মাত্র ক্লাস সেভেনে পড়ি।
আমার মেজো ভাইয়ের শাসনের কারণে বাইরে গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া হয় না। স্কুল, বাসা, ছাদ এবং আশেপাশের মাঠ - এই হল আমার গণ্ডি।
সকাল সাড়ে ১০টায় স্কুল শুরু। ১০টার মধ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। স্কুলে যাই, কিন্তু স্কুল আমাকে টানে না। বিশেষত প্রতিদিন এসেম্বলিতে রোদের মধ্যে দাঁড়াতে খুবই বিরক্ত লাগত। আমাদের পিটি শিক্ষক ছিলেন খুবই কড়া, কারণে অকারণে পেটাতেন।
আমাদের বাড়ির পাশে একটা লোক একটা লাইব্রেরি দিয়েছিল। সেই লাইব্রেরিতে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি গল্পের বইও বিক্রি হত। তাছাড়া তারা গল্পের বই ভাড়া দিত। প্রতিটি বই ভাড়া ২টা এবং ১৫ দিনের মধ্যে পড়ে বইটা ফেরত দিতে হত। আমি মাঝে মাঝে খাতা কিনতে যেতাম। লাইব্রেরির মালিকের একটা ছোটভাই ছিল আমারই বয়সী। মালিক বাইরে গেলে ছোট ভাই দোকানে বসত।
তারা দুই ভাই দোকান চালাত এবং দোকানের পেছনে একটা ঘুপচি ঘরের মধ্যে রাতে ঘুমাত। ঘুপচি ঘরটি দোকানেরই অংশ , তারা পার্টিশন দিয়ে আলাদা বানিয়ে নিয়েছিল।
সেই ঘুপচি ঘরেই আমি মনিরার প্রেমে পড়লাম।
প্রতিদিন সকালে মা স্কুলে যাওয়ার আগে টিফিন দিতেন এবং ৩ টাকা দিতেন রিক্সা ভাড়া। আমি সোজা স্কুল পালিয়ে সেই ঘুপচি ঘরে গিয়ে ঢুকতাম এবং মালিকের ছোট ভাইকে ২টাকা দিয়ে একটা গল্পের বই নিতাম।
তাদের গল্পের বইয়ের তালিকায় বিশাল সংগ্রহ ছিল দসু্য বনহুর। আমি পড়তে শুরু করলাম। দসু্য বনহুর এক সুদর্শন যুবক। তার প্রেমে পাগল তারই খালাতো বোন (সম্পর্কটা ঠিক মনে নেই) মনিরা।
মনিরা অপূর্ব সুন্দরী। সে যেমন ফর্সা, তেমনি আকর্ষণীয় দেহবল্লরীর অধিকারী। আর প্রেমে সে মাতোয়ারা, দসু্য বনহুরের জন্য সে সব ত্যাগ করতে পারে। মমতাময়ী নারী।
আমি সেই কিশোর বয়সেই তার প্রেমে পড়ে গেলাম।
কথায় বলে, প্রেম নাকি কাঠালের আঠা। আমারও সেই অবস্থা। প্রতিদিন স্কুল পালাই। দু'টাকা দিয়ে একটা বই নেই। সারা দিন পড়ে থাকি ঘুপচি ঘরে। দুপুরে খাওয়ার কোন চিন্তা নাই। টিফিন তো সাথে আছেই। বিকেলে স্কুল ছুটির সময়ে ভালো মানুষের মতো বাড়ি ফিরে যাই।
৩ মাস কেটে গেল। এর মধ্যে একদিন আমার বড় ভাইয়ের সাথে আমার স্কুলের শিক্ষকের দেখা হয়ে গেল। শিক্ষক মহাশয় জানতে চাইলেন আমাকে কেন অন্য স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে। আমার ভাই তো অবাক। তিনি জানালেন, আমি প্রতিদিন স্কুলে যাই। শিক্ষক মহাশয় জানালেন, স্কুলে না যেতে যেতে আমার নাম কাটা গেছে।
সেদিন বিকেলে যথারীতি স্কুল ড্রেস পরা আমি বাড়ি ফিরলাম। আর যায় কোথায়, আমার বড় ভাই একটা বেত নিয়ে হাজির। জিজ্ঞেস করলেন, আমি স্কুলে গিয়েছিলাম কি না। হাতে বেত দেখেই বুঝে গেছি, কোন গড়বড় হয়েছে। তাই অবলীলায় বলে দিলাম আমি স্কুলে গেছি।
শুরু হল মার।
পরের দিন আমার ভাই আমাকে স্কুলে নিয়ে গেলেন। ফাইন দিয়ে আমাকে আবারও ভর্তি করানো হল। আমি ক্লাসে গেলাম। আমার ক্লাসমেটরা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাতে লাগল। কেউ কেউ জানতে চাইল, আমি এত দিন কোথায় ছিলাম ? আমি কোন জবাব দেই না।
আমি কিভাবে বলি, মনিরার প্রেমে পড়িয়া আমার মাথা আউলাইয়া গিয়াছিল।
( ব্লগার এন.এইচ. আর এর আমার প্রথম প্রেম লেখাটি পড়ে অনেক দিন পর এই ঘটনা মনে পড়ল। )
দসু্য বনহুর সিরিজ ও তার লেখিকা রোমেনা আফাজ সম্পর্কে জানতে ...
http://www.bogra.info/author.html
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০০৯ দুপুর ২:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




