somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ একটি গুম, অতঃপর...

০৫ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাবের মিয়া চোখ খুলতেই দেখতে পেল অন্ধকার এক ঘরে বসে আছে সে । মাথার উপর ছোট্ট একটা লাইট বাল্ব। হাত পা চেয়ারের সাথে বাঁধা । অন্ধকারের কারনে ঘরের মধ্যে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না, আলোটুকু তার উপরেই আছে শুধু। সাবের মিয়া বুঝে উঠলো না এইভাবে সে কেন বসে আছে। কিছুক্ষণ পর মনে আসলো সব ঘটনা, রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিল, পিছনে গাড়ির শব্দ, তারপর নিজেকে এই ভাবে পাওয়া।

সাবের মিয়ার একটা ভাল অভ্যাস নিয়মিত পেপার পত্রিকা পড়া। তার দরুন বুঝতে অসুবিধা হলনা তাকে গুম করা হয়েছে। কিন্তু তার যে অবস্থা তাঁকে গুম করার প্রশ্ন আসে না। আচ্ছা তার সাথে যা ঘটেছে তাকে কি গুম বলা চলে নাকি অপহরণ? গুম আর অপহরণ এর মধ্যে পার্থক্য কতটুকু? এই চিন্তা করতে করতে মোটা গলার স্বর টা কানে আসলো

- কি চেয়ারম্যান সাবের মিয়া? কি অবস্থা?
- স্যার আছি কোনরকম। তবে স্যার চেয়ারম্যান ডাকেন কেন? চেয়ারে বসা তাই?
- বাহ আপনার তেল তো দেখছি ভালই, রঙ্গ করেন আমাদের সাথে?
- স্যার আমি গরীব মানুষ রঙ্গ করব কেমন করে?
- আপনি চেয়ারম্যান সাবের না?
- স্যার আমি সাবের মিয়া, চেয়ারম্যান তো দূরের কথা কোন কমিটির সদস্য আজ পর্যন্ত হতে পারিনি।

কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর আরেকজনের কণ্ঠ শুনতে পেল সাবের মিয়া, “ বস মিস্টেক হয়ে গেছে, ভুল লোক কে ধরে আনছি আমরা”। বসের কণ্ঠ থেকে জঘন্য ভাষায় একটা গালি শুনতে পেল। সাবের মিয়া বুঝলো তাকে ভুল করে তুলে আনা হয়েছে। বেচারা লোকটা তার জন্য বসের কাছে গালিগালাজ শুনলো । কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলো সবাই।

- সাবের মিয়া, ৫০ লক্ষ টাকা দিতে পারবে আপনার ফ্যামিলি?
- স্যার ফ্যামিলি বলতে কেউ নেই, সামান্য চাকুরে, কোন মেয়ে আজ পর্যন্ত বিয়ে করতে চায়নি।
- বাপ মা নাই?
- স্যার তাঁরা এ পৃথিবীর মায়া কেটে চলে গেছেন।
- ধুর মিয়া অত কথা বলেন কেন? ৫০ লক্ষ দিতে পারবেন?
- স্যার, ইয়ে মানে ৫০ এর পর কটা শূন্য হয় স্যার, এটা জানলে বলতে পারতাম পারবো কিনা!
- চুপ কর ফকিরের বাচ্চা!

বসের মুখে ফকির শুনে সাবের মিয়ার মন খারাপ হয়ে গেল। আসলেই গরীব বলে গুমকারীরাও আজ তাকে তাচ্ছিল্য করছে। কিছুক্ষণ আরেকজনের কণ্ঠ শুনতে পেল, “বস পুরাই অচল মাল তুলে আনছি, মাফ কইরা দেন, বলি কি কাইটা ভাসায় দেয় পানিতে। দু একটা লাশ ভাসলে লোকে ভয়ে ভয়ে থাকবে , বিজনেস ভালা চলবে ফিউচারে”।

নিজের অবস্থানটা পরিষ্কার বুঝতে পারলো সাবের মিয়া। আর রক্ষা নাই। সারাজীবন লাথি গুঁতা খেয়ে মানুষ। শেষ পর্যন্ত এই ছিল কপালে। ওর লাশ নদীতে ভাসলে কি আর না ভাসলে কি। দুই একটা পেপার পত্রিকায় ছবি আসবে। কেউ কেউ হয়ত চিনতে পারবে। দুদিন পর লোকে ভুলে যাবে। বড় বড় লোক রক্ষা পাচ্ছে না, আর সে তো কোন ছাড়।

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর সাবের মিয়া ভাবলো মরতে যখন হবে তখন একটা বুদ্ধি খাটাই। বসের সাথে একটু কথা বলি। আর স্যার বলা যাবে না তাকে, বস বলেই ডাকি। অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে না তবে তিনি আছেন মনে হয়।

- বস আছেন, ও বস?
- কিরে সাবেরের বাচ্চা কি বলিস?
- বস আমাকে মেরে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারবেন না।
- কি বলতে চাস
- বস আমি সাধারন পাবলিক। কেউ চিনে না, নদী হোক আর সমুদ্র লাশ ভাসলে কেউ গোনায় ধরবে না
- তাই নাকি? তুই যেই হস হইচই তো হবেই, চিন্তা নিস না।
- বস তাতেও সমস্যা
- কি সমস্যা?
- বস হইচই হলে নাম ও প্রকাশ হবে। তখন আসল সাবের চেয়ারম্যান কিন্তু সতর্ক হয়ে যাবে। আপনাদের প্রজেক্ট কিন্তু কঠিন হবে তখন।
- আমাদের প্রতি তোর এত দরদ?
- বস, কোনদিন তো কারো উপকারে আসেনি, মরার আগে যদি আপনাদের কিছু উপকারে আসি।
- আচ্ছা

সাবের মিয়া আর কথা বাড়াতে পারলো না। বেশ কিছুক্ষণ সবাই চুপচাপ থাকলো। তারপরে সাবের মিয়া মাথায় কিসের যেন বারি পরল। অজ্ঞান হতে বেশি সময় নিল না সে।

সাবের মিয়া চোখ খুলে দেখে, চারিদিকে আলো। মৃত্যুর পর তাহলে এত আলো আসে চারপাশে এই ভাবতে থাকলো সাবের মিয়া, কিন্তু গাড়ির শব্দ কানে আসে কেন? ধরমর করে উঠে দেখে রাস্তার পাশে এক মাঠে পরে আছে সে। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলো গুমকারিরা তার কিছুই করেনি, ছেড়ে দিয়েছে। তারাও বুঝতে পেরেছে সাবের মিয়া একটা অচল মানুষ, তাকে দিয়ে কিছুই হবে না।
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×