somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাদীসের প্রয়োজনীয়তা ও আরো কিছু (ক্যাচালের কমেন্ট বিষয়ক)

২২ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকল প্রসংসা আল্লাহর

“ক্যাচাল“ এর একটি পোস্টএ একটি কমেন্ট উত্তর স্বরুপ দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি উত্তর গ্রহন করার বদলে নতুন কিছু বিতর্কের সুচনা করেছেন। যা পূর্ববতী আলোচনার বাইরে নতুন কিছু। তাই এর জবাব কমেন্টে না দিয়ে একটি পোস্ট দিচ্ছি।

তার কমেন্ট থেকে যেসব নতুন বিষয়ে তার সঙসয় আছে বলে মনে হচ্ছে তা হচ্ছে-

১) হাদীসের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না?
২) তফসীরের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না?
৩) ইসলামী স্কলারদের প্রয়োজন আছে কি না?


১) হাদীসের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না?

“ক্যাচাল“ বলেছেন, “এজন্যই ইসলামকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কঠিন করে তোলা হয়েছে। এর সবচাইতে জঘণ্য প্রক্রিয়া হলো হাদিসের সৃষ্টি।“

তিনি হাদীসের গুরুত্তকে অস্বীকার করতে চেয়েছেন। তবে তিনি অন্তত কুরআনকে সঠিক এবং অবিকৃত হিসেবে মেনে নিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ।

“ক্যাচাল“ আরো বলেছেন -“কুরআন অনুসারে, কুরআনের মূল বিষয়গুলো একেবারেই সুস্পষ্ট।“

আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সাঃ) এর উপর কুরআন নাজিল করেছেন মানব জাতির জন্য পরিপূর্ন জীবন বিধান স্বরুপ। কিন্তু প্রশ্ন হল – রাসুলের দায়িত্ব কি শুধুমাত্র কুরআনের বানীকে প্রচার করেই শেষ? অবশ্যই নয়। বরং এই জীবন বিধান কে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে যথোপযুক্ত উদাহরন তৈরী করা এবং এর ব্যাখ্যা দেয়াও তার দয়িত্বের অন্তর্গত ছিল। এবং তিনি তা পরিপূর্ন মাত্রায় করে গেছেন। বস্তুত আল্লাহ মানুষের মধ্য থেকে রাসুল নির্বাচন করার কারন এই যে যাতে তারা মানুষের কাছে বাস্তব উদাহরন হতে পারে - আল্লাহর কাছে কি ভাবে নিজেকে সমর্পন করতে হয় এবং কি ভাবে আল্লাহর এবাদত করতে হয়।

[Allah did confer a great favor on the believers when He sent among them a messenger from among themselves, rehearsing unto them the signs of Allah, purifying them, and teaching them the Book and the wisdom while, before that, they had been in manifest error.] (Aal `Imran 3:164)

কুরআনকে কি ভাবে জীবনের সর্বক্ষেত্রে অনুসরন করা যায় তার সর্বোত্তম উদাহরন রাসুল (সাঃ)। তার কথা, কর্ম, এবং ব্যাখ্যা সর্বযুগের সকল মুসলিমের জন্য সবচেয়ে বড় পাথেয়।

[And verily in the Messenger of Allah ye have a good example for him who looketh uno Allah and the last day and remembereth Allah much.] (Al-Ahzab 33:21

এখন দেখা যাক এই কুরআন, হাদীস সম্পর্কে কি বলে?

“He does not speak of his own desire. It is no less than inspiration sent down to him.” [Sûrah al-Najm:3]

অর্থাৎ, রাসুল (সাঃ) নিজের পক্ষ থেকে কথা তৈরী করে আল্লাহর দিকে সম্বন্ধ যুক্ত করেন না। বরং তিনি যা কিছু বলেন তা আল্লাহর কাছ থেকে প্রত্যাদেশ হয়। এখানে জানা প্রয়োজন যে ওহীর অনেক প্রকার আছে। তার মধ্যে (১) যার অর্থ ও ভাষা উভয় ই আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ন হয় তা হল কুরআন। (২)যার কেবল অর্থ আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ন হয় এবং রাসুল নিজ ভাষায় ব্যাক্ত করেন, এর নাম হাদীস বা সুন্নাহ।

কুরআনে আরো আছে-

“অতএব তোমার পালনকর্তার কসম , সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষন না তাদের মধ্যে সৃস্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যয় বিচারক বলে মনে না করে।“
-সুরা আন-নিসা :৬৫

“..রাসুল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহন কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর”
--সুরা আল-হাশর:৭

[Obey Allah and obey the Messenger] (An-Nisaa’ 4:59)

এরকম আরো বহু আয়াত রয়েছে। সুতরাং, কুরআনেই আল্লাহ তয়ালা বলছেন রাসুলের অনুসরন করতে। এবং রাসুলের অনুসরনের জন্য হাদীসে কোন বিকল্প নাই।


O People, no prophet or apostle will come after me and no new faith wil be born. Reason well, therefore, O People, and understand words which I convey to you. I leave behind me two things, the Qur'an and my example, the Sunnah and if you follow these you will never go astray.
-- Last sermon of Muhammad (SW)


২) তফসীরের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না?

“ক্যাচাল“ বলেছেন , “কোরআনের ব্যাখ্যার জন্য তাফসীর লাগে কেন রে ভাই?”

ভাই, আসলে কুরআনের ব্যাখ্যার জন্য তাফসীর লাগে না। আমি যত দূর জানি, কুরআনের ব্যাখ্যাকেই তফসীর বলে।


৩) ইসলামী স্কলারদের প্রয়োজন আছে কি না?

“ক্যাচাল“ বলেছেন , “তাফসীরী স্কলার, পীর ইত্যাদির আসলে কোনো দরকারই নেই।“

এখানে তিনি দুই ধরনের ব্যাক্তিদের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন। পীর ও স্কলার।
পীর বলতে যদি আপনি তাদের বুঝিয়ে থাকেন যারা তাবিজ কবজ দেয়, বছরে বছরে লাখ লাখ টাকা খরচ করে ওরস করে , তবে আমি আপনার সাথে এক মত। এদের কোন দরকার তো নাই ই বরং তারা সুফীবাদের প্রভাবে ইসলামকে বিকৃত করে একটি কিম্ভুত কিমাকার চেহারা দিয়েছে।

তবে এসব ঠেকাতে এমন কিছু মানুষ তো অবশ্যই দরকার যারা সত্যিকার ইসলাম সম্পর্কে আসলেই জ্ঞানী, কুরআন ও হাদীস নিয়ে গবেষনা করেন এবং যারা পারবে ইসলাম বিকৃত কারীদের সঠিক জবাব দিতে সুস্থির ভাবে। এবং মুসলমানদের কে সঠিক ইসলামের শিক্ষা দিতে।

উদাহরন স্বরুপ ধরেন, যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কেউ ফিজিকস পড়াতে চায় আমরা আশা করি যে তার এ বিষয়ে খুব ভাল জ্ঞান থাকতে হবে। খুব ভাল জ্ঞানী হওয়ার মাপকাঠি এ ক্ষেত্রে ডক্টরেট ডিগ্রি , রিসার্চ ও পাবলিকেশনের সংখ্যা হতে পারে। ঠিক তেমনি ভাবে কেউ যদি ইসলাম বিষয়ে শিক্ষা দিতে চায় তবে এটা আশা করা কি ভুল যে তার ইসলাম বিষয়ে ভাল জ্ঞান থাকতে হবে। সে ইসলামে স্কলার হবে?

এই সব স্কলার মানে আমাদের এই সব মওলানা ও রাজনীতি বাজ মুফতীরা নয়। বর্তমান সময়ের কিছু স্কলার দের নাম দিলাম। যদি আগ্রহ হয় দেখতে পারেন।
১) আব্দুল আজীজ ইবনে বাজ
২)হাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আনসারী
৩)মুহাম্মদ নাসিরউদ্দিন আল বানী
৪)মুহাম্মদ ইবনে সালিহ আল উথায়মিন


“ক্যাচাল“ বলেছেন , “সুস্পষ্ট আয়াতগুলোর বাড়তি ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই”

সুস্পস্ট/অস্পস্ট আয়াত বলতে কি বুঝিয়েছেন তা ঠিক পরিস্কার হয় নি। তবে কুরআনের ব্যাখ্যার জন্য আনুসাঙিক বিষয়াদির (শান এ নুজুল, হাদীস) জ্ঞান জরুরী কিনা তার জবাব আপনার পোস্ট এ গেলেই বোঝা সম্ভব। ওই পোস্টে কিছু সুস্পস্ট আয়াতের সুন্দর অপব্যাখ্যা করে মানুষের মনে কুরআন সম্পর্কে সন্দেহ তৈরী করা হয়েছে। সুতরাং এটাই বাস্তব প্রমান যে কুরআনের ব্যাখ্যার জন্য আনুসাঙিক বিষয়াদির (শান এ নুজুল, হাদীস) জ্ঞান জরুরী। আনুসাঙিক বিষয়াদির জ্ঞান না থাকলে আমাদের পক্ষে এ ধরনের ভুল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী।


বাকি, আল্লাহ ভাল জানেন।
আল্লাহ আমাদের ভুল গুলো ক্ষমা করুন।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×