somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হার্ডিঞ্জ ব্রিজ উদ্বোধনের সময়ে প্রধান প্রকৌশলী স‍্যার রবার্ট উইলিয়াম বলেছিলেন- ‘যে সেতু নির্মাণ করে দিয়ে গেলাম, উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে এ সেতু চিরযৌবনা হয়ে থাকবে।’


আজ উইলিয়াম গেইলস নেই, নেই লর্ড হার্ডিঞ্জ। কিন্তু রয়ে গেছে তাদের অমর কীর্তি। চিরযৌবনা এ সেতু আজও সাক্ষ্য দেয়- গেইল সত্য বলেছিলেন।


২০১৫ সালে শত বছর পূর্ণ করলো হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। কিন্তু আজও দেখে মনে হয় যেন সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত এক সেতু। ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ, ব্রিটিশ বাংলার ইতিহাসে এক অনন্য দিন। হিজ এক্সিলেন্সি দি ভাইসরয় অব ইন্ডিয়া ‘ব্যারন হার্ডিঞ্জ পেনসুরস্ট’ এলেন পাকশিতে। খুলে দিলেন বাংলার উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণের যোগাযোগের এক বন্ধ দুয়ার। একদিকে যেমন সৌন্দর্য, অপরদিকে ইতিহাসের সাক্ষী- সবমিলিয়ে এই ব্রিজটি বাংলার ঐতিহ্য এবং তাৎপর্য বহন করছে এশিয়ার অন্যতম দীর্ঘ রেলসেতু এ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে এই ব্রিজের অবস্থান। পাকশী স্টেশনের দক্ষিণে প্রমত্ত পদ্মা নদীর উপর লালরঙা এই ব্রিজটি দাঁড়িয়ে আছে। এর অপরপ্রান্তে রয়েছে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা। ১৮৮৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কলকাতার সাথে আসাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা ও উত্তরবঙ্গের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এজন্য সর্বপ্রথম ১৮৮৯ সালে ব্রিজটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। পরবর্তীতে দীর্ঘ ১৯ বছর পর ব্রিজটি নির্মাণের জন্য মঞ্জুরী লাভ করে। ব্রিজটি নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার রবার্ট উইলিয়াম গেইলসকে। ব্রিটিশ সরকার তাকে এই ব্রিজ নির্মাণের স্বীকৃতিস্বরুপ 'স্যার' উপাধিতে ভূষিত করে।


ব্রিজটির নকশা প্রণয়ন করেন বিখ্যাত ব্রিটিশ স্থপতি আলেকজান্ডার মেয়াডোস রেন্ডেল। ব্রেথওয়েইট অ্যান্ড কার্ক নামক ব্রিটিশ কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ব্রিজটির নির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ১৯০৯ সালে ব্রিজ নির্মাণের জন্য সার্ভে শুরু হয়। তখন পদ্মা ছিল ভরা যৌবনা। রবার্ট উইলিয়াম গেইলস বুঝতে পারেন- ব্রিজের নির্মাণ তার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে। এজন্য তিনি সিদ্ধান্ত নেন মূল ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করাই আগেই নদী-রক্ষা বাঁধ তৈরি করতে হবে। ১৯১০-১১ সালের পুরোটা সময় জুড়ে শুধু বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এক্ষেত্রে গেইলস এক অসাধারণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তিনি বৃহদাকৃতির পাথর আর মাটি একত্রে মিশিয়ে নদীর পাড়ে ফেলতে থাকেন। দুই পাড়ে প্রায় পনের কিলোমিটার জুড়ে এভাবে বাঁধ দেন। ধারণা করা হয়, নদী বাধতে যে পাথর ব্যবহার হয়েছে তা দিয়ে আরো কয়েকটি ব্রিজ নির্মাণ করা যেত। গেইলসের সেই পদ্ধতি সত্যিই কাজে লেগেছিল। একশ বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু সেই বাঁধ এখনও সম্পূর্ণ অক্ষত আছে। যেন একটা পাথরও এখনও খসে পড়েনি।
১৯১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন পুরোদমে কাজ চলছে, তখন এখানে কর্মী ছিলেন সর্বমোট ২৪ হাজার ৪শ’ জন। হয়। সেতুটি নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্রিটিশরা তৎকালীন সর্বোচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার করে। ১৯১৫ সালের নববর্ষের দিনই (১ জানুয়ারি ১৯১৫) প্রথম মালগাড়ি দিয়ে চালু করা হয় একটি লাইন। সেই সময় এর নির্মাণে ব্যয় হয় ৩ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার ১৬৪ রুপি বা ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ব্রিজ নির্মাণে নদীর নাব্যতার যাতে কোনো ক্ষতি না হয় তা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ফলে এ ব্রিজের জন্য পদ্মার নাব্যতায় কোনো প্রভাব পড়েনি। যদিও ব্রিজের উত্তর দিকের বিরাট অংশ জুড়ে এখন চর। কিন্তু এটি হার্ডিঞ্জের জন্য নয়। ক্ষতি যদি কিছু হয়ে থাকে তবে তা ‘লালন শাহ সেতুর' জন্য।
সেসময় অনেক ব্রিটিশ নাগরিকের জন্য পাকশীতে গড়ে তোলা হয় বাংলো বাড়ি ও কটেজ। পাকশীতে তখন ব্রিটিশদের অবাধ চলাচল ছিল। রবার্ট উইলিয়াম গেইলসের একটি বড় বাংলো ছিল, যা এখনও টিকে আছে। বলা হয়ে থাকে, প্রায় এক কিলোমিটার দূরের এই বাংলো থেকে তিনি দূরবীন দিয়ে নির্মাণকাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতেন। নির্মাণকাজের সময় পাকশী ও এর আশপাশে ছোটখাট অনেক কলকারখানা, দোকানপাট ও বাজারঘাট গড়ে ওঠে। জনজীবনে প্রভাব পড়েছিল ব্রিটিশ অধিপত্যের। স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হয়েছিল।


দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে নির্মাণকাজ চলে। অবশেষে ১৯১৫ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয়। ব্রিজটির নির্মাণকাজে তৎকালীন হিসেবে ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৫১ লক্ষ ৩২ হাজার ১ 'শ ৬৪ ভারতীয় রুপি। ১৯১৫ সালের ১ জানুয়ারি প্রথম পরীক্ষামুলকভাবে ট্রেন ঈশ্বরদী থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের উপর দিয়ে খুলনা অভিমুখে যাত্রা করে। এরপর একই বছর ৪ঠা মার্চ লর্ড ব্যারন হার্ডিঞ্জ নিজে ফিতা কেটে ব্রিজটি উদ্বোধন করেন।



সংগৃহীত পোস্ট।।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৩৩
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×