সময় চলে যায় সময়ের আপন নিয়মে,
স্রোত বয়ে যায় তেমনি জনমে জনমে।
কাননে ফোটে নবপুস্প, পুরনোটি ঝরে।
মানুষ যায় আসে তবু, স্মৃতি নাহি মরে।
কত সহজ আসা যাওয়ার এই খেলা, তবুও কত স্বপ্ন! কতো আশা!
সেদিন এক বন্ধুর বাবা মারা গেল, মারা যাওয়ার পরের দিনই সে স্বাভাবিক!
তার পরের দিন থেকেই তার আগের মত ব্যাস্ততা শুরু!
ফেসবুক, খেলার আপডেট ইত্যাদি নিয়ে আগের মত মেতে থাকা।
আমি বলছিনা সে সবকিছু বাদ দিয়ে বিলাপ করবে, কিংবা কান্নাকাটি করবে।
আমার প্রশ্ন হলো এই ব্যাস্ততা, এই উন্মাদনা অতিমাত্রিক হওয়ায় আমরা একপ্রকার যেন অন্ধ-উদভ্রান্তের মত হয়ে যাচ্ছি দিনদিন!
তার চোখের সামনে তার বাবা চলে গেল, তার ছেলের সামনে সেও একদিন চলে যাবে না ফেরার দেশে!
কিন্তু তার চেনা কি হলো তার নিজকে? জীবনটা কি এখানেই শেষ হয়ে গেল? জীবনটা কি এতই মূল্যহীন?
কুরআনের ভাষ্যমতে- প্রতিটি মানুষকে এখানে কয়েকদিনের জন্য পাঠানো হয়, শুধু পরীক্ষা করার জন্য?
তার কাছে কয়টা দিনের আনন্দই অধিক প্রিয়, নাকি অনন্তজীবনের আনন্দ?
কেউ যদি অনন্ত জীবনে বিশ্বাসই না করে তাতে কার কি?
সে যদি মনে করে, মরার পর পঁচে-গলে যাওয়ার পর সব শেষ!
কি আশ্চার্য ব্যাপার! এতো স্বাদের জীবন এখানেই যদি শেষ তবে কেন এত স্বপ্ন?
আসলে জীবনকে যদি কেউ মূল্যই না দিত তবে কেউই স্বপ্নই দেখতনা।
জীবনটাকে কেবল গুটি কয়েক লোকই হয়ত মূল্যহীন ভাবতে পারে এটাই সত্য।
দুঃখজনক হলো জীবনটাকে মূল্যবান মনে করে সত্য, কিন্তু যে কয়দিন বাঁচবে সে কয়দিনের জন্য!
জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গী যাদের সম্পূর্ণ ভূল, তাদের দৃষ্টিতে এখানেই সব শুরু এবং এখানেই সব শেষ!
কুরআনে আল্লাহ বলেন- হে মানব ও জ্বীন তোমরা আমার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?
মানুষ এখানে এতো বেশী পেয়ে গেছে যে, নিজকেই সে ভূলে গেছে!
তার মনেই নেই, সে একসময় ছিলনা আবার একসময় আগের মতই না থাকার মত হয়ে যাবে!
তার একটু ভাবার অবকাশও হয়না? তার আগমন এখানে নাও হতে পারত!
কোটিকোটি স্পার্ম থেকে তাকে বিশেষভাবে সিলেক্ট করা হয়েছে,
বাকী কোটিকোটি স্পার্মগুলোরও অনেকে হয়ত পৃথিবীতে মানুষ হয়ে আসতে পারত।
কিন্তু না, তারা আসেনি। এসেছি আমি, তুমি। ওয়াও, কতো ভাগ্যবান আমরা!
কে আমাদেরকে বাবা দিয়েছেন, মা দিয়েছেন, এছাড়া বহু আত্নীয় স্বজন দিয়ে অসহায়ত্ব দূর করেছেন?
কে দিয়েছেন এতসব? তাঁর সন্ধান করা একটুও কি প্রয়োজন নেই?
ব্যালেন্সফুল সূর্যের তাপ-আলো এবং এই চাঁদটি কার?
তিনি বলেছেন কুরআনে-
আমি কি তাকে দেইনি চক্ষুদ্বয়,
জিহবা ও ওষ্ঠদ্বয় ?
বস্তুতঃ আমি তাকে দুটি পথ প্রদর্শন করেছি।
অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি।
আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কি?
তা হচ্ছে দাসমুক্তি
অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে অন্নদান।
এতীম আত্বীয়কে
অথবা ধুলি-ধুসরিত মিসকীনকে।
অতঃপর তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া, যারা ঈমান আনে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় সবরের ও উপদেশ দেয় দয়ার।
(আল-বালাদ)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৩৫