somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অণুগল্প : বৃষ্টি এবং আমি !

১০ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশাল উঠোনে আমি একা ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছি, কাঠের টুকরোগুলো ছড়িয়ে আছে চারপাশে। ছড়িয়ে আছে আরো অসংখ্য যন্ত্রপাতি, যাদের বেশিভাগের সাথে আজই আমার পরিচয়। খুব তাড়াহুড়ো করে ধার করে আনা সব। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মেঘেরা আসতে শুরু করেছে, মৃদু একটা হাসির রেখা ফুটে উঠলো আমার মুখে। সেই কয়েকদিন থেকেই বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা, আজ সকালে আকাশে একটুখানি কালো মেঘের ছায়া দেখেই মনটা আনন্দে ভরে উঠেছিলো। আমার মনকে আঁধারে ডুবিয়ে দুপুরে সূর্যের আলোর ঝলমলে খেলা ! মন খারাপ করে আকাশের খবর নিবো কি না ভাবতে বসলাম। আমার মতে, বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিসে যারা কাজ করে তাদের সবাই অতি উচ্চ মাত্রার দার্শনিক। এইতো কিছুদিন আগেই, টিভিতে তাদের একজনকে গম্ভীর কন্ঠে বলতে শুনলাম " বৃষ্টি হয়তো আরো কয়েকদিন পর আসতে পারে" !! সবকিছুর মাঝেই অনিশ্চয়তা ঢুকিয়ে ফিলোসফিকাল ভাবে কথাবার্তা বলাই বোধহয় এদের একমাত্র কাজ। ভাবনা থেকে সরে আবার কাজে মন দিলাম।

দুপাশে কাঠের পিলার, উপরে আরেকটি কাঠের টুকরো আড়াআড়ি ভাবে রাখা, সেই টুকরোর মাঝে রশি ঝুলানো, এরপর বসার জন্য ছোট্ট কাঠের টুকরো লাগানো। মনে মনে আবারও ডিজাইনটা ঠিক করতে লাগলাম। উঠোনের ঠিক মাঝে দোলনা, আর দোলনার ঠিক উপর গোলাকার একখন্ড টিনের ছাদ। গোলকার টিনের টুকরোটা এমনভাবে বসাতে হবে যেনো, দোলনায় দোল খেলেই টিনের ছাদ ছড়িয়ে খোলা আকাশ দেখা যাবে। প্ল্যানটা এইরকম, বৃষ্টির মাঝে ছাতা হাতে উঠোনের মাঝে আসা, এরপর ছাতা রেখে দোলনায় বসে থাকা। মাথার উপর টিনের মাঝে বৃষ্টির শব্দ, আর দোলনায় বসে বাতাসের অংশ হয়ে যাওয়া।

সেদিন বারান্দায় উদাসী চোখে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ধরতে দেখেছিলাম তাকে। নাহ, বৃষ্টি নয় আমি শুধু তাকেই অপলক দেখছিলাম। সেদিনের বৃষ্টিটা কেমন যেনো হঠাত করেই শেষ হয়ে গেলো, শেষ হয়ে গেলো আমার তাকিয়ে থাকাও। সন্ধ্যায় চাঁদের আলোয় তার পাশাপাশি হাঁটছিলাম, কথাটা শেষমেষ বলেই ফেললাম তাকে "তোমার জোছনামাখা হাতে এসো বৃষ্টির রং লাগিয়ে দেই" !! অনেকটা সময় তাকিয়ে ছিলো সে আমার দিকে, এরপর বললো "যদি কোনদিন ঝুম বৃষ্টি হয় আমায় ডেকো, হাতে রং মেখেই তোমাকে ছুঁয়ে দিবো" ........

কিছুদিন আগে তার সাথে আমার পরিচয়, পৃথিবীতে অপূরুপা কিছু মেয়ে আছে যাদের মনের রূপ বাহ্যিক রূপকে ছাড়িয়ে যায়। তার সাথে পরিচয় হবার কিছুদিনের মাঝেই আমি এই সত্যটা উপলব্ধি করতে পারি। সেদিন গাছের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো চমৎকার কিছু নকশা নিয়ে হাজির হয়েছিলো রাস্তার পাশে সবুজ ঘাসের উপর। আনমনে সেই নকশার নানারূপ দেখছিলাম আমি। সবুজ ঘাসের একটা অংশে গোলাকার হয়ে সূর্যের আলো পড়ছিলো, চারপাশটায় গাছের ছায়া আর তার মাঝে একখন্ড আলোর টুকরো।

অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে যেই আমি হাত বাড়িয়ে হাতের ছায়া দেখতে যাবো, সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি কন্ঠ বলে উঠলো " এভাবে ধরতে নেই !!"........সেই কন্ঠের মাঝে কি যেনো একটা ছিলো, কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি হাত বাড়ালেই আলোর কণাগুলো ব্যাথা পাবে। আমি পিছন ফিরে তাকালাম, অদ্ভূত সুন্দর এক হাসি নিয়ে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো মেয়েটি। হাতের আঙ্গুল দিয়ে কি একটা করে, গোল হয়ে থাকা আলোর মাঝে হাতটা বাড়িয়ে দিলো। তার আঙ্গুলের ছায়ার নাচানাচি দেখে মনে হলো জীবন্ত একটা প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে।

সেই প্রজাপতি হয়ে উড়ে বেড়ানো হাতটা আজও আমার ছোঁয়া হয়নি। অল্প কিছুদিনের মাঝেই জানলাম, টিনের উপর বৃষ্টির শব্দ তার খুব পছন্দের। এরপর থেকেই প্রজাপতি ছোঁয়ার প্ল্যান বানানো। দোলনার মাঝে বাতাস সেজে সে বৃষ্টি ছুঁয়ে যাবে আর সেই বৃষ্টির রং লাগানো হাতটা আমি কাছ টেনে নিবো।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:২৭
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×