somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার লক্ষী পাখিটা

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেজাজটা চরম খারাপ হয়ে আছে, মেয়েটা অসুস্থ, খাওয়া নিয়ে বড় যন্ত্রণা করছে। ও সারাদিন হাজারটা দুষ্টুমি করলেও আমার রাগ হয়না, কিন্তু যখনই ও খাওয়া নিয়ে বিরক্ত করে তখন কেন যেন আমি আর আমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনা, এখন বুঝতে পারি যে আমি ছোট থাকতে যখন খেতে চাইতামনা তখন কেন আব্বু আম্মু খাওয়ানোর জন্য এতো সাধতো। কত রাগ করতাম তখন তাদের উপর, হায়রে তখন যদি মা বাবার মনের অবস্থা বুঝতাম!!!
মেয়েটা দেখতে দেখতে বড় হয়ে যাচ্ছে। কত কথা বলতে শিখছে....ওর বাবাইয়ার নাম কি, ওর মার নাম কি, ওর নিজের নাম কি, সব বলতে পারে এখন মাশাআল্লাহ। অথচ ওর জন্মের কথা মনে পড়লে এখন ও আবেগে কেঁপে উঠি।এইতো সেদিন হলো আমার পাখীটা (২০১১ এর মার্চ মাসের ১৮ তারিখে)।

ঈশিত্বর প্রথম ছবি।
আমাদের প্রথম সন্তান আমার ও আমার জামাইয়ের পরিবারের প্রথম তৃতীয় প্রজন্ম সে তাই ওকে নিয়ে সবার আনন্দ আর উৎসাহ যেন একটু বেশীই। আদর ও পাচ্ছে বেশী। ও আমার মেয়ের নামই তো বলা হয়নি, ওর নাম রেখেছি ঈশিত্ব যার অর্থ হলো সম্পদ। আসলেই সে আমাদের সম্পদ। যখন আমি conceive করলাম তার কিছুদিন পরই ওর বাবা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিল, যা আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন ছিলো। জানিনা এটা কাকতালীয় কিনা তবুও আমরা আমাদের ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে এটা বিশ্বাস করতে ভালোবাসি যে এটা আমাদের মেয়ের জন্যই হয়েছে।
ওর সাড়ে ৬ মাস বয়স থেকেই জীবন ও জীবিকার তাগিদে আবার চাকুরিতে যোগ দেই, অবশ্য এর আগে আমার অফিস থেকে আমাকে যে সাহায্য ও সহযোগিতা করা হয়েছিলো তা একটু বলে নিই। আমার Early Pregnancy period এর তিনমাস সময় থেকেই অফিস থেকে গাড়ীর ব্যবস্থা করা হয়। যার ফলে রাস্তাঘাটে যাতায়াতজনীত কোন সমস্যা আমাকে ভোগ করতে হয়নি। মার্চ মাসের শুরু থেকে আমার মাতৃত্বকালীন ছুটি শুরু হয়। আমাদের অফিসে এর আগে আর কেউ এই ছুটি নেয়নি বা নেয়া লাগেনি, আমার জন্য প্রথমবার পলিসি করা হয়, সে অনুযায়ী আমি ৪মাস সবেতন ছুটি নেয়ার অনুমতি পাই। মেয়ের সুবিধার কথা ভেবে আমি আরও ৩মাস ছুটি (বিনা বেতনে) বাড়াই। এই সাতমাসে আমি অফিস থেকে সম্পূর্ন সহায়তা পেয়েছি, এজন্য আমি আমার অফিসের প্রতি কৃতজ্ঞ।
যাই হোক এই ৭মাস ছুটির পর যেদিন আমি অফিসে যোগ দিলাম, সেদিন সারাটাদিন মন পড়ে রইলো বাসায়। আমার জামাইর ক্লাস থাকা সত্বেও ওকে জোর করে বাসায় রেখে এসেছি কারন মেয়েটা একসাথে বাবা মাকে না পেলে ভয় পেতে পারে এই ভেবে। সারাদিনে ১ঘন্টা পর পর খোঁজ নিয়েছি মেয়ে কি করছে কি খেয়েছে.....ইত্যাদি, ইত্যাদি। অফিস শেষ করে মনে হয়েছে দৌড়ে বাসায় যাই, গিয়ে মেয়েকে আগে বুকে জড়িয়ে ধরি। আজ পর্যন্ত সেই অবস্থাটা আছে।
কি এক অদ্ভুত মায়া এটা যে মা না হয়েছে সে বুঝতে পারবেনা। আমার মেয়েটা খাওয়া নিয়ে অনেক যন্ত্রণা করে, তখন খুব রাগ হয় ওর উপর, বকা দেই, মাঝে মাঝে বেশি যন্ত্রণা করলে মার দেই, তখন মেজাজ চরম খারাপ হয়, কিন্তু পরে যখন ও একটা হাসি দেয় আর কিছু মনে থাকেনা আমার। মাঝে মাঝে অসুস্থ হলে খুব বিরক্ত করে, তখন আমি আর তার বাবা সহণশীলতার চরম পরীক্ষা দেই। রাতে নিজেরা জেগে থেকে ও যেন ভালো ঘুমাতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে চাই। তখন মাঝে মাঝে নিজের মা বাবার কথা ভাবি , মনে হয় যে আমরা একটা সন্তান বড় করতেই হিমসিম খেয়ে যাচ্ছি, আর আমাদের মা বাবা তিন তিনটা সন্তানকে বড় করতে কতই না কস্ট করেছেন।
এবার আমার লক্ষী মেয়েটার কিছু কার্যকলাপের নমুনা দেই। সে তার বাবার ব্যাপক ভক্ত। তার সব ঢং আর আহ্লাদ তার বাবাইয়ার কাছে। আমি আর তার বাবা দুজন যদি একসাথে ঘরে ঢুকি সে আমার কাছে না এসে তার বাবার কাছে যাবে, বাবার হাতে যাই থাকুক না কেন ও নিতে পারুক বা না পারুক নেয়ার চেষ্টা করবে। তাকে ক্যামেরা দেখিয়ে Smile বললে সে তার পন্চদন্ত দেখিয়ে দিবে।

এই ছবি যখন তোলা হয় তখন ওর ৪টা দাঁত ছিলো, এখন আরেকটা উঠেছে।
ইদানীং নতুন শিখেছে বাংলা ছবির স্টাইলে দৌড় দিয়ে বুকে এসে ঝাঁপিয়ে পড়া। সকালে ঘুম থেকে উঠে Good morning বলা শিখেছে। আদর দিতে বললে এক গালে দিয়ে আরেক গাল দেখিয়ে বলবে ঐ গাল - মানে সে আরেক গালে আদর দিতে চায়।সে তেলাপোকা আর টিকটিকি ভয় পায়। আমাদেরকে জানা অজানা আরও কত কিছুর আবির্ভাব যে ঘটাতে হয় তাকে খাওয়ানোর জন্য.....

আমার পাখীটা এখন আবার কবিতা বলাও শিখেছে। ওকে প্রায়ই আমি বা তার বাবা কবিতা শুনাই , সে তা শুনে শুনে এখন অনেক কবিতার এক একটি লাইনের শেষ শব্দগুলো বলতে পারে মাশাআল্লাহ। যেমন, আমি যদি খোকন খোকন বলি সে বলবে ডাক পাড়ি, আমি - খোকন মোদের বললে সে বলবে কার বাড়ী......... এরকম অনেক কবিতার অংশবিশেষ সে বলতে পারে।ওর মুখে শুনতে অনেক মজা লাগে।

মেয়ের গল্প লিখতে গেলে শেষ হবেনা, মা হয়ে আমার মন চাইবে সারাদিন ওর গল্প করি, কিন্তু তাতে সামুর ব্লগার পাঠকরা বিরক্ত হবেন। আর বিরক্ত করছিনা , সবাই আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন ওকে যেন একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।



সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:০০
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×