somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রণয়

০৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটু আগে সাকুরা থেকে মদ খেয়ে বের হয়েছি।মাইনে পেয়েই আর দেরী করলামনা-সোজা চলে এলাম সাকুরায়।
নাহ;এখন থেকে মদ খাওয়াটা কমিয়ে দিতে হবে।মাস শেষে যা মাইনে পাই তার অর্ধেকটাই চলে যায় এর পেছনে তাছাড়া শীলাকেও কথা দিয়েছি মদ আর খাবো না।যদিও শীলা কোন বিষয় না।
আজ অবধি তাকে দেয়া কোন কথা রাখতে পেরেছি বলে মনে হয়না-শীলা বলেই হয়তো এতোএতো ভুল করেও রক্ষা পেয়ে যাই;
কোন একটা অন্যায় করে শীলার সামনে গিয়ে কান ধরে যদি বলি-এইবারের মতো ক্ষমা করে দাও-প্লিজ।
আর কখনো এমন ভুল হবেনা-প্রমিজ।
শীলা প্রথমে কিছুটা বিরক্ত হবার ভাণ করবে তারপর বলবে হইছে-হইছে কথায় কথায় এতো প্রমিজ বলতে হবেনা।
আর কখনো যদি এমনটা করছো-মনে রেখো আমি তোমার ঠ্যাং ভেঙ্গে দেবো।
বিরক্ত হলেও যে মানুষকে এতোটা সুন্দর দেখাতে পারে এটা প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম শীলাকে দেখেই।আমার কাছে শীলার সেই বিরক্তির দাম লাখ টাকা যে তা”না-লাখ ডলার।
এমন রূপবতী আর গুনোবতি মেয়ে সচরাচর দেখা যায়না।নিজের প্রেমিকা বলে বাড়িয়ে বলছি তা-না।শীলার হিশেব-নিকেষ আসলেই আলাদা।
এই মেয়ে কিভাবে আমার মতো এমন ম্যানা-গরু টাইপ একটা ছেলেকে প্রেম করার জন্য বেছে নিয়েছে এটাই আমার কাছে এক বিস্ময়!তার প্রেমিক হবার কথা পূর্তমন্ত্রীর-ছেলে টাইপের কেউ।
আমি দাঁড়িয়ে আছি পাবলিক লাইব্রেরীর গেইটে।শীলা আসার কথা বিকেল পাঁচটায়।এখন বাজে পাঁচটা-ত্রিশ।শীলা এসে চলে গেছে কিনা বুঝতে পারছিনা।চলে যাবারই কথা।ত্রিশ মিনিট অনেক সময়।নব্বইয়ের দশকে এসে কোন প্রেমিকা তার প্রেমিকের জন্য ত্রিশ-মিনিট অপেক্ষা করেনা।
আজই মাইনে পেয়েছি-পকেট ভর্তি টাকা।ভেবেছি শীলাকে নিয়ে আজ একটু ভালো-মন্দ খাবো।একটু ঘোরাঘুরি করবো-মন চাইলে একটা সিনেমাও দেখবো।তা আর হবে বলে মনে হচ্ছেনা।
আকাশের অবস্থাও খুব একটা ভালো না।
বর্ষার আকাশ-মেঘ গর্জন করছে।যে কোন সময় বৃষ্টি শুরু হতে পারে।তার আগেই নিরাপদ কোন আশ্রয়ে চলে যাওয়া দরকার।
ক্ষুধাও লেগেছে প্রচন্ড।আমি এর আগেও লক্ষ্য করেছি মদ খেলেই ক্ষুধা বেড়ে যায়।এমনটা কেন হয় কে জানে?
আর অপেক্ষা করাটা ঠিক হবেনা।
পাশেই বার্গার-হাট নামে একটা পরিচিত দোকান আছে।সেখানে গিয়ে কিং-সাইজের একটা বার্গার খেয়ে ক্ষুধা মেটানো দরকার।
গা থেকেও ফুরফুর করে মদের গন্ধ আসছে।ভাগ্যিস শীলার সাথে আজ দেখা হয়নি-দেখা হলে কি কান্ড যে ঘটতো একমাত্র আল্লাই জানে!
বার্গার-হাটে ডুকেই একটা ধাক্কা খেলাম-শীলাকে দেখলাম একটা ছেলের সাথে পাশাপাশি বসে জুস জাতীয় কিছু একটা খাচ্ছে।দুজনের মুখেই হাসি।ছেলেটির হাত শীলার হাতের উপর।
অবশ্য এটা কোন নতুন ঘটনা নয়।
আজসহ এই ছেলের সাথে শীলাকে চারবার দেখলাম।তবে আজকের মতো এতোটা খোলামেলা আর কোনদিন দেখিনি।
শীলাকে এই ছেলের কথা জিজ্ঞেস করিনি যে তা”না-দুদিন জিজ্ঞেস করেছি দুইবারই সে এড়িয়ে গেছে।এ কথার উত্তরে শীলা শুধু একটা কথাই বলতো-সারপ্রাইজ-সারপ্রাইজ!
দ্বিতীয়বার তো যখন জিজ্ঞেস করলাম শীলা বললো-ওকে নিয়ে তোমার জেলাস হচ্ছে?ধরে নাও ও আমার আরেকটা প্রেমিক-তুমি একটা ও একটা-একথা বলেই সে তার স্বভাব-সুলভ ভঙ্গিমায় হাসতে লাগলো।শীলা খুবই অদ্ভূত-টাইপের মেয়ে।
সিরিয়াস ব্যাপার বলতে তার কাছে কিছু নেই পৃথিবীর সবকিছুই তার কাছে ফান!আমি সেদিন শীলার সাথে আর কথা বাড়ালামনা।

প্রথমে ভাবলাম তাদের দিকে এগিয়ে যাবো-পরে মনে হলো না থাক-ডিস্টার্ব করাটা ঠিক হবেনা।
হঠাত করেই নিজের মধ্যে একধরনের অজানা খারাপ লাগা অনুভব করলাম।ক্ষণিকের
মধ্যে শীলার প্রতি একধরনের বিতৃষ্ণাও তৈরী হলো।যেটা আগে কখনো হয়নি।
খিদেটাও সাথে সাথে ম্লান হয়ে গেলো।
দোকান থেকে বের হয়ে দেখলাম দোকানের সামনে রাস্তার পাশেই শীলার গাড়ি-পার্ক করা।ডোকার সময় এটা চোখে পড়েনি।
বৃষ্টি শুরু হয়েছে।ঠিক করলাম ভিজতে ভিজতেই বাসায় যাবো।শাহবাগ থেকে ইন্ধিরা-রোড়।হেটে গেলে চল্লিশ মিনিটের মতো লাগার কথা।চল্লিশ-মিনিট বৃষ্টিতে ভিজলে ভয়াবহ অসুখে পড়ারও সম্ভাবনা আছে।সম্ভাবনা থাকলে থাকুক।সিদ্ধান্ত নিলাম হেঁটেহেঁটেই বাসায় যাবো।এটা প্রেমিকার বিরুদ্ধে প্রেমিকের প্রতিবাদ।মৌন-প্রতিবাদ।
চল্লিশ মিনিট পর যখন বাসায় পৌছলাম তখন সমস্ত শরীর ঠান্ডায়-কাঁপছিল।বুঝতে পারলাম-জ্বর আমার শরীরের উপর হামলে পড়ার ব্যাপারে মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়ে পেলেছে।পরদিন সকালে যখন ঘুম ভাংলো,শরীরের অবস্থা ভয়াবহ খারাপ হয়ে গেলো।
বাসার কাছেই শমরিতা।
অনেক কষ্টে হাসপাতাল অবধি এলাম।
একটা কাউন্টার খুঁজে-বের করলাম।এক সুন্দরী তরুনী কাউন্টারে বসে আছে।আমাকে হাত ইশারা করে বসতে বললো।আমি বসতেই জিজ্ঞেস করলো-কি সমস্যা?
আমি সমস্যার কথা বলার আগেই তার সামনে একগাদা বমি করে পেললাম।
এরপর যখন চোখ খুললাম তখন বুঝতে পারলাম আমি হাসপাতালের বেড়ে শুয়ে আছি।শরীর এতো দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো যে,সতের দিন আমাকে হাসপাতালে থাকতে হলো।
সতের দিন পর হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে বাসায় ফিরলাম।দরজা খুলতেই দেখি দুইটা চিঠি নিচে পড়ে আছে।
প্রথম চিঠিটা খুলে দেখি শীলা লিখেছে-চিঠি পাওয়া মাত্রই যেন তার বাসায় যাই।
অন্যটা পাঠিয়েছে-চট্টগ্রাম থেকে আমার বন্ধু-অনিক।সে লিখেছে তুই যদি এইমাসে চট্টগ্রাম না আসিস তোর আমার ফ্রেন্ডশীপ এখানেই শেষ।অনিক অনেকদিন ধরেই বলছে চট্টগ্রাম যাবার জন্য কিন্তু ব্যস্ততার কারনে যাওয়া হয়না অবশ্য ছয় মাস আগে একবার গিয়েছিলাম-একদিনের জন্য।
অনিক আমার ভার্সিটি ফ্রেন্ড।আমরা এক সাথে হোস্টেলে ছিলাম।বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে সে তার পিত্রালয়-চট্টগ্রামে ফিরে গেছে।সেখানেই একটা বিদেশী বায়িং হাউজে চাকরী করে।
শীলার চিঠি পড়ে নিজের মধ্যে কোন ভাবান্তর হলোনা তাছাড়া হাসপাতালের কাটানো দিন গুলোতেও শীলার কথা অসংখ্যবার মনে পড়লেও তার প্রতি জেদ আর ক্ষোভের পরিমানটাই ছিলো বেশী।বারবার শুধু মনে হতো কি এমন ক্ষতি হতো শীলা যদি ছেলেটার পরিচয় আমাকে বলতো?তাছাড়া আজ যদি আমার সাথে কোন মেয়ের এরকম কিছু হতো আর শীলা যদি সেটা দেখতো তাহলে কি-শীলা ওই মেয়ের পরিচয় না জানা অবধি ঠিক থাকতে পারতো?আমিও কি শীলাকে না বলে থাকতে পারতাম?
অনেকদিন বাসায় না থাকাতে ধুলো-বালি আর মাকড়সার জালে ঘরটা ভরে গেলো।ঘর পরিষ্কার করতে করতেই মনস্থির করলাম শীলার বাসায় যাবো।যদিও তার বাসায় যাওয়ার আগ্রহটা পচ্ছিলামনা।
ঘর-দোর পরিষ্কার করে নিজে ফ্রেশ হয়ে রাস্তায় বের হলাম-তখন সন্ধ্যার আগ-মুহূর্ত।একটা রিক্সা ঠিক করলাম শীলাদের বাসার উদ্দেশ্যে।
শীলাদের সেগুনবাগিচার বাসার সামনে গিয়ে খেলাম আরেকটা ধাক্কা-তাদের দোতলা বাড়ির পুরোটা জোনাক বাতির মিটিমিটি আলোয় সুসজ্জিত।বাড়ির সামনেই বিশাল গেইট-সেটাও লাইটের আলোয় আলোকিত।আমার বুঝতে একটুও দেরী হলো না যে,এটা শীলার বিয়ে।শীলা ছাড়া বিয়ে হবার মতো এ বাড়ীতে আর কেউ নেই।শীলার একটা বড় বোন ছিলো।গত বছর লাভ-ম্যারেজ করেছে ফ্যামিলিকে না জানিয়ে।শীলার বাবা সেই বিয়েটা মেনে নেয়নি।
আমি কনফার্ম হওয়ার জন্য গেইটের কাছে গিয়ে মধ্যবয়স্ক দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম-চাচা,কার বিয়ে?
সে হাসি মুখে জানালো সাহেবের মেয়ের।তার কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা হলো-যদিও এটা আমি আগেই অনুমান করেছিলাম।
শীলা আমার সাথে এটা করতে পারলো?একটি বারো আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলোনা?
তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিলাম ঢাকায় আর এক মুহূর্তও থাকবোনা-চট্টগ্রাম চলে যাবো।দেরী না করে সেখান থেকেই সিএনজি ভাড়া করে সোজা চলে এলাম চট্টগ্রামের বাস-কাউন্টারে।


চট্টগ্রাম এসে অনিকের বাসায় উঠলাম।
মা-বাবা আর সুন্দরী বউকে নিয়ে অনিকের সুন্দর-সংসার।
অনিকের বাবা-মাও আমাকে সহজে কাছে টেনে নিলো।সাধারনত গল্প-নাটকে ছেলের বন্ধুকে বাবা-মারা খুব একটা সহজে নিতে দেখা যায়না কিন্তু বাস্তবের হিশাব আলাদা।বাস্তবে ছেলের বন্ধুকে বাবা-মারা ঠিক ততটাই গ্রহন করে যতটা করে তাদের ছেলেকে।
তাদের এই আন্তরিকতার ভিড়ে অনিকের বাসায় আমার থাকার ঘরের কোন অসুবিধা হয়নি।
দীর্ঘদিন পর ঢাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম এসে এবং অনিককে কাছে পেয়ে আমারো বেশ ভালো লাগলো।শীলার সাথে ব্রেকাপের ঘটনা অনিককে বললাম।শুনে অনিকও হতাশ হলো।
আমাদের সম্পর্কের কথা অনিক জানতো।সবশুনে অনিক কিছুতেই বিশ্বাস
করতে পারছিলোনা শীলা এমনটা করতে পারে!
একসপ্তাহ পর ঢাকায় ফিরে আসবো।অনিক বললো ঢাকায় গিয়ে কি করবি?শীলার স্মৃতি হাতডানো ছাড়া আর তো কোন কাজ থাকবেনা।
এখানেই বরং থেকে যা।
চাকরীর জন্য ট্রাই কর।
আর এভাবে ভেঙ্গে পড়লে তো হবেনা।যে চলে গেছে তাকে চলে যেতে দে।নতুন করে আবার সবকিছু শুরু কর।
প্রথমে ভাবলাম ঢাকায় চলে যাবো।
পরে মনে হল অনিকের কথাই তো ঠিক।ঢাকায় গিয়ে কি হবে?বরং থেকেই যাই।


অনিকের সাজেশন অনুযায়ী কয়েকটা জায়গায় সিভি-ড্রপ করলাম।
অবশেষে একটা কলেজে জবও হয়ে গেলো।ছেলে-মেয়েদেরকে ইংরেজী পড়াতে হবে।কলেজে জয়েন করলাম।
ততদিনে শীলার স্মৃতি অনেকটাই ম্লান হয়ে গেল।শীলাকে হারিয়ে আমার মানসিক অবস্থার যে করুণ পরিণতি হয়েছিলো সেখান থেকে আমাকে উদ্ধার করে তুলনামূলক একটা স্বাভাবিক জীবন এনে দেয়ার পুরো কৃতিত্বটা ছিলো অনিকেরই।
অনিক না থাকলে আমার শীলা-পরবর্তী দিনগুলো কখনোই এতোটা সুন্দর হতোনা।
কিছুদিন গেলে অনিক আমাকে বিয়ে করার কথা বললো-আমি তার কথা একেবারেই আমলে নেইনি।তাছাড়া আমি এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
তার কিছুদিন পর যখন অনিকের বাবা-মাও ধরলো আমার বিয়ের জন্য তখন আর তাদের কথার উপর না করতে পারিনি।বাধ্য ছেলের মতো করেই বললাম-আপনারা গুরুজন,আপনারা যেটা ভালো মনে করেন।
কথাটা তাদেরকে মন থেকে বলেছি তা”না-একথা বলে তাদেরকে সান্তনা দেয়াই ছিলো আমার মূল-উদ্দেশ্য।কারন শীলার স্মৃতি যতটাই ম্লান হয়ে যাক তাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করার চিন্তা আমি তখনো কোনভাবে করতে পারছিলামনা।তারো কিছুদিন পর অনিক জানালো একটা মেয়ে তারা দেখে এসেছে।সবারই মেয়ে পছন্দ হয়েছে,এখন আমার পছন্দ হলেই হলো।আমি অনিককে বললাম দোস্ত এত তাড়াহুড়োর কি আছে তাছাড়া...
আমাকে থামিয়ে দিয়ে অনিক বললো-তাড়াহুড়ো না করলে হবেনা-এটা তাড়াহুড়োরই কাজ।
তাদের প্রেসারে পড়ে একদিন গিয়ে মেয়েও দেখে আসলাম।
মেয়েকে দেখে মনে হয়েছে জাস্ট একটা পরী ডানা গুটিয়ে আমাদের সামনে বসে আছে-আমাদের দেখা শেষ হওয়া মাত্রই সে উড়াল দিয়ে চলে যাবে।
কেউ এই মেয়েকে অপছন্দ করলে বুঝতে হবে তার চোখে অথবা অন্য কোথাও সমস্যা আছে-শুধু সমস্যা বললে অবশ্য ভুল বলা হবে-বুঝতে হবে তার ঘোরতোর সমস্যা আছে!মেয়ে দেখে এসে আমি অনিককে হ্যাঁ-না কিছু বলিনি।
একদিন অনিক এসে এংগেজমেন্টের কথা বলতেই তাকে বললাম-প্লিজ অনিক আমাকে কিছুটা দিন সময় দেয়।অনিক আমার মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরে সেদিন আমাকে আর কিছু বলেনি।
তার কিছুদিন বাদে-অনিক তার অফিসের কাজে ঢাকায় যাবে-দুদিনের জন্যে।
আমিও তার সাথে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম।
সেই যে ঢাকা থেকে আসছি আর তো যাওয়া হয়নি।তাছাড়া তখন আমার মনের অবস্থাও ভালো ছিলোনা তাছাড়া অনিক ঢাকা চলে গেলে আমিও একা হয়ে যাবো তাই ভাবলাম যাই ঘুরে আসি।
বিষয়টা এই রকম দাড়ালো আমরা ঢাকা থেকে এলেই বিয়ের ব্যাপারটা ফাইনাল করা হবে।
ঢাকায় এলাম অনিক তার কাজে গেছে।
আমি পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছি।দেড়-বছর পর ঢাকায় এলাম।
সিগারেট টানতে টানতেই মনে পড়লো সেদিনের কথা-যেদিন সাকুরা থেকে মদ খেয়ে এসে ঠিক এই জায়গাটায় শীলার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম।
হঠাত লক্ষ করলাম আমার নাম ধরে কেউ একজন পেছন থেকে ডাকছে-পেছনে তাকিয়ে যে মেয়েটিকে দেখলাম তার নাম-শীলা।
আমাকে কিছু বুঝে উঠার সময় না দিয়েই সে আমার হাত ধরে টেনে লাইব্রেরীর পাশে একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে গেলো।
বললো কি হয়েছে তোমার?এতোদিন ছিলে কোথায় তুমি?তুমি এমন করলা কেন?চুপ করে আছো কেন?গত দুইটা বছর আমি কিভাবে ফ্যামেলির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি তুমি জানো?
আরে অদ্ভূত তো!কথা বলছোনা কেনো তুমি?


শীলার সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি-তখনো তাকে দেখার ধাক্কা সামলিয়ে উঠতে আমার কষ্ট হচ্ছিলো।
কোনভাবেই বুঝতে পারছিলামনা শীলা আমার সাথে এভাবে কথা বলছে কেনো?
তার কথা শুনে তো তাকে যথেষ্ট স্বাভাবিকই মনে হচ্ছে।
এই দেড় বছরে শীলার গায়ের রঙ আগের চেয়ে আরো উজ্জ্বল হয়েছে তবে আগের চেয়ে অনেকখানি শুকিয়ে গেছে।
চোখে মায়ামায়া ভাবটা আরো বেড়েছে।
সেইদিন সাকুরা থেকে মদ খেয়ে শীলার জন্য অপেক্ষা করা থেকে শুরু করে বার্গার-হাটের ঘটনা তারপর অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং বাসায় ফিরে এসে তার চিঠি পেয়ে তাদের বাসায় যাওয়ার ঘটনা-একেএকে সব শীলাকে বললাম।
আমার কথা শুনেই শীলা বললো থাপ্পড় দিয়ে তোমার সবগুলো দাঁত ফেলে দেয়া দরকার বুঝছো?
তারপর শীলা আমাকে যা বললো তা ছিলো অনেকটা এইরকম-
সেদিন শীলা পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে এসেছিলো ঠিকই তবে বেশীক্ষণ থাকতে পারেনি কারন সেদিন তার সাথে তার দুলাবাইয়েরও দেখা করার কথা ছিলো আর আমি শীলার সাথে সেদিন বার্গার-হাটে যে মানুষটিকে দেখেছিলাম হেসে-হেসে গল্প করতে সে আর কেউ ছিলনা-সে-ই ছিলো শীলার বড় আপুর হাজবেন্ড অর্থাৎ শীলার দুলাভাই।
এবং শীলার বাড়ির সামনে গিয়ে আমি সেদিন যেই বিয়েটা দেখেছিলাম সেটা ছিলো শীলার বড় আপুর বিয়ে।শীলার বাবা তাদের বিয়ে প্রথমে মেনে নেয়নি ঠিকই কিন্তু পরবর্তীতে শীলার মা এবং শীলার অনুরোধে শীলার বাবা তাদের বিয়েটা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলো।
শীলার মুখ থেকে কথা গুলো শুনে নিজের উপর নিজেরই প্রচন্ড রাগ হলো।
শীলা যখন কথাগুলো বলছিলো তখন তার দুই চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছিলো।
শীলার চোখের দিকে তাকানোর সাহস আমার ছিলোনা।
আমি তাকিয়ে ছিলাম আকাশের দিকে আর ভাবছিলাম এই দেড়-বছরে এই নিরাপরাধ মেয়েটিকে আমি যে কষ্ট দিয়েছি সারা জীবন তাকে ভালবেসেও কি সেই কষ্টের কিছুটা লাঘব করা যাবে?
একথা ভাবতে-ভাবতে কখন যে আমার চোখের কোনেও দুই ফোটা জল এসে জমেছিলো টেরই পাইনি।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×