somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

(রম্য সাক্ষাতকার) চাঁদ মামার সাথে আমার দ্বিপাক্ষিক কথোপকথন!!!!

২৪ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


-- আপনাকে মামা বলে সম্মোধন করা যাবে?
-এটা আবার কেমন প্রশ্ন?
-- না, মানে এর আগে সুর্যকে মামা বলে ডাকায় তিনি খুব রাগ করেছিলেন (সূর্যের সহিত আমার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক দ্রস্টব্য ), তাই আর কি!
- রবি সাহেবের(সুর্য) আবার মেজাজ- -মর্জির কোন ঠিক নেই। কখন কি করে বসে কিছু বলা যায় না। আর এরকম হবেই বা না কেন!! পেটের মধ্যে সবসময় অমন আগুন জ্বললে কারই বা মাথা ঠিক থাকে বল!!
--তা আপনি সত্যি কথাই বলেছেন। তবে রবি সাহেব কিন্তু আপনার উপর খুব একটা সন্তুষ্ট না। আমাকে বললেন সে কথা!
-(অবাক হয়ে) কেন?
--আপনি নাকি নিজে আলো উতপাদন না করে তার আলো চুরি করেন। নিজেকে আয়নার মত ব্যবহার করে আলো বিলান পৃথিবিতে আর বাহবা কুড়ান কবি, সাহিত্যিক আর সৌন্দর্যপিপাসুদের।

কথোপকথনের এই পর্যায়ে এবার রেগে ওঠে শশী সাহেব।
-যত দোষ চন্দ্রঘোষ! কেন রবি সাহেবের চোখে কি ডিমোস-ফোবস (মঙ্গল গ্রহের চাদ), লো,ইউরোপা, গ্যানিমিড, ক্যালিস্টো, টাইটান এদের পড়ে না??? অতই যদি দোষ দেবার ইচ্ছা থাকে তবে আলো উতপাদন বন্ধ করে দিলেই তো পারে! আর বিনামুল্যে নিজের চেহারা বাড়িয়ে নেবার সুযোগ থাকলে কেন সেটা নেব না?? তোমাদের ভিতর মেয়েরা মেকাপ নেয় না? আর কবিদের কথা বলছ!!! একমাস পরপর নিজেকে এত সুন্দর করে সাজিয়ে তোমাদের সামনে উপস্থাপন করি আর এক কবি সেই আমার ভরা রূপকে "ঝলসানো রুটি" বানিয়ে ছেড়ে দিল!! কি লজ্জা কি লজ্জা!! আরে ব্যাটা, তুই কবিতা লেখা ছেড়ে দিবি দে। বুঝলাম যে ক্ষুধার কারনে পৃথিবীটা প্রবন্ধময়, অভিসন্দর্ভময়, রচনাময়। তাই বলে আমার নাক নিয়ে টানাটানি? হিমশীতল মহাশুন্য থেকে একেবারে গনগনে চুলার উপরে!!

আমার বলতে ইচ্ছা হল, আরে ব্যাটা মেকাপ তো পুরুষের জন্য নয়!!! সুকান্ত কে নিয়ে মন্তব্য করায় আমার মাথায় ততক্ষনে রাগ চড়ে গেছে। বহুকষ্টে রাগ সংবরণ করলাম। তবে খোঁচা দিতে ছাড়লাম না।
--তা, মামা আপনার নামে কি যেন সব কলংকের কথা শুনি।
-সব ভুয়া কথা। মানুষদের অজ্ঞতাপ্রসূত ফালতু কথাবার্তা। আসল ব্যাপার হল আমার বুকে অনেক পাহাড়, মৃত আগ্নেয়গিরি আর গভীর খাদ আছে। তারই আলো ছায়ার খেলায় যে মায়াবী আবহের সৃস্টি হয় তাকে কতিপয় কিছু মানুষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কলঙ্ক বলে সাব্যস্ত করেছে। যত্তসব বোগাস।

বিড়বিড় করে আর কি সব বলল যেন তা ঠিকমত বোঝা গেল না। তবে বোঝা গেলেও যে উল্লেখ করা যেত না, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। সেন্সর করতে হত। আমি আবার কথায় ফিরি।
--আমাদের দেশে একটা গান খুব জনপ্রিয়। "চাঁদমামা আজ বড্ড একা, বড় হয়েছি আমি"। এর সাথে আপনি কতটা একমত?

প্রশ্নটা শুনে একটু যেন উদাস হয়ে যায় শশী সাহেব। হালকা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
-একাকীত্ব। মহাশুন্যে আসলে একাকীত্বের ডেফিনিশন ভিন্ন। হ্যা, মাঝে মাঝে একা লাগে। বিশেষ করে যখন ডিমোস-ফোবস এর রগরগে প্রেমকাহিনী ছড়িয়ে পড়েছিল গ্যালাক্সি জুড়ে তখন এক অজানা অবেগ ভর করেছিল আমার ভিতরে। কিছু একটার অভাব বোধ করেছিলাম। তবে একটা কথা তোমাকে আমি ক্লিয়ারকাট জানিয়ে রাখি। আমার একাকীত্বের সাথে মানবকুলের বড় হওয়া, না হওয়ার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন সম্পর্ক নেই। সব ভিত্তিহীন বানোয়াট কথা। কার সাথে কার তুলনা!!!!!! হাহ!
--তা, আপনার জীবনের সবচেয়ে বিরক্তিকর দিন কোনটা?
-কোনটা আবার? যে দিন নীল আর্মস্ট্রং আমার শান্তিসাগরে অশান্তির ঝড় তুলে দিল সেদিন। ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাতই আশপাশ কেঁপে উঠল। জেগে দেখি কিম্ভুতকিমাকার গড়নের কি একটা যেন নেমে আসছে। তারপর তার মধ্যে থেকে এক মানুষ বের হয়ে এল। নেমেই অমনি কি একটা "হাটাহাটি-লম্ফঝম্ফ" নিয়ে একটা বাক্য বলল। শুনেছি নাকি এই বাক্যটা পৃথিবিতে খুব জনপ্রিয় হয়েছে। হাস্যকর!!!! তার কিছুক্ষন পর আরেকজন বের হয়ে এল। তারপর দুজন মিলে সে কি লাফালাফি। পতাকা গাড়ল দুজন মিলে। আরেক ফাজিল আমার চারপাশ দিয়ে চক্কর মারছিল। ইচ্ছে হচ্ছিল মুন্ডু চিবিয়ে খাই।

আমি আর তাকে কথা বলার সুযোগ দিলাম না। পৃথিবিতে সম্মানিত ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে যেসব আউলাঝাউলা মন্তব্য করা শুরু করেছে, শেষে কি বলতে কি বলে ফেলবে, আমার মটকা গরম হয়ে যাবে। সাক্ষাতকারটা শেষ করতে হবে।

--আচ্ছা, আপনার তো বায়ুমণ্ডল নেই, তাই আপনার আকাশ কালো। খারাপ লাগে না মাঝে মাঝে? পৃথিবিতে কি সুন্দর নীল আকাশ, সাতরঙা রংধনু, শুভ্র মেঘের পাল।
-দেখ বাবাজি, আমাকে রংয়ের মাহাত্ম্য শিখাতে এস না। আমি ভাল করেই জানি, বেদনার রং নীল। তোমরা মানুষেরা মিলে পৃথিবির যে হাল করেছ, যেভাবে কেটে-খুড়ে-চুষে ছ্যাবড়া বানিয়ে ফেলেছ তার থেকে আমার একাকীত্ব অনেক ভাল। আর জানোই তো, রহস্য কালো রঙ্গা। আমি রহস্য ভালবাসি।

এই প্রথম চাঁদমামার একটা কথা খুব ভাল লাগল আমার। আসলেই মানুষ আমরা বড় অকৃতজ্ঞ। ধরনীমাতা কে আমরা বড় অশান্তিতে রেখেছি। একটু সুখ আসলেই তার প্রাপ্য।

আর দীর্ঘ করলাম না সাক্ষাতকারটা। বিদায় নিয়ে চলে এলাম বেদনার রংয়ে রাঙ্গা পৃথিবিতে।

-জুলিয়ান কতৃক গৃহীত চন্দ্রসাক্ষাতকার।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৪৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×