এরকম দু-চার খানা ছবি থাকলে আর কি লাগে বলুন!
আমি ইয়ার্কি করছি না, সত্যি সত্যিই জানতে চাই মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের দোষটা কী? তিনি কী করেছেন?
ছোট, মাঝারি ও বড় মাপের বাটপারি, এইতো? এটাতো এখনকার সময়ের বিচারে দ্রুততম সময়ে সফল হবার (!) চাবিকাঠি এদেশে, আপনি জানতেন না সেটা? এ প্রক্রিয়ায় বড় হয়ে ওঠাকে এদেশে রীতিমত সংস্কৃতিকে বদলে দেওয়া হয়েছে। সেই বিচারে মোহাম্মদ সাহেদ তো সেই কাতারে পড়েন, যাদের আমরা সফল মানুষ জ্ঞান করি, যাদের স্তুতি গাই। একটা আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন ব্যবস্থার শোষিত মানুষ হিসেবে আজ যার দিকে চোখ যায়, দেখি সে এভাবেই সফল (!) হতে চাইছে। তাদের কেউ কেউ ধরা পড়ছে আর বাকিরা পড়ছে না, এইতো তফাৎ। যে ‘নিউ নরমালের’ গপ্পো আপনারা করোনাভাইরাস অতিমারী শুরু হবার পর থেকে শুনিয়ে আসছেন তার থেকে বহুগুণে সংকটময় এক ‘নিউ নরমাল’ বাংলাদেশে বিরাজ করছে বেশ কয়েক বছর ধরে। আপনি কি এটা জানতেন না?
মোহাম্মদ সাহেদের দোষটা কী?
উনি হাসপাতাল খোলার নামে হোটেল ব্যবসা আর চিকিৎসার নামে রোগীদের জীবন নিয়ে তামাশা করেছেন তাইতো? করোনা চিকিৎসার নামে সরকারি তহবিলের মোটা অংকের টাকা খেয়ে ফেলেছেন এইতো? স্বাস্থ্য খাতের জন্য এতো নতুন কিছু না ভাই। গত দশ বছর স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটার রশি ধরে টান দিন, দেখুন তার মধ্যে শতকরা কতভাগ স্বচ্ছ আর সততার বার্তা দেয়। আরে এমন অভিযোগও শুনতে পাই, মেডিকেল সাপ্লাইয়ের নামে শুধু খালি বাক্স সাপ্লাই দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে স্বাস্থ্য খাতে। সরকারি হাসপাতাল বাদ দিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে যাবেন? এদেশের হাতে গোনা একটা কি দুটো প্রতিষ্ঠান বাদ দিলে বাকি যে কয়টা প্রাইভেট হাসপাতাল আছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তোলা যাবে। দেখান দেখি, জনসেবার জন্য নিবেদিত প্রাণ একটা প্রাইভেট হসপিটাল যারা রোগীর ভালো মন্দ দেখে সবার আগে, তার পকেট, গলা ইত্যাদি কাটার চিন্তা বাদ দিয়ে। দেখান?
উনার দোষ কী?
উনি সাংবাদিক না হয়েও টকশোতে কেন গেলেন, সেটাতো? নিজেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে কেন প্রতিষ্ঠা করলেন, এখানেই তো আপনাদের খেদ নাকি? তো ৪৪ টা চ্যানেল এই দেশে, তাদের প্রত্যেকের প্রত্যেকদিন টক-শো করা লাগে, সেগুলোর আলোচনা, সঞ্চালনার মান নিয়ন্ত্রণ তো চুলোয় গেছে সেই কবে। এতো এতো টক-শোতে সময় পার করার জন্য, চেহারা দেখানোর জন্যও তো লোক লাগে, সেটা কোথায় পাবে ভেবেছেন? তার উপর, এ জামানায় কেউ বুদ্ধির চর্চা করে নাকি নিজেকে প্রতিষ্ঠার জন্য? এদেশে তেলবাজি, নির্লজ্জ চামচামি আর দলবাজি ছাড়া কেউ রাজনৈতিক পক্ষপাতহীনতার উর্ধ্বে থেকে সত্য কথা বলে? সবখানে তো আমি দেখি মোহাম্মদ সাহেদরাই ভিন্ন ভিন্ন চেহারায় বিশেষজ্ঞ, বিশ্লেষক সেজে বসে আছে। আর চ্যানেলগুলাও টাইমলাইন ভরার নাম করে তাদেরকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখাচ্ছেন, সে যোগ্যতা থাকুক আর নাই থাকুক। দেশের গণমাধ্যমের সামগ্রিক মানের যদি অধ:পতন হয় তাহলে মোহাম্মদ সাহেদরাই তো সবখানে জায়গা করে নেবে, এতেই বা অভিযোগ করবার কী আছে?
আর কী অভিযোগ আপনাদের?
উনি মন্ত্রী-মিনিস্টার, রাষ্ট্রপতির সাথে ছবি তুলে সেই ছবি বেঁচে ব্যবসা করছেন, এটাই তো? এই ধান্দা তো শুরু হয়েছে বহুদিন হলো, আওয়ামী লীগের নেতা মন্ত্রীদের সাথে ছবি তুলে সেটা ভাঙিয়ে খাচ্ছে এমন লোক বহু আছে আমাদের চোখের সামনেই। গত কয়েক বছরের খবর ঘাটুন, এ পর্যন্ত যারাই বিস্ময়কর রকমের অস্বাভাবিক সম্পদের মালিক হয়েছে, তাদের প্রত্যেকেরই সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় পদাসীন বড় নেতা এবং উপদেষ্টাদের সাথে হাস্যোজ্জ্বল ছবি আছে। তারা সদর্পে সেগুলো দেখিয়ে নিজেদের জাহির করছেন, ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন। প্রতিটা খাতে যারা ব্যবসার নামে দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা হয় আওয়ামী লীগের সাথে সরাসরি জড়িত, অথবা কোনো না কোনো ভাবে ক্ষমতাসীন দলের ‘গুড বুক’ এ আছে। বিশ্বাস না হলে খোঁজ করে দেখুন। এদেশে সৎভাবে ব্যবসা করার কথা কেউ ভাবে নাকি আজকাল যে করবে? এসব আপনি জানতেন না? এতোদিন অন্ধ ছিলেন?
শুনুন, গত দশ বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রফিটেবল ব্যবসার নাম নৌকার মাঝি মাল্লা হওয়া। আপনার চোখের সামনে এই ব্যবসার জন্ম, আপনার চোখের সামনে এই ব্যবসার বিস্তার। এখন এই ব্যবসা আপনাকে, এদেশকে গিলে খাচ্ছে এবং খাবে। আর আপনি এতোদিন ‘যা হচ্ছে হোক, আমারতো আর কিছু যায় আসে না’ নিজেকে এসব প্রবোধ দিয়ে বসে বসে মজা দেখবেন আর আঙুল চুষবেন, এটুকুই আপনার কর্তব্য ভেবে বসে আছেন। আর আজ মোহাম্মদ সাহেদ এর মত কারো কেচ্ছা কেলেংকারী ম্যাস মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখের সামনে এলেই আপনি তেড়েফুড়ে আসছেন যে, এটা কেন?
ও আপনারা ভাবছিলেন মোহাম্মদ সাহেদ মনে হয় একজনই, তার মতন লোক আর নেই- তাই না? আপনারা ভাবছিলেন এদেশে যারা দ্রুততম সময়ে পয়সাওয়ালা ক্ষমতাওয়ালা হয়েছে তারা বুঝি সবাই সাধুর উপর সন্ন্যাসী? এতোদিন বোঝেননি এদের টাকা, ক্ষমতা, সাফল্যের (!) উৎস কী, তাই না?
ছবি ফেসবুক ও লেখা কাওসার শাকিল
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ৯:৪৬