somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিতামাতার আনুগত্য ও ইসলাম

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় বন্ধু হজরত মুহাম্মদ সা:-এর পরে এ বিশ্ব ভুবনে সর্বাগ্রে যাদের আনুগত্য করা উচিত, যাদের সাথে সুন্দর আচরণ করা উচিত, যাদের কথা মান্য করা উচিত তারা হলেন আমাদের চরম ও পরম শ্রদ্ধেয় পিতামাতা।

পবিত্র কুরআনের আলোকে : পবিত্র কুরআনের ১৫তম পারার সূরা বনি ইসরাইলের ২৩ থেকে ২৫ নম্বর আয়াত, ২০তম পারার সূরা আনকাবুতের ৮ নম্বর আয়াত, ২১তম পারার সূরা লোকমানের ১৪ নম্বর আয়াত, ২৬তম পারার সূরা আহকাফের ১৫ নম্বর আয়াতসহ আরো অনেক আয়াতে আল্লাহতায়ালা পিতামাতার আনুগত্য তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করা এবং তাদের মনে কষ্ট না দেয়ার জোর নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে সূরা বনি ইসরাইলের ২৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন, ‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন, তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত কারো না এবং পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের ধমক দিয়ো না এবং তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ আচরণ করো।’ আল্লাহপাক আরো এরশাদ করেন, ‘তাদের সামনে ভালোবাসার সাথে নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলো, হে পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালনপালন করেছেন।’ (বনি ইসরাইল-২৪)।

এ ক’টি আয়াতে কারিমায় মাতা-পিতার প্রতি আচার-ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা প্রদান করা হয়েছে। প্রথমত, তাদের সাথে এমন আচরণ করা যাবে না যাতে তাদের মুখ থেকে ‘উহ’ শব্দটি বের হয়। রাসূল সা: বলেছেন, কষ্ট দেয়ার ক্ষেত্রে ‘উহ’ শব্দের চেয়ে আর কোনো নিস্তুর থাকলে অবশ্যই তা উল্লেখ করা হতো। দ্বিতীয়ত, কখনো ধমক তো নয়ই, ধমকের স্বরে কথা বলাও যাবে না। তৃতীয়ত, সব সময় নম্র-ভদ্রভাবে কথা বলতে হবে, সম্প্রীতি-ভালোবাসা-শ্রদ্ধার ভাব প্রকাশ পায় এমন আচরণ করতে হবে। চতুর্থত, তাদের সামনে নিজেকে হেয় বা ছোট বা অক্ষম হিসেবে পেশ করতে হবে। কোনো প্রকার বড়ত্ব বা মহৎ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার প্রবণতা বর্জন করতে হবে। পঞ্চমত, মাতা-পিতার সুখ-শান্তির জন্য প্রচেষ্টার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে তিনি যেন তাদের সেই প্রশান্তি দান করেন যা শৈশবকালে পিতামাতা সন্তানের জন্য প্রদানে সচেষ্ট ছিলেন। পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার আল্লাহতায়ালা তাঁর ইবাদতের সাথে একত্র করে ফরজ ঘোষণা করেছেন। সূরা লোকমানের ১৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন : ‘তোমরা আমার শোকর করো এবং সাথে সাথে পিতামাতারও।’

হাদিসের আলোকে : পিতামাতার আনুগত্য করা, তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করা আল্লাহর প্রিয় কাজ।

সহি বুখারি শরিফে উল্লেখ আছে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা: এর কাছে প্রশ্ন করলেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কাজ কোনটি?’ প্রিয় নবী সা: বললেন (মোস্তাহাব) সময় হলে নামাজ পড়া। সে আবার প্রশ্ন করল এর পরে কোন কাজটি সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বললেন, পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। (কুরতুবি)।

মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মুসতাদরাকে হাকেমে বিশুদ্ধ সনদসহ হজরত আবু দারদা (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে প্রিয় নবী সা: এরশাদ করেন, ‘পিতা জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা, এখন তোমাদের ইচ্ছা এর হেফাজত করো অথবা একে বিনষ্ট করে দাও।’ (মাজহারি)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী সা: এরশাদ করেন, যে সেবাযত্নকারী সন্তান পিতামাতার দিকে দয়া ও ভালোবাসা সহকারে দৃষ্টিপাত করে, তার প্রত্যেক দৃষ্টির বিনিময়ে সে একটি মকবুল হজের সওয়াব পায়। লোকেরা আরজ করল ইয়া রাসূলাল্লাহ সা: সে যদি দৈনিক এক শ’বার এভাবে দৃষ্টিপাত করে? তিনি বললেন, হ্যাঁ এক শ’বার দৃষ্টিপাত করলেও প্রত্যেক দৃষ্টির বিনিময়ে এই সওয়াব পেতে থাকবে। প্রিয় নবী সা: আরো এরশাদ করেছেন, ‘আল-জান্নাতু তাহতা আকদামিল উম্মাহাত’ অর্থাৎ মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে প্রিয় নবী সা: এরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। ১. মুশরিক, ২. মিথ্যাবাদী ও ৩. পিতামাতার অবাধ্য সন্তান।

এখানেই শেষ নয়, পিতামাতা যদি সন্তানের প্রতি জুলুমও করেন, তাহলেও তাদের অবাধ্য হওয়ার অনুমতি আল্লাহ সন্তানকে দান করেননি। এমনকি পিতামাতা যদি কাফির-মুশরিকও হন, তাহলেও তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ রয়েছে। আল্লামা ইমাম কুরতুবি (র:) এ বিষয়টি সমর্থনে সহি বুখারি শরিফ থেকে হজরত আম্মার (রা:) একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। হজরত আম্মার (রা:) প্রিয় নবী সা:কে জিজ্ঞেস করলেন : আমার মাতা মুশরিকা। তিনি আমার কাছে দেখা করতে আসেন, তাকে আদর-আপ্যায়ন করা যাবে কি? প্রিয় নবী সা: বললেন : তোমার জননীকে আদর-আপ্যায়ন করো। আমাদের উচিত সর্বাবস্খায় পিতামাতার আনুগত্য করা। তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করা। পিতামাতার প্রতি নির্যাতন বা অসদাচরণ তো নয়ই, তারা অসন্তুষ্ট হন এমন কোনো আচরণ যেন না হয়ে যায়, সে দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া একজন মুসলমানের জন্য খুবই জরুরি। ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তির প্রত্যাশা থাকলে সর্বাবস্খায় পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×