ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রাক্কালে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রাশিয়া সফর করছিলেন। এরও আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল তিনি রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছেন। যদিও বলা হচ্ছিল এই সফর পূর্বনির্ধারিত ছিল। চিনের সাথে পাকিস্তানের সখ্য তো আগে থেকেই। এ কারণেও আমেরিকা পাকিস্তানের ওপর নাখোশ ছিল। যাহোক, রাশিয়ার সাথে পাকিস্তানের সখ্য আমেরিকা ভালোভাবে নেয়নি। ফলাফল ইমরানকে হঠাতে পাকিস্তানের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আমেরিকার হুমকি। অবশ্য সেনাবাহিনীতে হস্তক্ষেপের চেষ্টায় ইমরানের ওপর সেনাবাহিনী ক্ষিপ্ত ছিল। তাছাড়া ইমরান যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন তা রাখতে পারেননি। পাকিস্তানের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছে। যাহোক, ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ইমরানপন্থিদের অভিযোগ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মদদ ছিল। জানা যায়, এই সেনাবাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করেই ইমরান ক্ষমতায় এসেছিলেন।
মিয়ানমার-পাকিস্তান মূলত সেনাবাহিনীর কর্তৃত্বাধীন রাষ্ট্র। সূচি বা ইমরান চেষ্টা করেও পারেননি তাদের কর্তৃত্ব কমাতে। সেনাবাহিনীর সাথে বিরোধ তৈরি হওয়ার ভুগছেন। সূচি গৃহবন্দী। ইমরান তোশাখানা নামলায় জেলে। নির্বাচন করতে পারবেন না ৫ বছর। যদিও মামলা থেকে রেহাই পেয়েছেন, তবে শিগগিরই জেল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না।
৫৬ সালের দিকে পাকিস্তান সর্বপ্রথম আমেরিকার দিকে ঝুঁকে। আমেরিকার সাথে পাকিস্তানের অস্ত্র-চুক্তির জেরে সোহরাওয়ার্দীর সাথে বিরোধে মওলানা ভাষানী আওয়ামী লীগ ছেড়ে ন্যাপ গঠন করেন। সোহরাওয়ার্দী আমেরিকার দিকে ঝুঁকলেও রাশিয়া-চিন কিন্তু কোনো বাধা তৈরি করেনি। অথচ '৭৫ সালে বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান যখন রাশিয়ার দিকে ঝুঁকলেন, সিআইএ পাকিস্তানি ভাবধারাপুষ্ট কিছু সেনাসদস্য ও রাজনীতিবিদদের সাথে ষড়যন্ত্র করে শেখকে থামায়।
চিনের সাথে শেখ হাসিনার সখ্য বেড়েছে। ভারত কিছুটা নাখোশ। স্বাধীনতার পর থেকেই শেখের ওপরও নাখোশ ছিল দেশটি। শেখ বেশি স্বাধীনচেতা হওয়ায় ক্ষুব্ধও ছিল। তাই তো শেখ সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ইন্দিরা গান্ধী তেমন উচ্চবাচ্য করেননি।
বাংলাদেশের নির্বাচন, ইউনূস বা নানা ইস্যুতে আমেরিকা বাংলাদেশের ওপর বিরক্ত। শেখ হাসিনা বা তার মন্ত্রীরাও আমেরিকার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার বিরুদ্ধে এমন হম্বিতম্বি আগে দেখা যায়নি। জলে নেমে কুমিরের সাথে বিবাদ করা যেমন কঠিন, আমেরিকার বিরুদ্ধে গিয়ে শেখ বাঁচতে পারেননি, ইমরানও ভুগছেন। শেখ হাসিনা কি টিকতে পারবেন? যদিও এটা সত্যি শেখ বা ইমরানের পরিণতি সচক্ষে শেখ হাসিনা দেখেছেন। তার পরিপক্বতা তাদের চেয়েও বেশি। ভারতও আমেরিকাকে বলেছে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে এই অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। আমেরিকাও হয়তো মনে করে এ অঞ্চলে ধর্মপন্থিদের উত্থান তাদেরও মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠবে। এসব নানা বিষয় ভেবে ভারত বা আমেরিকা কি শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেবে? শেখ হাসিনা কি নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে পারবেন? শেখ হাসিনা বিপদে পড়লে চিন বা রাশিয়া কি তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন? যদিও ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় চিন-রাশিয়া বরাবরই সবাইকে গাছে তুলে মই কেড়ে নিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৫০