somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বলদ আর বলৎকারে ছেয়ে গেছে ভারতীয় পেত্মাদের ধর্মকর্ম

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘আমি গরুর মাংস খাই না; ফ্রিজে সংরক্ষণও করি না। এই ঘোষণার ফলে আশা করছি আমাকে আর বাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে রাজপথে এনে হত্যা করা হবে না। ইনশাল্লাহ, নতুন কোনো ইস্যু তৈরি না হওয়া পর্যন্ত আমি স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকব।’ এই কথাগুলো লিখেছিলেন সুনেত্রা চৌধুরী একজন বন্ধু

সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গোহত্যাকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে এবং মনে হয়, বিজেপি সরকার সারা ভারতেই গোহত্যাকে বেআইনি করবে। হিন্দুত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ওয়াদাবদ্ধ বর্তমান ভারতীয় নদো সরকারের পক্ষে এটাই স্বাভাবিক। একটি পশু হলেও হিন্দুসমাজে গরু দেবতাতুল্য মর্যাদাবান। বিস্ময়কর মনে হলেও এতে অবাক হওয়ার কোনো কারণ নেই। অসংখ্য হিন্দু দেবদেবীর মধ্যে যদি সাপ বা ইঁদুর থাকতে পারে তবে এদের তালিকায় গরু থাকা তেমন কিছুই নয়।

যদি কোন হিন্দু ধর্মাবলম্বী বন্ধুদের জিজ্ঞেস করা হয়, গরুকে তো আপনারা মা বলে শ্রদ্ধা করেন তাই না? অনেকেই এমন প্রশ্নের উত্তর দেয় বা দিবেন .. heart emoticon .. গরু কখনোই আমাদের মা নয়, আর যখন জিজ্ঞাসা করা হয় আপনারা গরু দুধ পান করছেন কিন্তু মাংস কেন খাচ্ছেন না ? তখন সেই প্রশ্নের উত্তর দেয় বা দিবেন, শুধু মাত্র আপাত দৃষ্টিতে মায়ের সাথে তুলনা করা হয়, কারণ দুধ এমন একটি খাবার যা মা থেকেই আসে সে মানুষ হোক আর প্রাণী হোক, তাই যখনই এমন প্রশ্ন আসে তখন এমন জবাব অনেক হিন্দু দাদা দিদিরা দিয়ে থাকেন।

এমন উত্তরে শুধুই মনে হয় যে বা যারা এমন ধ্যান জ্ঞান নিয়ে আছেন তারা তাদের ধর্ম সম্পর্কে হয়তো কিছুই জানেন না তাই এমন উত্তর দেন। ঐ সকল ব্যক্তিদের আরও কিছু কথা আছে যা শুনলে হাসবো না কাঁদবো সেটাই চিন্তা করতে পারি না। তারা কতভাবেই না নিজেদের বাঁচানোর কথা সাজিয়ে বলেন......কিন্তু কেন ভাবছেন না দুধ তো কুকুর বিড়ালও তার সন্তানদের জন্য পান করতে দেন। তখন কি কুকুর বিড়াল আপনাদের ঐ যুক্তির সাথে একাত্ততা ঘোষনা করবে?

যখন চামড়ার জুতার কথা বলা হয় তখন বলেন..... heart emoticon .... আমাদের পূর্ব পুরুষেরা বা মুনি ঋষিরা কেউ চামড়ার তৈরি জুতা পরিধান করতেন না। তারা কাঠের তৈরি খড়ম বা কাঠ ও রাবারের তৈরি এক ধরনের জুতা পরতেন। আমরা যারা আধুনিক যুগে থাকি তাদের অনেক সময় চামড়ার জুতা পরিধান করতে হয় কারন অফিস আদালতে খড়ম পড়ে যাওয়া যায় না। সেই ক্ষেত্রে বলতে হয়, চামড়ার তৈরী জুতা পরা আর জবাই করে মাংস খাওয়া দুই ভিন্ন জিনিস।

আসলে কথার বেলায় দেখি কেউ কম নয়। সে যে ধর্মাবলম্বীই হউক না কেন। কি সুন্দর জবাব, এমন কথায় মনে হচ্ছে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরই খড়ম ব্যবহার করতেন অন্যান্য ধর্মের কোন ব্যক্তিরা খড়ম ব্যবহার করেনি। যাই হোক হিন্দু শাস্ত্রের কিছু কথা উল্লেখ করা হলো ঐ সকল বন্ধুদের জন্য যারা জোর করে আইনি বা ধর্মীয় ব্যখ্যা দিয়ে অন্য ধর্মের হৃদয়ে আঘাত করেন।

১। অসংখ্য হিন্দু রয়েছে যারা নিষ্ঠাবান নিরামিষ ভোজি। তারা আমিষ খাদ্যকে তাদের ধর্ম বিরোধী মনে করে। অথচ আসল সত্য হলো, হিন্দু শাস্ত্রই মাংস খাবার অনুমতি দিয়েছে। গ্রন্থসমূহ উল্লেখ করেছে- পরম বিজ্ঞ সাধু-সন্তরা আমিষ খাবার গ্রহণ করতেন।

২। হিন্দুদের আইনের গ্রন্থ মনুশ্রুতি পঞ্চম অধ্যায় শ্লোক ৩০এ আছে-খাদ্য গ্রহণকারী যে খাবার খায়, সেই সব পশুর যা খাওয়া যায়, মন্দ কিছু করে না। এমনকি সে যদি তা করে দিনের পর দিন। ঈশ্বর নিজেই সৃষ্টি করেছেন কিছু ভক্ষিত হবে আর কিছু ভক্ষণ করবে।

৩। মনুশ্রুতীর পঞ্চম অধ্যায়ের ৩১ শ্লোকে আবার বলা হয়েছে- যা মাংস ভক্ষণ শুদ্ধ উৎসের জন্য। ঈশ্বরের বিধান হিসেবে বংশ পরম্পরায় তা জানা আছে।

৪। এরপরে মনুশ্রুতীর পঞ্চম অধ্যায়ের ৩৯ এবং ৪০ শ্লোকে বলা হয়েছেঃ ঈশ্বর নিজেই সৃষ্টি করেছেন উৎসর্গের পশু উৎসর্গের জন্যই। সুতরাং উৎসর্গের জন্য হত্যা-হত্যা নয়।

৫। মহাভারত অনুশীলন পর্ব ৮৮ অধ্যায় বর্ণনা করছে - ধর্মরাজ যুধিষ্টির ও পিতামহ ভীষ্ম, এদের, এদের মধ্যে কথোপকথন কেউ যদি শ্রাদ্ধ করতে চায় তাহলে সে অনুষ্ঠানে কি ধরনের খাবার খাওয়ালে স্বর্গীয় পিতৃ পুরুষ (এবং মাতাগণ) সন্তুষ্ট হবেন। যুধিষ্টির বলল, হে মহাশক্তির মহাপ্রভু! কি সেই সব বস্তু সামগ্রী যাহা- যদি উৎসর্গ করা হয় তাহলে তারা প্রশান্তি লাভ করবে ? কি সেই বস্তু সামগ্রী যা (উৎসর্গ করলে) স্থায়ী হবে? কি সেই বস্তু যা (উৎসর্গ করলে) চিরস্থায়ী হবে?

ভীষ্ম বলেছেন, তাহলে শোন হে যুধিষ্টীর! কী সেই সব সামগ্রী। যারা গভীর জ্ঞান রাখে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পর্কে যা উপযোগী শ্রাদ্ধের জন্য। আর কি সেই ফল-ফলাদি যা তার সঙ্গে যাবে। সীম বিচীর সাথে চাল, বার্লী এবং মাশা এবং পানি আর বৃক্ষমূল (আদা, আলু বা মূলা জাতীয়) তার সাথে ফলাহার। যদি স্বর্গীয় পিতৃদেবদের শ্রাদ্ধে দেয়া হয়। হে রাজা! তা হলে তারা এক মাসের জন্য সন্তুষ্ট থাকবে।

শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে গরুর মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করলে, বিশেষ করে বলা হয়েছে তাদের সন্তুষ্টি থাকে পুরো এক বছর। ঘি মিশ্রিত পায়েশ, স্বর্গীয় পিতৃপুরুষের কাছে গরুর মাংসের মতোই প্রিয়। ভদ্রিনাসার (বড় ষাড়) মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করলে পিতৃপুরুষ বার বছর সন্তুষ্ট থাকেন।
পিতৃপুরুষের মৃত্যু বার্ষিকি গুলোর যে দিনটিতে সে মারা গেছে সেই রকম একটি দিন যদি শুক্ল পক্ষের হয় আর তখন যদি গন্ডারের মাংস দিয়ে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে আপ্যায়ন করা যায়- স্বর্গীয় পিতৃ পুরুষের সন্তুষ্টি অক্ষম হয়ে যায়। ‘কালাসকা’ কাঞ্চন ফুলের পাপড়ি আর লাল ছাগলের মাংস যদি দিতে পারো তাহলেও তাদের সন্তুষ্টি অক্ষয় হয়ে যাবে।

বেশ ভাল কথা বলেছিলেন মার্কন্ডেয় কাটজু ভারতে ডাল এবং পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গোবর এবং গো-মূত্র খাওয়ার অভিনব পরামর্শ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজু। তিনি এ বিষয়ে টুইটারে সরকারের উদ্দেশ্যে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, ‘প্রণাম। আজ থেকে গো-মূত্র পান করুন এবং গোবর খান। এসব ওষুধপত্র। ডাল এবং পেঁয়াজ খুব ব্যয়বহুল হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন.... এর আগে গরুর গোশত নিয়ে মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে উত্তর প্রদেশের দাদরিতে মুহাম্মদ আখলাখকে পিটিয়ে হত্যা করার পরে কড়া মন্তব্য করে বলেন, ‘আমি গরুর গোশত খাই এবং তা খেতে থাকব দেখি আমাকে কে বাধা দিতে পারে।’ তিনি গরুকে মা আখ্যা দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘গরু একটি পশু তা মানুষের মা হয় কি করে? এটা ফালতু কথা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ভারতীয় নদো সরকার এবং তাদের আমলারা শুধু মুসলিমকে টার্গেট করেই এসব ঘটনা ঘটাচ্ছেন। মার্কন্ডেয় কাটজু যদি গরুর গোসত খেতে পারেন তবে তাদের সমস্যা কি ? তিনিও তাদের ধর্মকে যথারীতি পালন করে আসছেন। আমি বুঝতে পারছি না এই উগ্রপ্রন্থি সরকার কিভাবে দেশ নেতা হলেন। একটি দেশে কত ধর্মের মানুষের বসবাস হতে পারেন সেটার জ্ঞান তার নেই।

গুরুকে নিয়ে যদি তাদের এতো সমস্যা তবে কেন গরু থেকে দূরে থাকছেন না। ভগবানের চামড়া দিয়ে জুতা তৈরী করে পড়তে বুঝে বেশ ভাল লাগে। এটাই হলো নদো সরকারের আমলাদের কার্যকলাপ। ভগবান তাদের পায়ের নিচেই থাকবে। তারাই তো পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন।

’সর্বপরি ভারতীয় আমলাদের জন্য সুকুমার মিত্র ভাইয়ের মনোব্যক্ত শেয়ার করছি।
অশোক সিঙ্ঘল বলেছেন, '২০২০ সালের মধ্যে ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হবে।' এত দেরি হবে কেন? আমরা যারা জীবন সায়াহ্নে তারা 'হিন্দু রাষ্ট্র' সঙ্গে ডুমুরের ফুল আর কাঠালের আমসত্ত্ব দেখে যেতে পারব না। কেন আমরা কি অপরাধ করলাম??? কেসটা তাড়াতাড়ি নামিয়ে ফেলা যায় না সিঙ্ঘল জী???
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×