ছুটির দিনের অলস দুপুর। দখিনের খোলা জানালার পাশে বসে একটা উপন্যাস পড়ছি। হঠাৎ চোখ চলে গেল বাইরে, আকাশের দিকে। বেশ মেঘ করেছে আকাশে। এখন একটা ঝুম বৃষ্টি হলে মন্দ হতো না। বৃষ্টির কথা বললেই আমি নস্টালজিক হয়ে পড়ি। ফিরে যাই আমার ছোটবেলায়।
আমার গ্রামের বাড়িটা একতলা। বাড়ির সামনে একটুখানি উঠান। ছোট ছোট সবুজ ঘাস ছিল উঠানে। উঠানের চারধার দিয়ে বিভিন্ন রকমের গাছ ছিল। একটি বেশ বড়সড় কদমগাছ ছিল। বৃষ্টি এসে যখন কদমগাছটাকে ভিজিয়ে দিত, তখন কী সুন্দর লাগত দেখতে, বলে বোঝানো যাবে না।
সেদিনও আকাশে খুব মেঘ ছিল। কয়েকটা কাক উড়ে যাচ্ছিল কা কা করতে করতে, সন্ধ্যা হয়নি তখনো। সূর্যের আলো ঢাকা পড়েছে কালো মেঘের আড়ালে। চারদিকে কেমন জানি আবছা অন্ধকার নেমে এল। একটু থমথমে আবহাওয়া। আমি আর আমার ছোট ভাই বারান্দায় মায়ের কাছে বসে আছি। মা কাঁথা সেলাই করছেন, নকশিকাঁথা। বাবাও আজ বেশ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এলেন।
হঠাৎ চারদিক আলো করে বিদ্যুৎ চমকাল। আমি ভাইয়ের কানে আঙুল দিয়ে রাখলাম।
বেচারা ছোট মানুষ। ভয় পাবে। তার একটু পরই খুব জোরে বাজ পড়ল। এরপর ঝর ঝর করে বৃষ্টি পড়া আরম্ভ হলো। আমাদের উঠানের সবুজ ঘাসের ওপর বৃষ্টি পড়ছে, হলদে কদমফুলের গায়ে বৃষ্টি পড়ছে, বৃষ্টি পড়ছে আমাদের বারান্দায়। হঠাৎ বাবা এসে বললেন, ‘চল্, বৃষ্টিতে ভিজি।’ মা তো রেগেমেগে আগুন। কারণ, বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আমি আর বাবা নেমে গেলাম উঠানে। বৃষ্টির মোহনীয় শীতল স্পর্শে আমি চমকে উঠলাম। বাবার দিকে চোখ পড়তেই দেখি, বাবা হাত দুই পাশে ছড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে বৃষ্টিতে ভিজছেন। সেদিনের মতো যুবক হতে বাবাকে কখনো দেখিনি আমি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




