শুরুতে যেতে:
ডিজুস প্রেম। পর্ব-১
ডিজুস প্রেম। পর্ব-২
ডিজুস প্রেম। পর্ব-৩
ডিজুস প্রেম। পর্ব-৪
তার কথা শুনে আমি রীতিমত হতবাক হয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ চিন্তা করতে লাগলাম, এটা কিভাবে সম্ভব। তার নম্বরটি আমি লটারির টিকেটের মত এটা ওটা ডায়াল করে পেলাম। এরপর আবিষ্কার করলাম তার নিক নেম এবং আমার নিক নেম একই! এখন আবার সে দাবি করছে তার জন্মতারিখ ও আমার জন্ম তারিখও এক, শুধু সালটা আলাদা। নাহ আমার বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না! আমি কি ভুল শুনলাম, নিশ্চিত হতে তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করি-
- তোমার জন্মতারিখ কত?
- ২৫ মে ১৯...।
- যাহ বিশ্বাস হয় না।
- বিশ্বাস করার দরকার নাই, শুধু জেনে রাখ, আর যদি আমার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা থাকে তাহলে যেদিন দেখা করতে আসবা সেদিন আমার নাম আর জন্ম তারিখের প্রমাণ তুমি নিজের চোখে দেখবা।
এভাবে ঘটনার পর ঘটনা ঘটতে ঘটতে পার হয়ে যায় প্রায় ২টি মাস। এখন আর আমরা শুধু বন্ধু নয়, দু'জনে দুজনের আত্মা, প্রাণ, জীবন, ভালোবাসা! যতটা না আমার তরফ থেকে তারচেয়ে বেশি তার দিক থেকে। আমি মাঝে মাঝে কিছুটা তাকে এড়িয়ে চলতে চাই। কারণ আর কিছুই নয়, অচেনা অজানা একটা মেয়ে, বিবাহিত না অবিবাহিত, কালো না ধলা, কুৎসিৎ না সুন্দরী তা কিছুই জানি না। সে যেন আমাকে ঘৃণা করে তার জন্য আমি নিজে যেমন তার কাছে বর্ণনা করি সম্পূর্ণ উল্টো। কিন্তু তবুও তাকে আমার পিছু ছাড়াতে পারলাম না। তার এক কথা
-তুমি আমার জীবনে আসছ কাকতালীয় ভাবে, তোমার সঙ্গে আমার এতগুলো মিল এটা এমনি এমনি হতে পারে না তোমার সঙ্গে নিশ্চয় আমার জন্ম-জন্মান্তরের সম্পর্ক, তাই আল্লাহ তোমার সঙ্গে আমাকে এভাবে এক সুতোয় গেঁথে দিলেন। আমি কিছুতেই তোমাকে ছাড়বো না। যদি তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করো, তবুও আমি তোমাকে ছাড়বো না।
- তাই, কিন্তু আমি তো বিবাহিত। আমার একটা বাচ্চাও আছে।
- থাক, তবুও তুমি আমার। আমাকে ভালো বাসতে না পারলে তোমার চরণে একটু আশ্রয় দিও, না হয় তোমার ও তোমার স্ত্রীর দাসী করেই রেখ। কিন্তু তবুও আমি তোমাকে ছাড়বো না, ছাড়তে পারবো না।
হায়রে ভালোবাসা! কি করি আমি? তার এ বক্তব্যের পর আমার বিবেক আমাকে নিত্য কুরে কুরে খেতে লাগল, এটা কি করলাম আমি? কেন নিছক মজা করতে গিয়ে এভাবে তার জালে জড়িয়ে পড়লাম। কিন্তু এখানে আমারই বা কি দোষ, আমি তো তাকে সবকিছু সরাসরি বলেছিলাম, যে আমি প্রেমিকা চাই না বন্ধু চাই, আমরা দুজনে স্রেফ সারা জীবন ভালো বন্ধু হয়ে থাকবো। প্রথম কিছুদিন ঠিকঠাক চললেও এর পরে সে কখন যে অদেখা এই আমার প্রেমে হাবুডুবু খেতে খেতে আমাকেও টেনে জলে নামিয়ে ডুবে মরতে বাধ্য করল ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।
এর মধ্যে একদিন হঠাৎ পোষ্টাপিস থেকে একটা চিঠি এল। তার ছবি ও কয়েকলাইনের একটি চিঠি সঙ্গে তার সার্টিফিকেট ও কলেজ আইডির ফটোকপি। সত্যি সত্যি তার নাম ও জন্মতারিখ ঠিক আমার সঙ্গে হুবহু এক যা সে আগেই দাবি করেছিল। আর ছবিটা নাকি কয়েক বছর আগে তোলা। এখন সে আরও একটু মোটা আর একটু কালো হয়ে গেছে।
তার চিঠি আর ছবি পাওয়ার পর আমাকে ফোন দিয়ে ক্রমাগত চাপ দিতে থাকল ছবি পাঠানোর জন্য। কিন্তু আমি তখন সিদ্ধান্তে পুরোপুরি অটল হয়ে গেছি, নাঃ অনেক হয়েছে আর নয়। এ মেয়ে চিনে জোকের মত আমার রাতের ঘুম, দিনের কাজকর্ম সব চুষে নিয়ে আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে প্রায়। এর সঙ্গে আর নয়। বেশ কয়েকদিন মোবাইল বন্ধ করে রাখব অথবা সিমটা পরিবর্তন করে ফেলব না কি চিন্তা করছিলাম। কিন্তু এর কোনটাই করতে পারছিলাম না, কারণ যখন সে ফোন করত বা তার সঙ্গে কথা বলতাম, তখন কেমন যেন এক মাদকতাময় আকর্ষণে সে আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলত, আমি তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার সঙ্গে কথা বলে যেতাম।
এক পর্যায়ে সে আমার কাছ থেকে প্রতিজ্ঞা আদায় করে নিল, তাকে আমার ছবি পাঠাবো এবং সামনের জন্মদিন আমরা দুজনে একসঙ্গে সেলিব্রেট করব। কথা অনুযায়ী আমি ছবি পাঠালাম অন্য আরেকজনের যার চেহারা ও সাইজের সঙ্গে আমার অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত প্রান্তে । কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে দেখি সে তাতেও আমার পিছু ছাড়তে রাজি হলো না। তার কথা সে আগেই বলেছে আমাকে তুমি দেখতে যত কুৎসিৎ বা কদাকার হও, তাতে আমার কিছুই যায় আসে না, আমি তোমাকে ভালোবেসেছি তাই আর কোনদিনও তোমাকে ভুলতে পারবো না। এখন তুমি যদি আমাকে বিয়ে না করতে চাও তবুও আমি তোমার কাছে যাবো তোমার কাজের বুয়া হিসেবে থাকবো।
আমি এবার পুরোই বিচলিত হয়ে গেলাম, দেখতে দেখতে আমাদের জন্মদিন কাছাকাছি চলে এল। এবার আমার কথা রাখার পালা, ২৫ তারিখ রাত্রে সে আমার সঙ্গে একসঙ্গে তার ও আমার জন্মদিন পালন করতে চায়। আর আমি যদি তার কাছে না যাই সে নিজে চলে আসবে আমাদের বাড়িতে! আমি এবার পড়লাম বিরাট বিপদে, বলে কি মেয়ে!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:২০