somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি প্রেমের প্রস্তাব

২৫ শে জুন, ২০১৫ রাত ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি ছেলে সাধারণত কত বছর বয়সে প্রথম প্রেমে পড়ে সে ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই। তবে আমি ১৫ বছর বয়সে প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম। প্রেমে পড়ার জন্য যদিও ওই বয়সটা কোনোভাবেই উপযুক্ত সময় নয়, তবে ওই বয়সের প্রেমের অভিজ্ঞতাগুলো একাধারে মধুর এবং হাস্যকর।

আমি প্রথম যার প্রেমে পড়েছিলাম তার আসল নামটা বলব না। তবে একটা নাম তো দেয়া উচিৎ। 'নিরুপমা'-ই দেয়া যাক।

আমি তখন নবম শ্রেণীতে পড়ি। প্রাত্যহিক রুটিন এবং মাইলস্টোন কলেজে পড়ার দরুন প্রতিদিন সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে কোনমতে চোখ মুখে পানি দিয়ে মিলন মামার দোকানে পরোটা আর ডিম ভাজি খাওয়া আর ৭:১৫ এর আগে স্কুলে যেতে হত। প্রতিদিনের মত সেদিনও আমি মিলন মামার দোকানে নাস্তা করার সময় দেখলাম মাইলস্টোন স্কুলের একটা স্কুল ভ্যানে পুতুলের মত একটা মেয়ে বসে আছে। দুই বেণি করা চুল আর স্কুলের নীল পোশাকে তাকে পুতুলের মতই লাগছিল। ওকে দেখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে খাওয়ার কথাই ভুলে গিয়েছিলাম ;)। ভ্যানটা যখন চলে যাচ্ছিল তখন খাবার রেখেই রিক্সা নিয়ে পেছন পেছন ছুটেছি। কিন্তু রিক্সার গতি তো স্কুল ভ্যানের চেয়ে বেশি :(। তাই কিছুদূর যেতেই ওরা পিছিয়ে পড়ল।

সেদিন বিকেলে আমি ফোনে টাকা রিচার্জ করতে গিয়ে দেখলাম নিরুপমা তার মায়ের সাথে বের হয়েছে। দোকানের ছেলেটা প্রায় আমার বয়সী হওয়ায় আমার সাথে বন্ধুর মত সম্পর্ক ছিল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম পুতুলের নাম কি। সে বলল। "কোথায় থাকে?" তাও বলল। তারপর বলল, "তোমার কি দরকার?" বললাম, "এমনি"। কিন্তু ভেতরে ভেতরে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল আমার খুব গোপন একটা বিষয় যেন জনসম্মুখে উন্মুক্ত হয়ে গেল।

টানা দু'বছর আমি শুধু তাকে এরকম করে দেখেছি। এরমধ্যে খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছি আমার চেয়ে দু'বছরের ছোট সে। যে বছর আমি এসএসসি পরীক্ষা দেই সেবছর নিরু নবম শ্রেণীতে উঠল। আমার কোচিং ক্লাস হত সেসময়। সেই সময়টা আমার জন্য খুবই জরুরী হওয়ায় নিরুকে দেখতে পেতাম না। সময় মিলত না আসলে। রাতে পড়াশুনা করে সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠতে পারতাম না। ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখ পর্যন্ত আমি ওর ধারে কাছেও যাইনি।

ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ ভালোবাসা দিবস। একখানা চিঠি লিখলাম লাল, নীল আর সবুজ কালির মিশ্রণে। আর একখানা লাল গোলাপ চুরি করলাম ওদেরই গাছ থেকে :D। তারপর ওর স্কুল ছুটি হওয়ার ১০ মিনিট আগে গিয়ে 'স্ট্যাচু অব লাভ' :P হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

১০ মিনিট পর নিরুপমা বের হল । আমাকে দেখে সে রিক্সা ডেকে উঠে বসল :( । দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে আমিও রিক্সা ডাকতে যাচ্ছিলাম । তখন সে আমাকে ডেকে বলল, “আপনি যদি বাসায় যান তাহলে একসাথে যেতে পারেন” । আমি এতটাই খুশি হয়েছিলাম যেন আকাশের চাঁদ পেয়েছি :D । কোনো কথা না বাড়িয়ে রিক্সায় উঠে বসলাম । বুকের ভেতর হৃদযন্ত্র বাবাজী এতটাই লাফালাফি শুরু করেছিল যেন আমার বুকে কেউ হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছিল । আমার স্বপ্নের রাজকুমারী আমার পাশে বসে আছে, ভাবতেও পারছিলাম না । মনে মনে ভাবছিলাম কিভাবে বলা যায় যে আমি তাকে ভালোবাসি । ভাবতে ভাবতে একটা বিলবোর্ডের দিকে একটু তাকিয়েছিলাম । নিরু সেটা লক্ষ্য করল । বলল, “মেয়েটা খুব সুন্দর তাই না” ? আমি ফস করে বলে ফেললাম, “তোমার চেয়ে বেশি না ।” শুনে নিরু এমনভাবে হাসল যেন আমি খুব মজার একটা কৌতুক বলেছি । নিরুর হাসিটা খুব সুন্দর । এই হাসি দেখার জন্য সারাজীবন তার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারব । কিন্তু এই সময়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না । প্রপোজ করতে হবে । ২-১ টা চড় খাওয়ার জন্যেও মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে ।

আমি সবদিক থেকে প্রস্তুত হয়ে চিঠিটা দিয়ে বললাম, “এটা পড়ে দেখো ।” নিরু পড়ল । তারপর সেটা ভাঁজ করে ব্যাগের ভেতর রেখে দিল । ভালো-মন্দ, হ্যাঁ-না কিছুই বলল না । উৎকণ্ঠায় আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হওয়ার জোগাড় আর এই মেয়ে চুপচাপ বসে আছে । নিজে থেকে তো জিজ্ঞাসাও করতে পারিনা । এরমধ্যে আবার আমার বাসায় প্রায় চলে এসেছি । আরেকটু পরই নেমে যেতে হবে ।

হঠাৎ নিরুপমা বলল, “ফুল এনেছেন” ? আমি ওর কথা শুনে হাঁ করে তাকিয়ে আছি । ও আবার বলল, “ফুল আনলে না হয় ভেবে দেখা যেত । ফুলই আনেন নাই ।” ব্যাগ থেকে ফুলটা বের করে দিলাম ।

বাসায় ফিরলাম । মনের মধ্যে অন্যরকম এক প্রশান্তি বিরাজ করছিল । পরবর্তী পরীক্ষাগুলোর সবগুলোতে A+ পেয়েছিলাম । কিন্তু এর আগে যেগুলো হয়েছিল তার মধ্যে সামাজিক বিজ্ঞানে A- পেয়েছিলাম । রেজাল্টের পর মনে হয়েছিল, “কেন যে আরো আগে নিরুপমাকে বললাম না” !!!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৫ রাত ৩:০৩
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×