বর্তমানের সীমাহীন রাজনৈতিক সঙ্কট - সমস্যাকে সরকার ও ক্ষমতাসীনরা শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলার বিষয়ে অর্থাৎ এ জাতীয় সঙ্কট হিসেবেই বিবেচনা করছে। রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান যে শুধুমাত্র রাজনৈতিক পথ-পন্থাই সমাধান করা উচিত এবং অতীত ইতিহাসের অভিজ্ঞতায় এটাই যে একমাত্র পথ - তা তারা কোনোক্রমেই মানতে নারাজ। এটাই হচ্ছে ভ্রান্তি এবং তাদের সৃষ্ট ভ্রান্তির ভয়াবহ ঘুরপাকে পড়ে গেছে তারা নিজেরাই এবং যুক্ত করেছে অসহায় সাধারণ মানুষকে। এ কথা গত কিছুদিন ধরে বার বার বলা চেষ্টা করা হচ্ছে যে, রাজনীতিকে সঠিক, সুস্থ পথে চলতে না দিলে এর ফলে যে শূন্যস্থান তৈরি হয় তা পূরণ করে অস্বাভাবিক পথ এবং পন্থা - যা এখন চলছে। কাজেই রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে সৃষ্ট ও ক্রমাগত বিষবৃক্ষে পরিণত সমস্যাটি যে কোনোভাবেই শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা নয়, তা তারা না মানতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আর মানতে নারাজ বলেই একে তারা আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে মোকাবেলার দায়িত্ব দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে। আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় দায়িত্ব দেয়ার ফলে আগে থেকেই দলীয়করণের কবলে পড়া একদল উচ্চাভিলাসী কর্মকর্তা রাজনৈতিক নেতাদের চাইতেও জোরালো ভাষায় শেষ রক্তবিন্দু উৎসর্গের মতো প্রত্যয় ঘোষণার বক্তৃতা-বিবৃতি চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক সঙ্কট এখন আসলে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ করছে না - করছে তাদেরই অনুগত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কর্মকর্তা এবং সদস্যরা। এতে তাদের দলীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ যে তারা দিনে দিনে হারিয়ে ফেলছে এবং এটা তাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, এমন বোধ-বুদ্ধিটুকুও তাদের আছে বলে মনে হয় না। এভাবে চলতে থাকলে বিএনপিসহ ক্ষমতাসীনদের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ নয়, বরং তাদের নিয়োজিত ওই সব ব্যক্তিরাই দাড়িয়ে যাবে এবং স্থান দখল করবে। এটা রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তো বটেই, পুরো রাজনীতির জন্য যেমন দুঃসংবাদ, তেমনি পুরো দেশ, জাতি, রাষ্ট্র এবং জনগণের জন্য মহা-আতঙ্কের কারণ। নিজেদের রাজনৈতিক দায়িত্ব রাজনীতি বহির্ভূত পক্ষের হাতে দেয়ার কারণে মন্ত্রীদের মুখ থেকে ‘দেখা মাত্র গুলি’সহ নানা ধরনের বক্তব্য শোনা যায় এবং হুঙ্কার শুনতে পাওয়া যায় গ্রেফতারসহ সর্বোচ্চ নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বিরোধী পক্ষকে ৭ দিনের মধ্যেই দমন করে ফেলা যাবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে - ক্ষমতাসীনরা রাজনৈতিকভাবে কিংবা রাজনৈতিক পন্থায় ৭ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি শান্ত করবেন এমনটা তারা বলতে পারছেন না এবং এমন সাধ্যও তাদের নেই। এর কারণ, ওই যে রাজনৈতিক দায়িত্ব ভিন্ন পন্থায় সম্পাদনের চেষ্টা। নিজেদের দায়িত্ব অন্যদের হাতে দিয়ে দেয়ার মধ্যদিয়ে তাদের একদিকে যেমন ভীতির পরিচয় পাওয়া যায়, তেমনি তাদের রাজনৈতিক অদক্ষতারও পরিচয় মেলে। রাজনৈতিক সমস্যাকে আইন-শৃঙ্খলার সঙ্কট হিসেবে বিবেচনার মধ্যদিয়ে কার্যত যা হচ্ছে এবং হবে তাহলো - নিহতের সংখ্যা বাড়বে, দগ্ধ মানুষের লাইন দীর্ঘ হবে, হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ পুরো হাসপাতাল ভরে যাবে, জেলখানা উপচে পড়বে, গ্রেফতার বাণিজ্য তুঙ্গে উঠবে - কিন্তু আসল সমস্যার কোনোদিনই সমাধান হবে না। আসলে সরকার এবং ক্ষমতাসীনরা জনপ্রিয়তা হারিয়ে অনিবার্য পরিণতিতে একনায়কতান্ত্রিকতার পথ বেছে নিয়ে পুরো বিষয়টিকেই তালঘোল পাকিয়ে ফেলেছে। আর এটা হয়েছে তাদের অন্তর্গত সীমাহীন পর্বত ও সমুদ্র সমান দুর্বলতা এবং ক্ষমতালিপ্সার কারণে।কপি
শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বর্তমান সরকারকে বিদায় নিতে হবে
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১২টি মন্তব্য ৬টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?
অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।

১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন
১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন
=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?
যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!
যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।