somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অর্চির গল্পমালা: গল্প: ২- বাবার প্রতি টান

১২ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সদর দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হতেই ছোট্ট ছোট্ট পায়ের থাপু-থুপু শব্দের সাথে ভেসে এলো সেই কুকিল কণ্ঠ-
: বাবা আসছি।
তারপর জুতা পায়ে দৌড়ানোর শব্দ। আর সেই সাথে বাক বাকুম শব্দের মত-
: মা মা বাবা এসেছে। মা মা বাবা এসেছে।
“তার কী হয়েছে। যাও কোলে নিয়ে নাচো।” মায়ের রসিকতায় খিল খিল করে হেসে ওঠে সে। তারপর দরজা খোলা পর্যন্ত সে কী অস্থিরতা। দরজা খোলার পর বাবার শরীরে ঘাম দেখে ছুটে যায় ঘরে। নিয়ে আসে গামছা।
: বাবা বাবা বসো। তুমি ঘেমে গেছো।
জামা কাপড় ছেড়ে বাবা বসার সাথে সাথেই সে বাবার ঘাম মুছতে থাকে। আর বলতে থাকে-
: বাবা বলতো-গামছা মানে কী?
: কী মা?
: জানো না? গামছা মানে গা- মোছা। তারপর সে হাসতে থাকে হা হা হি হি।

মেয়ের বষয তখন বড় জোর পাঁচ কী সাড়ে পাঁচ। অবাক চোখে মেয়ের মুখের দিকে তাকায় সে। তারপর যাতে ফুলের গায়ে আঘাত না লাগে ঠিক সেইভাবে মেয়েকে টেনে নেয় বুকের মাঝে। মেয়ে আরও আদুরে গলায় বাবা...বাবা বলতে বলতে নাক ঘষতে থাকে বুকে।
: অর্চি-এবার ওঠো। বাবা হাত মুখ ধুঁয়ে এলে খেতে বসবো।

হ্যা মেয়ের নাম অর্চি। এখন বয়স সাড়ে সাত। মা’র কথা শুনে বাবার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো বাথরুমে। হাত-মুখ ধোঁয়া শেষ হলে গামছা এগিয়ে দেয়। তারপর বাবার একটি হাত নিজের ঘাড়ে নিয়ে চলে যায় ঘরে। ঘরে তার মা খাবার রেডি করে বসে ছিল। তারা খেতে বসে।
খেতে খেতে অর্চির বাবা পানির জন্য গ্লাসের খোঁজ করতেই সে বাবাকে গ্লাস এনে দিলো। অর্চির মা রসিকতা করে বললো-ইস্ বাবার জন্য জান যায়। সে তার বাবার চোখে চোখে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসে আর বলে-
: বাবা একেই বলে হিংসা।

খাওয়া শেষে বাবাকে হাত মোছার গামছাটাও এগিয়ে দেয় অর্চি। অর্চির বাবা-মা তার দায়িত্ব জ্ঞান দেখে অবাক হয়। সে এই বয়সেই তাদের জন্য অনেক কিছু করে। একদিনতো এক অবাক করা ঘটনা ঘটালো সে। রাতের বেলা। মশা তাড়ানোর কয়েল জ্বলছিলো খাটের পাশে কয়েল স্ট্যান্ডে। তার বাবা জরুরি দরকারে ঘর থেকে বের হতে ধরলে কয়েল স্ট্যান্ডের উপর পা পড়ে যায়। চিৎকার করে ওঠেন তিনি। অর্চির মা ঘরের বাইরে ছিল। অর্চি খাটে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিল। বাবা চিৎকার শুনেই সে বুঝতে পারে বিপদ হয়েছে। সেও “কি হেেলা বাবা” বলে চিৎকার করে উঠে লাফ দিয়ে খাট থেকে নেমে বাবার ব্যথা পাওয়া পা টি হাতে নিয়ে দেখে বাবার পা দিয়ে রক্ত ঝরছে। সে তার মাকে ডেকে মলম আনতে বলে। বাবার মুখে ব্যথার ছাপ দেখে কাঁদতে থাকে এবং বাবাকে শান্তনা দেয়। “চিন্তা করো না বাবা, ভালো হয়ে যাবে।”

দিন দিন বাবা-মার প্রতি তার টান আরো বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে তার বাবা কোনভাবে একটু ব্যথা পেলেই সে অস্থির হয়ে যায়। সব সময় এটা ওটা এগিয়ে দিয়ে বাবাকে সাহায্য করে। তার বাবা কাজ শেষে ঘরে ফিরলে সে তার জামা কাপড় খুলতে সাহায্য করে এবং শাসনের স্বরে বলে “এখন রেস্ট নাও।”

মামবি# প্রজাপাড়া#পীরগঞ্জ-রংপুর।
১২.০৭.১২# বকিলে৫টা৪৫।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×