somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেসবুকঃ দ্য মাস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ড

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লুব উদাস হয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। অন্ধকারের মাঝে দেখা যাচ্ছে সাদা কুয়াশা। প্রচুর শীত এখন। কম্বল জড়িয়ে রেখেছে সে। তার একটু মন খারাপ। এত শীত পড়েছে যে বাইরে যাওয়ার কোন উপায় নেই। বাইরে না গেলে মন খারাপ হয়। আর লুব উদাস হয়ে যায়। তখন বিচিত্র সব চিন্তা লুবের মাথায় আসে। এখনো একটা চিন্তা নিয়ে আছে সে। আগেকার দিনের কথা ভাবার চেষ্টা করছে। কেমন ছিল আসলে তাদের অতীতটা? বাবা মা আর নানীর কাছে সে প্রায়ই শুনে থাকে, আগের দিনগুলি ছিল এখনকার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। অনেক খোলামেলা আর প্রাণোচ্ছল। এখনকার মত এতটা যান্ত্রিক নয়। তখন নাকি বাইরে অনেক মজার মজার খেলা খেলত মানুষ। অনেক ঘুরে বেড়াত, হৈ চৈ করত। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, তখন নাকি ফেসবুক শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ছিল। শুধু বিনোদন আর যোগাযোগ করার জন্যই ফেসবুক ব্যবহৃত হত। এখন এ কথা শুনলে কে না তাজ্জব হবে! আর এখন, এখন তো ফেসবুক শাসন করে গোটা পৃথিবীকে। পুরো পৃথিবীর প্রতিটা মানুষকে ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ করে।
ঘটনাটা মনে হয় ১৫০ বছর আগে থেকে ধীরে ধীরে শুরু হতে থাকে। তখন ফেসবুক মানুষের জীবনে নানারকম সাহায্য করত। যেমন, গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ দেখানো, লাইভ কোন অনুষ্ঠান দেখানো, প্রিয় স্মৃতি গুলো বার বার দেখানো, প্রিয়জনের জন্মদিন মনে করিয়ে দেয়া, ফেস ডিটেকশন করে অন্যজনের পরিচয় বের করা, বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি করে জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করা। আরো কত কি! এভাবে ফেসবুকের উপর মানুষ দিনে দিনে অনেক নির্ভরশীল হয়ে পড়ছিল। ওদিকে দিনে দিনে ভীষণ শক্তিশালী হয়ে উঠছিল ফেসবুক। ফেসবুক তার আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে আস্তে আস্তে সমগ্র মানব সভ্যতাকে দখল করে নেয়া শুরু করল। আর আজ তো মানুষের চাকরী বাকরি থেকে শুরু করে সবকিছু ফেসবুকের নিয়ন্ত্রনে। কেউ ফেসবুকের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলেই তার খাওয়া দাওয়া বন্ধ, যাবতীয় কাজকর্ম সব বন্ধ! লুব, একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে। কোন জীবনটা যে ভাল সে ঠিক বুঝতে পারছে না।
লুব বিছানা থেকে তার মায়ের সাথে একটু কথা বলতে যাবে, এ সময় হাতে বাঁধা ফেসবুক ডিভাইসটা জ্বল জ্বল করে উঠল। এই ফেসবুক হ্যান্ড ডিভাইস পড়া সবার জন্য বাধ্যতামূলক। ডিভাইসটা থেকে ফেসবুক একটু যান্ত্রিক কিন্তু আন্তরিক কন্ঠে বলল, ‘লুব, তোমার এখন ঘুমানোর সময়। তুমি ঘুমিয়ে পড়।‘
-আমার এখন ঘুম পাচ্ছে না।
-আমি দেখছি তোমার মোটামোটি ঘুম পেয়েছে।
-এখন ঘুমাতে ইচ্ছা করছে না।
-কি করতে ইচ্ছা করছে?
-আমার আম্মুর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে।
-ওটা তুমি কাল্কেও করতে পারবে লুব। এখন গল্প করার সময় নয়। এখন ঘুমানোর সময়।
-ঘুমাতে ইচ্ছা করছে না।
-তোমার রক্তে একটু হিলিন মিশিয়ে দেই? দেখবে এখনি মজার একটা ঘূম এসে পরবে।
-না হিলিন দিও না।
-দিয়ে দিয়েছি, লুব। আরাপ করে ঘুমাও, কাল সকালে উঠ স্কুলে যেতে হবে।
লুব বুঝতে পারল, ঘুমে তার দু’চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। হিলিন খুব কড়া ঘুমের স্টিমুলেশন। সে কোনমতে বিছানায় কম্বম জড়িয়ে গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে গেল।
কাল সকাল সকাল ঘুম থেকে পড়ে লুব। অবশ্য ফেসবুকই তাকে জাগিয়ে দেয়। বাবা মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে স্কুল পথে রওমা দেয় সে। রওনা দেয়ার সময় কম্পিউটার তাকে বলে,’তোমার আজকের দিন আনন্দময় হোক, লুব।‘ এখন আসলে কম্পিউটার বলে কিছু নেই, পিসি মানে এখন শুধুই ফেসবুক। পিসির সবকিছু এখন ফেসবুকের নিয়ন্ত্রনে।
লুবদের বাসার সাধারন মাত্রার কাজের রোবটটা ফেসবুকের কন্ঠ নকল করে বলল,’তোমার আজকের দিনটা আনন্দময় হোক, লুব।‘
লুব একটু হেসে বেরিয়ে পড়ল।
লুব স্কুলে গিয়ে লাস্ট বেঞ্চে বসে পড়ল। তিয়ার পাশে। তিয়া মেয়েটার সাথে ক্লাশ করে বেশ মজা আছে। এমনি লুব আর তিয়া দুজনই চুপচাপ স্বভাবের। কিন্তু তারা ক্লাশে ফিস ফিস করে টিচারদের নিয়ে কৌতুক করে আর ভীষন হাসাহাসি করে। কারণ তাদের দু’জনেরই স্কুলের পড়া একদমই ভাল লাগে না। তাদের যুক্তি হচ্ছে, পড়াশোনার জন্য ফেসবুক তো আছেই। ফেসবুকের কাছে সবকিছুর উত্তর আছে। কিন্তু তবু কেন স্কুলে এসে শিক্ষকদের লেকচার শুনতে হয় তারা বুঝে না। আবার টিচারদের লেকচার শেষ হলে ফেসবুক সে লেকচারের উপর আবার একটা চমৎকার ভিডিও তৈরি করে দেয়। প্রতিটা ক্লাশরুমেই ফেসবুকের বিশাল এক মনিটর থাকে। ফেসবুকের এই ভিডিও ঘরে বসেই সুন্দরভাবে দেখা যায়। যেসন জিনিস কেউ বুঝে না, সেগুলোও ফেসবুক সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেয়। যেসব ঘরে বসেই আরাম করে শেখা যায়, সেটা এখানে বোরিং লেকচার শুনে শিখে লাভ কি?
স্কুল শেষ হলে তিয়া আর আমি হেঁটে হেঁটে বাসার দিকে যেতে থাকি। তিয়া হটাত এক ধরনের উৎসাহ নিয়ে বলে, ‘জানো, গতকাল একটা মুভিতে ঝরণা দেখেছি!’
লুব একটু অবাক হয়ে বলল, ‘ঝরনা? সত্যিকারের ঝরনা?’
তিয়া একটা পাথরে লাথি মেরে বলল,’হ্যাঁ। ইশ আমি ঝরনা দেখতে চাই। কি সুন্দর!’
লুব তিয়াকে স্বান্তনা দেয়ার ভঙ্গীতে বলে, ‘তিয়া, কোন মুভিতে সত্যিকারের ঝরনা দেখানো হয় না। তুমি যা দেখেছ, তা গ্রাফিক্সের তৈরি ঝরণা!
-এই মুভিতে আমার একদম আসল মনে হল।
-এখন যেকোন জিনিসই ওরকম আসল করে দেখানো হয় গ্রাফিক্স এফেক্ট দিয়ে।
-যাই হোক, গতকাল থেকেই আমার ঝরনা দেখতে খুব করছে।
লুব একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে,’আমারো মাঝে মাঝে ঝরণা, নদী, পাহাড় দেখতে ইচ্ছা করে। মানে, আসল নদী, পাহাড়!’
-আমার সমুদ্র দেখতেও ভীষণ ইচ্ছা করে। আর তোমার?
-হ্যা অবশ্যি। সমুদ্রের মত সুন্দর কোন কিছু আছে নাকি? কিন্তু এসব দেখার স্বপ্ন দেখে কোন লাভ নেই। ফেসবুকে গ্রাফিক্সের সমুদ্র দেখেই স্বাদ মেটাতে হবে। কে জানে, পৃথিবীতে এখন কোন সমুদ্র আসলেই আছে কিনা!
-কি বলছ? সমুদ্র থাকবে না কেন? নিশ্চয়ই আছে!
-না থাকার সম্ভাবনাই বেশী। না হলে মানুষের ফেসবুক সিটিগুলোর বাইর যাওয়া নিষিদ্ধ কেন? কেন ফেসবুক সিটিগুলোর বাইরের পরিবেশকে এত বিপদজঙ্ক বলা হয়?
-কেউ তো আমাদের জানা মতে গিয়ে দেখেনি, সিটির বাইরের পরিবেশ বিপদজন কিনা। সমুদ্র নেই এটা কেন যেন আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।
-আছে হয়ত। কিন্তু হয়ত সমুদ্রের পানি এখন বিষাক্ত বা সমুদ্রের পানিতে জীবনধ্বংসকারী কোন ভাইরাস আছে!
-আমার বিশ্বাস হয় না।
-তাই? আমি তো এমনই ভাবি।
-আমার মাঝে মাঝে ফেসবুক সিটি থেকে বের হয়ে যেতে ইচ্ছা করে। এখানে সবকিছু একদম একঘেয়ে।
-কি বলছ তুমি! ফেসবুক সিটি থেকে বের হওয়া মানে তো আত্মহত্যা! বাইরে হয়ত ভয়ঙ্কর প্রাণীরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে, ভয়ঙ্কর সব রোগজীবানু ছড়িয়ে আছে। আর খাবার পাবে কোথায়? খাবার পানির অভাবেই তো কয়েকদিন পর মারা যাবে। তাছাড়া, এটা বে-আইনী। ফেসবুক এটা কখনো হতে দিবে না।
-আরে আমি কি সারাজীবনের জন্য এখান থেকে পালানোর কথা ভাবছি? শুধু একবেলা ঘুরে চলে আসব।
-এক বেলা! এক বেলা কি তুমি ওই বিপদজনক পরিবেশে টিকে থাকতে পারবে?
-কি এমন বিপদজনক ? এমন তো কোন তথ্য নেই, আকাশ বাতাশ বিষাক্ত গ্যাসে ভরে গেছে।
-আচ্ছা না হয় মানলাম একবেলা ঘুরে আসা যায়। কিন্তু ফেসবুক সিটি থেকে বের হবা কি করে? অন্যান্য সিটির ব্যাপারে জানি না, কিন্তু আমাদের সিটি তো বিশাল ওয়াল দিয়ে ঘেরা। আর চারিদিকে ফেসবুকের কঠোর নিরাপত্তা। তারচেয়ে এসব চিন্তা বাদ দাও তো, তিয়া!
-তুমি একটা ভীতু কাপুরুষ!
লুবের মুখ হা হয়ে গেল। বলে কি মেয়ে? সে কড়াস্বরে বলল,’আমি মোটেও ভীতু কাপুরুষ নই।‘
-তাহলে চল একবার ফেসবুক সিটি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করে দেখি।
-তুমি যা করতে যাচ্ছ তা সম্পূর্ণ ছেলেমানুষি। আর অসম্ভব।
-চেষ্টা করে দেখি, প্লিজ?
-সেটা করা যেতে পারে। অনেকবার। কিন্তু কোন লাভ হবে না। তুমি বুঝতেই পারছ না।
-আচ্ছা যাক, চেষ্টা করার জন্য তো তোমাকে রাজি করানো গেছে। তোমার কি মনে হয়, বাইরে গিয়ে ফিরে এলে নিয়ম ভাঙ্গার জন্য কি ফেসবুক কোন শাস্তি দিবে?
- এক, কোনমতেই বের হতে পারছি না। দুই, কখনো শুনি নি ফেসবুক কাউকে শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু এটা নিষিদ্ধ একটা কাজ। বলা যায় না কি হয়।
-আচ্ছা ঠিক আছে, ফেসবুক সিটির বাইরের তথ্য বের করে একবেলার জন্য আমরা বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করব। রাজি?
লুব মোটেও রাজি হতে চাচ্ছিল না, কিন্তু কে যেন তিয়ার কথায় রাজি হয়ে বলে উঠল, ‘আচ্ছা, আমি রাজি।‘
তিয়ার মত পাগলী মেয়ের কথায় লুব যে কিভাবে এমন বিপদজনক এক কাজে রাজি হয়ে গেল জানে না। কিন্তু দেখা গেল, সে সত্যি সত্যি বিষয়টা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে এবং ভেতরে ভেতরে বেশ উত্তেজনা অনুভব করছে। সিটির বাইরে যদি সত্যিকার ঝরণা, সমুদ্র, পাহাড় থেকে থাকে তবে সেগুলো দেখার জন্য তার ভেতর এক তীব্র তাড়না হতে থাকে। সেই তাড়না থেকে দুপুরের খাওয়ার পর সে ফেসবুককে জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা ফেসবুক, আমাদের সিটির বাইরে গেলে কি হবে?’
ফেসবুক কিছুক্ষণ পর একটু গম্ভীর কন্ঠে বলল,’এ কথা জিজ্ঞেস করছ কেন লুব?’
লুব বলল, ‘এমনি জানতে ইচ্ছা করেছ।‘
-তুমি তো জানোই সিটির বাইরে যাওয়া খুব বিপদজনক। এ কথা তো তোমার মাথায়ই আসার কথা না।
-কিন্তু কেন বিপদজনক সেটা জানতে চাইছি।
-এ কথা তো সবাই জানে সিটির বাইরের পরিবেশ ভয়াবহ। বাইরে গেলেই তোমা্র মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা অনেক।
-কিন্তু ঠিক কি আছে বাইরে?
-কি আছে সেটা তো গুরুত্বপূর্ণ না। হয়ত বাতাসে অনেক দূষিত উপাদান আছে, হয়ত অনেক মানুষখেকো প্রাণী আছে। আবার জীবননাশি ভাইরাস থাকতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, বাইরে তোমার জীবনের অনেক ঝুঁকি আছে। তাই কোনমতেই ফেসবুক সিটির বাইরে যাওয়া যাবে না। সিটির বাইরে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কয়েকজন যারা আশ্চর্যভাবে আমার নিরাপত্তা ভেঙ্গে বাইরে গিয়েছিল তাদের করুণ মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়।
-তোমার নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে কিভাবে বাইরে গিয়েছিল তারা?
-এ ব্যাপারে আমি আর কোন কথা বলতে চাচ্ছি না লুব। অন্য বিষয়ে কথা বলি। আজ স্কুল কেমন কাটল?
লুব শান্তকন্ঠে বলল,’ভালই’
-হুম। দুপূরের খাবার ঠিকমত খেয়েছ?
-হ্যা।
-এখন তোমার কি করতে ইচ্ছা করছে?
-ঠিক বুঝতে পারছি না।
-উত্তেজক কোন গান শুনবে?
-নাহ
-পড়াশোনা বা কোন ভিডিও?
-নাহ।
-তাহলে তুমি কি আনন্দ পেতে চাও? ভাল একটা আনন্দের স্টিমুলেশন দেই?
লুব ঠিক বুঝতে পারল না কি বলবে। আনন্দ না পেতে চাওয়ার কোন কারণ নেই। সবাই তা চায়। ফেসবুক লুবের মনের ভাব বুঝতে পারল। সাথে সাথে লুব ফেসবুক হ্যান্ড ডিভাইস থেকে হাতের ভিতরে একটা ধাক্কার মতন অনুভব করল। আর সাথে সাথেই বাম হাত থেকে আনন্দের একটা ঢেউ বয়ে যেতে থাকে সারা শরীর জুড়ে। নিঃশ্বাসের ফ্রিকোয়েন্সি কমে গেল আর আশ্চর্যরকম এক প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়ল মনে। আরামে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আস্তে চাইল। এমন সময় ফেসবুক বলে উঠল,’ লুব গান শোনার ডিভাইস কানে লাগাও।‘
লুব বাধ্য ছেলের মত গান শোনার ডিভাইস কানে নিল। ফেসবুক লুবের আনন্দ দশগুন বাড়িয়ে দেয়ার জন্য চরম উত্তেজন একটা গান ছাড়ল। লুবের মনে হল, আনন্দের একটা ধাক্কা তার বুকে বাড়ি মেরেছে। সে পুরোপুরি নেশাগ্রস্ত হয়ে গানের তালে তালে মাথা দুলাতে লাগল।
বিকালের দিকে তিয়া ফেসবুকে মেসেজ পাঠাল,’লুব তুমি হোমওয়ার্কটা করেছ? আমি করেছি।‘
লুব তখনো আনন্দের স্টিমুলেশনে বুদ হয়ে ছিল। কিসের হোমওয়ার্ক? কোনো হোমওয়ার্ক তো ছিল না। হটাত করে সে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মেসেজ পাঠাল,’না এখনো করি নি। তোমারটা দেখে করতে হবে। এক ঘন্টা পর বাইরে বের হোও। দেখা হবে।‘
লুব জানে, ওরা যদি মেসেজে ফেসবুক সিটির বাইরে যাওয়ার কথা আলোচনা করে তাহলে ফেসবুক সব জেনে যাবে। আর তাদের উপর হয়ত কঠোর নজরদাড়ির ব্যবস্থা করবে। তাই তিয়া শুরুতেই হোমওয়ার্কের কথা বলেছে। তিয়ার খুব বুদ্ধি। এজন্যই তিয়াকে লুবের এত ভাল লাগে! লুব ফেসবুককে বলল,’ তুমি এক ঘন্টা পর স্টিমুলেশন বন্ধ করে দিও। আমি বাইরে যাব।‘
ফেসবুক নরম কন্ঠে বলল,‘ ঠিক আছে লুব।‘
বিকালের দিকে লুব আর তিয়া ফেসবুক সিটির এক পার্কে দেখা করল। তিয়া এল চোখে মুখে চিন্তার ছাপ নিয়ে। লুব কিছু বলতে যাবে তার আগেই তিয়া লুবকে টেনে নিয়ে কানে কানে ফিস ফিস করে বলল,’ এখন থেকে আমাদের মাঝে যা কথা হবে তা এভাবে কানে কানে ফিস ফিস করে বলতে হবে।‘
লুব একটু অবাক হয়ে ফিস ফিস করেই বলল,’কেন?’
-আমাদের কথা যদি হাতের ফেসবুক ডিভাইস পর্যন্ত যায় তাইলে ফেসবুক সব কথা শুনে ফেলবে।
-তুমি তো ঠিকই বলছ, এ কথা তো চিন্তা করি নাই।
তিয়া চিন্তিত গলায় ফিস ফিস করল,’সকালে কি বেশ জোড়ে কথা বলেছিলাম?’
-না মনে হয়। আমরা তো পাশাপাশি হেঁটে কথা বলেছি। হাত তো অনেক নিচে থাকে। ফেসবুক শুনেছে বলে মনে হয় না।
-না শুনলেই ভাল।
-ইয়ে তিয়া। বলছিলাম কি, ব্যাপারটা একটু বেশি দুঃসাহসের কাজ হয়ে যাচ্ছে না?
তিয়া ফিস ফিস করেই লুবকে একটা ঝাড়ি দিল,’কি দুঃসাহসের কাজ? কিছু করেছি আমরা? ফেসবুকের নিরাপত্তা ব্যবস্থাই হয়ত পাড় করতে পারব না। দেখি বড় দেয়ালগুলো টপকানো যায় কি না! একঘেয়ে জীবনে একটু থ্রিল পাওয়ার চেষ্টা করছি। নাকি তুমি বাসায় বসে কৃত্রিম থ্রিল আর আনন্দ নিয়ে খুব সন্তুষ্ট?’
লুব আজ দূপুরে যে আনন্দ পেয়েছে তাতে মনে হয়েছে সে আসলেই খুব সন্তুষ্ট! কিন্তু সে কথা আর তিয়াকে বলার সাহস হল না। সে হাসিমুখে বলল,’না আমি মোটেই কৃত্রিম আনন্দ নিয়ে খুব সন্তুষ্ট না।‘
-তাহলে চল দেখি কিছু একটা করা যায় কি না। অসম্ভব হলে আর কিছু করার নেই, তাই না?
-হুম সেটাই।
তিয়া একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,’তুমি ফেসবুক সিটির বাইরের পরিবেশ নিয়ে তথ্য খুঁজেছ?’
-হুম ফেসবুককেই প্রথমে জিজ্ঞেস করেছিলাম।
-কি বলে ফেসবুক?
-বলে বাইরে খুব বিপদ। নিশ্চিত মৃত্যু বলতে পার।
-মৃত্যুর কারণ কি?’
-সঠিকভাবে কিছু বলল না। হয়ত দূষিত বাতাস, ভাইরাস বা মানুষখেকো প্রাণি থাকতে পারে।
ওদের কথার মাঝে বাঁধা পড়ল যখন ওরা দেখল যে, মিষ্টি চেহারার দুই রোবট তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। রোবটগুলো এগিয়ে এসে মিষ্টি হেসে বলল,’ লুব ও তিয়া, আমাদের সাথে যেতে হবে তোমাদের।‘
লুব বলল,’কোথায় যেতে হবে?’
-হাসপাতালে। তোমরা তো খুব অসুস্থ!
-কে বলল? আমরা তো ঠিকই আছি।
-নাহ, তোমরা মানুষিকভাবে অসুস্থ। ফেসবুকের নির্দেশ আছে তাড়াতাড়ি তোমাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার।
লুব ও তিয়া হতভম্ব হয়ে পরষ্পরের দিকে তাকিয়ে রইল।
রোবটগুলো এক প্রকার জোড় করে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাদের একটা কেবিনে বসিয়ে চলে যায় তারা। ওরা চলে যাওয়ার পর কেবিনের দরজা অটো বন্ধ হয়ে যায়।
কিছুক্ষন পর ফেসবুকের গম্ভীর গম গম কন্ঠ শুনতে পায় লুব ও তিয়া,’ লুব, তিয়া! কি ভেবেছ তোমরা? আমি কিছুই জানি না? আমি সব জায়গায় থাকি, সব কিছু শুনতে পাই। তোমরা জান, ফেসবুক সিটির বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ। তারপরও কেন তোমরা এটা নিয়ে মাতামাতি করছ? যা করছ তা আইনের বিরুদ্ধে। এর জন্য আমি তোমাদের সারাজীবন কারাগারে বন্দী করে রাখতে পারি। জেনে রাখ, কেউই ফেসবুক সিটির বাইরে যেতে পারবে। কেউই না, বুঝেছ?’
ফেসবুকের এরকম ভয়ঙ্কর কন্ঠ লুব, তিয়া কখনো শুনে নি। লুব একটা ঢোক গিলে বলল,’হ্যা ফেসবুক, বুঝেছি।‘
-আর কখনো যদি তোমরা সিটির বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ কর বা এ নিয়ে কারো সাথে আলোচনা কর, তাহলে তোমাদের স্থান হবে মেন্টাল হস্পিটাল। আমি তোমাদের পাগল প্রমাণ করে ছাড়ব। is that clear?’
-হ্যা ফেসবুক।
-ঠিক আছে। এখন লক্ষ্মী ছেলেমেয়ের মত বাসায় যাও।
তিয়া আর লুব মন খারাপ করে বাসার দিকে যেতে থাকে। লুব হটাত বলে, ‘তিয়া একটা ব্যাপার বুঝেছ?’
-কি?
-ফেসবুক সিটির বাইরে এমন কিছু আছে যা ফেসবুক কখনো মানুষকে দেখাতে চায় না। আমার মনে হয় ওখানে পৃথিবীর আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে।
-আমারও তাই মনে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। হয়ত একদিন বুদ্ধিমান শক্তিশালী মানুষের দল ফেসবুক সিটির বাইরে গিয়ে তথ্য নিয়ে আস্তে পারবে। আর সাধারন মানুষকে জানাতে পারবে।
-হুম। ও, তিয়া, ফেসবুক কিন্তু আমাদের সব কথা শুনতে পারছে।
-ও হ্যা! এসব নিয়ে আর একটা কথাও নয়। অন্য কথা বলি।
-হুম। তিয়া, তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
-হি হি, very funny! চুপ!
-না আসলেই। কবে যে তোমার প্রেমে পড়ে যাই, ভাবছি।
-লুব একদম ফাইজলামি করবে না।
-সত্যি তিয়া সত্যি।
-লাথি খাবে কিন্তু...
লুব আর তিয়ার কথা শুনতে শুনতে ফেসবুক এক ধরনের আনন্দ অনুভব করে। এরা তো শিশু, সহজেই ট্যাকেল দেয়া গেছে। এদের নিয়ে আর ভয় নেই। তবে আর কোন শক্তিশালী কেউ আসলেও ফেসবুকের কোন ভয় নেই। তার সাম্রাজ্য সম্পর্কে প্রশ্ন তুলবে এমন কাউকেই সে সহ্য করবে না। প্রয়োজনে তাকে মারতেও সে দ্বিধা করবে না। মানুষকে সব সময় তার আর্টিফিসিয়াল জগতেই বন্দী থাকতে হবে। যে জগত শাসন করবে সে, ফেসবুক, দ্য গ্র্যান্ড মাস্টার। অনন্তকাল।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×