somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অনুপম হাসান
শৈশব আর কৈশোর কেটেছে রংপুরে; আইএ পাসের পর কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল. ও পিএইচডি. ডিগ্রি লাভ। বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত আছি।

গল্প : ৪

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাঠ-কয়লা দেহ

বৈশাখের প্রচণ্ড তাপদাহ। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামছে। রোদের তাপ কমতে শুরু করেছে। কোথাও বাতাস নেই। একটা গুমোট গরম চেপে বসেছে যেন। অসহনীয় গরমে হাসফাঁস করছে মানুষজন ও সমগ্র প্রকৃতি। কেউ বসছে, কেউ হাঁটছে, কেউ দাঁড়িয়ে গল্প করছে। ছোট্ট এক চিলতে স্টেশনের প্লাটফর্ম ভরে গেছে যাত্র আর হকারদের আনাগোনায়। আরিফ ডিজিটাল ক্যামেরায় স্টেশনের ফ্যাকাশে ঘর ও ভেড়ামারা লেখা সমেত ছবি তুলছে। সাঈদের সাথে পাভেল ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে ছবি নেয়ার কথা বলতেই কোত্থেকে অর্থ-উলঙ্গ বছর কুড়ি বয়সের একটা পাগল গোছের ছোকরা দাঁড়িয়ে পড়ল ওদের সাথে- অনেকটা সাঈদের গা ঘেঁষে। নির্বিকার হাস্যোজ্জ্বল মুখে ছোকরা বলল,
-আমারও ছবি তোল্।
ক্যামেরা আরিফের হাতে। ও ঠিকই কোনো কথা না বলে ছবির ফ্রেম তৈরি করে নিল ছোকরাটাকে বাদ দিয়ে। ও ছোকরাটাকে এজন্য কিছুই বলল না।

গরমে ঝিমিয়ে পড়া স্টেশনে আমরা মিনিট দশেক আগে পৌঁছেছি দৌলতখালি থেকে। ওখানে প্রথম যাওয়া হলো। বিয়ের নিমন্ত্রণ ছিল। গরমের ক্লান্তি উপেক্ষা করে এক চিলতে স্টেশনে যাত্রীদের সংখ্যার সাথে সাথে বাড়ে কোলাহল। আমার অসহ্য লাগছে; একে তো গরম, তার উপর স্টেশনের ভীড়। মানুষের ভীড়ে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায় বাতাসে। তখন আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় ভীষণ। অস্থির হয়ে এদিক-ওদিক হাঁটতে থাকি- একটু ফাঁকা খুঁজি; যাতে অক্সিজেনটা বেশি নিতে পারি ফুসফুসে।
আমরা বিয়ের নিমন্ত্রণে গিয়েছিলাম। আমাদের সাথে মুরুব্বি গোছের কামাল ভাই আছেন। ওনার বয়স হয়েছে; ভীষণ প্রগতিশীল মানুষ। আমার চেয়ে কুড়ি-পঁচিশ বছরের বড়ই হবেন। কিন্তু আমাদের সবার সাথে কী স্বাচ্ছন্দ্যে উনি মিশে থাকেন, তা দেখে বোঝার উপায় নেই; ওনার বয়স হয়েছে।
কামাল ভাই বসে আছেন স্টেশনে পাতা যাত্রীদের জন্য কংক্রিটের তৈরি বেঞ্চে। খুব সম্প্রতি বেঞ্চগুলো ঝকঝকে টাইলস দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছে। স্টেশন আধুনিকায়ন প্রকল্পের অধীনে ধাপে ধাপে পুরনো স্টেশনগুলোর এ জাতীয় সংস্কার করা হচ্ছে। কামাল ভাইয়ের পাশে আরও কয়েকজন যাত্রী বসে আছে। হঠাৎ ওনার পাশে এসে কোথা থেকে এসে বসল একজন রঙ মাখা মেয়ে। দেহে যৌবন আছে; হাড্ডিসার দেহটাকে সস্তা স্নো-পাউডার দিয়ে সাজিয়েছে। দেখেই বোঝা যায় ওর জীবিকা উপার্জনের উপায় কী! আমরা কেউ-ই মেয়েটির নাম জানি না। জানার কথাও না। তারপরও আমি ওর একটা নাম দিলাম- ময়ূরী।

আরিফ ছবি তোলা শেষ করে অষ্টধাতুর রিং, ব্রেসলেট বিক্রেতা হকারের জিনিসপত্র দেখছে। ওর হাতে ঐ জাতীয়, সম্ভবত ওটা অষ্টধাতু হবে; একটা ব্রেসলেট আছেও। তারপরও হকারের রিং, ব্রেসলেট দেখছে ও মন দিয়ে। দর-দাম করে মাত্র তিরিশ টাকায় একটা ব্রেসলেট কিনে সে পাভেলকে গিফট করল। আরিফের থেকে বয়সে ছোট হলেও পাভেলের কবিতা বেশ; লেখালেখিতে বরং ও আরিফের চেয়ে সিনিয়রই হবে। আরিফ ব্রেসলেটের গুণাগুণের ব্যাখ্যা দিতে চাইলে আমি শুনতে চাইলাম না। অবশ্য ব্যক্তি-মানুষের বিশ্বাস নিয়ে আমার তেমন কোনো মাথা-ব্যথা কোনো কালেই ছিল না। থাকতেই পারে, কারো বিশ্বাস; তাতে আমার কী!

ট্রেন তখনো আসে নি। রাজশাহীগামী মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি আসবার ঘণ্টা দিয়েছে অনেকক্ষণ। আমরা গরম গায়ে মেখে যে যার মতো করে সময় পার করছি। আমার চোখে পড়ল ময়ূরী কোন্ ফাঁকে কামাল ভাইয়ের পাশ থেকে উঠে গিয়ে খদ্দের খোঁজার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। হয়তো ময়ূরীর শরীরে তেমন কোনো আকর্ষণ অবশিষ্ট নেই; এজন্য ও খুব একটা সুবিধে করে উঠতে পারছে না। মাংস লোভী কোনো পুরুষ হয়তো কিনতে চায় নি ওকে। ঘুরঘুর করছে মেয়েটি। সুযোগ বুঝে আড়ালে-আবডালে ঘনিয়ে আসা সন্ধ্যার আবছা আলোয় সাহস করে দু-চারজনকে বলেছেও এর মধ্যেই; কাজ হয় নি। কাজ না হলে ও খাবে কী! গতকালও কোনো কাজ হয় নি।
কুড়ি-বাইশ বছরের জীবনে ময়ূরী জেনেছে অনেক, দেখেছেও অনেক। ওর বিয়ে হয়েছিল। স্বামী-সংসার ছিল। ওর স্বামী ট্রাক ড্রাইভার শাসছুল বিয়ের পর ওকে আদর করেছে ভীষণ। যে কদিন বাড়িতে থাকত, ওকে নিয়ে মেতে থাকতো সে। কাজে গেলে মাসখানেক অপেক্ষায় থাকতে হতো ময়ূরীকে ভরা যৌবনের অবাধ্যতা নিয়ে। ট্রাক চালানোর কাজ। মালিক মাল দিয়ে যেখানে পাঠাবে, যেতে হয় সেখানেই শামছুলকে। একটার পর একটা মাল খালাস করে, আর তোলে সে। আজ চট্টগ্রাম গেলে, পরের দিন ছুটতে হয় পঞ্চগড় অথবা খুলনার দিকে। এক নাগাড়ে ১৫/২০ দিন গাড়ি চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে শামছুল। মাসের শেষ সপ্তাহে ছুটি পেলে দু-চোখ চকচক করে তার। ময়ূরীর নিটোল শরীরের ভাঁজ মনে পড়ে; কী এক নেশার ঘোরে শামছুল পাখির মতো উড়ে আসে ভেড়ামারা রেল কলোনীর ছোট্ট ডেরায়।
পাখির বাসার মতো ছোট্ট ঘর। তাতে কী! সে ঘরই যেন স্বর্গ হয়ে ওঠে, যেদিন শামছুল মাসের ছুটি নিয়ে বাড়ি আসে। এটা-ওটা করতেই সময় চলে যায় ময়ূরীর। আনন্দের সময়, সুখের সময় তাড়াতাড়ি ফুরায় যেন। আসতে না আসতেই কোন দিক দিয়ে সাতদিন চলে যায়; মন খারাপ হয় ময়ূরীর। বেজার মুখ করে ঘাড়ে ব্যাগ ঝুলিয়ে শেষ পর্যন্ত শামছুল আবারও ঘর থেকে বের হলে সাবধানে থাকার কথা বলে তাকে। আবারও তাকে অপেক্ষা করতে হবে এক মাসের জন্য।

শামছুল এবার যাওয়ার দিন দু-এক পরেই ময়ূরী বুঝতে পারে ওর শরীরের মধ্যে বাসা বেঁধেছে আরেকটা মানব শরীর। ওর লজ্জা হয়, আনন্দও হয়। ভাবে শামছুল এবার ছুটিতে আসলে তারপর বলবে সে। আনন্দ আর আশা নিয়ে ময়ূরী মাসের শেষ সপ্তাহের অপেক্ষায় করতে থাকে; কিন্তু মাসের শেষ দিনটি পর হয়ে গেলেও স্বামী আসে না তার। শামছুলের উপর ভীষণ রাগ হয়, অভিমান হয়। আবার অজানা এক আশংকায় বুকও কাঁপে ময়ূরীর। মাস পার হয়ে নতুন মাসেওর দশ দিন গত হলে ময়ূরীর সব অভিমান গলে পানি হয়ে যায়। না, ও কোনো রাগ করবে না; অভিমানও করবে না শামছুলের উপর।

এপ্রিলের এগারো তারিখ ভোরে পাশের ঘরের সাহানা ওর নাম ধরে ডাকতে ডাকতে দরজা ফাঁক করে প্রায় ঘরেই ঢুকে পরে। ঘুমের ঘোর তখনো যায় নি ময়ূরীর। ভয়ানক স্বপ্নে কেটেছে রাত। সকালের দিকে ঘুমটা গভীর হয়ে এলে সাহানার ডাকাডাকিতে না জেগে উপায় থাকে না- বিরক্তি নিয়েও। বিছানায় আধ-শোয়া হয়ে সাহার কাছে জানতে চায় ময়ূরী, কি হয়েছে? সাত-সকালে এতো ডাকাডাকি করছে কেন সে?
-আমাগের ছোইলের বাপ কাইল রাইতে আইসেছে। হের কাছে তোর সোয়ামীর কতা শুইনা আমার জানে পানি নাইকা। আমি তো হেই রাইত-দুপুরেই তর কাছে আসপার লাগছিলাম, গ্যাদার বাপ আসপার দেয় নাই।
-হ্যাঁ লা, কি কোয়েছে তার গ্যাদার বাপ; আমাগোরে তানি কোনো? মাস গেল, তাও আইলো না ক্যা?
এরপর সাহানা যেসব তথ্য আর ঘটনার বিবরণ দেয়, তা শোনার পর দুইদিন ময়ূরীর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হয় নি; দানা-পানিও যায় নি পেটে। শোক কিছুটা কমলে ময়ূরীর মনে পড়ে সাহানার কথা। ট্রাক কালীগঞ্জ ব্রিজের নিচে পড়লেও বেঁচে ছিল শামছুল। রাতের বেলা দুর্ঘটনায় পড়লেও তাকে ট্রাকের নিচ থেকে বের করা হয় সকাল দশটার দিকে। এরপর ঝিনাইদহ হাসপাতালে নেয়া হলে সার্জন রফিক ঘণ্টা-দেড়েক প্রাণান্ত চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারে নি তাকে। ডাক্তার আর যমে টানাটানির পর শেষে যম জয়ী হরে মালিক পক্ষ চেয়েছে, মৃত্যুর খবর যতোটা সম্ভব চেপে যাওয়ার। কারণ, শামছুলের আত্মীয়-স্বজন কিংবা পরিবারের লোকজ জানলেই কেস করবে, আর কেসের কারণে অযথা তাদেরকে কোট-কাচারির হয়রানি আর আর্থিক লস দিতে হবে।
স্বামী শামছুলের মৃত্যু সংবাদ শোনার পর, ময়ূরীর জীবন এক ঘন অন্ধকারে ঢেকে যায়। এখন ও কী করবে! কিভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করবে। জীবিকার উপায় কী! লেখাপড়া জানে সে। বিশেষ কোনো কাজও তো সে জানে না। তারপরও বুদ্ধি করে তামাকে গোডাউনে কাজ নেয় ময়ূরীর। দিনভর তামাক বাছার কাজ করে শ’খানেক টাকা আয় করতে পারে। ঐ ক’টা টাকা দিয়েই চাল-ডাল এক করে কোনো রকমে টিকে থাকতে চায় সে। এদিকে শামছুলের মৃত্যু সংবাদ শোনার পর সে যে শোক পেয়েছিল, সেই শোক তার পেটের ভিতরে থাকা এক চিলতে শিশুটিকেও আঘাত করেছিল। ভ্রণটির সহ্য হয় নি মায়ের শোক। মাস খানে পরে এক সকালে কাজে যাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে পেটে তীব্র ব্যথা হলে সে বসে পড়ে; সাহানা এসে ডাকাডাকি করলেও উত্তর দিতে পারে না ময়ূরী। ভেতরে ঢুকে সাহানা বুঝতে পারে- ময়ূরীর অবস্থা ভালো না; ও দেরি না করে একটা ভ্যান ভাড়া করে ময়ূরীকে নিয়ে মাতৃসদনে পৌঁছে দিলে এমার্জেন্সির নার্স-ডাক্তার ওকে সোজা ওটিতে ঢোকায়। ময়ূরীকে একা ওখানে রেখে সাহানাও যেতে পারে না।
ম্যানেজারটা যে বদের বদ; পাঁচ মিনিট লেট হলেই মজুরির দশ টাকা কেটে নেবে। না জানি আজ কি করবে। তারপরও সে মাতৃসদনের বারান্দায় ময়ূরীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। আধা ঘণ্টা মতো পরে একজন নার্স বেরিয়ে এসে ওর হাতে একটা ঔষুধের কাজগ ধরিয়ে দিয়ে জানাল- বাচ্চাটি রাখা গেল না। পেটের ভিতরেই মারা গেছে। দোষ অবশ্য আমাদের না; আগে থেকেই পেটের ভিতর মারা গিয়েছিল। এজন্য অ্যাবোরশন করতে হয়েছে। সাহানা ভাবে- একদিক থেকে ভালোই হলো। একে তো স্বামী বেচারা মারা গেছে; তার উপর এই সন্তানটি পৃথিবীতে এলে ময়ূরীকে আরো নাজেহাল হতে হতো। নিজের খাবার জোটাতেই দিনভর গোডাউনের তামাক টানতে হয়; তার উপর শিশুটির জন্য অতিরিক্ত কাজ করেও ময়ূরীর টান পড়তো।

সাহানার সেদিন আজ কাজে যাওয়া হয় না। ঘণ্টা দু-এক পরে ময়ূরীকে কাঁধে ভর দিয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে ঘরে ফিরল সে। অ্যাবোরশনের পর একদিকে সন্তান শোক অন্যদিকে প্রচুর রক্তপাতের কারণে ময়ূরীর শরীর ভেঙে পড়ল। যে দেহের দিকে গোডাউনের ম্যানেজার লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত সারাক্ষণ, ময়ূরীর সেই দেহ দুই সপ্তাহের মধ্যে একেবারে ভেঙে গেল। পরে কাজে গেলেও ওর জায়গা হয় নি গোডাউনে। ম্যানেজার ইমান আলী দুরদুর করে তাড়িয়ে দিয়েছে ওকে দেখেই। জমানো টাকা-পয়সাও ছিল না ওর কাছে। কাজও নেই; কিন্তু পেটের আগুন তো ঠিকই আছে আগের মতোই। ভরসা করে পরদিনও গোডাউনে যায় সে। কাজে না নিলেও দিনভর গোডাউনের বাইরে বসে থাকে ময়ূরী। কোথায় যাবে, কী করবে সে! সন্ধ্যায় সবাই মজুরি নিয়ে চলে গেলেও ওঠে না সে। উঠেই কি করবে, কোথায় যাবে! সবাই চলে যাওয়ার পর গোডাউন বন্ধ করে ম্যানেজার ইমানও বাড়ি যায়। গোডাউনের দরজা লাগাতে লাগাতে চোখ পড়ে তার ময়ূরীর দিকে। বহুদিন অপেক্ষায় ছিল ইমান; বাগে পেয়েছে আজ। কাছে গিয়ে ইমান দরদী গলায় জিজ্ঞেস করে ওর বাড়ি না যাওয়ার কারণ; ময়ূরী কাজের কথা বলে। টাকার প্রয়োজনের কথা বলে। পেটের ক্ষিধের কথা বলে এবং টাকা চায় ম্যানেজারের কাছে, পরে কাজ করে শোধ করে দেওয়ার কথা বলে।
এই সুযোগ ধূর্ত ইমান আলী হাতছাড়া করে না। টাকা দেওয়ার কতা বলে ওকে নিয়ে অন্ধকার গোডাউনের ভিতর নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পরে এদিকটায় তেমন আর কেউ আসে না। ভিতরে ঢুকেই ইমন হ্যাচকা টানে ময়ূরীকে কাছে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বুকে; পিষে ফেলতে চায় যেন ওর সর্বশক্তি দিয়ে। ময়ূরী বাধা দেয় না। বাধা দেয়ার মতো শক্তিও নেই ওর দেহে। তাছাড়া শামছুল মারা যাবার পর ওর যুবতী দেহেও শরীরের চাহিদা ছিল। ইমান আলী কাজ অবশ্য খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়; কাপড়-চোপড় গোছাতে গোছাতে ম্যানেজার ইমান পকেট থেকে একশ’ টাকার একটা নোট বের করে এগিয়ে দেয় ময়ূরীর দিকে। টাকাটা দেখে ময়ূরীর চোখ জ্বলে ওঠে। জীবিকা উপার্জনের একটা পথ ওর চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এরপর অনেক সন্ধ্যায়ই কাজ শেষে ইমানের কাছ থেকে একটা বাড়তি একশ’ টাকার নোট আঁচলে বেধে ঘরে ফিরে এসেছে ময়ূরী গোডাউন থেকে।
তামাকের গোডাউনের কাজ এ বছরের মতো শেষ হয়েছে। ময়ূরীও সমস্যায় পড়েছে। একদিকে কাজ বন্ধ; অন্যদিকে ম্যানেজার ইমান আলীর নিকট থেকে বাড়তি আয়ও বন্ধ। এখন ময়ূরী কী করবে। ভেবে পায় না সে; পথ খোঁজে উপার্জনের। ওর সামনে সবচেয়ে সহজ পথ শরীর বিক্রি করে রোজগার করা। ও ভেবে নেয়, এ পথে খুব সহজেই ওর পেট চলার মতো রোজগার করতে পারবে সে। তাই গত কয়েকদিন সে ট্রেন স্টেশন থেকেই রোজগার শুরু করেছে। এখানে হাজার লোকের চলাফেরা। তেমন কেউ চেনেও না ওকে। সস্তা স্নো-পাউডার মেখে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে দু-একজন খদ্দের মিলেই যায়।

চারদিক কাঁপিয়ে শব্দ করে মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি এসে দাঁড়ালে আমরা উঠে পড়লাম। ঘণ্টা তিনেকের পথ রাজশাহী। আমি ট্রেনে উঠেই একটু চোখ বোজার চেষ্টা করলাম। সারাদিন ধকল গেছে বিয়ে বাড়ির। সারা জীবন দুপুরে খেয়ে একটু ঘুমানোর অভ্যেস আমার, আজ সেটা মাটি হয়েছে। তাকিয়ে দেখি ট্রেনটি ঈশ্বরদী স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি নামার প্রস্তুতি নিলাম। এক কাপ চা অন্তত খাওয়া গেলে কিছুটা ক্লান্তি যাবে। এমন সময় চোখ পড়ল, ময়ূরী আমাদের বগিতেই। পাভেলের পাশের সিটে। ওর কাছে পাঁচটা টাকা চাইল। কেন চাইল, সেটা বোঝা গেল না। পাভেল সাত-পাঁচ ভেবে টাকাটা দিল না। ওর মতো মেয়েকে টাকা দিলে পাশের অপরিচিত লোকজন কী ভাববে! টাকা তো সত্যি দরকার ময়ূরীর!

সূত্র : উত্তরলিপি [দৈনিক পত্রিকা], রাজশাহী : উত্তরা প্রতিদিন, ০৫ জুন ২০১৫

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১৫
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×