ইসলামী শাসন এবং কমিউনিস্ট শাসনে কয়েকটা মিল আছে। যেমন : শাসক আজীবন ক্ষমতায় থাকে। জনগণের পছন্দ না হলেও শাসক বদলানোর কোন পদ্ধতি নাই। শাসক মরে গেলে আরেকজন শাসক নির্বাচিত হবে। শাসক বদলানোর একমাত্র নিয়ম হল শাসকের মৃত্যু। কোন মেয়াদ নাই। শাসক নির্বাচনে জনগণের কোন অংশগ্রহণ নাই। বাক-স্বাধীনতা বলে কিছু নাই। সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলার কোন সুযোগই নাই। বিরোধী দল বলে কিছু নাই। সবাই একটা দল। শাসক, সরকার বা দলের বিরুদ্ধে কিছু বল্লেই কল্লা থাকবে না। সীমিত গণমাধ্যম থাকে, তবে সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলার মতো কোন গণমাধ্যম থাকে না। এমনকি অনেক দেশের কোন খবর বাইরের দুনিয়া জানতে পারে না। সরকার খবর সেন্সর করে দেয়।
দুই পদ্ধতির মধ্যে অমিলও আছে। যেমন : কমিউনিস্ট শাসনে নারী-পুরুষ সবাই সমান। নারী পুরুষ সবাই কাজ করে খাবে। সবাইকে খাইট্টা খাইতে হবে। সবই রাষ্ট্রের সম্পদ, জনগণের ব্যক্তিগত সম্পদ বলে কিছুই নাই। ইসলামী শাসনে মহিলারা ঘরে থাকবে। নারীদের শিক্ষাও নাই, কাজ করার সুযোগ তো দূরের কথা। স্বামী কামাবে, স্ত্রী-সন্তানরা খাবে। জনগণের ব্যক্তিগত সম্পদ আছে। তবে সব ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রমও আছে। অনেক ইসলামিক দেশে নারীরা শিক্ষা ও কাজের সুযোগ পায়।
ইসলামী শাসন ও কমিউনিস্ট শাসন অনেক সময় রাজতন্ত্রে রূপ নেয়। দেখা যায়, রাজার মতো পরবর্তী শাসক তার পুত্র বা কন্যা হয়। রাজতন্ত্রের মতোই উত্তরাধিকার নির্বাচিত হতে থাকে। এই রকম হলে বাক-স্বাধীনতা ও গণমাধ্যম বলে কিছুই থাকে না।
অন্য দিকে, গণতন্ত্রে শাসক বদলানোর ক্ষমতা জনগণের হাতে। শাসক একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারে। তারপর ইচ্ছা করলে জনগণ শাসক বদলাতে পারে। এই মেয়াদ কোন দেশে ৫ বছর, কোন দেশে ৪ বছর। বাক-স্বাধীনতা আছে। বিরোধী দল আছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দল সরকারকে ধুয়ে দিতে পারে। ব্যক্তিগত সম্পদও আছে। শিক্ষা ও কাজ করার সুযোগ সবারই আছে। গণমাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করা যায়।
বর্তমানে সারা পৃথিবীতে বেশি জনপ্রিয় গণতন্ত্র। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি নাগরিক সুযোগ সুবিধা আছে এমন এমন ১০টি দেশের তালিকা করলে দেখা যায়, সবগুলো দেশই গণতান্ত্রিক। এমনকি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি অভিভাসন প্রত্যাশী ১০টি দেশের তালিকা করলেও দেখা যায়, সবগুলো দেশই গণতান্ত্রিক।
পৃথিবীর একমাত্র দেশ চীন যেখানে একই সঙ্গে দুটি শাসন পদ্ধতি আছে। চীনের মূল ভূখণ্ডে কমিউনিস্ট শাসন। অন্য দিকে হংকং-এ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। পৃথিবীর অনেকগুলো দেশে রাজা থাকলেও রাজার হাতে কোন ক্ষমতা নাই। রাষ্ট্রপ্রধান রাজা হলেও নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে এবং প্রধানমন্ত্রী গণতান্ত্রিক পন্থায় জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়।
কোন প্রকার শাসন ভালো বলা মুশকিল। একেক দেশের জন্য একেক রকম শাসন পদ্ধতি কার্যকর হয়। তবে একটা কথা বলা যায়, শাসক যদি সৎ, যোগ্য ও মানবিক হয়, তবে যে কোন শাসন পদ্ধতিই জনগণের জন্য উপকারী হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:৪৪