতনা একটি সমৃদ্ধ রাজ্যে।

১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে বার্মিজ রাজা বোদাপা কতৃক মারোক- ইউ রাজ্যটি দখলের পর সেখানকার হাজার হাজার আদি আরাকানী ব্রিটিশ বঙ্গের প্রতিবেশী চট্টগ্রাম অঞ্চলে পালিয়ে যায় এবং বামারদের নিপীড়ন থেকে রক্ষা পায় । তারা ব্রিটিশ রাজের অধীনে তাদের সুরক্ষা কামনা করে । উল্লেখ্য যে বামারগন হলো মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় নৃতাত্বিক জাতিগুষ্ঠি । বার্মীজ রিতি নীতি ও সংস্কৃতির সাথের এদের ঘনিষ্ট মিল রয়েছে ।

ছবি -৪২ : রাস্ট্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় বামার জনগুষ্ঠিটিই এখন মিয়ানমারে সাংস্কৃতিক প্রাধান্য বিস্তারকারী জাতিগুষ্ঠি


এই বামার জনগুষ্ঠি নীজেদের বার্মীজ হিসাবেই সবসময় অভিহিত করে যদিও বার্মিজ বলতে সকল মিয়ানমারের নাগরিককেই বুঝায় । তারা যেমন নীজেদেরকে বার্মীজ বলে তেমনি ভাবে রোহিঙ্গাদেরকে এখন হতে বার্মীজ নাগরিক নামে অভিহিত করে তাদেরকে বার্মিজ নামেই পরিচিতি দেয়ার জন্য বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে পারে । মিয়ানমারের নাগরিক সে যে জাতিগুষ্টীরই হোক না কেন তাদেরকে বাংলাদেশী বাংগালী হিসাবে কোনমতেই মেনে নেয়া হবেনা । এরা বার্মিজ , হাজার বছর ধরে মিয়ানমারে বসবাসকারীগন যেমন করে সেখানকারকার নাগরিক ( যথা সেখানকার অন্য সকল আরাকানী রাখাইন জাতিগুষ্ঠি মিয়ানমারের নাগরিক ) তেমনি করে হাজার বছর ধরে রোহিঙ্গা নামে অভিহিত জনগুষ্ঠিকেও যৌক্তিক কারণে এখন হতে পরিচিত হবে শুধু বার্মিজ/মিয়ানমারী জনগুষ্ঠি হিসাবে । নৃতাত্বিক জনগুষ্ঠির মানুষ নীজ দেশের সীমানা পেরোলেই তার পরিচিতি হয় সে দেশের নামে, তেমনি করে মিয়ানমার সীমান্ত পারি দেয়া জনগুষ্টি পরিচিত হবে একনামে মিয়ানমারী হিসাবে । কামনা করি রোহিঙ্গারা যেন তার জাতিগত সাংস্কৃতিক পরিচয়টুকু বামান জাতিগুষ্ঠির মত হাসিমুখে তুলে ধরতে পারে নীজ দেশে ফিরে গিয়ে মিয়ানমারী হিসাবে। এটা তাদের মৌলিক মানবিক অধিকার যা দমিয়ে রাখার কোন নৈতিক ক্ষমতা নাই মিয়ানমারের দানবী রূপি সুচী সরকারের ।

ষাটের দশকে রোহিঙ্গা জাতিগুষ্টির উপরে নিপিরনের তান্ডব শুরুর পুর্ব মহুর্তেও রোহিঙ্গাদের মাঝেও ছিল আনন্দ উৎসব, মনে ছিল রঙিন খোয়াব ।

ছবি - ৪৩ : রোহিঙ্গা শিশুদের চোখে ছিল অনাগত দিনের রঙিন স্বপ্ন


আজ তাদের সব কিছু হল সমুলে বিনাস । বামান জাতিগুষ্ঠির মত তারাও চেয়েছিল সমানতালে বাচার অধিকার । বিনিময়ে তারা পেল শুধু দু:সহ বেদনাময় জীবনের পরিহাস । কুড়েঘরে বন্দি অসহায় রোহিঙ্গা মানবাত্মা আজ কেঁদে ফিরে দ্বারে দ্বারে ।

ছবি- ৪৩ : রোহিঙ্গা জনগুষ্টি আজ ভুলে গেছে তাদের এককালের আনন্দময় সামাজিক উৎসবাদি কথা।



আমরাও চাই নির্বাসিত রোহিঙ্গারা নীজ দেশে ফিরে গিয়ে জীবনকে আবারো ভরে তুলুক অনাবিল আনন্দ আর হাসি গানে, সুখ সমৃদ্ধি নিরাপত্তা ফিরে আসুক তাদের জীবনে ।

এখন রোহিঙ্গাদের সর্বস্য হরনকারী উগ্রপন্থি রাখাইন জাতিগুষ্টির বৌদ্বিষ্ট মানুষেরা মনের সুখে পালন করে রঙ্গীন উৎসবাদী । আদি আরাকানী জাতিগুষ্ঠি রোহিঙ্গাদেরকে দেশ হতে বন্দুকের মুখে বিতারণ ও জাতিসত্তা নির্মুলের অভিযানে রত এবং সেখানে পরবর্তীকালে উড়ে এসে জুরে বসা উগ্রবাদী রাখাইন বৌদ্ধিষ্ট জনগুষ্টি পৈশাচিক আনন্দ উৎসবে হয়েছে মত্ত ।

ছবি-৪৪ : আদিবাসী রোহিঙ্গাদের রক্ত মারিয়ে রাখাইন উগ্রবাদি বুদ্ধিষ্ট জনগুষ্ঠির ওয়াটার ফেসটিভাল উদযাপনের একটি দৃশ্য ।



উল্লেখ্য যে ১৭৯৯ সালে প্রকাশিত “বার্মা সাম্রাজ্য’’ গ্রন্থে ব্রিটিশ লেখক ফ্রাঞ্চিজ বুচানন –হ্যমিলটন উল্লেখ করেছেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর অনুসারী মুসলিমগন যারা অনেকদিন ধরে আরাকানে বাস করছে তাদের রুইঙ্গা (Rooinga) বা আরাকানের স্থানীয় বাসিন্দা কিংবা আরাকানের মূল নিবাসী (Native of Arakan) বলা হয় । মগ জাতি কখনই নিজেদেরকে আরাকানের স্থানীয় বাসিন্দা বা আরাকানের মূল নিবাসী (Native of Arakan) বলে উল্লেখ করেনি ।

রোহিঙ্গাদের প্রতি বার্মীজদের জাতিসত্তা নির্মুল নীতির প্রেক্ষিতে মোটা দাগে বলা যায় যে কাজ কিংবা ভালবাসার টানে কেও যদি আদিকালে দেশান্তরিত হয়ে শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে রোহিঙ্গা জনগুষ্ঠি হিসাবে মিয়ানমারে বসবাস করার পরেও তাকে যদি বাংলাদেশী চাটগাইয়া বলে অত্যাচার করে দেশান্তরী হতে বাধ্য করা হয়, তাহলে একই যুক্তিতে অনাদিবাসী সকল অস্ট্রেলিয়ান, আমিরিকান, কানাডিয়ান, নিইজিলান্ডান এমন কি মিয়ানমারের আরাকান হতে আগত বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসতি ম্থাপনকারী প্রায় ১৩ টি নৃতাত্তিক জনগোষ্ঠির লক্ষ লক্ষ মানুষকে মিয়ানমারে নির্বাসিত করার প্রশ্নটি উঠে আসতে পারে জোরে সুরে, তা কি আদৌ কারো কাছে কাম্য হবে বরং বার্মিজ মগদের হঠকারী অযৌক্তিক, অনৈতিক ও অমানবিক আচরণ গুলি অনুকরন করতে গেলে বৈশ্বিক পরিস্থিতি কেবলি জটিল হবে ।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, আরাকানে বার্মার আগ্রাসনে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে নন বেঙ্গলী যে সেটেলমেন্টগুলি গড়ে উঠেছে শতাব্দিকাল ধরে, তাদের সাথে বাংলাদেশ সবসময় মানবিক আচরণ করেছে,শতবছর ধরে বসবাসকারী নৃতাত্বিক জনগুষ্ঠির সকলকে নাগরিক সুবিধায় শান্তিতে বসবাসের সম্পুর্ণ নিশ্চয়তা দিয়েছে।মহল বিশেষের উস্কানীর ফলে রাজনৈতিক কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের সাথে সাময়িক একটি অশান্ত পরিবেশ সৃস্টি হলেও সেখানে শান্তি স্থাপন করা হয়েছে, মিয়ানমারের মগদের মত অমানবিক কোন আচরণ করা হয়নি তাদের সাথে । বরং তাদেরকে নাগরিক সুবিধা দেয়া হচ্ছে সকলের মত করে । আমাদের পাহাড়ী এলাকার পরিবেশ বিপন্ন হবে জেনেও সেখানকার নৃতাত্বিক জনগুষ্টিকে তাদের মত করেই জুম কৃষি কাজ করতে দেয়া হচ্ছে সাথে আরো উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল উৎপাদনের প্রযুক্তি যুক্ত করে ।

ছবি-৪৫ : পার্বত্য টট্টগ্রামে পহারে ধানের বাম্পার ফলনে জুম চাষীদের পাকা ফসল তোলার ধুম


প্রতি বছর সেখানে এখন চলে নবান্ন উৎসবে নৃত্য গীত গেয়ে জুমের ফসল উৎসর্গ ও নতুন ফসলের প্রদর্শন ।

যাহোক, মিয়ানমারে নির্যাতনের বীপরীতে বাংলাদেশের নৃতাত্বিক জনগুষ্ঠির আনন্দঘন শান্তিপুর্ণ জীবন যাপনের তুলনামুলক চিত্র প্রসঙ্গটি হতে এবার ফিরে যাওয়া যাক অমাদের মুল প্রসঙ্গে । আরাকানে বার্মিজ আগ্রাসন ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে একের পর এক ঘটে যাওয়া যুদ্ধ বিগ্রহ ও ঘটনা প্রবাহের কারণে সেখানকার আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চরম বিশৃংখলার সৃষ্টি হয় । উপরন্ত বঙ্গোপসাগরে মুঘলদের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে তাদের জলদস্যুতা এবং লাভজনক দাস বানিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। এই পরিবর্তীত অবস্থায় আরাকানের অনৈতিক সমৃদ্ধিও বন্দ হয়ে যায়, পরিনামে সেখানে শুধু দু:খ কষ্ট, দারিদ্রতা ও বষ্ণনাই বাড়ে ।দাস বানিজ্য, দস্যুতা এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদের সুযোগ নিয়ে বার্মিজরা আরাকান দখল করে নেয় এবং আরাকানের বিভিন্ন অঞ্চলকে তাদের সাথে সংযুক্ত করে নেয় । পরবর্তীতে আরাকান একটি ক্ষুদ্র পশ্চাদপর প্রদেশে পরিনত হয় , এটা মুলত তাদের নীজেদের মধ্যকার বিশৃংখলার পুরস্কার । তাদের কপালে নিয়তির অমোঘ বিধানে ভবিষ্যতের জন্যও এই পুরস্কার পাকাপুক্তভাবেই বরাদ্ধ হয়ে রইল। চীন রাশিয়া যতই মেগা প্রকল্প করুক সেখানে কেও পারবেনা তাদের বাঁচাতে। আমিরিকা ও ইউরোপিয় ইউনিয়ন তাদের উপরে বিবিধ প্রকারের নিষেধাজ্ঞা এই দিল বলে ।

বিশ্ব মিডিয়ায় উঠে আসছে আরাকানী উগ্রপন্থী রাখাইনে বুদ্দিষ্টরা কি ভাবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় রোহিঙ্গাদের উপরে নির্বিচারে গনহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে । সেনাবাহিনী সমর্থিত বার্মিজ সরকার ও উগ্রপন্থী মগরা দাবী করে আসছে যে রিফুজিরা হচ্ছে টাটগায়া রোহিঙ্গা । মিয়ানমারের নেত্রী সুচি সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই’ হিসেবে বর্ণনা করলেও জাতিসংঘ একে চিহ্নিত করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর দমন অভিযান থামাতে দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ অথবা সাহায্য বন্ধের মত দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক আইনপ্রণেতা ও কর্মকর্তা। ৬ ই অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে শুনানিতে এ মত উঠে এসেছে ।

তার পরেও বন্ধ হচ্ছেনা বার্মিজ মগদের এই নারকীয় তান্ডব লিলা । রাখাইন রাজ্য থেকে অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে। এখন এ সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইতোপূর্বে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ সংখ্যা ১০ লাখ হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল। কিন্তু রাখাইন রাজ্যে সহিংস পরিস্থিতি থামার কোন লক্ষণ নেই। গণহত্যার সাথে গণবিতাড়ন শুরু হয়েছে। ফলে রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের সকলেই এখন বাংলাদেশমুখী হতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্তও খোলা রাখা হয়েছে।

ছবি- ৪৬: ডেসপারেট রোহিঙ্গারা বার্মিজ সীমান্তের কাটাতারের বেড়া গলিয়ে বাংলা দেশে আসছে প্রতি দিন হাজারে হাজারে



ছবি-৪৭ : নাফ নদী ও সমুদ্রে নৌকায় ভেসেও জীবনের ঝুকি নিয়ে রোহিঙ্গারা পারি জমাচ্ছে বাংলাদেশ অভিমুখে



ছবি -৪৮ : বাংলাদেশও মায়ানমার সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গাদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খুলছে



রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরোচিত, নির্যাতনের ঘটনাবলী দিনে দিনে জাতিসংঘসহ সারাবিশ্বের দৃষ্টি কাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র , যুক্তরাজ্য সহ বিশ্বের শক্তিশালী বহু দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারের প্রতি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতার বিভিন্ন চিত্র। আহ্বান জানানো হচ্ছে এ বর্বরতা থামাতে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান মিয়ানমার সরকার এসবের কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছে না।

বিশ্ব চাপের মুখে গত ২রা অক্টোবরে মিয়ানমারের মন্ত্রী আলোচনার নামে ঢাকায় এসে যদিও বলে গেছে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের যাচাই বাছাই করে ফেরত নেয়ার জন্য ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করবে তবে সে ঘোষনা সম্পুর্ণ ভাওতাবাজী বলেই মনে হচ্ছে কিংবা এটা সময় ক্ষেপনের একটি টালবাহানা মাত্র।

ছবি -৪৯ : রোহিঙ্গাদেরে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য চুক্তির লক্ষ্যে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের প্রস্তাবনা


বিশ্ব চাপের মুখে মিয়ানমারের স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে বলা হয়েছিল, তাদের নিরাপত্তা দেয়া হবে। কিন্তু নিরাপত্তার বদলে ঘরে ঘরে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেনা সদস্যরা রোহিঙ্গাদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছে।

রাখাইনে রোহিঙ্গা বসতিগুলো এখন জনমানব শূন্য ভুতুড়ে রূপ নিয়েছে। রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে রাখাইন সন্ত্রাসীরা লাল পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে, সেদেশে আর একজন রোহিঙ্গাকেও থাকতে দেয়া হবে না। যেসব রোহিঙ্গা প্রাণভীতি নিয়ে সেখানে রয়ে গিয়েছিল তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ লাখ। ঘেরাও করে তাদের ওপর বলপ্রয়োগ করে এখন বের করে দেয়া হচ্ছে। ফলে তারাও এখন সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে চলে আসছে। অচিরেই রাখাইন রাজ্য রোহিঙ্গাশূন্য যে হতে যাচ্ছে তা অনেকটাই নিশ্চিত।
তাই কোন কিছুতেই কাজ হবে বলে মনে হয়না । মিয়ানমারকে ঠেসে না ধরে সবাই ঠেসে ধরেছে বাংলাদেশে এদেরকে স্থায়ীভাবে আসন গেড়ে বসার জন্য সহায়তা করতে । এদিকে এদেরকে সাময়িক আশ্রয় দানের জন্য ঠেংগার চরে একটি বড় আকারের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির নির্মান প্রকল্পের কাজ চলছে বলে মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে।

ফলশ্রুতিতে হাতিয়া উপজেলার নির্জন ঠেংগার চরে আলোর ঝলকানি, ইট-পাথরের স্তূপ, সুসজ্জিত হেলিপ্যাড, ঘাটে সদ্য নির্মিত জেটি, চারদিকে কেওড়াবাগান মাঝখানে নৌবাহিনীর অর্ধশতাধিক সদস্যের কর্মব্যস্ততা, জনমানবহীন গহিন চর যেন অন্যরকম হয়ে উঠেছে ধাপে ধাপে। এখানে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের চিন্তাভাবনা সরকার করছে ।

ছবি-৫০ : হাতিয়ার ঠেংগার চরে ( ভাষান চরে ) রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয়দানে চিন্তাভাবনার রূপকল্প



অন্যদের কি আর বলব, রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি সহানুভুতিশীল অনেকেই যথা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরোদগান বলেছেন বর্ডার খুলে সকল রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে, সকল খরচ নাকি তারাই দিবেন । রোহিঙ্গাদের জন্য হয়তবা কিছু সহায়তা ইতিমধ্যে তারা দিয়েছেন তবে কাজের কাজ মিয়ানমারকে ঠেসে ধরা কিংবা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে উপযুক্ত ভুমিকা নিতে বাধ্য করার বিষয়ে তাদের শিতল ভুমিকা অনেকটাই বিস্মিত করেছে ।

স্বার্থপরতার এই দুনিয়ায় কারো কাছ হতে বিপন্ন এই জনগুষ্ঠির জন্য কার্যকরী কোন সহায়তা পাওয়ার দুরাশার কথা ব্যক্ত করে আমার পুর্বের পোষ্টে যেমনি করে বিধাতার কাছে সকলে মিলে দোয়া চেয়েছিলাম, তেমনি করে এ মহুর্তেও তাই সকলে মিলে বিধাতার কাছে দোয়া চাওয়া ছাড়া উপায়তো কিছু দেখা যাচ্ছেনা । বন্ধু বেশে যারা আগে পাশে ছিল তারা ডিগবাজী খেয়েছে ,আমিরিকা সহ ইউরোপিয়ানরা এখনো কিছুটা পাশে আছে, তাই এখনো সময় আছে, রোহিঙ্গা বিষয়ে জাতীয় ঐক্য ধরে রেখে বিশ্বের সকল মানবতাবাদী জনগুষ্ঠির সহানুভিতিশীল মনোভাবটুকু কাজে লাগিয়ে ও বিধাতার আর্শীবাদ পুষ্ট হয়ে রোহিঙ্গাদেরকে নিরাপদে তার দেশে ফেরানোর উপযুক্ত কর্ম কৌশল অবলম্বন করাই এখন সময়ের দাবী ।

তথ্য সুত্র :
Andrew T. H. Tan (2009). A Handbook of Terrorism and Insurgency in Southeast Asia. Edward Elgar Publishing.
Arthur P. Phayre 2013). History of Burma: From the Earliest Time to the End of the First War with British India. Routledge.
Buchanan-Hamilton, Francis (1799). "A Comparative Vocabulary of Some of the Languages Spoken in the Burma Empire" (PDF). Asiatic Researches. The Asiatic Society. 5: 219–240.
D. G. E Hall, A History of South East Asia, New York, 1968.
Dr. Swapna Bhattacharya, “Islam in Arakan: An Interpretation from the Indian Perspective” a paper submitted to Arakan Historical Conference held in Bangkok on 22-23 November 2005,.
Fuxi Gan (2009). Ancient Glass Research Along the Silk Road. World Scientific.
Leider, Jacques P. (August 26, 2012). "Rohingya: A historical and linguistic note"(PDF). Network Myanmar. Network Myanmar.
"Rohingya etymology at Oxford Dictionary". Oxford University Press. Retrieved 11 February 2015.
"The battle over the word ‘Rohingya’". Washington Post.
The Rohingyas: Inside Myanmar's Hidden Genocide. Oxford University Press. .
Tun Shwe Khine (1993). A Guide to Mrauk-U, an Ancient City of Rakhine, Myanmar
Salma Ahmed Farooqui (2011). A Comprehensive History of Medieval India: Twelfth to the Mid-Eighteenth Century. Pearson Education India.
Thant Myint-U (2007), The River of Lost Footsteps: Histories of Burma, at Google Books
Wikipedia at https://en.wikipedia.org/wiki/Rohingya_people

ছবি সুত্র : গুগল অন্তর্জাল
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ভোর ৫:৪২
৬১টি মন্তব্য ৬০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×