একজন ভূক্তভোগীর বাস্তব অভিজ্ঞতা ::::::::::::
ইব্রাহীম স্যার আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন?????????
জাতীয় অধ্যাপক ডা: মো: ইব্রাহীম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নিবেদিত প্রাণ ব্যাক্তির নাম। যিনি মানব সেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বাংলাদেশ ডায়বেটিক সমিতি গড়ে তোলেন। মানব সেবার সেই ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে বারডেম, ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ইব্রাহীম জেনারেল হাসপতাল সহ বহু প্রতিষ্ঠান। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এই হাসপাতালগুলোই এখন পর্যন্ত শেষ ভরসার জায়গা ।
ইব্রাহীম স্যার গত হয়েছেন বেশ কয়েক বছর হয়ে গেছে, তার উত্তরসুরিরা এখন সব চালিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু সেটা কি আদৌ সেবার উদ্দেশ্যে নাকি বেসরকারি হাসপাতালের সাথে পাল্লা দিয়ে বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে সেই প্রশ্ন এখন সাধারন রোগীদের কাছে????
অনেকটা ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই আমার এই লেখা। আমার বাবাকে পায়ের গোড়ালির ক্ষত নিয়ে এপ্রিল মাসের ৩ তারিখ ধানমন্ডির ইব্রাহীম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালে ঢোকার মুহুর্তেই ইব্রাহীম স্যারের একটা ছবি নিচে লেখা তার একটি মহান উক্তি: “কোন ডায়াবেটিক রোগীই বিনাচিকিৎসা ও অভুক্ত অবস্থায় মারা যাবে না, যদি সে অতি দ্ররিদ্যও হয়।” মহান এই ব্যাক্তির উক্তিটি দেখে মনটা ভরে গেল। ডায়বেটিক ফুট কেয়ার ইউনিটের প্রধান ডা. জে আর ওয়াদুদ বাবাকে দেখে বললেন, গোড়ালিতে অপারেশন করতে হবে। প্রথম দিনই আমি তাকে অপারেশন খরচ কত তা জানতে চাই। তিনি বলেন বেশি না আট হাজার টাকা। আর হাসপাতালের্ কয়েকদিনের জন্য ভতি থাকতে হবে, সেই সাথে ড্রেসিং করতে হবে, তার জন্য আলাদা কিছু বিল হবে।
তিন এপ্রিল রাতেই বাবার গোড়ালির অপারেশন হয় যাতে সময় লাগে মাত্র দশ মিনিট। দুই সেন্টিমিটারের মত একটি ক্ষতের মাংসপেশি কেটে ফেলা হয়। এরপরই রাত দশটার দিকে এ্যানেসথেশিয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার তার অবস্থার অবনতি হয়। যেহেতু বাবার আগে থেকেই হার্টের সমস্যা ছিল তাই রাত তিনটায় তাকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভর্তির সময়ই বলা হয় ত্রিশ হাজার টাকা অগ্রিম দিতে হবে। আমি জানাই এতো টাকা আমার কাছে নেই। তাৎক্ষনিকভাবে বিশ হাজার টাকা জমা দেই। পরদিন সকাল দশটায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আমাকে জানান, তার আর্ট এখন মোটামোটি স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। আমি নিয়ে যেতে পারি। তখন আমাকে প্রায় সতের হাজার টাকার একটি বিল ধরিয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ রাত তিনটা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত হাসপাতালের বিল হয়েছে সতের হাজার টাকা।
বাবাকে আবার ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতলে নিয়ে আসলাম। কয়েকদিন পর জে আর ওয়াদুদ অপরারেশনের জায়গায় সেলাই করলেন। হাসপাতালে থাকার প্রতিটি দিনই সন্ধ্যায় বাবার ব্যান্ডেজ খুলে পভিসেফ লগিয়ে নতুন করে লাগানো হতো। ১১ এপ্রিল আবার বাবার হার্টের সমস্যা শুরু হলে জাতীয় হৃদরোগ ইনিস্টিটিউটে নিয়ে যাই। এবার হাসপাতালের বিল দিতে গিয়ে আমি শুধু অবাক হয়নি, রাগে ক্ষোভে দু:খে নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছিল। জনাব জে আর ওয়াদুদ, প্রথম দিন অপারেশনের জন্য দশ হাজার টাকা বিল করছেন আমাকে বলা হয়েছিল আট হাজার টাকা, প্রতিদিনের ড্রেসিংয়ের জন্য আটশ টাকা, আর পরে অপারেশনের জায়গায় সেলাইয়ের জন্য আট হাজার টাকা। আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না অপারেশন হলে সেলাই তো হবেই এতে করে আবার আলাদা একটি অপারেশনের বিল কেন করা হলো। আর ড্রেসিং করতে পভিসেফ নামে একটি ওষুধ আর খুব বেশি হলে বিশ টাকার ব্যান্ডেজ লাগানো হয় তার জন্য আটশ টাকা বিল!!!!!!!!!!!! আমি ডাক্তারের সাথে দেখা করলাম। তিনি বললেন, বিল ঠিকই আছে আর তার এখানে সেলাই করতেও আট হাজার টাকা দিতে হয়। আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলাম। শুধু বললাম সেলাই তো অপারেশনের একটি অংশ। তিনি বললেন, না ওটাও একটা পুর্নাঙ্গ অপারেশন। আমি বললাম প্রথম অপারেশনের সময় আমাকে আট হাজার টাকার কথা বলা হয়েছিল তাহলে বিল দশ হাজার কেন করা হলো? তিনি মনে হয় একটু বিরক্ত হয়ে ফাইলটা এনে সেখানে আট হাজার টাকা করে দিলেন যেন আমাকে করুনা করলেন। কথা আর না বাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ইব্রাহিম স্যারের ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম, আর নিচের কথাটি পড়লাম । মনে মনে বললাম স্যার আপনি কি উপর থেকে এগুলো দেখতে পাচ্ছেন??????? আমার মতো এরকম অবস্থা পায়ের সমস্যা নিয়ে আসা ওখানকার সব রোগীদের। চাপাই নবাবগঞ্জ থেকে একজন এসেছিলেন। প্রথমে তার পায়ের একটি আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়। দশদিন ভর্তি থাকার পর ডাক্তার বলেন দ্বিতীয় আঙ্গুলটিও ফেলতে হবে। আবার সপ্তাহ খানেক পরে বললেন, পায়ের পাতার বেশির ভাব অংশ ফেলে দিতে হবে। প্রত্যেক বারের জন্যই কিন্তু আলাদা আলাদা অপারেশন বিল। আর তা কখনো করা হয়েছে বার হাজার , কখনো ১৫ হাজার আবার কখনো বিশ হাজার। কেন কিসের ভিত্তিতে অপারেশন বিল করা হচ্ছে তার কোন ব্যাখ্যা ডাক্তার সাহেব দেন না।
গত বছর বারডেম হাসপাতালে বাবাকে নিয়ে বিশ দিন থাকতে হয়েছিল। হাসপাতালের নিচে ও খুব সম্ভবত দশতলায় একটি ফার্মেসি আছে। নাম বাডাস ফার্মেসী। এই ফার্মেসিতে পঞ্চাশ টাকা যে ওষুধের দাম শাহবাগ মোড়ে সেই ওষুধের দাম কম করে হলেও দশ টাকা কমে পাওয়া যায়। আর যে ইনসুলিনের দাম বাইরে ৫০০ টাকা বাডাস ফার্মেসীতে তার দাম ৫৩০ টাকা। তাদের তো কম টাকায় দেয়া উচিত কারন তারা বেশি বিক্রি করেন। কিন্তু এখানে সব উল্টো। আর রোগী ভর্তি করতে হলে বারডেমে অগ্রীম কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়, আর আইসিইউতে তো প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা । এতো টাকা বেশির ভাগ রোগই সাথে নিয়ে আসেন না। কিন্তু রোগী যত খারাপ অবস্থাতেই থাকুক না কেন অগ্রীম টাকা না দেয়া পর্যন্ত ভর্তি নেয়া হয় না। কেন???? এর কোন উত্তর কি দেবেন ইব্রাহীম স্যারের উত্তরসুরিরা। আর তাদের কাছে অনুরোধ দয়া করে স্যারের উক্তি সহ ছবি গুলো সরিয়ে ফেলুন, তা না হলে আপনারা যা করছেন এটা শুধু ভন্ডামি না,,, স্যারের মতো মানুষকে অপমান করা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




