বাংলাদেশের মুসলিমরা দুই ভাগে বিভক্ত। একদল বলে নবী (সাঃ) গায়েব জানেন। আরেকদল দল বলে নবী (সাঃ) গায়েব জানেন না। তাহলে সাধারণ মানুষ কোনটা গ্রহণ করবে??? আমাদের দেশের অধিকাংশ মুসলমানের কুরআন হাদীসের জ্ঞান নেই। আর সাধারণত যারা কুরআন পড়ে (মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী ব্যতীত) তারা কুরআনের অর্থ বুঝে না। কারণ কুরআনের ভাষা হল আরবী। যার কারণে কুরআন তেলাওয়াত করলেও কুরআনের আয়াতের অর্থ বুঝে না। আর এই সুবিধাটাই নিচ্ছে একদল পেট পুজারী আলেম সমাজ। যেসব আলেমরা বলে নবী গায়েব জানে, তারা নিজেদেরকে সাধারণ মানুষের সামনে সুন্নী বলে পরিচয় দেয়। এমন কি তারা সাধারণ মানুষকে আরো শিক্ষা দেয়, যারা নবী (সাঃ) গায়েব জানে, একথা বিশ্বাস তারা সুন্নী, আর বিশ্বাস না করলে ওহাবী হিসাবে আখ্যায়িত করে। কিন্তু কেন? তারা কিসের স্বার্থে এই সব করে আমাদের মত সাধারণ মানুষদেরকে ধোকা দেয়? সাধারণ মানুষজন না হয় কুরআন হাদীস সঠিক ভাবে জানে না। কিন্তু যেসব মাওলানারা বলে নবী গায়েব জানেন তারাও কি জানে না? তারা বছরের পর বছর মাদ্রাসায় কুরআন হাদীস না পড়েই কি সময় ব্যয় করেছে??? আর নাকী যারা বলে নবী গায়েব জানেনা তারা বছরের পর বছর মাদ্রাসায় কুরআন হাদীস না পড়েই সময় ব্যয় করেছে??? আমরা কোনটা সঠিক ধরে নিবো??? নবী গায়েব জানেন না এব্যাপারে কুরআনের আয়াত আছে এবং হাদীসও আছে। (কুরআনে আয়াত গুলো এখানে দেখুন, হাদীস গুলো এখানে দেখুন) কিন্তু এগুলো যদি আপনি প্রমাণ স্বরূপ (যারা বিশ্বাস করে নবী (সাঃ) গায়েব জানেন) তাদের সামনে হাজির করেন, তাহলে তারা বলবে এগুলো ওহাবীরা বানিয়েছে। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে হাদীস গুলো না হয় ওহাবীরা বানিয়েছে, কিন্তু কুরআনও কি ওহাবীরা বানিয়েছে? আপনি আরেকটি বিষয় খেয়াল করে দেখেন, যেসব মাওলানারা নিজেদেরকে সুন্নী হিসাবে দাবী করে, তারা সাধারণ মানুষদেরকে কুরআন হাদীসের কথা কমই শুনাই। এমন কি তারা সাধারণ মানুষকে সুন্নতের আমলও শিক্ষা দেয় না। বরং কুরআন হাদীসের বাহিরে নানান রকমের কল্পকাহিনী এবং নিজেদের লেখিত গান শুনাতে সাধারণ মানুষকে শুনাতে ব্যস্ত। যাদেরকে সাধারণ মানুষ পকেটের হাজার হাজার টাকা খরচ করে চেয়ারে বসায়, তারা সাধারণ মানুষকে কুরআন হাদীসের আমলের শিক্ষা না দিয়ে বিভিন্ন রকমের কল্পকাহিনী ও গান শুনাতে ব্যস্ত থাকে। যার কারণে আমাদের সমাজে মুসলমানীত্বহীন মানুষের সংখ্যা দিনেও দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনি যাচায় করে দেখুন কতজন মুসলমান নিজের ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চলতেছে??? শতকরা ২০% হবে কি না আমার সন্দেহ আছে। রোকেয়া প্রাচী ৭১ টি.ভি’র টকশো’তে বাংলাদেশের মুসলমানদেরকে সংখ্যালঘু হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন। আমরা তার কথার ভিতরের দিক না দেখেই তার সমালোচনা করে ছিলাম। যারা ইসলামের বিধিবিধান মেনে চলে তারাই তো মুসলমান। যারা ইসলামের বিধিবিধান না মেনে চলবে তারা মুসলমান হবে কি করে??? তা হলে তো রোকেয়া প্রাচীর কথা এখানে অধিকাংশই সত্য। এখানে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই রকম পেট পুজারী মাওলানা দিয়ে ইসলামে বা আমাদের কি লাভ হচ্ছে??? যেসব মাওলানারা বলে নবী গায়েব জানেন, সেসব মাওলানাদের কাছে আমার প্রশ্ন নবী (সাঃ) যদি গায়েবই জানতেন তাহলে জিবরাঈল (আঃ) নবীর (সাঃ) কাছে কিসের ওহী নিয়ে আসতেন??? আর জিবরাঈল (আঃ) যদি কুরআনের অহী নিয়েই আসতেন তাহলে এখানে নবী (সাঃ) গায়েব জানেন কিভাবে??? আর নবী (সাঃ) যদি গায়েবই জানতেন তাহলে জিবরাঈল (আঃ) অহী নিয়ে আসতেন কেন??? আপনি আরেক টি বিষয় দিকে দেখেন। সূরা ইখলাছ এ আছে। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। নবী যদি গায়েব জানেন তাহলে আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় হয় কিভাবে? তাহলে আল্লাহ তো এখানে বলতে পারতেন আল্লাহ ও নবী (সাঃ) এক অদ্বিতীয়। বিষয়টি সহজ ভাবে পরিস্কার করে দেয়। যেমন মানুষদের মাঝে ৩ লিঙ্গের মানুষ আছে। এর মাঝে দুই লিঙ্গের মানুষ হল নারী ও পুরুষ। নারীদের মাঝে যে বৈশিষ্ট্য আছে তা পুরুষদের মাঝে নেই, যার কারণে সে নারী। এবং পুরুষদের মাঝে যে বৈশিষ্ট্য আছে তা নারীদের মাঝে নেই, তাই সে পুরুষ। যার কারণে এখানে পুরুষও অদ্বিতীয় এবং নারীও অদ্বিতীয়। নারীর পুরুষের বৈশষ্ট্য যদি এক হয়ে যায়, তা হলে নারী শুধু নারী থাকে এবং পুরুষও শুধু পুরুষ থাকে না। নারী পুরুষ একই লিঙ্গের হয়ে যায়। ঠিক তেমনি, গায়েব জানা এটিও মহান আল্লাহর বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্য যদি নবী (সাঃ) থাকলে এখানে আল্লাহও অদ্বিতীয় থাকেন না, আল্লাহ দ্বিতীয় হয়ে যায়। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে সুন্নি কারা? উত্তর হচ্ছেঃ যারা নবী (সাঃ) কথা মানে, নবী (সাঃ) যা বলে গেছেন এবং যা আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন, তারাই সুন্নী। কেননা, নবী (সাঃ) যা বলে গেছেন তা মহান আল্লাহর কথাই আমাদেরকে বলে গেছেন। আল্লাহ বলা কথা ব্যতীত নবী (সাঃ) নিজ থেকে আমাদেরকে কিছুই বলে যাননি। আশা করি যারা এই পোষ্টটি পড়েছেন, তারা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। নবী (সাঃ) গায়েব জানেন এর পক্ষে যুক্তি প্রমাণ থাকলে আপনি এখানে পেশ করতে পারেন। আরো জানতে এই ই-বুক টি ডাউনলোড করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৪