somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অস্তিত্ব

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি চিৎকার করে কাদতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি। তুমি জানো ?? আমার সাধ্য থাকলে আমি আমার শেকড় গুলো ওদের শীরা দিয়ে ঢুকিয়ে দিতাম। ওদের চোখের কোটোর দিয়ে আমার ডালপালা গুলা ঢুকিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলতাম। ওদের শরীরে এতো যন্ত্রণা দিতাম যে মৃত্যুও ওদের কাছে আসতে চাইতোনা। আমার শেকড়গুলো আমি ওদের মুখের ভিতর দিয়ে ওদের কলিজার ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, পুরুষরুপি ওই হায়নাগুলোর অন্তরে, হৃদপিন্ডে পৃথিবীর সমস্ত বিষ ঢেলে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি!!!! আমি পারিনি!!!। তোমাকে সামান্যতম সাহায্য করতে পারিনি। রক্ষ্যা করতে পারিনি। আমার এতো শাখা প্রশাখা ওয়ালা অস্তিত্বের পুরাটাই ব্যারথ হয়ে গিয়েছিল সেদিন, যেদিন আমি তোমাকে বাচাতে পারিনি।
"আহা!!! রাখোনা!!! এখন আর পুরান কথা মনে করে লাভ নেই। এখন তো আমি তোমার বন্ধু তাইনা?? এখন আমি তোমার সাথেই থাকব। আমি জানি তোমার অন্তর কত পরিষ্কার। কত নিষ্পাপ।"
তুমি আমার অন্তরের জ্বালা বুঝবেনা বন্ধু। আমার অন্তরের এই জ্বলন কোনদিনই মিটবেনা।
আমার এখনও মনে আছে যেদিন ওই চারজন পশু তোমাকে শেষ করে দিচ্ছিল। বাধা এক নিরীহ প্রাণীর মতো তুমি ছটফট করছিলে। আজো আমার গা শিউরে উঠে সেই রাতের কথা মনে পড়লে। এই আমার শেকড়ের উপরে ওরা তোমাকে ধরে রেখেছিল। দুই জন তোমার হাত পা ধরে রেখেছিল একজন আমার গায়ে হেলান দিয়ে চারিদিক দেখছিল!!!! আর একজন তোমার অস্তিত্বকে শেষ করছিল। একজনের পর আরেকজন, আরেকজনের পর আরেকজন। তুমি এই আমার শেকড়ের উপরে গলা কাটা জন্তুর মতো কাতরাচ্ছিলে। ওরা তোমার মুখ বেধে রেখেছিল, তুমি কাতরাচ্ছিলে, গোঙাচ্ছিলে, আমি তোমাকে বাচাতে পারিনি। আজো নিজের উপর আমার ঘৃণা হয়, রাগ হয়। জানো ওই সময় আমার ঈশ্বরের সাথে বিবাদ করতে ইচ্ছে হচ্ছিল??? খোদার কি হত আমাকে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দিলে?? আমার ইচ্ছে করছিল আমি আমার শত বছরের এই ডালপালা দিয়ে ওদের পিষে ফেলি। ওদের রক্ত সেকড় দিয়ে শুষে আমার পাতাগুলো রঞ্জিত করে ফেলি। যেমনটা রক্তাক্ত ওরা তোমাকে করে ফেলেছিল।
চারচারটা লোক, আর তুমি একা একটা মেয়ে ছিলে। আর নিরব সাক্ষী ছিলাম আমি। কেন আমরা নির্বাক প্রাণীরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারিনা??
"তুমি কাদছ কেন?? আরে বোকা!!! এভাবে কাদতে হয়?? এখন তো আমার সব কষ্ট শেষ। দেখছ আমি কত সুখি তোমার সাথে?? তোমার মত বন্ধু পেয়ে আমি সব দুঃখ ভুলে গেছি"
আমাকে আর মিথ্যা সান্তনা দিয়োনা বন্ধু। তুমি জানো আমি মানুষের অন্তরের সাথে এক হতে পারি?? আমি তাদের চিন্তা ভাবনা পড়তে পারি??
তুমি যখন আসেপাশে না পেয়ে আমার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে ছিলে , তুমি কি ঈশ্বরের কাছে এই দোয়া করনি যেন গাছটাই তোমাকে সাহায্য করে??
তোমার মনের আকুতি আমি শুনেছিলাম। খুব চেয়েছি তোমায় সাহায্য করতে; কিন্তু আমি অচল জড়। তোমার সাথে আমিও সেদিন তিলে তিলে মারা গেছিলাম। তোমার শরীরকে ওরা সিগারেটের আগুনে পুড়িয়ে পুড়িয়ে আনন্দ পাচ্ছিল, আর আমি অভিশাপ দেয়া ছাড়া কিছুই করতে পারিনি।
"হ্যাঁ, খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন । আমার মৃত্যুর যন্ত্রণা আজো ভুলতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত আমার গলায় ছুরী চালায় ওরা, আমার শরীরের সমস্ত রক্ত তোমার শেকড়ের উপরে পড়তে থাকে। আমি নিশ্বাস নিতে পারছিলামনা। গলা দিয়ে শরীরের সমস্ত উত্যাপ বের হয়ে যাচ্ছিল। সমস্ত শরীর চাইছিল রক্ত গুলো আবার দেহে ফিরে আসুক। কিন্তু তা কি আর হবার ছিল??"
হ্যাঁ, তোমার রক্তের প্রতিটি বিন্দু আমি শুষে নিয়েছি। এক ফোটাও নষ্ট হতে দেইনি। তোমার সব রক্ত আমার ভিতরে আছে। ওরা তোমাকে এখানেই কবর দিয়ে গেছে, আমার শেকড়ের তলে। বিশ্বাস কর আমি তোমাকে আগলে রাখবো। আমার সব শেকড় দিয়ে তোমাকে ঘিরে রাখবো।
" বুদ্ধু!!! সেটাতো তুমি করেই রেখেছ, আর কত অতীত মনে করে করে নিজেকে কষ্ট দিবা?? হুম?? এখন তো আমি তোমার সাথেই থাকবো, তোমার শেকড়ের যত্নে আমি আছি। তুমি কখনোই আমাকে কষ্ট দাওনি।
নিজের আদ্র মাটি দিয়ে আমাকে আগলে রেখেছ, তোমার কাছে আর কিছু চাওয়ার নেই"
চাইবে, যখন খুশি চাইবে, আমি আমার অস্তিত্ব দিয়ে তোমার সব আবদার পুরোন করব।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
পৃথিবীর সব অত্যাচারিত নারীর প্রতি আমার এই গল্প উৎসর্গ করলাম।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×