বই পর্যালোচনা
-------------
বইয়ের নামঃ দৈব দ্বৈততা
রচয়িতাঃ মঞ্জুর হাসান সজল & অনিরুদ্ধ
ঘরানাঃ কাব্যগ্রন্থ
প্রচ্ছদঃ শালিক ছানা
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১১২
লিখিত মূল্যঃ ২৬০ টাকা।
______
প্রাক-আলোচনা & রিভিউঃ
প্রথমেই যে কথাটি না বললেই নয় তা হচ্ছে আজকাল গল্প-পাঠক যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিক সেই হারে নয় বরং তার চেয়ে অধিক হারেই কবিতার বইয়ের গ্রাহক কমছে। অথচ কবির অভাব একালে নেই। এমনই এক মুহূর্তে আমার হাতে এসে পড়ে ‘দৈব দ্বৈততা’ নামের চমৎকার বাহ্যিক কাঠামো সমৃদ্ধ একটি কবিতার বই। বইটিতে আশিটিরও অধিক কবিতা রয়েছে। চমৎকার কাঠামো এই অর্থে বলেছি যে, আমি বইটি পড়ার আগে বইটির পৃষ্ঠাগুলো স্পর্শের নিমিত্তে কতবার যে বইটি নেড়ে দেখেছি তার ইয়ত্তা নেই। বইটির বাঁধাইও যথেষ্ট সুন্দর করা হয়েছে। যাকগে সেসব কথা, বলছিলাম বইটিতে কবিতার সংখ্যা পঁচাশিটির কম নয় যার অধিকাংশ কবিতাই আমার ভালো লেগেছে আর বুঝতেই পারছেন, সবগুলো কবিতা এখানে দেওয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার! তবে পাঞ্চলাইনগুলো বন্ধুদের সাথে শেয়ার না করলে আবার অন্তর অতৃপ্ত থেকে যাবে কিনা তাই কিছু কথা বলা চাই-ই...
.
‘নতুন সৃষ্টি মাঝে বিধাতার দান;
একই আধারে দুই বিপ্রতীপ প্রাণ’
...এভাবেই বইটি শুরু করেছেন কবি মঞ্জুর হাসান সজল।
নারী হল সৃষ্টিকর্তার এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। নারী নিয়ে লেখা হয়েছে, হয়েছে গবেষণা! কবিও ‘নির্ভেজাল ভালবাসায়’ তাই বলে উঠেছেন- ‘মেয়ে, তুমি কেমন করে পারো?’ অথচ এই রমণীর জন্য কত প্রেমিকের সৃষ্টি, নারীকে নিয়ে কত প্রেম! পুরুষেরা চায় একজন নারী, একজন প্রেমিকা তার জীবন সঙ্গিনী হোক। আর কবির মতই আমরাও চাই আমাদের ‘আজন্ম সাধ’ পূরণ করার জন্য কেউ একজন থাকুক।
বইটিতে কবি ‘নিভৃত স্বপ্নচারী’র গল্প শুনিয়েছেন কবিতায়,
‘আমার আজন্ম আঁধারে আজ ফুরিয়েছে দিন।
রোজেলিন...
সাদা মেম আমার, তোমার কাছে
আছে আমার এক জীবনের ঋণ।’
তারপর তাঁর ‘অনতিক্রম্য’ অতিক্রম করলাম যেভাবে,
‘কিশোরীকে কথা দেয়া সেই প্রেম-দায়,
যৌবনে চলে গেছে, ফেরেনি যে হায়!
.
জীবনের গতিপথ শুধু বেগবান
পড়ে থাকে হাহুতাশ, মান-অভিমান;
সময়ের নদী শুধু সমুখে ভাসায়,
তবু মন পড়ে থাকে ফেরার আশায়...’
…
‘জীবনের পাপ, অযাচিত শাপ,
ভুলে ভরা যত, বেদনার ক্ষত,
প্রেয়সীর হাসি, ফুল রাশিরাশি,
মুছে দিতে আসি, তবু ভুল ভালোবাসি।’ —এই হল কবির ‘ক্রমাবর্তন’।
‘শেষ চিঠি’ দিয়ে শেষ বইটির 'মঞ্জুর হাসান সজল' অংশ—
‘ফেলানিরা ঝুলছে কাঁটাতারের বেড়ায়-
বন্ধ ঘরের সিলিং ফ্যানে লটকে ছিল,
শেয়ার বাজারে সর্বস্ব খুইয়ে ফেলা স্বপ্নহীন বেকার যুবক।
.
অনিরুদ্ধ,
তোকে যে আজ ভীষণ প্রয়োজন...’
_____
কবি সুমন অনিরুদ্ধ শুরু করছেন বাবার কাছে এখনো না পৌঁছানো ‘যে চিঠি হয় না দেয়া’ শিরোনামের একটি পত্রকাব্য দিয়ে। কবি অনিরুদ্ধ’র কণ্ঠে ‘একবৃত্তে’ আমাদের ভাবনা যেমন হওয়ার কথা—
‘আকাশ সুনীল তুমি,
.
আমিও তবে তোমার মত একা হয়ে যাই,
অসীম শূন্যতায়, আমারও যে কেউ নাই।’
‘তুমি যাকে সৌন্দর্য বলো, আমি তাকে বলি সময়’ –এটি আমার কথা না ‘অনাহুত আগন্তুক’র কথা। তারপর সম্ভবত কবি অনিরুদ্ধ *নির্বাসিত হলেন, লিখলেন ‘একজন কবির মৃত্যু’। বইটির লেখা শেষ করেছেন পিতার স্নেহ-কথা লিখে,
‘তোর আর আমার এই যে বাঁধন,
বিধাতারই গড়া;
এ কারণেই ধন্য জীবন,
ধন্য বাঁচা মরা।’
.
#সবশেষে, কবিদ্বয়কে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে অটোগ্রাফ & শুভেচ্ছাসহ ‘দৈব দ্বৈততা’ দেয়ার জন্য।
রিভিউ লিখেছেন Hussain Md Sayeam
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:২৭