প্রিয় বইয়ের তালিকায় নতুন সংযোজন। গত বছর বইটি প্রকাশের পর সবার ইতিবাচক রিভিউ দেখার পর থেকেই বইটি পড়ার ব্যাপারে আগ্রহ হয়।রান্নার প্রতি অন্য ধরণের ভালোবাসা থাকার দরুন তথাপি খুলনায় জীবনের একটা বড় অংশ কাটাবার জন্যও বইটির প্রতি অন্যরকম এক আকর্ষণ কাজ করছিলো। ক’দিন আগে বইটি ‘অবাক করা উপহার’ হিসেবে পেয়ে আমার খুশি আর দেখে কে !
আট অধ্যায় বিশিষ্ট বইটির কাহিনী আবর্তিত হয় খুলনার কলাপোতা গ্রামের মেয়ে ইন্দুবালাকে ঘিরে।দেশ স্বাধীনেরও আগে যার বিয়ে হয় কোলকাতায় এক বিপত্নীক মাতাল পুরুষের সাথে। মাতাল স্বামীর মৃত্যুর পর ছোট ছোট তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে ইন্দুবালা যখন দিশেহারা ঠিক তখনি বিহারী মাছওয়ালী ‘লছমী’র অনুপ্রেরণায় ইন্দুবালা শুরু করেন ভাতের হোটেলের ব্যবসা। এরপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি ইন্দুবালাকে। এরই মধ্যে ছেলেমেয়েরা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবুও থেমে যায়নি ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের হেঁশেল।সত্তর পেরোনো ইন্দুবালাও কখনও কোন ধরনের সাহায্যর জন্য দারস্থ হননি ছেলেমেয়েদের কাছে।
বইয়ের আটটি অধ্যায়ের নামকরণও করা হয়েছে আট পদের খাবারের উপর। যেমন প্রথম অধ্যায়ের নাম ‘কুমড়ো ফুলের বড়া’, দ্বিতীয় অধ্যায় ‘বিউলির ডাল’; এভাবেই একের পর এক অধ্যায় এগিয়ে গেছে। তবে এটা শুধুই নিছকই নামকরণ নয়। প্রতিটি খাবারের নামের সাথে সাথেই এগিয়েছে সেই খাবারের সাথে ইন্দুবালার স্মৃতি তথা তার জীবন কাহিনী।
ইন্দুবালার জীবনের কাহিনী বইটিতে উঠে এসেছে বর্তমান এবং অতীতের মিশেলে। বিয়ের পর কোলকাতায় চলে আসার পর আর খুলনায় আসা হয়নি তার।বাবার মৃত্যুর সময়ও যেতে পারেনি। এদিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তিযুদ্ধের সময় মিলিটারিরা মেরে ফেলে তার মা এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাইকে। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় পুরো কলাপোতা গ্রামকে। এরপরে আর কখনো স্বাধীন বাংলাদেশে আসার আগ্রহ বোধ করেননি ইন্দুবালা।
জীবনের সিংহভাগ সময় কোলকাতাতে কাটলেও ইন্দুবালা ভাতের হোটেল চালু হওয়ার পর থেকেই সেখানের হেঁশেলে সেই খুলনার কলাপোতা গ্রামের ছোঁয়া ছিল। কৈশোরে ঠাম্মির কাছ থেকে শেখা রান্নাগুলোই ঘুরে ফিরে কোলকাতার উনুনে নতুন প্রান পায়। লেখক বেশ মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন খাবারগুলোর বর্ণনায়। কুমড়ো ফুলের মিঠে বড়া পোস্ত ছড়িয়ে, রান্নায় ঝালের জন্য চুইঝালের ব্যবহার, কালো জিরের ফোঁড়নে পার্শে মাছের ঝোল, ইলিশের মাথা ও পুঁইশাকের ছ্যাঁচড়া, সর ভাজা, কাসুন্দি দিয়ে কলমিশাক, কচু বাটা, চিংড়ির হলুদ গালা ঝোল, মালপোয়ার মত খাবারের বর্ণনা এত সুনিপুণ ভাবে করেছেন যে বইটি পড়তে পড়তেই খিদে লেগে যেতে বাধ্য।
এক নজরেঃ
বইয়ের নামঃ ইন্দুবালা ভাতের হোটেল
লেখকঃ কল্লোল লাহিড়ী
প্রথম প্রকাশঃ জুলাই, ২০২০
প্রকাশকঃ সুপ্রকাশ
প্রচ্ছদঃ মেঘলা ভট্টাচার্য
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:৪২