আমি চিৎকার করে কাদতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি। তুমি জানো ?? আমার সাধ্য থাকলে আমি আমার শেকড় গুলো ওদের শীরা দিয়ে ঢুকিয়ে দিতাম। ওদের চোখের কোটোর দিয়ে আমার ডালপালা গুলা ঢুকিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলতাম। ওদের শরীরে এতো যন্ত্রণা দিতাম যে মৃত্যুও ওদের কাছে আসতে চাইতোনা। আমার শেকড়গুলো আমি ওদের মুখের ভিতর দিয়ে ওদের কলিজার ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, পুরুষরুপি ওই হায়নাগুলোর অন্তরে, হৃদপিন্ডে পৃথিবীর সমস্ত বিষ ঢেলে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি!!!! আমি পারিনি!!!। তোমাকে সামান্যতম সাহায্য করতে পারিনি। রক্ষ্যা করতে পারিনি। আমার এতো শাখা প্রশাখা ওয়ালা অস্তিত্বের পুরাটাই ব্যারথ হয়ে গিয়েছিল সেদিন, যেদিন আমি তোমাকে বাচাতে পারিনি।
"আহা!!! রাখোনা!!! এখন আর পুরান কথা মনে করে লাভ নেই। এখন তো আমি তোমার বন্ধু তাইনা?? এখন আমি তোমার সাথেই থাকব। আমি জানি তোমার অন্তর কত পরিষ্কার। কত নিষ্পাপ।"
তুমি আমার অন্তরের জ্বালা বুঝবেনা বন্ধু। আমার অন্তরের এই জ্বলন কোনদিনই মিটবেনা।
আমার এখনও মনে আছে যেদিন ওই চারজন পশু তোমাকে শেষ করে দিচ্ছিল। বাধা এক নিরীহ প্রাণীর মতো তুমি ছটফট করছিলে। আজো আমার গা শিউরে উঠে সেই রাতের কথা মনে পড়লে। এই আমার শেকড়ের উপরে ওরা তোমাকে ধরে রেখেছিল। দুই জন তোমার হাত পা ধরে রেখেছিল একজন আমার গায়ে হেলান দিয়ে চারিদিক দেখছিল!!!! আর একজন তোমার অস্তিত্বকে শেষ করছিল। একজনের পর আরেকজন, আরেকজনের পর আরেকজন। তুমি এই আমার শেকড়ের উপরে গলা কাটা জন্তুর মতো কাতরাচ্ছিলে। ওরা তোমার মুখ বেধে রেখেছিল, তুমি কাতরাচ্ছিলে, গোঙাচ্ছিলে, আমি তোমাকে বাচাতে পারিনি। আজো নিজের উপর আমার ঘৃণা হয়, রাগ হয়। জানো ওই সময় আমার ঈশ্বরের সাথে বিবাদ করতে ইচ্ছে হচ্ছিল??? খোদার কি হত আমাকে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দিলে?? আমার ইচ্ছে করছিল আমি আমার শত বছরের এই ডালপালা দিয়ে ওদের পিষে ফেলি। ওদের রক্ত সেকড় দিয়ে শুষে আমার পাতাগুলো রঞ্জিত করে ফেলি। যেমনটা রক্তাক্ত ওরা তোমাকে করে ফেলেছিল।
চারচারটা লোক, আর তুমি একা একটা মেয়ে ছিলে। আর নিরব সাক্ষী ছিলাম আমি। কেন আমরা নির্বাক প্রাণীরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারিনা??
"তুমি কাদছ কেন?? আরে বোকা!!! এভাবে কাদতে হয়?? এখন তো আমার সব কষ্ট শেষ। দেখছ আমি কত সুখি তোমার সাথে?? তোমার মত বন্ধু পেয়ে আমি সব দুঃখ ভুলে গেছি"
আমাকে আর মিথ্যা সান্তনা দিয়োনা বন্ধু। তুমি জানো আমি মানুষের অন্তরের সাথে এক হতে পারি?? আমি তাদের চিন্তা ভাবনা পড়তে পারি??
তুমি যখন আসেপাশে না পেয়ে আমার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে ছিলে , তুমি কি ঈশ্বরের কাছে এই দোয়া করনি যেন গাছটাই তোমাকে সাহায্য করে??
তোমার মনের আকুতি আমি শুনেছিলাম। খুব চেয়েছি তোমায় সাহায্য করতে; কিন্তু আমি অচল জড়। তোমার সাথে আমিও সেদিন তিলে তিলে মারা গেছিলাম। তোমার শরীরকে ওরা সিগারেটের আগুনে পুড়িয়ে পুড়িয়ে আনন্দ পাচ্ছিল, আর আমি অভিশাপ দেয়া ছাড়া কিছুই করতে পারিনি।
"হ্যাঁ, খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন । আমার মৃত্যুর যন্ত্রণা আজো ভুলতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত আমার গলায় ছুরী চালায় ওরা, আমার শরীরের সমস্ত রক্ত তোমার শেকড়ের উপরে পড়তে থাকে। আমি নিশ্বাস নিতে পারছিলামনা। গলা দিয়ে শরীরের সমস্ত উত্যাপ বের হয়ে যাচ্ছিল। সমস্ত শরীর চাইছিল রক্ত গুলো আবার দেহে ফিরে আসুক। কিন্তু তা কি আর হবার ছিল??"
হ্যাঁ, তোমার রক্তের প্রতিটি বিন্দু আমি শুষে নিয়েছি। এক ফোটাও নষ্ট হতে দেইনি। তোমার সব রক্ত আমার ভিতরে আছে। ওরা তোমাকে এখানেই কবর দিয়ে গেছে, আমার শেকড়ের তলে। বিশ্বাস কর আমি তোমাকে আগলে রাখবো। আমার সব শেকড় দিয়ে তোমাকে ঘিরে রাখবো।
" বুদ্ধু!!! সেটাতো তুমি করেই রেখেছ, আর কত অতীত মনে করে করে নিজেকে কষ্ট দিবা?? হুম?? এখন তো আমি তোমার সাথেই থাকবো, তোমার শেকড়ের যত্নে আমি আছি। তুমি কখনোই আমাকে কষ্ট দাওনি।
নিজের আদ্র মাটি দিয়ে আমাকে আগলে রেখেছ, তোমার কাছে আর কিছু চাওয়ার নেই"
চাইবে, যখন খুশি চাইবে, আমি আমার অস্তিত্ব দিয়ে তোমার সব আবদার পুরোন করব।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
পৃথিবীর সব অত্যাচারিত নারীর প্রতি আমার এই গল্প উৎসর্গ করলাম।