( ছবি গুগল থেকে নেয়া )
ছোট্ট নৌকাটা খুব ধীরে সুস্থে এগিয়ে যাচ্ছে, দেখে মনে হবে নৌকার যাত্রীদের আজ কোনো তাড়া নেই ! চারদিকে খানিক আগেই ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিলো, আর এখন চাঁদের আলোর কি সুন্দর ছায়া পড়েছে নদীর মাঝে। নৌকার মাঝে বসে আসে দুজন, একজনের হাতে কাঠের একটি টুকরো। তাই দিয়ে ছোট্ট নৌকা বয়ে নিতে একটুও কষ্ট হচ্ছে না। তার চোখে অপেক্ষার ছবি আর মুখে এক চিলতে অদ্ভূত হাসি। মাঝ নদী কখন আসবে সেই ভাবনায়, বারবার এদিক সেদিক তাকিয়ে যেনো মাঝ নদী ঠিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নৌকার অন্য প্রান্তে বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে অন্যজন। পাগলাটে এই ছেলের পাল্লায় পড়ে, তার এই নৌকা ভ্রমন। পাগলাটে হলেও তার খামখেয়ালী স্বভাবটাই তার সবচেয়ে পছন্দের। না চাইলেও অদ্ভূত কিছু দেখার আশায় এই মাঝ রাত্রিতে নৌকার নিমন্ত্রণ উপেক্ষা করতে পারেনি। নদীর পাড় ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে, দূরের গাছের ছায়া নদীর কোলে কি ভীষণ আঁধার সৃষ্টি করেছে।
--আচ্ছা রাতের বেলা কি পাখি ডাকে ?
--ধূর, রাতে পাখি পেলে কোথায় ? তাচ্ছিলের সাথে জবাব দেয় ছেলেটা
--এই যে আমি একটু আগেই শুনলাম !!
--আমি যে কিছুই শুনিনি
--আচ্ছা তোমার মাঝ নদী আসতে কতদূর ?
--চাঁদটা দেখলে আজ !
--হুম, আচ্ছা রাত বাড়লে কি চাঁদ বিশাল হতে থাকে ?
--হতে পারে, আমি উঠোনে বসে একবার সারারাত্রি চাঁদ দেখেছিলাম। বিশ্বাস করো, চাঁদটা বিশাল হয়ে আমায় ছোঁয়ার জন্য তার রংটা বাড়িয়ে দিলো।
--চাঁদের আবার রং হয় নাকি ? কিছুটা হেসে বলে উঠে মেয়েটা
--দেখতে জানলে সবকিছুর মাঝেই তুমি রং খুঁজে পাবে।
এই পর্যায়ে এসে কথা থেমে যায় দুজনার। মেয়েটি কথা হাতড়ে বেড়ায় মনের মাঝে আর ছেলেটা নৌকাকে থামিয়ে পানিকে স্থির করার চেষ্টা চালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর নৌকা আর নদীর ঢেউ দুটোয় থেমে যায়। কথোপকথন আবার শুরু :
--আমরা কি মাঝ নদীতে এসে পড়লাম ?
--মাঝ নদী কিনা জানা নেই, তবে এতেই চলবে। তুমি, উঠে এসে নৌকার মাঝখানে বসো
কথা না বাড়িয়ে মেয়েটি এসে বসলো নৌকার মাঝখানে।
--এবার তোমার ডানে তাকাও, খুব আস্তে করে বলে উঠে ছেলেটা ।তার কথা শুনলে মনে হবে, জোরে বললে কেউ শুনে ফেলবে দূর থেকে।
বিশাল চাঁদটার চমত্কার প্রতিবিম্ব পড়েছে জলের মাঝে। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে মেয়েটি, নদী যেনো চাঁদের অপূর্ব এক জলছবি আঁকছে। মনে হচ্ছে, বিশাল চাঁদটা নদীর মাঝে ঘুমিয়ে আছে !! চাঁদের জলছবির ঠিক মাঝ থেকে এক মুঠো জল তুলে নেয় ছেলেটি, কিছুটা নিচুস্বরে বলে উঠে
--এই হচ্ছে চাঁদের জলরং .........এই বলে ছুড়ে দেয় মেয়েটির গায়ে । এরপর মেয়েটির সামনে এগিয়ে এসে, হাতের মাঝে লেগে থাকা জলরংটা ছড়িয়ে দেয় মেয়েটির ঠোঁটের মাঝে।
--তুমি কি ছবি আঁকতে পারো ?
প্রশ্ন শুনে চমকে উঠে মেয়েটি।
--'না' আবেগ মিশানো কন্ঠে বলে উঠে মেয়েটি
--তোমার মাঝে রং লেগে আছে, এসো দুজন মিলে জলরং দিয়ে ভালোবাসার কোনো অসাধারণ ছবি আঁকি।
***** ***** **** **** *** *** *** **** *** *** ****
এক নিমেষে গল্পটা শেষ করে, তার দিকে তাকিয়ে বললাম " কেমন হয়েছে ?" ............অনেকক্ষণ ভেবে সে বললো, " ভালোই, তবে চমত্কার কিছু ডিটেলস বাদ দিলে তুমি ! নদী, রাতের আঁধার, পূর্নিমা, নৌকা, আর ক্যারেক্টার গুলোর আরো ডিটেলস দিলে ভালো হতো ".... চুপচাপ শুনে গেলাম তার কথাগুলো, বললাম " আচ্ছা ধরে নাও, গল্পটা এখনো শেষ হয়নি, জলরং ঠোঁটে মেখে মেয়েটা কি ছবি আঁকবে সেটা তুমিই কল্পনা করে সাজিয়ে দাও" ..................... উত্তরে সে বললো, " আমি চিন্তা করে তোমায় জানাবো, আজ এসো অনেক রাত হয়েছে।"
বাড়ি ফেরার পথে মনে পড়লো, তাকে আজও বলা হলো না মনের সাজানো কথাগুলো। পানির গ্লাসের মাঝে ঘরের ইলেকট্রিক বাতির অদ্ভূত ছায়া দেখে গল্পটা সাজানো। সেদিন ইচ্ছে করেই উঠতে গিয়ে গ্লাসের পানিগুলো ফেলে দিলাম তার চেয়ারে, ভেবেছিলাম হয়তো জলকণাগুলো হাত দিয়েই স্পর্শ করবে। নাহ, কেনো যে টিসু নামক জিনিসটার জন্ম হলো !! বুকের মাঝে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাসটা বেরিয়ে আসলো সাথেসাথে। সেদিন অনেকদূর হেঁটে এসে প্রচন্ড তেষ্টা পাওয়ার পরও, গ্লাসের অর্ধেকটা পানি ছড়িয়ে দিয়েছিলাম তার চেয়ারে। অদ্ভূত কি ইচ্ছে আমার, " হাত দিয়ে জলকণা স্পর্শ করবে এরপর সেই হাত দিয়ে ঠোঁট ছোঁয়া"।....আমার ঠোঁট ছোঁয়া জলকণা তার ঠোঁট স্পর্শ করবে এই আশাতেই গল্পটা সাজানো। নাহ, আমার ভাগ্যটাই এমন, আমার স্পর্শের জলকণা রাজকন্যাকে ছোঁয়ার চেয়ে মাটিকেই বেশি ভালোবাসে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৫১