গুম
বর্ষার আকাশ।স্নিদ্ধ জোসনার আলোতে মেঘেরা আকাশে লুকোচুরি খেলছে,দূর হতে ভেসে আসছে ভাটিয়ালি গানের সুমধুর সুর।এর সাথে কিছু সময় পর পর মাঝ নদীতে নৌকায় আছড়ে পড়ে অবচেতন ঢেউ নীরবতা ভাঙ্গার অব্যর্থ চেষ্টা করছে।সবাই গোল হয়ে বসে আছে নৌকার পাটাতনের উপর।রোকন,আমিত,রাকিব,বদরুল,আহমদ,সুমন,আব্বাস,রমজান,পাভেল কেউ যেন কোন কূল কিনারা করতে পারছেনা।রোকন একবার হাঁসের মেন্যু বাদ দিয়ে মুরগীর কথা বলল কিন্তু বাকি সবাই এর তীব্র বিরোধিতা করল।হঠাত নীরবতা ভেঙ্গে রাকিব বলে উঠল, ইউরেকা ইউরেকা।
উত্তর পাড়ায় আলেক আলীর পাশের বাড়িতে থাকে বদিউজ্জামান খোন্দকার । জমিজমা আর অর্থ বিত্তে গ্রামের দুইজনের একজন সে।সম্পত্তি থাকলেও ছেলেমেয়েদের শিক্ষার প্রতি খুবই আন্তরিক খোন্দকার সাহেব ।দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে রংপুর কারমাইকেল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পড়ছে।আর বড় ছেলে ওকালতি পাশ করে গ্রামেই রয়ে গেছে।বাবার জমিজমা দেখাশোনা আর সপ্তাহে তিনদিন জজ কোর্টে গিয়ে ওকালতি করে।গত বছর পাশের গ্রাম ধর্মদাসগাতির এক মেয়েকে বিয়ে করেছে।মেয়েও মোটামুটি সুন্দরী এবং শিক্ষিতা।ঐ খোন্দকার বাড়ির সবাই গতকাল টাউনে গেছে বাড়ির নতুন মেহমানকে নিয়ে আসার জন্য।বংশের প্রথম প্রদীপ তাই গ্রামের অশিক্ষিতা ধাত্রীর প্রতি আস্থা রাখতে পারেনি তিনি তাইতো সাত দিন আগে মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন তার ছেলের বউকে। পুরো বাড়ি ফাঁকা, শুধুমাত্র খোন্দকার সাহেবের অন্ধ মা আর তার দূর সম্পর্কের এক চাচাত বোন আছে। চাচাত বোনটি বুড়ি মাকে ঘুম পারিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেই এই সুযোগে আমরা আমাদের “অপারেশন হাঁস” শুরু করব।
রাকিবের মাথায় এমন সুন্দর বুদ্ধি দেখে রোকন তো অবাক হয়ে গেল। আর রাকিবও খুব খুশি কারন এবারি প্রথম তার বুদ্ধির জোরে তারা হাঁস দিয়ে চড়ুইভাতি করবে।সবাই তাকে “হাবা হাশমত” বলে ক্ষেপালেও আজ মিটিঙে সেই উজির এর ভূমিকায়। ঠোঁটের মাঝে একটা মৃদু হাসি নিয়ে তাই রাকিব বাড়ি ফিরল।তবে বুদ্ধিটা রাকিবের মাথা থেকে আসলেও এই বুদ্ধি প্রয়োগ করার দায়িত্ব বরাবরের মত বদরুল এর উপর। আজ পর্যন্ত প্রতিটি অপারেশনে সে সাকসেসফুল। আর রোকনও তার উপর দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকে।সবাইকে যথাসময় উপস্থিত থাকার কথা হলে রোকন বাড়ির দিকে রউনা হল
রাত প্রায় পৌনে দশটা।খিচুড়ি রাঁধা শুরু হয়ে গেছে।সবাই অপেক্ষা করছে বদরুলের জন্য কখন সে হাঁস নিয়ে আসবে? প্রতিবার অপারেশন শেষ করে বদরুল সবার আগে উপস্থিত হয়,কিন্তু এবার কি হোল বদরুলের এখনও এলনা।।ইতোমধ্যে ভুনা খিচুড়ির সুঘ্রাণও নাকে আসতে শুরু করছে।রোকন একটু চিন্তায় পড়ে গেল।রমজানকে পাঠাল বদরুলের খোজ নেবার জন্য।রমজান কিছুদূর যাবার পর দেখতে পেল বদরুল হাঁস নিয়ে আসছে।কিন্তু একি!টর্চতা বদরুলের দিকে মারতেই রমজানের তো চোখ কপালে। বদরুলের দুই হাতে চারটা হাঁস।চোখে-মুখে রাজ্যের হাসি।কিন্তু কাছে আসতেই রোকনের এক ধমকে বদরুলের হাসি বন্ধ হয়ে গেল।
তোকে চারটা হাঁস আনতে কে বলেছে?
বদরুল কাচুমাচু করে বলল,বাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে ছিল আর হাঁসগুলো দেখতে অনেক সুন্দর, আর তাই লোভ সামলাতে পারিনাই, যা ছিল সবগুলো নিয়ে আসলাম।
রোকন,আমরা তো কিছুদিন পর পর চড়ুইভাতি করি এনে তো বরং ভালই করেছে সুমন সমর্থন করল বদরুলকে।
পাভেল বলল,আচ্ছা আজই সবগুলো হাঁস খেয়ে ফেললে কেমন হয়?
এতগুলো হাঁস এক রাতে সাবার করে দিবি শালা পেটুক যেন কোথাকার। রাঁধতে রাঁধতে তো সকাল হয়ে যাবে তখন পাড়া সুদ্ধ লোক এসে আমাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে থানায় নিয়ে যাবে তখন বুঝবি মজা।
রোকনের গা বেয়ে অঝোরে ঘাম বের ঝরছে হাঁসগুলোর এখন কি ব্যাবস্থা হবে সে চিন্তায়।আহমদ হাঁসগুলোকে ফেরত দেবার জন্য বলল।কিন্তু রোকন বলল,দোস্ত হাঁসগুলো ফেরত দিতে গিয়ে যদি আমরা সবাই ধরা পড়ি তাহলে গ্রামসুন্ধ মানুষ আমাদের “চোর” বলবে।আহমদ বলল,দোস্ত আমি তোকে আগে থেকেই বলে আসছি এইসব চুরি করা হাঁস দিয়ে চড়ুইভাতি বন্ধ কর,তুই তো আমার কোথায় কোন পাত্তাই দিস না। আহমদ,আমি আসলে এত কিছু ভেবে এসব করিনাই।আপাতত হাঁসগুলোর কি ব্যাবস্থা করা যায় তার একটা বুদ্ধি বের কর।
রাত যে অনেক হয়ে গেল।অমিত বলল, “দোস্ত হাঁসগুলোকে মাটিতে পুতে রাখলে কেমন হয়”।অমিতের বুদ্ধিটা রোকনের খুব বেশি পছন্দ না হলেও এখন আশু বিপদ থেকে মুক্তি পাবার এটাই সবচেয়ে ভালো উপায় মনে করল সে।আর তাইতো সবার পরামর্শে সিদ্ধান্ত নিল হাঁসগুলো আফজাল সাহেবের জমিতে পুতে রাখার।
বাড়তি হাঁসগুলোর চিন্তায় সেদিন হাঁসের মাংস ছাড়াই তাদের চড়ুইভাতি শেষ হোল।খাবার শেষে সবাই যে যার মত বাড়ি চলে গেল।পরদিন সকালে খোন্দকার সাহেব বাড়িতে তার নাতিকে নিয়ে আসল।বাড়ি সুদ্ধ মানুষ,হঠাৎ বুড়ি মা বলে উঠল কিরে আমার হাঁসগুলোকে কেউ খোয়ার থেকে বের করে দে বেলা তো মনে হয় অনেক হোল। কিন্তু খোয়ারের দরজা খুলতেই মাসুমা দেখল একটা হাঁসও নেই।বুড়ি মা মাসুমাকে জিজ্ঞাস করল মাসুমা তুই কি রাতে খোয়ারের দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়েছিস?মাসুমা বলল, “হ্যা নানি আমি তো দরজা বন্ধ করেই ঘুমিয়েছিলাম”।খোন্দকার সাহেব এতক্ষন চুপ করেই ছিলেন কিন্তু এখন তিনি নীরবতা ভাংলেন।হাক দিয়ে বলে উঠলেন, “চারটা হাঁসই তো নিয়ে গেছে বেশি কিছু তো নয়, এই নিয়ে এত মাতামাতির কি আছে”।
তিন দিন পর খোন্দকার বাড়িতে চাঁদের হাট ভাঙল।সবাইকে বিদায় দিয়ে খোন্দকার সাহেব আনমনে বাড়ির উঠানে বসে আছেন।দূর হতে মাগরিবের আজানের সুমধুর আজান ভেসে আসছে ।হঠাৎ খোন্দকার সাহেব,খোন্দকার সাহেব বলে ডাকাডাকিতে সে সম্বিৎ ফিরে পেল।আফজাল সাহেব হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,ভাই সাহেব আপনার হাঁসগুলো কারা যেন আমার ক্ষেতের মধ্যে পুঁতে রেখেছে।আজ বিকাল বেলা যখন আমি ক্ষেতে গিয়েছি তখন বিকট গন্ধ পেয়ে মাটি খুড়ে দেখি চারটা মৃত হাঁস।
খোন্দকার সাহেব কিছু বলতে যাবেন কিন্তু কি এক অজানা আতংক যেন তাকে নীরব করে দিল । স্ত্রীকে ডেকে বললেন তার অজুর পানি দিতে।
আফজাল সাহেবও পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে উল্টো দিকে ঘুরে মসজিদের দিকে রউনা হোল।
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মসজিদ না কী মার্কেট!
চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷
আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন
আকুতি
দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
ক- এর নুডুলস
অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।
ক
একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু
২-১ : আলিফ-লাম-মীম
আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন