সত্যচারী
ভ্রমন সময় ২০১০-২০১১
রাত পোহানোর অনেক দেরী। এয়ারপোর্টের এমাথা-ওমাথা করে একটু বসলাম। ৩টা সুন্দরী পুলিশ হাটঁহাটিঁ করছে আমাদের দেশের র্যাবের পোশাকের মত তাদের ইউনিফর্ম, টাইট ফিট করে পরা। দেখতে বেশ আবেদনময়ী লাগছে। কিন্তু হায় সুন্দরীদের কোমরে দেখি ভয়াবহ মারণাস্ত্র ! কোমলতার সাথে নিষ্ঠুরতার মিশ্রন দেখে একটা টক ঢেঁকুর উঠলো মনের মাঝে।
ধমাস করে আমার গা ঘেষে একটা হাফ মোটা কালো মেয়ে এসে বসলো, বসেই ল্যাপির ঝাপি খুললো। কালো হলেও রূপবতী অনেক। রূপবতী ফেইসবুকাচ্ছে।
“সত্যচারী” বলেছিলেন KLIA থেকে কুয়ালালামপুর যেতে নতুনরা টেক্সি খুঁজে। ভাড়া বেশি। তাই বাসের সাথে দেখা করার জন্য লিফটে নিচে গেলাম। বাসের আগে ট্রেনের সাথে দেখা হল। KLIA Ekspres ছিমছাম ট্রেন এখান থেকে সোজা নিয়ে ফেলে দিবে কে এল সেন্ট্রাল রেল ষ্টেশনে। সময় লাগবে ২৮ মিনিট। ভাড়া বড় মানুষ ৩৫ এবং ছোট মানুষ ১৫ রিংগিত। চিন্তা করলাম বাসে সময় বেশি লাগতে পারে এমনিতেই অনেক ক্লান্ত, দ্রুত বিশ্রামের ব্যবস্হা করা দরকার। ট্রেনকে পছন্দ করলাম এবং টিকেট করেই ট্রেনে উঠে পড়লাম, ট্রেন দাঁড়ানোই ছিল। যাত্রী খুব কম। ২ মিনিটের মধ্যে ট্রেনের চাকা ঘুরা শুরু হলো।
ট্রেন চলছে খুব দ্রুত। বাইরের দৃশ্য যতটা না সুন্দর তার চেয়ে মনের ভেতর আনন্দের ঢেউ আছড়ে পড়ছে বার বার। কোন টেনশন নেই, পিছুটান নেই, রুটিন মাফিক কাজ নেই, আমার ইচ্ছামত ঘুরবো, লাফাবো, নাচবো। এটাই বোধহয় প্রশান্তি, প্রশান্তি, প্রশান্তি----।
বাইরের গ্রামের দৃশ্য একসময় শহুরে দৃশ্যে পরিণত হল। ট্রেন থামলো, নামলাম। এলাম কে এল সেন্ট্রাল ষ্টেশন। বগলে ধরা গাইড অনুযায়ী এল আর টি ট্রেন দিয়ে এখন পাসার সেনি যাবো। হাটঁছি কিন্তু ডানে বামে সামনে পিছে উপরে নিচে কোথাও এল আর টি ৩টি অক্ষর চোখে পড়ছে না। চমৎকার ও বিশালদেহী ষ্টেশন। দেখলেই মনে হয় পাক-পবিত্র-পরিষ্কার। মনে পড়ে গেল কমলাপুরের কথা যেখানে প্রথমেই র্দূগন্ধ দিয়ে বরণ করা হয়
মালয়েশিয়ার এল আর টি ট্রেন এবং ষ্টেশন আমার কাছে লন্ডনের ডি এল আর এর মতই মনে হল। এল আর টি প্রতিটি ষ্টেশনের নাম্বার আছে যেমন KJ14, KJ15 ইত্যাদি। পাসার সেনি KJ14. এই লাইনের ট্রেনের ষ্টেশন কোনটি ভূমিগর্ভে আবার কোনটি ভূমিত্বকে অবস্হিত। ট্রেনে উঠার ২/৩ মিনিটেই এলাম পাসার সেনি। ষ্টেশন থেকে বেরিয়ে রোদ ঝলমল রাস্তায় উঠলাম। মাথার সামনের সার্চ লাইট ২টা ঘুরালাম হোটেলের জন্য। কিছুই ধরা পড়লোনা। ২/১ জনকে জিঙ্গেস করলাম, ইশারা দিয়ে দেখিয়ে দিল।
গেলাম। বয়স্ক মহিলা বসে। রুম দেখলাম তেমন পছন্দ হলোনা। আরেকটা দেখালো একটু পছন্দ হলো। একদিকে গরমে অস্হির অন্যদিকে ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়...পছন্দ না করে উপায় আছে ? অন্য হোটেল খোঁজার শক্তি ও আগ্রহ কোনটাই অবশিষ্ট নেই। ৬০ রিংগিতে রফা হলো এসি রুম। এসি কে তারা বলে এয়ারকোন। সুটকেইস রেখে প্রাকৃতিক সেরে ১০ মিনিটেই আবার রাস্তায় নামলাম।
এবার হবে ভক্ষণ। বগলের গাইড ভুল করে রুমে রেখে এসেছি, সেজন্য ৩ জনে একে অন্যকে দোষাদোষী করলাম খুব দূর্বলভাবে।
একটু পরেই বাটি ভরতি তৈলাক্ত পানি নিয়ে এলো, বাটিতে কালো রঙের অমসৃন একটা গোটা ভাসছে, সাথে লবণদানীতে সস। আমার সঙ্গী ২ জনের চোখের দিকে অসহায়ভাবে তাকালাম তারা আগে থেকেই আমার দিকে চেয়ে আছে, চোখের ভাষা বলে দিচ্ছে “ খাও তোমার নাসি, ঐ কুখাদ্যে আমরা নেই।”
৩য় পর্ব শেষ।
(ছবির সংখ্যা অনিবার্য কারনে কম
৪র্থ পর্ব এই বছরের কোন একদিন প্রকাশিত হবে, সে পর্যন্ত আমার সাথেই থাকুন)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


