মানুষের ইচ্ছাশক্তি কতটা তীব্র কতখানি অপ্রতিরোধ্য হতে পারে, তা সত্য সত্যিই কল্পনার অতীত। বোধহয় সীমারেখা টানতে গেলে তা অসীমে ঠেকবে। মজার ব্যাপার হল এই জাগিয়ে তোলার আগ পর্যন্ত কেউই টের পায়না, কতটা তীব্র হতে পারে এর ক্ষমতা।
রোমাঞ্চ উপন্যাসে লেখকের কল্পনার রঙ আমাদের রোমাঞ্চিত করে। রোমাঞ্চের স্বাদ কেউ পেতে দুঃসাহসিক অভিযানে যায়। পেনাল্টি শুট আউটের সাডেন ডেথ প্রতিটা কিক আমাদের রোমাঞ্চিত করে। শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনার কৃত্তিম উৎকন্ঠায় কাটে প্রতি মুহুর্ত। কিন্তু এমন যদি হয়, সাডেন ডেথ খেলার হারজিৎ নয়, যদি হয় বাঁচা-মরার নির্ধারক? রোমাঞ্চের স্বাদ পেতে নয়, যদি দিতে হয় বেঁচে থাকার যুদ্ধে অনিশ্চিত যাত্রার বন্ধুর দুর্গম অজানা পথ পাড়ি?
বাস্তবতা কখনও কল্পনাকে হার মানায়। মিরাকল তথা অলৌকিক ঘটনা বাস্তবেই ঘটে যায়। গত শতাব্দীর সব থেকে বড় মিরাকল নিশ্চিতভাবেই ১৯৭২ সালের উরুগুয়ে ট্রাজেডি জয়ীরা।
১৯৭২ এর অক্টোবরে ৪৫জন যাত্রী নিয়ে উরুগুয়ে থেকে চিলি যাবার পথে আন্দিজ পর্বতমালার দুর্গম স্থানে বিদ্ধস্ত হয় উরুগুয়ে রাগবি টিম বহনকারী এরোপ্লেন। দু'খন্ড হয়ে যাওয়া এয়ারবাসে তাৎক্ষনিক নিহত হয় পাইলট কো-পাইলট সহ ৫জন। বাকিরা কমবেশী আহত রক্তাক্ত।
রেসকিউ টিমের আশায় অপেক্ষার প্রহয় গুনতে থাকে বেঁচে যাওয়ারা। দুর্বল সিগনালে রেডিওতে কান পেতে চেয়ে থাকে উদ্ধার দলের তৎপরতা জানতে। একদিন দু'দিন করে দিন পার হয়ে যায়। ফুরিয়ে আসতে থাকে ব্যাটারির চার্জ। আসেনা কেউ।
ফুরিয়ে আসে বিমানের রিজার্ভ খাবার। একে একে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আহতরা। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জানেনা তারা নিজেদের অবস্থান, শুধু জানে আন্দিজের কোনও খাঁজে।
এরমধ্যে পার হয়ে যায় ১০দিন। খাবার পানি শূণ্যের কোঠায়। জীবিতের সংখ্যা কমতে কমতে ২৭-এ এসে ঠেকেছে। কিন্তু এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায়, যখন ককপিটের এন্টেনা ব্যাবহার করে দুর্বল রেডিও সিগনালে শুনতে পায় টানা ১০দিন খোঁজার পর চিলি ও উরুগুয়ের সরকার যৌথ অভিজান আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ করেছে এই উপসংহার টেনে, বিদ্ধস্ত বিমানের আর কেউই বেঁচে নাই।
উদ্ধার পাবার যেটুক আশা ছিল, এই ঘোষনায় তাও চলে যায়। ফুঁরিয়ে যায় খাবার। পানি। আন্দিজের অজানা কোনও কোনে ক'জন মানুষ যুদ্ধ করছে প্রকৃতির সাথে। মাইনাস ৩০ডিগ্রি তাপমাত্রা। শেল্টার বলতে কেবল ক্রাশড এয়ারবাসের বডি।
কিন্তু না এখানেই শেষ না। নেমে আসে বিশাল পাহাড়ি ঢল, বরফের ধ্বস। গুঁড়িয়ে যেয় শেল্টার। মারা যায় আরও ৮জন। আহত জীবন্মৃত অবস্থায় বাকিরা।
দিন কেটা যায়, মাস পেরিয়ে যায়। কোথায় যাবে তারা? অর্ধমৃত শরীর টেনে হিঁচরে বের করে এয়ারবাস থেকে বের হয়ে রক্তহীম করা শীতল তীব্র বাতাস, তুষারপাতে দুই পা ফেলার উপায় নাই। চারিদিকে শুধু বরফের পাহাড় আর পাহাড়। কোন দিকে যাবে তারা? গন্তব্য কতদূর?
আন্দিজ পর্বতমালা। পৃথিবীর এক বিস্ময়। কোথায় এর শেষ? পুরো দক্ষিন আমেরিকা মহাদেশের এ'মাথা থেকে ও'মাথা বিস্তৃত। কত শত হাজার মাইল পাড়ি দিতে হবে বাঁচতে হলে? একদল আহত জীর্ণ মানুষের বেঁচে থাকার যুদ্ধ; তারা ট্রেকার না, পর্বোতারোহী না, নাই পাহাড়ে চলার অভিজ্ঞতা শক্তি সামর্থ্য, নাই কোনও জীবনরক্ষাকারী সামগ্রী, অক্সিজেনের অভাবে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। ক্ষুধায় জীর্ণ শরীর। অজানা অনিশ্চিত আগামী। যেদিকে চোখ যায় শুধু সাদা বরফের চাঁই আর কিছু না; যেখানে কখনও কোনও মানুষের পা পড়েনি।
নাই খাবার নাই পানি। নাই আশা। সামনে শুধু দৃশ্যমান একটাই পরিণতি, মৃত্যু। শুধু জানে তারা ক'জন এখনও শ্বাস নিচ্ছে এই পৃথিবীতে। তারপরও বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছা। এই অদম্য ইচ্ছা শক্তিটুকুই সম্বল। বিশ্বাস শুধু অপ্রতিরোধ্য ইচ্ছাশক্তিই পারে আর সব প্রতিকূলতা পরাজিত করতে। সত্যিই কি তাই?
উরুগুয়ে ট্রাজেডি'র উইকি লিঙ্কঃ 1972 Andes flight disaster
২০০৯ সালে উরুগুয়ে ট্রাজেডির উপর হিস্ট্রি চ্যানেল ডকুমেন্টরি নির্মান করেঃ I Am Alive: Surviving The Andes Plane Crash Review
আলোচিত ব্লগ
সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন
নীল নকশার অন্ধকার রাত

কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।
মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে
আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[
স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।