গতকাল RAB-3 এর মিজান ভাইকে ফোন দিয়ে আসামী ধরার আপডেট জানতে চাইলাম। তিনি আমাকে শুধু এতটুকু জানালেন যে তারা টিম সহ গাজীপুর অপারেশনে এসেছে আমি যেন কাউকে শেয়ার না করি। আজ আবারো ফোন দিলাম রিজাল্ট জানার জন্য। একটা ভাল নিউজ পেলাম অপর প্রান্ত থেকে। তাদের টিম গাড়ী সহ দুই জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে এখন আসামিকে সনাক্ত করতে হলে ভিকটিমকে যেতে হবে গাজীপুরের কোনাবাড়ি। আমার শালা সাইফুলকেও RAB-১ এর গাজীপুর ক্যাম্প থেকে ফোন করে দ্রুত চলে যেতে বলল। ও হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেল গুলশান ২ থেকে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে। ওর জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল মনে হয়।
এক মূহুর্তে গ্রেফতারকৃত দুজনের একজনকে ও চিনতে পারল। যে গাড়ীটায় করে ওকে অপহরণ করা হয়েছিল সেই গাড়ীটা মূলত রেন্ট- এ কারের মাধ্যমে ভাড়ায় চলত। গাড়ীর মালিকের কাছ থেকে একজন ড্রাইভার গাড়িটা ভাড়া নিয়ে আবার সাব রেন্ট দিয়েছে এই লম্পট ড্রাইভারকে। সে তার তিন সংগীকে নিয়ে দীর্ঘ দিন মানুষকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে চলেছে। এই চক্র রামপুরা, গুলশান, ধানমন্ডি, মতিঝিল সহ ঢাকার প্রায় সকল জায়গায় বিচরণ করছিল দেদারসে। এতদিন ধরে তারা অপকর্ম করেছে অথচ তারা ছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অবশেষে আমার শালাকে যখন অপহরণ করে ১ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী করল এবং ৪০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে নিয়ে খ্যান্ত হল তখন ঘটল বিপত্তি। কথায় বলে চোরের দশ দিন আর গৃহস্তের একদিন। আরো একটু বাড়িয়ে বললে বলতে হয়ে কাকড়ার গর্তে হাত দিয়ে মাছ শিকার করতে করতে ভুলে সাপের গর্তে হাত পড়েছে। এবার সামলাও ঠেলা.....
এই মুহুর্তে আসামির ঠ্যাং এর গীরা ফাটানো হচ্ছে, সে বাকি তিনজন কোথায় আছে তা বলতে শুরু করেছে এবং RAB-3 এর টিম তন্ন তন্ন করে খুঁজতেছে। আশা করি খুব দ্রুত বাকি আসামীরা তাদের গ্যাং সহ গ্রেফতার হবে। আমি বিষয়টা টিভি নিউজ করার জন্য RAB-3 কে অনুরোধ করব। যেহেতু এটা তাদের এক অসামান্য কৃতিত্ব তাই তাদের ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না।
আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে এখনো পৃথিবীতে সৎ অফিসার রয়েছে যারা বিনা স্বার্থে কাজ করে। অথচ রামপুরা থানা প্রথমে এই মামলা নিতেই রাজী হয়নি। নাছোড় বান্দার মতো লেগে ছিলাম পিছনে। RAB-3 থেকে আমাকে বলা হয়েছিল আমি যেন উপর মহল থেকে কোন ফোন করে থানার ওসিকে তদন্তের জন্য প্রেশার না দেই, স্রেফ মামলা বা জিডিটা করে যেন চলে আসি। আমি মিজান ভাইয়ের কথা মতোই কাজ করি। থানা পুলিশের প্রতি আমার আস্থা অনেক আগেই চলে গেছে। আজ RAB-3 এর সক্রিয় জাহাবাজ অফিসাররা এই বিষয়টা হ্যান্ডেল করে প্রমান করেছে যে এই দেশে তাদের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। স্যালুট জানাই এসকল সৎ এবং নির্ভিক অফিসারদের যারা বাদীর কাছে "ঘি" এর গন্ধ খোঁজে না। ঢাকা শহরে বহু মানুষ এই চক্রের স্বীকার হয়ে তাদের অর্থ সম্পদ এমনকি জীবন পর্যন্ত বিলিয়ে দিয়েছে। এরা যে কত ভয়ংকর হতে পারে তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করার যায় না। এদের আচার আচারণ পেশাজীবি কিলারদের মতো। সৌভাগ্য আমার শালার যে জীবন নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছিল। দুইটা দামী মোবাইল, একটা ল্যাপটপ, দুইটা এটিএম কার্ড এবং মানি ব্যাগ থেকে ৭৫০০ টাকা সহ বিকাশের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে উপর্যুপুরি পিটিয়ে রক্তাক্ত করে আমার শালাকে ফেলে রেখেছিল। গাড়ীর নম্বর প্লেট থেকে নম্বরটা মুখস্ত রাখতে পেরেছিল বলেই দ্রুত এই মামলার আসামীকে ধরতে সক্ষম হল। এমন ঘটনার স্বীকার যেন আর কাউকে না হতে হয় এই কামনায়।
পিছনের ঘটনা পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন:
অপহরণকারীদের হাত থেকে ৪০,০০০.০০ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে আজ ছাড়া পেল আমার ছোট শ্যালক মোঃ সাইফুল আলম
অবশেষে রামপুরা থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করতে সামর্থ হলাম
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৩