এক
ভুরু কুচকিয়ে রুস্তম জানালার পর্দাটা সরিয়ে বাইরের দিকে তাকায়। এখনো চারদিকে পুরো অন্ধকার হয়নি। একটু বিরক্তি আসে- ধুর শালা রাইত হইতে এত্ত বেশী টাইম লাগতাছে ক্যান? খালি হাত দিয়ে কপাল থেকে রুস্তম ঘাম মুছার চেস্টা করে। একটু কি বেশী টেনশন হচ্ছে। ভুরুটুকু আরেকটু কুচকে যায় রুস্তমের। একটু নড়েচড়ে বসে- যেনবা গা-হাত-পা ঝাড়া দিয়ে ওঠে। ম্যালা কাম বাকি আছে। ঘাড় বাঁকিয়ে মেঝেতে তাকায়, যেখানে ডেডবডিটা পড়ে আছে....
শরীরটা একটা লুঙ্গি দিয়ে ঢাকা, হাটুর নীচ থেকে নগ্ন পাদুটো আর মাথাটাই লুঙ্গির বাইরে। একগাদা চুলের মাঝে মুখমন্ডলের অনেকটাই ঢাকা পড়েছে। নিথর কচি মুখটা দেখেও এতটুকু বিকার হয় না রুস্তমের- হলে তো জ্যান্ত অবস্থাতেই হতো। বরং ডেডবডিটার কিভাবে কি ব্যবস্থা করবে তা ভাবতে লাগে। একটা বস্তা নিয়ে এসেছিল সে- কিন্তু হুট করে বাংলোটায় নতুন কিছু অতিথি আসায় বস্তায় ভরে বাইরে বের করার সাহস হচ্ছে না। নতুন বুদ্ধিও সে একটা বের করে ফেলেছে; বড় দুটো বাজারের ব্যাগ নিয়ে এসেছে- এখন মৃত শরীরটাকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলার পালা। টেবিলে রাখা ধারালো ছুরির দিকে একবার তাকায় রুস্তম - তারপরে আবার মেয়েটার দিকে তাকায়। হয়তোবা মনে মনে ঠিক করে নেয়। কোত্থেকে শুরু করোন যায়- এক কোপে আগে কি কল্লাডা কাইটা ফেলাইবো- নাকি হাত-পা? আবার ভুরু কুচকে যায়- বডিটা কাটোন যাইবো ক্যামনে- বুক-পেড-নারী-ভুড়ি ...? ধুর এতো চিন্তায় কাম নাই- তার চাইতে কাম শুরু করোনডা আগে দরকার। রুস্তম কাজে লেগে পড়ে। ভালো করে লুঙ্গির গিট লাগায়- ডেডবডির উপর থেকে লুঙ্গিটা সরিয়ে দেয় ....
গলা, বুক, স্তন, পেট, নাভী, তলপেট, .. এক পলক তাকিয়ে থাকে- কামবোধ হয় না- হওয়ার কথাও না, মৃত শরীর কাম তৈরি করতে পারে না; বরং কিছুটা বিরক্তিই তৈরি করে রুস্তমের - মাঝের অংশটুকু কাটাকাটি করাটা ঝামেলা মনে হওয়ায়। কিন্তু এটাও ঠিক এই কাটাকাটির উদ্দেশ্যেই হোক আর যেকারণেই হোক- জ্যান্ত শরীরের চেয়ে মৃত শরীরটাকেই বেশী দেখতে হচ্ছে তাকে- অনেক খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে হচ্ছে। কচি নিথর দেহটা থেকে প্রাণবায়ু উড়ে গেলেও সৌন্দর্যটা উড়ে যায়নি, কিন্তু এই সৌন্দর্য আস্বাদন করার মতো চোখ রুস্তমের নেই, ছিলও না। থাকলে কি- এমন করে কাটা-ছেড়া করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে! যদি থাকতো- তবে মেরেই কি ফেলতে পারতো!
রুস্তম কাজ শুরু করে দেয়। প্রথমে হাত। এক কোপে কব্জিটা আলাদা করে ফেলে। একটা অস্ফুট আওয়াজে যেন একটু চমকে উঠে সে। যেনবা "আহ!" বা "আউ" ধরণের একটা আর্তনাদ শুনলো। জ্যান্ত কারো কব্জি আলাদা করে ফেললে যেমন আর্তনাদ করে উঠে- ঠিক তেমন। কিন্তু এটা একটা মৃত দেহ- এটা জ্যান্ত না। নিজেকে বুঝায়। ভুল শুনেছে বুঝতে পারে। টেনশনে এমনটা হয়। টেনশনটা একটু কমাতে চায়। লুঙ্গিটা দিয়ে কপালের ঘাম মূছে, পুরো মুখটাই ভালো করে মুছে নেয়- ডলে নেয়। আবার কাজ শুরু করে, একমনে কাজ করে যায়। হাত দুটো কেটে ফেলে। প্রতিটা হাত পাঁচ-ছয় টুকরো হয়, পা দুটোও একদম উরু থেকে কেটে ফেলে- টুকরো টুকরো হয়ে যায় সেগুলোও। এবার গলাটা কাটার উদ্দেশ্যে মাথার দিকে তাকায়। মুখটা দেখে একটু চমকে উঠে। ঠোট দুটো একটু খোলা- যেনবা "আহ!" করতে গিয়েই ঠোট খুলেছে মেয়েটা। একটু বিভ্রান্তি বোধ হয়। ঠোট দুটো কি বন্ধ ছিল না? ভালো করে ঠোটের দিকে তাকায়। নীচের ঠোটের এক জায়গায় কালসিটে পড়েছে, জোর করে আদর করতে গিয়ে কামড় দিয়ে ধরে ছিল অনেকক্ষণ, একটু মনে হয় রক্তও বের হয়েছিল। চোখের দিকে তাকিয়ে শুকিয়ে যাওয়া কান্নার সরু দাগ দেখতে পায়।
এবং প্রথমবারের মতো রুস্তমের একটু মায়া জন্মায় মেয়েটার জন্য। অবশ্য কোন অনুতাপ হয় না- বরং মনে হয় মেয়েটাই বড্ড যন্ত্রণা করছিলো। গতরে-শরীরে পারবে না জেনেও অতটুকুন শরীর রুস্তমের সাথে সমানে যুদ্ধ করে গেছে। কি লাভ হলো? খালি খালি বেঘোরে এমন প্রাণটা গেলো- সতীত্বটাও তো রক্ষা হইলো না! রুস্তম একটু যেন লজ্জা পায়- বটে তো এইটুকুনএকটা শরীরই- সেইটারে নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে দেওনের জন্য কেমন উন্মত্তই না হয়ে গিয়েছিল সে! তারপরেও অবশ্য তার কোন অনুতাপ হয় না। এতো আর প্রথম না।
এমন করে জোর করে ভোগ করা, ভোগের পরে ঠান্ডা মাথায় মেরে ফেলা প্রথম না হলেও, এমন কি টুকরো টুকরো করে মৃতদেহটাকে কেটে ফেলাটাও এবারই প্রথম না হলেও- রুস্তম হঠাত আবিস্কার করে- এবারই কেন জানি সবকিছুতে তার অনেক বেশী সময় লাগছে। গলায় কোপ দেয়ার জন্য এগিয়ে আসলেও এখনো তা করে উঠতে পারে নি। ঠোট দেখে বিভ্রান্ত হচ্ছে- এমনকি বন্ধ চোখ দুটো দেখে সে থেমে যাচ্ছে- চোখের কোনে শুকিয়ে যাওয়া অশ্রুরেখা তার মনোসংযোগ কেড়ে নিচ্ছে! আজ কি টেনশনটা একটু বেশীই হচ্ছে? দয়া মায়া বলে তো কখনো কিছু ছিল না, তবে? কেন এত চিন্তা মাথায় আসছে? কাজে মনোনিবেশ করতে চাইলো সে। ঠোট দুটোই যত নষ্টের গোড়া- খোলা ঠোট দুটোকে আগের মতো করে বন্ধ করার জন্য আঙ্গুল বাড়ায়। কালসিটে পড়া ঠোটে স্পর্শ লাগায় যেনবা একটুখানি কেঁপে উঠলো- ব্যথায় কুকড়ে গেলে যেমন হয়। মনের ভুল বলে নিজেকে শাসন করার আগেই মনে হলো- আহারে এমন করে কামড়টা না দিলেও তো চলতো!! আর এই চিন্তা রুস্তমকে আরো বিচলিত করে দেয়।
গলায় কোপ বসাতে পারে না সে। বরং মেয়েটাকে সে দেখতে থাকে। এলোমেলো একগাদা চুলের মাঝে মুখমন্ডল, বন্ধ থাকা চোখ, নাক, ঠোট, চিবুক। পুরো শরীরটাই তার মনোযোগ আকর্ষণ করতে থাকে। এবং দেহটাকে তার কাছে জ্যান্ত মনে হতে থাকে ....
গলায় কোপ বসাতে পারে না শেষ পর্যন্ত। একটা অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটে যায় যখন- হাত পা বিহীন নারী মূর্তিটাকে সে আবিস্কার করে চোখের সামনে। এতটুকু বীভৎস মনে হয় না বরং, মনে হতে থাকে এ যেন এক দেবী প্রতিমা। বিশেষ অঙ্গগুলোর দিকে তাকায় এবার এবং অবাক হয়ে আবিস্কার করে এসব অঙ্গের আলাদা একটা আবেদনও আছে। এমন করে আগে সে কখনো স্তন দেখেছে? ঠোট? নাভী? যোনী? এসমস্তই তার যৌনক্ষুধা নিবারণ করেছে অনেকবার- কিন্তু এমন করে বুদ করে রাখেনি কখনোই!
নিজেকে প্রচন্ড দুর্বল মনে হয় তার। চোখ ফিরিয়ে নেয় সে। আবার তাকায় মেয়েটার দিকে। চমকে উঠে সে! মনে হলো- মেয়েটার চোখ দুটো খোলা; তাকে যেন সে চোখ দুটো ডাকছে। ঠোটের কোনে এক চিলতে হাসি। রুস্তম নিজের চোখ দুটো একটু রগড়ে নিয়ে তাকাতেই আবার দেখে মেয়েটার চোখ দুটো আগের মতোই বন্ধ। কিন্তু রুস্তম সেই আহবান ভুলতে পারে না। ঠোট দুটো যেন এখনো তাকে ডাকছে। না, রুস্তম কাম বোধ করে না। পরম মমতায় আলতো করে নিজের ঠোট দুটো ফোলা ঠোট দুটোয় ছোঁয়ায় ......
দুই
গল্পটা একটানে লিখে সামহোয়ারইনে প্রকাশ করেই- ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার বন্ধ করে দেই। অন্য সময়ে যা হয়- যেকোন লেখার পরেই কে কেমন কি মন্তব্য করছে তা দেখার জন্য উদগ্রীব থাকি- আজকে তেমন কোন আগ্রহবোধ হচ্ছে না। বরঞ্চ কিছুটা ক্লান্ত লাগছে। একে একে ল্যাপটপে খুলে থাকা বিভিন্ন পেজ বন্ধ করতে থাকি। হঠাতই সেই পেজটা চোখের সামনে আসে। একটা ভাস্কর্যের ছবি। একটা নারী মূর্তি, কালো পাথরের। মাথাভর্তি উদ্ভ্রান্ত চুল, ঠোট দুটো যেন একটু খোলা, এবং একটু ফোলা। ছোট ছোট দুটো পুষ্ট স্তন, মসৃণ পেট, বড় ও কিছুটা ভেতরে ঢোকা নাভী।
নারী মূর্তিটা হয়তো ভাঙ্গাই হবে, তারপরেও কেন যেন মনে হচ্ছে- শিল্পী যখন মূর্তিটা তৈরি করে তখনও তার হাত-পা বুঝি কাটা ছিল।
তিন
ল্যাপটপটা বন্ধ করে একটু পায়চারি করতে থাকি। কেমন যেন- অস্থির অস্থির লাগে। ঘরের আলো বন্ধ করে ফেলি। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে খাই। তারপরে আয়েশ করে একটা সিগারেট ধরাই। লম্বা করে সিগারেটে টান দেই, ধোঁয়া ছাড়ি। সিগারেটের ধোঁয়া নিয়ে খেলা করতে থাকি। অস্থিরভাবটা একটু কমে আসে।
হুইল চেয়ারের শব্দে ঘুরে তাকাই। অন্ধকারেও স্পষ্ট বুঝতে পারি- হুইল চেয়ারে বসে মিথিলা একমনে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমি মুখে একটু হাসি মত আনার চেস্টা করলাম- আলতো করে মিথিলার ঠোটে আর কপালে চুমু খেলাম। মিথিলাই শুরু করে আগে : কেন মিথ্যে লিখলে? একটু চমকে উঠি: কোথায়?
: তোমার গল্পে!
: বারে! ও তো গল্প।
: কিন্তু আসলে তো মেয়েটার গলা কাটা হয়, পুরো শরীরটাই টুকরো টুকরো করা হয়, তারপরে বাজারের ব্যাগে ভরে জঙ্গলে নিয়ে গর্তের মধ্যে ফেলে আসা হয়।
: তাছাড়া তো উপায়ও ছিল না, কেননা মেয়েটাতো আরো আগেই মারা গিয়েছিলো।
: তাহলে অমন করে লিখলে কেন?
: তা নাহলে যে তোমায় হারাতে হতো!!