somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছবি ব্লগ - একটি বোটানিকেল গার্ডেনের ভিতরে থাকা গ্রীনহাউজে কিছুক্ষন

২৭ শে জুন, ২০২১ রাত ২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গ্রীনহাউজে প্রবেশ করে প্রথমেই নজর পড়ল হাতের ডান দিকে থাকা মার্বেলপাথরে গড়া সিসিলির রূপকথার রাজার প্রতি।
জাহাপনাকে কুর্ণিশ করে পাশে দাঁড়িয় জানতে চেষ্টা করলাম উনাকে ।
১) সিসিলির রাজা রবার্টের সাথে কিছু আলাপন



আলাপের ভাষা ছিল পাশে থাকা তাঁর বিবরণ ফলক। ভাষান্তরে সংক্ষেপে জানা গেল উনি
ছিলেন সিসিলির এক অভিশপ্ত রূপকথার রাজা । দেবতার কোপে তাঁকে হতে হয়েছিল রাজ্যহারা। একাকী
নিঃসঙ্গ অবস্থায় বনে বাদারে ঘুরে বেড়ারার সময় তাঁর একমাত্র সঙ্গী ছিল একটি বানর । সকলেই তাঁকে ছেড়ে
গেলেও বানরটি তাকে ছেড়ে যায়নি। ভাবছিলাম উদ্যান কতৃপক্ষের কাছে এত এত নামি দামী ভাস্কর্য
থাকা সত্বেও শিল্পী জর্জ হেনরী পলিন ( ১৮৮৮-১৯৬২) কতৃক মার্বেল পাথরে সৃজিত বানরসহ এই মানব মুর্তীটিকে
কেন এই উদ্যানের সর্ব বৃহৎ গ্রীন হাউজের প্রবেশ পথের শুরুতেই ডান দিকে কেন স্থাপন করেছে?।ভাস্কর্যটির
ইতিহাস হিসাবে জানা যায় এটি আঠার শতকে উইলিয়াম লংফেলোর লেখা ‘টেল অফ কিং রবার্ট অফ সিসিলি’ কবিতা
হতে অনুপ্রাণীত। ভাবলাম শুধুই কি দৃষ্টি নন্দন, নাকি আরো কারণ কিছু আছে এর পিছনে।যাহোক, হয়ত বুঝা যাবে
এর পুরাটা একবারপরিদর্শন করে আসলে। এমনি একটি ইচ্ছা নিয়ে এগিয়ে গেলাম সামনে। পরিদর্শন শেষে
গবেষনার ফল যা পাব পোষ্টের শেষ দিকে তা জানিয়ে যাব ।

গ্রীনহাউজে ওয়ানওয়ে হাটা পথ। রাজার সাথে থাকা বানরের কথা ভাবছি আর দুদিকে থাকা বিভিন্ন দুর্লভ উদ্ভিদরাজি
দেখে চলছি । সবুজ প্রকৃতির গাছ গাছালী আর জীব বৈচিত্রের সাথে আদি মানবের কতই না ছিল পথ চলা। বিবিধ
কারণে প্রকৃতি আজ বিপন্ন সকলের তরে। খাবারের অভাবে পশু, পাখ পাখালী নাই বনে বাদারে। ফলজ বৃক্ষ আর উদ্ভিদ
এখন আর যায়না দেখা কোন উদ্যানে। আছে বাহারী জাতের ফূল আর কাষ্টসমৃদ্ধ কিছু গাছ গাছালী । বনের ফলাহারী
জীব খাবেটা কি? বনজ কলা এখন দেখা ভার। তবে এখানে দেখা গেল মাটি ফুরে কলাগাছে কি সুন্দর করে থোর গজায়,
কচি কচি মুচা কেমন করে চোখ মেলে। মানব আর ফলাহারী বানরকুল হবে ব্যকুল এমনতর দৃশ্য দেখে ।
২) মাটি ফুরে বেরোতে না বেরুতেই কলাগাছে ধরা থোর হতে কচি কচি মোচাগুলি চোখ মেলেছে



উদ্যানের ফুল আর ফলের জন্য ক্ষতিকর পোকা বড়ই শংকার কারণ। তাই খুঁজে খুঁজে মাছি আর পোকা মারার জন্য
পাকৃতিক ব্যবস্থা যথা ফ্লাই ইটার জাতীয় সুন্দর সুন্দর তরুলতা করেছে এই গ্রীন হাউজের শোভাবর্দ্ধন। দর্শক অবাক
হয়ে দেখছে মাছি কিংবা পোকা ফুলের পাপড়িতে মেলে ধরা ফাঁদে পা দিলে, কেমন করে চলে যায় ফুলটির
উদরে , অবাক করা কান্ডই বটে!
৩) ফ্লাই ইটার বা মাছি ভক্ষনকারী প্লান্ট



গ্রীন হাউসের এই কর্ণারে এক চক্কর দিয়ে ফিরে এলে প্রস্থানের পুর্বেই হাতের ডান দিকে দৃষ্টি পরবে এই
স্টেপিং স্টোন ভাস্কর্যের দিকে ।
৪) স্টেপিং স্টোন তথা পাথরে পদক্ষেপ



শিল্লী উইলিয়াম হ্যমো থর্নিক্রফট ( ১৮৫০-১৯২৫) এর সুনিপুন হাতে শ্বেতশুভ্র মার্বেল পাথরে গড়া ভাস্কর্যটিতে
দেখা যায়একজন সুন্দরী তরুনি তার ছোট্ট শিশু ভাইকে কুলে করে ছোট নদীর তীরে গিয়ে পানির কাছে শিলাতে
পা রেখেছে। ভাস্কর্যটি শুধু দৃষ্টিনন্দনই নয়, এর রয়েছে একটি ইঙ্গিতময় দিক। তথা ডানে মোর নিয়ে এই আঙ্গিনায়
প্রবেশ করলে চোখে পড়বে পাথরের বুকে কেমন করে জন্ম নিয়েছে বাহারী ক্যাকটাস। স্টেপিং স্টোন ভাস্কর্যটি
স্বার্থক প্রতিস্থাপনই বটে ।
৫)পাথরের ফাঁকে ফাঁকে বেড়ে উঠা বাহারী ফনিমনসা জাতীয় ক্যকটাস



এই বিশাল লম্বা ফনিমনসা জাতীয় ক্যাকটাসির দিকে তাকিয়ে মনে পড়ল গত এক যুগ ধরে আমার প্রিয় কন্যা তার
ঘরের ভিতরে জানালার কাছে সখ করে যে ক্যকটাস করেছে লালন পালন,তা বড় হয়ে এতটুকু লম্বা হতে না জানি
লাগবে কত বছর ক্ষন। তাই মনে মনে কামনা করি মানব সেবায় রত ডাক্তার মেয়েটি আমার যেন পায় ততটুকু
দীর্ঘ জীবন ।
৬) গৃহকোণে বেড়ে উঠা আনন্দময়ী ছোট্ট একটি ক্যাকটাস ভুবন



অর্কিড মেনটিস এর ছবি আমরা দেখি সর্বত্রই,এ ব্লগেও দেখা যায় অনেক ব্লগারের নিকেই। প্রার্থনারত এই অর্কিড
মেনটিসের চাক্ষুষ দেখা মেলা ভার, যদিউ সৌন্দর্য বিতরনে এরা বড়ই উদার। অর্কিড মেনটিস যে শুধু প্রার্থনাই
করে তা কিন্তু নয়, তারা বৃক্ষের মরা পচনশীল ডালকে আশ্রয় করে মৃত প্রায় গাছের শোভাও বর্দ্ধন করে।
৭) মৃতপ্রায় গাছের শোভা বর্দ্ধনকারী অর্কিড মেনটিস



কন্টকময় দৃষ্টি নন্দন ফনিমনসার ভুবন পেরিয়ে নির্গমন প্রান্তে দেখা মিলল শিল্পী এডউইন রসকো মুলিনস
(১৮৪৮-১৯০৭) এর হাতে মর্মর পাথরে গড়া সৃষ্টির প্রথম মানব হযরতত আদম ( আ) এর ছেলে কাবিলের
একটি অনুশোচনাকাতর ভাস্কর্য।পাশে থাকা ফলকে ভাস্কর্যটির বিবরণে রয়েছে লেখা, হাবিলকে হত্যাকারী
কাবিল তার কৃত পাপ কর্মের জন্য বড়ই অনুশোচনা কাতর, এ ছাড়া তার উপরে রয়েছে প্রভুর অভিশাপ ,
তার বংশ যেথায় ছড়াবে, সেথায় মাটিতে শষ্য দানা না ফলবে (বাইবেল, জেনেসিস ৪.১৩)।একথা জেনে মনে
বাজে, পৃথিবীর মরুভুমি অঞ্চলে যেথায় শস্যদানা না ফলে, সেথায় মনে হয় কাবিলের বংশধর বেশী বসবাসে।
তাদের বসতি এলাকায় শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে হানা হানি মারা মারি চলে। বেশীরভাগ নবীই তাই মনে হয়
আবির্ভুত হয়েছেন পৃথিবীর মরু অঞ্চলে। শষ্য শ্যমলা আমরা সেই পুণ্যবান হাবিলের বংশধর তাতে সন্দেহ না
জাগে। তাই কৃতজ্ঞতা জানাই প্রভুর তরে।

কাবিলের ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছি সকলেই যদি নীজের পাপের
জন্য এমনি অনুশোচনায় ভুগত তাহলে কতই না মঙ্গলময় হতো।
জগত মুক্তি পোতো পাপের ভার হতে ।
৮) অনুশোচনা কাতর কাবিলের একটি ভাস্কর্য



শুধু কি তাই, ক্রিতদাস প্রথা শুরু ও বিকাশের ধারাতেও ঐ ধুসর মরু অঞ্চলই বেশী দায়ী ।
অথচ ক্রিতদাসরাই বেশী অবদান রেখেছে প্রকৃতিকে শস্য শ্যামল করে গড়ে তুলতে।
এই উদ্যানে তাই শিল্পী এন্টিনিউ রোসেটির ( ১৮১৯-১৮৯১) হাতে গড়া একজন নিউবিয়ান ক্রিতদাসের ভাস্কর্য
শোভা পায়। উল্লেখ্য মিশরের দক্ষীনাঞ্চল ও সুদানের উত্তরাঞ্চলের বিস্তির্ণ এলাকায় ছিল প্রাচীন নিউবিয়ান গোত্রের
বসবাস। সেখানে ক্রিতদাস নির্যাতন চরমে পৌঁছে গিয়েছিল এই কিছুদিন আগেও।সে সময়কার ক্রীতদাস নির্যাতনের
কথা ছড়িয়ে আছে ইতিহাসের পাতায় পাতায়। আগ্রহী পাঠক ইচ্ছে করলে এখানে গিয়ে এই ছবিটি দেখে আসতে পারেন
এই ভাস্কর্য দেখে ও এর বিবরণ পাঠে এ প্রজন্ম জানতে পারবে ক্রিতদাস প্রথার সেই ভয়াল দিনগুলির কথা।
উদ্যান কতৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাতেই হয়
৯) দি নিউবিয়ান স্লেভ


১০) এই উদ্যানের গোল্ডফিসগুলির মত ছবি ব্লগ প্রতিযোগীতার স্বর্ণপদক কারো না কারো জালে ধরা দিবেই!!



সিসিলির রাজার বিষয়ে বলা কথামালা মনের মধ্যে গেথেই ছিল । গ্রীন হাউজ হতে বের হয়ে সারা উদ্যান ঘুরে
না দেখতে পেলাম কোন ফলজ বৃক্ষ, না দেখতে পেলাম কোন ফলাহারী বনজ প্রাণী বা পক্ষিকুল । তবে অবশেষে
দেখা গেল বাগানের একপ্রান্তে ষ্টোর রুমের কাছাকাছি এক নির্জন জায়গায় কাঠের বেড়ার উপর বসে লেজের শোভা
প্রদর্শন করে কাঠবিড়ালী একটি দুহাত ধরে কুটকুটিয়ে খাচ্ছে একটি অচেনা ফল। দুর হতেই উনাকে ধারণ করলাম
ক্যামেরার খাপে । মনে পড়ল জাতিয় কবি কাজী নজরুলের খুকী কবিতায় থাকা কবিতার সেই বিখ্যাত চরণখানি -
১১) কাঠ বেড়ালি কাঠ বেড়ালি, পেয়ারা তুমি খাও, গুড় মুড়ি খাও ……



হৃদয় জুড়ানো মনোরম দৃশ্যপট দেখা হতে বিদায় নিয়ে এই ছবি ব্লগ প্রতিযোগীতায় চলেই এলাম ।


ছবিসুত্র : নীজের মোবাইলে তোলা । স্থান একটি ব্যতিত অন্যগুলি হাইল্যাল্ডের একটি বোটানিকেল গার্ডেন ,
তারিখ ; ২৫শে জুন ২০২১, সময় রোদ্রজ্জল অপরাহ্ন বেলা।
অন্যটি নীজের গৃহান্তরে থাকা ছোট্ট অর্কিড ভুবনের একটি ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০২১ রাত ৮:০৪
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×