টাকা এমন একটা জিনিস যার প্রয়োজন জন্ম থেকে ( মিষ্টি খায়ানো থেকে শুরু) মৃত্যু ( কাফনের কাপড় কিনে শেষ) পর্যন্ত। বাংলাদেশের পেক্ষাপটে একটি ছেলে সাধারনত ২০/২২ এর আগে লিগ্যাল ভাবে ইনকাম করতে পারে না কিন্তু কিছু পার্সোনাল খরচ কিন্তু ঠিকই হয় যা গার্জিয়ান কে বলা যায় না তাই বাধ্য হয়ে খুঁজে নিতে হয় কিছু ইললিগ্যাল সোর্স।
আমি যেহেতু গ্রামে বড় হয়েছি এবং ঐ বয়সে ব্যায় এর মূল খাত (কোনো গার্ল ফ্রেন্ড) ছিলো না বলে খুব বেশি ফাফরে পড়তে হয় নাই। শুধু মাঝে মধ্যে বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যাওয়া, ভালো সিনেমা নামলে টাউনে গিয়ে সিনেমা দেখা, একটু বড় হলে দাঁড়ি গোঁফ কাটার খরচ, আর কিছু টুক টাক ......
এবার বলছি আমার আয়ের উৎস গুলো কি কি ছিলো-
উৎস নং-১: সুপারি বিক্রি :- আমরা ছিলাম যৌথ ফ্যামেলি, মানে দাদার সাথে সব চাচা সহ একসাথে থাকতাম। আমাদের বিশাল বাড়িতে সুপারি গাছ ছিলো প্রায় একশ এর মত আর মেজো কাকা যখন পাশের ফসিওল্ল্যা স্যারের বাসাটা কিনলো তখন দুই বাড়ি মিলে সুপারি গাছ দুইশ এর বেশি, আম গাছ ছিলো ৪০-৫০টি কাঁঠাল গাছ ছিলো ১৫-২০ টি।
মেজো কাকা বিদেশে থাকতেন। তাই বাড়িটা ভাড়া দেওয়া থাকতো আর তাই সেই বাড়ির সব গাছের অঘোষিত মালিক ছিলাম আমি আর আমার এক সমবয়সী চাচাতো ভাই সোহাগ। সুপারির একটি নির্দিষ্ট সিজেন থাকলেও কিছু কিছু গাছা (মনে হয় আমাদের কথা ভেবে) সারা বছর ফল দিতো। সবগুলো গাছকেই চোখে চোখে রাখতাম। কোন গাছে বাঁধা আসলো, কোন গাছের সুপারি গুলো প্রায় পেকে আসলো....। লাল পাঁকা সুপারির দাম ছিলো বেশি কিন্তু বেশি পাঁকাতে গেলে যদি সোহাগ আগেই পেড়ে ফেলে;। তখন একশ সুপারির দাম ছিলো ২০/২৫ টাকা।
উৎস নং-২: দাদার ধানের গোলা থেকে ধান বিক্রি:- আমাদের দাদা ছিলেন ব্যাচলর (দাদী অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন)। দাদা যে ঘরে থাকতেন সেই ঘরে ছিলো বড় একটি ধানের গোলা, দাদা সারা বছর সেখান থেকে ধান বিক্রি করে হাত খরচ চালাতেন। দাদার সাথে আমরাও সেখানে ভাগ বসাতাম। সুপারির মত ধান বিক্রি করা সহজ ছিলো না । কারন ধান ওজন হিসাবে বিক্রি করতে হয় আর পাল্লা-পাথর দিয়ে ওজন করার সময় কোথায়! একটি বাজার করার ব্যাগ ছিলো তাতে প্রায় ৬/৭ কেজি ধান ধরতো। অনুমান করে (একটু বেশি হলে হোক) এক ধরা (৫কেজি) ধান বাজারে নিয়ে দাম একটু কম পেলেও সময় যাতে কম লাগে পাইকারের কাছে বিক্রি করে দিতাম। (এই বিষয় গুলো গার্জিয়ানরা কিছুটা জানতেন কিন্তু কিছু বলতেন না)
অপ্রচলিত আয়ের উৎস:- দাদার একটি কাঠের আলমারি ছিলো। তালা লাগালেও দুই ডালার মাঝে অনেক খানি ফাঁকা থাকতো। সেই আলমারির ভিতরে উপরের তালায় একটি ডায়রির ভিতরে দাদা টাকা রাখতেন। তো সেখান থেকে দাদাকে টাকা বের করেতে অনেক বারই দেখেছি।
একদিন আমি খেয়াল করে দেখলাম উপরের তালায় যেখানে দাদা ডায়রিটা রেখেছেন একটা বাঁকা ধরনের কাঠি দিয়ে খোঁচা দিলেই ডায়রিটা নিচের তালায় পড়ে যাবে। আর নিচের তালায় পড়লে সেখান থেকে ডায়রিটা বের করা খুব একটা কঠিন হবে না। শুরু করলাম মিশন, ম্যাকগাইভারের মত বিশেষ ধরনের একটি বাঁকানো কাঠি দিয়ে ডায়রিটাকে নিচে ফেলতে সক্ষম হলাম। তার পর ডায়রি খুলে ভিতরে দেখি কয়েকটি ভাংটি টাকার সাথে ৫০০ টাকার একটি নোট। সেই ৯২-৯৩ সালে ৫০০ টাকা অনেক টাকা।
দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলাম, ভাংটি টাকাগুলো রেখে শুধু ৫০০টাকাটা পকেটে রাখলাম। আর বিশেষ কায়দায় ডায়রিটাকে নিচের তালায় ঢুকিয়ে রাখলাম।
বিকেল বেলা দাদা আলমারি খুলে দেখেন ডায়রিটা নিচের তালায় পড়ে আছে। প্রথমে ভাবলেন হয়তো কোনো কারনে ডায়রিটা উপর থেকে নিচে পড়ে গেছে। কিন্তু সন্দেহ ঠিকই হলো । ডায়রি খুলে দেখেন তার হিসাব মতে ৫০০ টাকা নেই। দাদা অন্য পাতা গুলো ভালো করে খুঁজলেন এবং কোনো কাজে টাকা খরচ করেছেন কিনা মনে করতে চেষ্ট করলেন।
আমি এসে দেখি দাদা খুব চিন্তিত। জিজ্ঞাসা করলাম, দাদা কিছু বললেন না। দাদার চিন্তিত মুখ দেখে আমার মায়া হলো । মনে মনে পার্থনা করলাম "হে আল্লাহ দাদাকে এই টাকা হারানোর শোক সইবার ক্ষমতা দাও"
( দাদাও মার গেছেন অনেক দিন হলো। দাদার সাথে অনেক স্মৃতিই এখন মনে পড়ছে। আপনারা আমার দাদার জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ যেনো দাদাকে বেহেস্ত নসিব করেন- আমীন)