somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মধ্যবিত্তের পরিচয়চিহ্ন ০১

২৬ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

['বড় লেখা' ছোট ছোট পর্বে ভাগ করে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শুভাকাঙ্ক্ষী ব্লগারগণ, তাই এই পর্ব বিভাজন!]

বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সংস্কৃতিচর্চায় নিবেদিত লোকজনের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি বকাবাজি শুনতে হয় যে শ্রেণীটিকে তার নাম মধ্যবিত্ত। যেভাবে এই শ্রেণীটিকে গালাগালি করা হয় তাতে মনে হতে পারে - এরা একেকজন আপাদমস্তক ভিলেন, তা-ও বীরোচিত ভিলেন নয়, ভীরু-কাপুরুষ ভিলেন। অর্থাৎ ভিলেনদের মতো যাবতীয় কূটকৌশল, ষড়যন্ত্র, ধান্ধাবাজি, বদমায়েশি এরা করে বেড়ায়, কিন্তু প্রকাশ্যে এগুলো করতে হলে যে সাহসটুকুর প্রয়োজন হয় তা এদের নেই। ফলে কাজগুলো করতে হয় গোপনে গোপনে, ভয়ে ভয়ে - পাছে কেউ দেখে ফেলে!

প্রগতিশীলদের কাছে এত বেশি গালাগাল এমনকি উচ্চবিত্তদেরও শুনতে হয় না, নিম্নবিত্তদের তো নয়ই। নিম্নবিত্তদের অপরাধগুলোও দেখা হয় সহানুভূতির চোখে, অর্থাৎ অপরাধ সে নিজের ইচ্ছেয় করেনি - সমাজ করতে বাধ্য করেছে। অপরাধ কেউ-ই নিজের ইচ্ছেয় করে না, কে-ই বা শখ করে অপরাধী হতে চায়! প্রত্যেকটি অপরাধের পেছনেই - খুঁজে দেখলে পাওয়া যাবে - সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণ আছে। কিন্তু মধ্যবিত্তের অপরাধসমূহ বর্ণনার সময় প্রগতিশীলরা এ কথা ভুলে যান - যেন এই শ্রেণীটি স্বয়ম্ভু , যেন এদের ইচ্ছেতেই সবকিছু হয়, যেন এদের বিশ্বাসঘাতকতার জন্যই এদেশে বিপ্লব আসি আসি করেও আসছে না!

যে কোনো প্রগতিশীল লেখকের এ সংক্রান্ত লেখা পড়লেই মধ্যবিত্তের 'অপরাধ'গুলোর সন্ধান পাওয়া যাবে। মধ্যবিত্তের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ - এদের কোনো চরিত্র নেই, এরা সুবিধাবাদী - অর্থাৎ যখন যেদিকে হাওয়া দেখে সেদিকেই পাল খাটায়। সুবিধাবাদী বলেই এরা গিরগিটির মতো ক্ষণে ক্ষণে রঙ পাল্টায়, কোনো রঙকেই দীর্ঘস্থায়ী হতে দেয় না। এরকম রঙ-বদলপ্রয়াসী শ্রেণীটিকে স্বাভাববিকভাবেই ভন্ড হতে হয়। এরা যে কখন কী বলে, আর কখন কী করে, কখন এদের কোন জিনিসে বিশ্বাস ও আস্থা জন্মে, কখন সেই বিশ্বাস হারিয়ে গিয়ে তৈরি হয় অনাস্থা - তা তারা নিজেরাই জানে না (এই যদি হয় অবস্থা তাহলে সেই শ্রেণীটিকে কীভাবে বিশ্বাস করা চলে?)। মধ্যবিত্তরা কিছু কিছূ মূল্যবোধ ও সংস্কার দ্বারা জীবনকে পরিচালিত করে এবং সমাজ, রাষ্ট্র ও পৃথিবীকে সেগুলোর ভিত্তিতেই ব্যাখ্যা করতে চায়। এই মূল্যবোধগুলোর অধিকাংশই প্রগতির চাকাকে পেছনে ঠেলে দিতে চায়, সমাজের কোনো মৌলিক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে এবং নিজেকে একটি অনড়, নিঃছিদ্র আবরণের মধ্যে নিরাপদে বন্ধ করে রাখতে চায়। ফলে বাইরের মুক্ত-উদার-প্রগতিশীল চিন্তার আলো-হাওয়া সেখানে আর ঢুকতে পারে না।

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এই বকাবাজি বা সমালোচনাগুলো মধ্যবিত্তদের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না। যাদেরকে গালাগালিটা করা হচ্ছে তারা যদি সেটা না-ই বুঝলো (অন্য কারো তো বোঝার প্রশ্নই ওঠে না) তাহলে তা করে লাভ কী? ফলে এসব সমালোচনা তাদের কার্যকারিতা হারায়। বরং যিনি গালাগালিটা করেন, সেটা শেষ পর্যন্ত তার নিজের কাছে ফিরে আসে। ব্যাপারটা পরের পর্বে একটু ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো।
২৬টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×