একবার এক মামাত বোন এল আমাদের বাড়িতে। ওর চেহারা দেখে মনে হলো কোনো ঝামেলা হয়েছে।
তখন বিকেল। আমি বাইরে থেকে বাড়িতে এসেছি মাত্র। ভাত খেতে বসব। বোনকে বললাম, হাতমুখ ধোও। ভাত খাই।
সে হাতমুখ ধুয়ে আমার সাথে খেতে বসল। শুকনো হাসি হেসে বলল, এসেছি অনেকক্ষণ। খিদে পেয়েছে। তুমি বুঝতে পারলে অথচ নিজের রক্তের ফুফু বুঝতে পারল না।
জিগ্যেস করলাম, ঘটনা কী?
সে বিস্তারিত বলল। অন্য এক মামাত বোনের সাথে ঝামেলা হয়েছে। মামার সাথেও টাকা-পয়সা নিয়ে সমস্যা। ওর বর একটু সমস্যায় আছে। মামার কাছে কিছু টাকা ধার চেয়েছিল। টাকা থাকা সত্ত্বেও ওনি দেন নি।
বরের সঙ্গে অভিমান করে ওনি শ্বশুরবাড়ি যাবেন না। আমি বললাম, এক-দু’দিন থাকো। সব ঠিক হয়ে যাবে। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে বাপের বাড়ি অপেক্ষা শ্বশুরবাড়ি কত গুরুত্বপূর্ণ। তার ওপর তার বড়ো বড়ো দুজন ছেলে।
আমার কথায় মনপুত হলো তার। রাতে তার বড়ো ছেলে এলো। সে চলেও গেল।
.
ঝামেলায় ছিলাম। যোগাযোগ ছিল না কয়েকদিন। একদিন হঠাৎ ওর কথা মনে পড়ল। কিন্তু মোবাইল নাম্বার নেই যে কথা বলব।
সমবয়সী এক ভাতিজাকে সাথে নিয়ে কিছু উপহার নিয়ে তার বাড়ি গেলাম।
বাড়ি চিনি না। অনেক আগে গিয়েছিলাম। ভাতিজা অবশ্য বাড়ি চেনে। কিছুদিন আগে গিয়েছিলও। বোনজামাই এর সাথে ভাতিজার বাবা সৌদি ছিল অনেকদিন। সখ্য বেশ।
.
বোন তখন কাপড় সেলাই করছিল। আমাদের দেখে বসতে দিল। চানাচুর-মুড়ি মাখা খেতে দিল। কিছুক্ষণ পর বোনজামাই এলেন। তারপর অনেক আলাপ।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে। বিদায় নিয়ে চলে আসছি। ভাতিজা বলল, কী ব্যাপার? তোমার বোন কিছু রেঁধে খাওয়াল না? কয়েকদিন আগে আমি যখন এলাম, রান্না করে খাইয়েছিল।
বললাম, হয়ত ব্যস্ত হয়ে পড়বে, তাই...
পরক্ষণে মনে হলো ভাতিজারা তো বড়োলোক। বোন কি তাহলে ধনী-গরিব ব্যবধান করল?
মনটা খারাপ হলো। এরপর আর কখনো ওই বোনের বাড়ি যাই নি।