পত্রিকাটা ভাজ করে সামনের টেবিলে রাখলেন জলিল মিয়া। একটু সময় নিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিলেন। চাহনীতে বিজয়ীর দৃষ্টি। চেহরায় পরিপূর্ন আত্নতৃপ্তি। মনে আনন্দ। আল্লাহ তাকে ধন দেননি ঠিকই। কিন্তু মহত্ব, মহানুভবতা আর ব্যক্তিত্বে অনেক বিশাল ধনীরাও তার কাছে নস্যি। সীমাহীন আকাশের মত উদারতা দাঁড় করিয়েছে অনন্য সম্মানের মুখোমুখি।
জলিল মিয়ার স্কুল পড়ুয়া মেয়ে বকুল। আজ তার মনে বড়ই আনন্দ। আনন্দের আতিশায্যে কি রেখে কি করবে খুজে পাচ্ছে না সে। প্রজাপতির মতো ডানা মেলে উড়তে পারলে মনে হয় ভাল লাগত। আজ তার মানব জীবন সার্থক হলো। তার নারীত্ব পূর্নতা পেল। জীবনের পনের ষোলটি বছর পার করে এতো দিনে সে নারী হয়ে উঠল। আজ তার অনেক আনন্দের দিন।
মোহাম্মদপুরের বরকতও কন্যার বাবা। সে নিজেও বাবা। বরকত বেঁচে নেই। সে বেঁচে থাকলে হয়তো শুধু রাসেল কেই মারতো না। রাসেলের পুরো পরিবারকেই মেরে ফেলতো। কিন্তু বরকতের ছোট ভাইরা পরিবারের অন্যদের মারধোর করলেও জানে মেরে ফেলেনি। শুধু রাসেলকেই মেরেছে। রাসেলের অপরাধ সে বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে প্রেম করতো।
জলিল মিয়া ভাবে, উপরওয়ালা বরকত কে শুধু ধন সম্পদই দিয়েছেন। হৃদয় দেন নি। কিন্তু সে গরীব হতে পারে, কিন্তু হৃদয় সাগর কানায় কানায় ভরা। আর তাই, তারই সামনে রামদা ঠেকিয়ে যখন তার মেয়েকে অন্য ঘরে নিয়ে এক ঘন্টা ধরে পাশবিক অত্যাচার করে সে কিছুই বলেনি। তাকে সিলিং এর উপর পাঠিয়ে যখন তার স্ত্রীকে শ্লিলতাহানী করে সে কিছুই বলেনি। সে গরিব হতে পারে, নিঠুর নয়। আজ সে আনন্দিত। এতোটা আনন্দিত যে তার মনে হয়েছে, এ পৃথিবীতে আর তার বেঁচে থাকার দরকার নেই।
বকুলও আনন্দিত। এদেশে এতো দিনে সে নারী হয়ে উঠল। যে দেশে নারীর শ্লিলতাহানী না হলে পহেলা বৈশাখ হয় না, যে দেশে নারীর উপর হাত না তুললে ভ্যালেন্টাইন ডে হয় না। নারী কে অপদস্ত না করলে যে দেশে কোন উৎসব হয় না, নারী কে এসিড না মারলে যে দেশে পৌরুষত্ব প্রকাশ করা যায় না, সে দেশে আজ তাকে সব কিছু খুইয়ে দিতে হয়েছে। নারীত্বের এ পূর্নতায় আজ সে আনন্দিত। বরং তার আনন্দ আরো বেশি এই কারনে যে, পাশের ঘরেই রাম দার মুখে তার মা কেও নারীত্বের স্বাদ নিতে দেয়া হয়েছিল। তার বাবা কে পাঠানো হয়েছিল চিলেকোঠায়। নারীত্বের দাবীতে সে আজ তাই এগিয়ে। অনেকের চেয়ে এগিয়ে।
আনন্দ এখানেই শেষ হয়নি, স্থানীয় আওয়ামিলীগ সহসভাপতি বলেন, ‘বিচারে যে দোষী সাব্যস্ত অইব, হের বিচার করুম।’ আমি অবাক হয়ে ভাবি, এ কেমন লোক। এখানে দোষী সাব্যস্ত করার কি আছে। দোষী তো আমাদের সামনেই আনন্দ করছে। আমার অনুরোধ তার বিচার করুন, এমন বিচার করুন, যেনো ভবিষ্যতে কোন গরীব নারীর বাবা হবার মতো ক্ষমাহীন দোষ না করে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




