somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সৈয়দ কামাল হুসাইন
আমি লিখতে ভালবাসি,তাই চেষ্টা করি লিখে যেতে।মানুষ হিসাবে ব্যর্থ ও নষ্ট মানুষ।সত্যকে ভালবাসি বলে সত্য বলি।আমি এই পৃথিবীতে এসে যদি মিথ্যার চাদরে ঢেকে যাই,তা হবে জীবনের বড় পরাজয়।

স্মার্টফোন বা অন্ধকারের গল্প

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্মার্টফোন বা অন্ধকারের গল্প(ছোট
গল্প)
.
কয়েক রাত থেকে ঘুমাতে পারিনা,
চোখ
বন্ধ করলে ভেসে উঠে সেই দৃশ্য। ঘুম
আসেনা কিছুতেই। খেতে বসে না
খেয়েই
উঠে যাই, ভাতের রঙ দেখি লাল।
ভাত
ছুঁতে ভয় লাগে। মনে হয় কেউ আমার
সামনে রক্ত ভাত রক্ত জল দিয়ে
রেখেছে। এদিক ওদিক যেদিকে
তাকাই
শুধু রক্ত
দেখি। আমি চারপাশে রক্ত দেখে
চিৎকার করে উঠি। মনে হয় এ রক্তে
আমি
ডুবে যাবো।
গল্পের বই পড়তে বসি, বইয়ের প্রতি
পৃষ্ঠায়, প্রতি বর্ণে দেখি একই দৃশ্য।
আমি পড়তে পারিনা, ভয়ে কেঁদে
উঠি।
বন্ধু ওমর আমাকে ডাক্তারের কাছে
যেতে বলে। আমি নাকি পাগল হয়ে
যাচ্ছি। আমার ভালো চিকিৎসা
দরকার।
.
আমি বুঝতে পারিনা, আমার কী করা
উচিত। অথচ ক'দিন আগে আমি এমন
ছিলাম না। আমি হাঁটতে
পারতাম, ঘুমাতে পারতাম, বই পড়তে
পারতাম। স্মার্ট ফোনে ছবি তুলে
ফেইসবুকে আপলোড করতে
পারতাম, স্ট্যাটাস দিতে পারতাম।
এইতো দিন কয়েক আগে অফিস থেকে
বাসায় যাচ্ছিলাম। অফিস থেকে
বাসা
খুব দূরে নয় বলে, সব সময় হেঁটে হেঁটেই
যেতাম।
রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেঁটে যাই।
প্রতিদিন একই সময়ে একইভাবে এই পথ
দিয়ে যাওয়া আসা করি। একইরকম
ফোনের দিকে তাকিয়ে টাইপ করে
করে
বা পড়তে পড়তে যাই। আসলে
ফোনটাই
আমার একমাত্র সঙ্গী। তাকে ছাড়া
কাটানো সময় নিঃসঙ্গ লাগে।
অস্থির
অস্থির লাগে। সে আমার নীরবতায়
কোলাহল, একাকীত্বে সঙ্গ, হাসি
কান্নার বন্ধু। অফিসে যতক্ষণ থাকি
লুকিয়ে লুকিয়ে ফোন ব্যবহার করি।
অল্পসময় ফোন থেকে দূরে থাকলে
মনে
হয় অনেক কিছু হারিয়ে
যাচ্ছে আমার।
.
একবার হয়েছিল কী, আমি খালার
বাসায়
বেড়াতে গিয়েছিলাম। এখান থেকে
চার
কিলোমিটার দূরে। সকালে গিয়ে
রাতে
যখন ফিরে আসি তখন রাত প্রায়
বারোটা
বাজে। এসে বুঝতে পারলাম, ফোন
রেখে
এসেছি। এমন ভুল আমার হয়না
কোনদিন।
তাড়াহুড়া করতে গিয়ে হঠাৎ এমন
হলো।
কী করব ভাবছিলাম। রাতটা ফোন
ছাড়া
কাটানো সম্ভব হবে বলেও মনে
হচ্ছিলনা। আর এত রাতে যাবোই বা
কি
করে, বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু যে
করেই হোক ফোন রাতের মধ্যেই হাতে
আনতে হবে, এমনটাই ভাবছিলাম।
আমি
আর আবদুল্লাহ ভাই এক রুমে থাকতাম।
আবদুল্লাহ ভাই আমার থেকে পাঁচ ছয়
বছরের বড়। মোল্লা টাইপের মানুষ।
ছোট
ছোট দাঁড়ি আছে মুখে। নামায টামায
পড়েন, আমাকেও পড়তে বলেন। বাড়ি
কুমিল্লায়। ঢাকায় এসে প্রথম থেকে
তার
সাথেই আছি। দুদিন আগে
তিনি বাড়িতে যান। তাই সেদিন
আমি
একা ছিলাম। আমার পাশের রুমে ওমর
থাকত। ও আমার সমবয়সী। খুব হাসি
খুশি
মানুষ। সবার সাথে সহজেই মিশে
যেতে
পারে, অন্তরটা তার ভীষণ ভালো।
আর
কিছু না ভেবেই আমি ওমরের ঘরের
সামনে
যাই। দরজা বন্ধ। ডাকলাম -"ওমর।"
প্রথম ডাকেই জবাব দিল। ওমর এমনই,
গভীর ঘুমে থাকলেও প্রথম ডাকেই
জেগে
যায়।
:-কে? ঘুমকণ্ঠ ওমরের।
:-আমি মাহফুজ।
:'-এত রাতে কেন ডাকছো? কিছু
হয়েছে?'
:'-খুব বিপদ। মরে যাচ্ছি।
আমি দরজায় হাত রেখে দাঁড়িয়ে
থাকি।
:'-বিষ খেয়েছ নাকি এত রাতে? কি
বিষ
খেয়েছ, কেন খেয়েছ?'
আমি বুঝতে পারি ওমর ফান করছে।
তাই
আমিও বলি,
:-'প্রেমিকা ছ্যাঁকা দিয়ে চলে
গেছে,
তার বিরহে একবার বিষ খেয়েছি।
বিষে
ভেজাল ছিল বলে মরতে পারিনি।
এখন
আরেকটা বিষ
আনা দরকার।'
আমার কথা শুনে ওমর বিছানা থেকে
উঠে বসে।
:-তো আমাকে ডাকছো কেন? আমি
বিষ
বিক্রি করিনা।'
:-'তোমার সাইকেলটা লাগবে। বিষ
আনতে
যাবো।'
:-'আমি সাইকেল দিয়ে বিপদে পড়তে
পারবনা।' বলতে বলতে দরজা খুলে
ওমর।
:-'কি হয়েছে সত্যি করে বলোতো?'
আমি ফোনের কথায় বলায় ওমর একটুও
অবাক হলোনা, হাসলোওনা। কারণ
সে
জানে আমি ফোনের সাথে রাত দিন
থাকি। শুধু বললো, "সকালে আনলে
হয়না?"
আমি তাকে বুঝালাম অনেক কথা
বলে।
সে সাইকেল দিতে রাজি হলো। আমি
হেসে বলি, দোয়া করো, যেন তাকে
নিয়ে ফিরি।
ওমর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি
হাসল।
বলল, "এমন পাগল আর দেখিনি।"
আমি সাইকেলে উঠতে উঠতে বললাম,
আসলে একাকী মানুষের এই একটাই
সঙ্গী।
ওমর বারান্দার খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে
বলল,
রাতে থেকে যেও, সকালে এসো।
রাতে
দেখো আবার কোন বিপদে পড়োনা।
সাবধানে যেও।
"ঠিক আছে" বলে সাইকেল চালাতে
শুরু
করি। রাস্তায় কোন বিপদ হয়নি।
আমি
ঘন্টা খানেকের মধ্যেই ফোন নিয়ে
ফিরে আসি।
.
তো সেদিন অফিস শেষে হাঁটতে
হাঁটতে
টাইপ করে যাচ্ছিলাম।
হঠাৎ থমকে দাঁড়াই সে ভয়ানক দৃশ্য
দেখে। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো
ফেইসবুকে আপলোড করা কোন ছবি
দেখছি। পরক্ষনেই মনে
হয়, না আমি তো মাটির দিকে
তাকিয়ে
আছি। এটা বাস্তব, আমি সরাসরি
দেখছি। সহসা আমি কেঁপে উঠলাম,
চিৎকার করে উঠলাম। চোখ বন্ধ করে
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। আমি
মানতে
পারছিলাম না
সত্যি দেখছি এসব! দু কানে এয়ার
ফোনের দুটো মাথা আটকে আছে।
গলা
থেকে মাথাটি আট আঙুল দূরে
আছে। বুকের শেষ ভাগ থেকে পা
পর্যন্ত
আরো একটু দূরে । পেটের ভিতরে যা
ছিল
সব বাইরে এসে
মাটিতে লেপ্টে গেছে। থেথলানো
মুখটি
দেখে কিছুতেই বুঝার উপায় নেই, কে
ছিলো সে? একটা গেঞ্জি পরেছিল
বুঝা
যায়, আর বুঝা যায় তার খানিক লম্বা
চুল
ছিল। মাথাটি চেপ্টে গুড়ো হয়ে
আছে।
সাদা সাদা কি সব বের হয়ে পথে
ছড়িয়ে
গেছে। আর সে কি রক্ত! রাস্তার
এপার
থেকে ওপারে বেয়ে গেছে, টকটকে
লাল
রক্ত! এত রক্ত, দেখে মনে হচ্ছিলো
কেউ
বালতি ভরা রক্ত এনে রাস্তাটা ধুয়ে
দিয়েছে! আমি বোবা পঙ্গুর মত
দাঁড়িয়ে
থাকি! মানুষেরা গন্তব্যের দিকে
যাচ্ছে। কেউ এদিকে কেউ ওদিকে।
পাশ
কেটে চলে যাচ্ছে সবাই। এক মিনিট
দাঁড়িয়ে কেউ দেখছেনা পর্যন্ত। যেন
সবাই খুব ব্যস্ত, ছুটে চলছে নিজের মত
গন্তব্যে। মানুষটি কানে এয়ার ফোন
লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে রাস্তা
পার
হচ্ছিল। এদিকে যে ট্রাক আসছিল,
তা
লক্ষ্য করেনি সে। সে হৃদয়ের কান
দিয়ে
গান শুনে যাচ্ছিল। অমনি একটা ট্রাক
এসে ধাক্কা দিয়ে দূরে চলে যায়,
সাথে
সাথে প্রাণটাও দেরি না করে
লোকটির
দেহ থেকে দূরে চলে যায়।
.
এরপর থেকেই আমি কেমন যেন হয়ে
গেছি। চোখ খুললে, চোখ বুজলে শুধু
সেই
রক্তভেজা রাস্তাটা দেখি। সবসময়
চোখের সামনে লোকটির বীভৎস লাশ
আর টকটকে লাল রক্ত ঝিলিক দিতে
থাকে। আমার কেবল ভয় হয়, যদি
আমারও
এমন হয়ে যায়! আমি গান শুনিনা
যদিও,
তবুও
মনে হয় কোনদিন হাঁটতে হাঁটতে টাইপ
করার সময়ে যদি ট্রাক এসে ধাক্কা
দিয়ে দূরে চলে যায়?
এরপর তিন দিন পর্যন্ত আমি ফোন
হাতে
নিইনি। আসলে সে সাহসই হয়নি।
কেবল
মনে হয়েছে, সেই
মানুষটি মরেছে ফোনের জন্য। আমি
ফোনের জন্য মরতে চাইনা। মনে মনে
প্রতিজ্ঞা করি, আর ফোন ব্যবহার
করব
না। একদিকে ভয়ংকর আতঙ্ক
অন্যদিকে
ফোন বিরহ, দুদিকের বেদনার চাপে
আমার অবস্থা তখন শোচনীয়।
.
ওমর আমার অবস্থার উন্নতি না দেখে
ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসে।
ডাক্তার
পরীক্ষা নিরীক্ষা করে
প্রেসক্রিপশন
লিখে দেন। কোন রকম চিন্তা ভাবনা
না
করতে বলেন। ক'দিন ঘর থেকে বের
হতে
নিষেধ করেন। পথে আসতে আসতে
ওমর
বলে, "এই ফোনটাই তোমাকে খাবে?"
:-'আমি তো ফোন ব্যবহার ছেড়েই
দিলাম।'
শিশুর মত আমি বলি।
:-'দেখা যাবে কদিন যায়।' ওমরের
কণ্ঠ
অনেকটা বড় ভাইয়ের মতো শোনায়।
আমি কোন জবাব দিইনা। কারণ আমি
নিজেই সন্দিহান, ফোন ছাড়া
থাকতে
পারব বলে নিজের উপর নিশ্চিত
ভরসা
নাই। আমার মনে পড়ে, একবার
অফিসের
বস আমাকে বলেছিলেন, মাহফুজ তুমি
পত্রিকা পড়ো, টিভি দেখো, কিন্তু
ফোন
গুতাবেনা।' এর পরেও অনেকবার বস
ফোন
ব্যবহার করতে না করেছেন। কিন্তু
আমি
লুকিয়ে লুকিয়ে চালিয়ে গেছি। এখন
যে
বাদ দিতে পারব, তাও নিশ্চিত করে
বলার সাধ্যটি নেই। তাই ওমরের কথার
জবাব দিইনা।
.
আবদুল্লাহ ভাই অফিস শেষে বাসায়
এসেছেন। বারান্দায় বসেছিলেন।
সম্ভবত
আমার অপেক্ষায়। আমাদের দেখে
সালাম দিলেন। ডাক্তার কী বলেছে
জানতে চাইলেন। ওমর জবাব দিল।
আমাকে ঘরে নিয়ে আবদুল্লাহ ভাই
বললেন, ঔষধগুলো নিয়মিত খাও আর
ঠিকমত নামায পড়ো, দেখবে ভালো
হয়ে
যাবে।
আমি ছোট করে "আচ্ছা" বলি।
আমার ঘুম ভাঙ্গে দুপুরে। ফজরের
সময়ে
আবদুল্লাহ ভাই নাকি অনেক
ডেকেছিলেন, আমি মরা মানুষের মত
ঘুমিয়েছিলাম। হয়তো ঔষধগুলো
খাওয়ার
জন্য এমন ঘুম হয়েছে, আমি অনুমান
করি।
.
সপ্তাহ পনের দিন পর আমি অফিসে
যেতে শুরু করি। তবে হাঁটার সময় টাইপ
করে যাইনা। চুপচাপ সামনের দিকে
তাকিয়ে হাঁটি। ফোনটা আমার
সাথেই
থাকে, কিন্তু আগের মত আর ভাব
করিনা
তার সাথে। নিঃসঙ্গ লাগে, তবুও এ
নি:সঙ্গতাকে মানিয়ে নিই নিজের
সাথে। হঠাৎ পিছন থেকে আমার নাম
ধরে
ডাক শুনলাম, এই মাহফুজ।
ডাক শুনে বুঝতে পারি আব্দুল্লাহ
ভাইয়ের কন্ঠ। আমি দাঁড়ালাম।
আবদুল্লাহ
ভাই একটু দৌড়ে এসে সালাম দিলেন।
উনি এমনই, যখন যেখানেই দেখা হবে
প্রথমে সালাম দিবেন। জিজ্ঞাসা
করলেন, 'অফিস কেমন লাগছে?'
আমি বললাম, ভালো। যেহেতু আগের
মত
ওই দৃশ্যটা চোখে তেমন ভাসেনা,
ভালোই
আছি বলা যায়।
হুম বলে আবদুল্লাহ ভাই থেমে বললেন,
'চলো আজ ঘুরে আসি।'
:-'কোথায় যাবো?'
:-'আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায়। তুমি ও
ওমর দুজনকেই দাওয়াত দিয়েছে। তুমি
অসুস্থ আছো মনে করে হয়তো বলে
যায়নি।'
:'-আপনারা গেলেই তো হয়।'
আবদুল্লাহ ভাই আমার আগে আগে
হাঁটছেন, আমি তার পিছু পিছু।
:-'তুমিও চলো। সমস্যা তো নাই।
দেখবে
ভালো লাগবে।'
:-'-আপনি আমার বড় ভাইয়ের মতই,
আপনি
বললে না গিয়ে কি করে থাকি?'
আবদুল্লাহ ভাই হাসলেন। এইতো
ভালো
ছেলের মত কথা।
.
বাসায় এসে দেখি ওমর আসেনি।
আবদুল্লাহ ভাই ফোন দিয়ে বললেন
আসার সময় গ্যারেজ থেকে একটা
হোন্ডার নিয়ে আসতে। আমি
আবদুল্লাহ
ভাইকে বলি, '-একটা হোন্ডার কিনে
নেন,
ভাড়া নিয়ে কতদিন আর চলবেন?'
:-'কিনব কিনব করে আর কেনা
হচ্ছেনা,
দেখি এবছর শেষে'।
:'-আপনি শুধু ইচ্ছাটুকু করলেই কেনা
হয়।
ইচ্ছাটুকু করেন।'
ইনশাআল্লাহ এবার কিনব, আবদুল্লাহ
ভাই
হাসিমুখে বলেন।
.
ওমর ড্রাইভিং করছে। আবদুল্লাহ ভাই
মাঝখানে, আমি পিছনে। খাওয়া
সেরে
গল্প করে ফিরতে ফিরতে পাঁচটা
বেজে
গেছে। অন্যদিনের তুলনায় মন আজ
বেশ
প্রফুল্ল। মনে হয় অনেকদিন পর সুন্দর
একটা দিন কাটালাম। পিছনে বসে
যেতে
যেতে মনে হচ্ছে, আমি স্বর্গীয় কোন
বাহনে চড়ে যাচ্ছি। হঠাৎ ফোনটার
খোঁজ
নিতে ইচ্ছে হলো। পকেট থেকে ফোন
বের করি। ইউসি ব্রাউজার দিয়ে
ফেসবুক
অপেন করি। হোন্ডার চলছে, আমি
স্ট্যাটাস পড়তে শুরু করি। আমার খুব
ভাল
লাগছে। হঠাৎ একজনের স্ট্যাটাস
দেখে
অবাক হই, সে লিখেছে "ঈশ্বরের
সাথে
হেঁটে যাই, তাকে খুঁজে খুঁজে পেয়ে
যাই,
আঙুলের ডগায় ছুঁয়ে দেই তার লাল
চোখ,
হাতের তালুতে জমাই ঈশ্বরের অশ্রু
নীল।"
স্ট্যাটাসটি পড়ে রাগ উঠে, মনে হয়
সে'ই
দুনিয়ার সবচেয়ে বড় অন্ধ। ভালো
লাগাটা নষ্ট হয়ে যায় হাদারামের
স্ট্যাটাস পড়ে। তবুও মনে হচ্ছে, আজ
অনেকদিন পর প্রিয়াকে পেলাম, একটু
দেখি। আমি ধ্যানে ফেসবুকে
হারিয়ে
যাই। হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখি
একটা
ছোট বাচ্চা রোডে হাঁটছে। হোন্ডার
এদিকে গেলে বাচ্চাটি ওদিকে যায়
আবার ওদিকে গেলে এদিকে আসে।
সামনের দিক থেকে স্লো গতিতে
আবার
বাস আসছে। ওমরের হঠাৎ যে কি
হলো,
রানিং অবস্থায় ব্রেক করে ফেলল।
আমাদের অবস্থা দেখে বাস ব্রেক
করলেও, আমরা হোন্ডার সহ বাসের
নিচে। এদিকে আমার নিজের জন্য
কোন
চিন্তা নেই, ওমর বা আবদুল্লাহ
ভায়ের
জন্যও চিন্তা নেই। আমার চিন্তা শুধু
স্মার্টফোনটির জন্য। অনেক সাধ করে
কিনেছি এটি। দুঃখ পেলে আমি পাই,
ফোনটি যেন কোন দুঃখ না পায়।
ক্ষতি
হলে আমার হোক, ফোনটি তবুও ভালো
থাকুক।
ওমরের অবস্থা বেশি কাহিল, মাথায়
প্রচন্ড চাপ পেয়েছে। আবদুল্লাহ
ভাইয়ের
দু পা হাঁটুর নিচ থেকে ছিলে গেছে।
আমার কি হয়েছে, বুঝতে পারছিনা।
আমি গাড়ির নিচে চিৎ হয়ে থেকেই,
ফোন খুঁজছি।
আবদুল্লাহ ভাইকে ডেকে বলছি, 'ভাই
আমার ফোনটা পাচ্ছিনা।' আবদুল্লাহ
ভাই যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। কথা
বলতে
পারছেন না। আমি ফোন ফোন বলে
যাচ্ছি। বাস থেকে ড্রাইবার
হেল্পার
নেমে এলো। নিচ থেকে আমাদের
টেন
বের করলো। আরোও বেশ কিছু মানুষ
জমা
হলো। ড্রাইভার বলছে, 'আমি ব্রেক
না
করলে তিনজন পিষে যেত। আল্লাহই
বাঁচাইছে'.।
আমি কোনকিছু না ভেবেই বলি,
আমার
ফোনটা কোথায়,? পাচ্ছিনা! আমার
কথায় তেমন পাত্তা দেয়না কেউ।
আমি
চোখ বুজে হাঁটতে থাকি। আমাদেরকে
ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বেশ কজন।
আমি
বলি, '-ভাইয়া আমার ফোনটা
পেয়েছেন?'
একজন বলে, ভাই আজ যে বাঁচলেন
এটাই
বেশি। বেঁচে থাকলে আরোও ফোন
কিনতে পারবেন। লোকটার কথা শুনে
কষ্ট
লাগলো। মনে হলো ফোনটা হারিয়ে
ফেলেছি। ফোন বিরহের ক্ষত নিয়ে
হেঁটে চলেছি বুঝতে পারছি।
আমরা কোথায় যাচ্ছি জানিনা।
কিছুক্ষণ হেঁটে থামি। আমার কাঁধে
দুজন
ধরে, আমাকে শুতে বলে। আমি চুপচাপ
শুয়ে পড়ি। আমার চোখ মুখে অসহ্য
ব্যথা
লাগছিল আগে থেকেই। কিন্তু
ফোনের
চিন্তায় ডুবে এতটা বুঝতে পারিনি।
কেউ একজন আমার চোখ মুছে দিচ্ছে,
বুঝতে পারি। আমি বললাম, "আমার
ফোনটা পেয়েছেন?'"
একজন বললো, "আপনার ফোন আছে,
শান্ত
হোন।"
আমি চোখে ব্যথা নিয়েও কিছুটা
আনন্দবোধ করলাম। আমাকে শুয়ে
থাকতে
বললো। আমি নিরুপায়ের মতো শুয়ে
রইলাম। কতক্ষণ শুয়েছি জানা নেই।
হঠাৎ
একজন ডাকলো, 'আপনার নাম কি
মাহফুজ?'
জ্বী বলি আমি।
'-এই যে আপনার ফোন।'
কেউ একজন আমার হাতে ফোনটি
দেয়।
ফোন হাতে নিয়ে আমি যন্ত্রণার
মাঝেও
এ খুশিতে কোনমতে চোখ খুলি, অবাক
হয়ে প্রশ্ন করি, "আরে! এখানে কি
লাইট
নেই?"
সবাই নীরব। কেউ জবাব দেয়না। কেউ
আছে কি এখানে তাও বুঝতে
পারিনা।
এত অন্ধকারে আমি ফোন দিয়ে কি
করব?
ওদিকে ফোনেও কোন আলো নেই,
তবে
কি ফোনটা নষ্ট হয়ে গেছে?
আমার বুঝতে সময় লেগেছিলো, ফোন
নষ্ট
হোক বা না হোক, এখানে আলো
থাকুক
বা না থাকুক, "আমার চোখের আলো
হারিয়ে গেছে"! যখন চোখের মাঝেই
জগতের আঁধার ভর করে, তখন হাজারো
আলোর ঝলকানিতে কী আসে যায়?
কী
সাধ্য আমার সে আলো দেখার? আছে
কি
ক্ষমতা সে আলোর আমার চোখের
আঁধার
মুছে দেওয়ার?
---
সৈয়দ কামাল হুসাইন
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×