ওই বদমাইশ, বিরক্ত করিশ কেন?? দেখিসনা ঘুমাচ্ছি?? যা ভাগ!!
"আমার তো কাজই আপনাদের বিরক্ত করা।"
অন্য কোন কাজ খুজে নে।
"অন্য কোন কাজ পারলে তো!! আপনাদের বিরক্ত করেই আমি বেচে থাকি।
বাড়িতে দুইটা বাচ্চা আছে। বিরক্ত না করলে ওদের খাওয়াবো কি?? "
ও সেই কথা!!! কিন্তূ তাইবলে এইরকম করে বিরক্ত করবি??
তোর তো এইখানে থাকার কথা না। আসলি কি করে এই জায়গায়??
"সে অনেক লম্বা কাহিনি। আপনার শুনতে রুচি হবেনা যে।"
এমন কাহিনী যে রুচি হবেনা?? থাক বাবা!! তোর কাহিনী তুইই রাখ, শুনে কাজ নেই। এমনিতেই ওই পাশে একটা নতুন বাচ্চা এসেছে। সেই কখন থেকে আম্মা আম্মা করেই যাচ্ছে। এর জ্বালায় শান্তি করে বসে থাকা দায়। অসহ্য একটা ব্যাপার। আর আমাদের সেলিনা আপাও তার বাচ্চার কাছে যাওয়ার জন্য কেমন আকুলিবিকুলি করতে থাকে। উনাকে বোঝানোই যায়না যে উনি আর তার বাচ্চার কাছে যেতে পারবেনা।
"স্যার ৬ মাসের ছোট বাচ্চা ফেলে মা এতো দূরে আপনাদের সাথে পড়ে আছে, তার মন কি ঠিক থাকে বলেন??"
হুম, সেটাও ঠিক কথা, তা আমি বলি কি, সেলিনা আপা ওই মা ছাড়া বাচ্চাটাকে দেখাশুনা করুক। কি বলিস?? হেহে!! দারুন বুদ্ধি না??
"আর সার যাই বলেন,দুধের সাধ ঘোলে মেটানো আরকি। নিজের বাচ্চার সাথে অন্যের বাচ্চার তুলনা!!!"
হুম, সে তো ঠিকই বলেছিস।
কিন্তু এখন এ ছাড়া তো আর উপায় নাই। এখানে আমাদের কারোই আপন জন নেই। সবাই একা।
গতকাল ওইযে গেটের কাছে নতুন একজন মহিলা আসলো দেখলাম। কি জানি নাম??
"জরিনা বেগম"
হুম, তুই তো দেখি সবজান্তারে। নাম জানলি কি করে??
"পেটের ধান্দা স্যার, পেটের ধান্দা!!! সবাইকে ম্যানেজ করতে জানতে হয়।"
সেইতো, তা মহিলার কাছে থেকে কি বাগালি?? রানের মাংস?? নাকি হাতের আঙ্গুল??
"হে হে স্যার, অনেক মলানোর পরে মহিলা রানের থেকে এক্টু মাংস দিল। বিনিময়ে তার অনেক দুঃখ ভরা কথা শুনতে হল। তাও কিছু তো পেলাম, হে হে হে।
আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের লোক এসে মহিলাকে দাফন করে গেল বেচারিকে । তার ছেলে দুইটা জানতেও পারেনি তাদের মা কোথায়, আসলেই দুঃখজনক "
কেন?? জানতে পারেনি কেন?
"আর স্যার বইলেন না। আপ্নারা মানুষরা কি সবাই এরোকম?? মহিলার দুই ছেলে বিদেশ। এক্টা সম্পত্তির জের ধরে কিছু লোক তাকে অপহরন করে, কিন্তু মুখ বাধা অবস্থায় দম আটকে মহিলা মারা যায়।
পরে গাড়িতে করে এক জংগলের একটু ভিতরে তারে ফেলে আসে। ১৫-১৬ দিন পরে মানুসের চোখে পড়ে। ব্যাটা গুলো এতই খারাপ মহিলার মুখের চামড়া ছিলে ফেলে আর পরিচয় বোঝা যায় এমন সব কিছু সরায় ফেলে রেখে যায়। এমন অবস্থা বেচারির যে, ছেলেগুলো তাদের নিজেদের মা কে দেখলেও চিনতে পারবেনা। এমনকি মায়ের কবরটা কোথায় তাও হয়ত জানবেনা। মহিলার আফসোস একটাই, ছেলে দুটকে শেষ বারের মত দেখতে পেলনা।"
আসলেই রে!!! আমরা মানুষ জাত বড় খারাপ।
"আমি একটা শিয়াল হয়ে ভাল মন্দ বুঝি, আপ্নাদের মাংস ছিড়ে খাই পেট ভরানোর জন্য, কিন্ত তাও এর শোধ দেয়ার জন্য আপ্নাদের কত দুঃখকষ্ট ভরা কথা শুনি। বুকটা ভার হয়ে যায়। আর আপনারা মানুষ হয়ে এতো খারাপ কিভাবে করেন??"
তবে সবাই কিন্তূ এক রকম না জানিস??
আমার ছেলেটাকে দেখেছিস?? প্রতি শুক্রবার আসে, আমার কবরে বসে কত কথা বলে। আমি শুনি। খুব সুখ হয় আমার, জখন মাটির নিচে থেকে ওর মুখটা দেখি।
"আপ্নি আসলেই ভাগ্যবান স্যার। সবাই আপ্নার মত ভাগ্যবান হয়না। ওই যে বাচ্চাটা কাদছে, ওর কাহিনি জানেন??"
নাতো!!
"অবইধ সন্তান স্যার!!! অবৈধ বাচ্চা!!! ওর মা কিন্তু খুব বড় ঘরের মেয়ে।"
তাই নাকি?? তা এই দশা যে??
"কি করে?? সাধারণত যা হয় তাই, নাচানাচি করে বেড়ানো টাইপের মহিলা, গা ছেড়ে যার তার সাথে মিশত, একদিন বুঝতে পারে ২ মাসের সন্তান তার পেটে। ব্যাপারটা জানার পরে দ্বিধায় পড়ে যায়। একদিকে মাতৃত্ব অন্য দিকে সমাজ, ইজ্জত। আরও দুমাস দিধা দ্বন্দে কাটিয়ে দিতে না দিতেই বাসা থেকে বলে যে বিয়ে করতে হবে, পাত্র দেখতে আসবে।"
তারপর??
"তারপরে আর কি?? কি জানি এবসন না কি জানি এক্টা বলেন না আপ্নারা?? "
এবরটশন??
"হুম, ওইটাই!!! ওটা করিয়ে বাচ্চাটাকে মেরে ফেলে। বাচ্চাটার জন্য খুব মায়া হয় স্যার, জানেন ওর শরিরে আমি এখনো মুখ লাগাইনি!!"
খুব ভাল কাজ করেছিস রে। এসব শুনলে বড় দুঃখ হয়।
"আর কি স্যার!! আপ্নাদের মানুষের জিবন বড়ই অদ্ভুত!! মাঝে মাঝে মনে হয় আপনাদের আমি বুঝতে পারি আবার হটাত করে মনে হয় আজব জাত আপনারা।
ওহ আজকে তো শুক্রবার, আজকে না আপ্নার ছেলের আসার কথা??"
আরে তাইতো, আমি তো ভুলেই গেছি আজ শুক্রবার। দেখ কান্ড!!! আচ্ছা আমার তো গিয়ে শুয়ে পড়া দরকার তাইলে, অনেক দেরি হয়ে গেছে। কটা বাজে বলতে পারিস??
"হেহে স্যার আপ্নার কাছে থেকে সময় দেখা শিখলাম, আর আপ্নিই আমাকে জিজ্ঞেস করছেন??""
বুড়ো হয়ে গেছিরে!!! কবরস্থানের অফিসে রাখা ঘড়িটার দিকে তাকালেও ঘোলা ঘোলা লাগে। এখন তো আর আমার কাছে চশমা নেই, যখন জীবিত ছিলাম আমার ছয় বছর বয়সের নাতিন আমার চশমা ঘড়ি সব আগায় দিত। ওঁর জন্য খালি মনটা পোড়ায় রে!!! যাক গে, তুই সময়টা এক্টু দেখে দে ভাই।
"ঠিক আছে স্যার, ম ম ম ম.... ৩:০০ টা বাজে।"
তাই?? যাই গিয়ে কবরে ঢুকে ঘুমাই। অনেক দেরি হয়ে গেল।
"আচ্ছ স্যার আমিও যাই, বাচ্চা গুলী না খেয়ে বসে আছে"
------ শিয়াল টা নিজের গর্তের দিকে পা বাড়ালো।
তখন রাত ৩:০১ মিনিট।