গোল্ডলিফ নাই জেনেও গ্যাস ভবনের পাশে সারি সারি টং দোকান রেখে ঐ দোকানেই গেলাম। আজও শিরিষ গাছে হেলান দিয়ে বৃদ্ধ সিকিউরিটি গার্ড বসে আছেন। এখানে ছায়া আছে; দোকানটা তবুও নির্জন- মানুষের ভিড় নেই। আমি যেতেই বৃদ্ধ র্গাড ভুঁড়ি নাড়িয়ে বল্লেন ” কাকা তুমি সরে বসো”। কে কাকে কাকা বলে! দেখি আরেক বৃদ্ধ আপন মনে পিছন ফিরে বসা। আমায় চা দিয়ে, দোকানী বৃদ্ধ গার্ডকে অনেক খুচরো টাকা দিলেন। গার্ড হেলান থেকে দোলে উঠলেন আর টাকা গুনতে লাগলেন। আমার মনে অস্থিরতা- ইউরোর দাম কমে গেছে। রাধাচূড়ার অনেক পাপড়ি গাছের ছায়ায় বালির মাঝে লেপ্টে আছে। আমি দেখতে আছি। বৃদ্ধ কাকার বৃদ্ধ কাকা তিনি একটু ঘুরে বসলেন। বৃদ্ধ কাকা পাঞ্জাবীর পকেট থেকে আপেল বের করলেন। আরেক পকেট থেকে প্যাকেটে মুড়ানো ব্লেড। তিনি ব্লেড দিয়ে আপেলের খোসা তুলতে লাগলেন। একটি টকটকে লাল আপেল ক্রমেই তার গ্ল্যামার হারাচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি না তিনি ব্লেড দিয়ে কেন...! আমার তাকে পাগল মনে হয়। আমার দৃষ্টি বৃদ্ধ কাকায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ” চাচা ব্লেড দিয়ে আপেলের খোসা ফেলেন কেনো?” তিনি বলেন, ” দাঁত নাই বাবা... দাঁত নাই। থাকলে কী আর ব্লেড দিয়ে বাকল তুলি! দুই কামড়েই একটা আপেল শেষ করতাম”। তিনি একটু ঝুঁকে আমাকে তাঁর একমাত্র দাঁতটি দেখালেন। হেসে বল্লেন এটাই তার একমাত্র সম্বল। আমার মন চাইলো জিজ্ঞেস করি, ”আপনার ছেলে-মেয়ে নাই”। কিন্তুু উনার হাসির তোড়ে মনে হল জিজ্ঞেস করা বৃথা। হয়ত তিনি বলবেন... ছিল তো.. এখন দাঁতের মতোই ঝরে গেছে!
আপেলের খোসা ছাড়ানো শেষ হলো।তিনি অনেক কষ্টে ব্লেড দিয়ে আপেল কয়েক ফালি করলেন। ডান হাতের তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুলী দিয়ে ধরে এক ফালি আপেল মুখের ভিতর আঙ্গুল সহ নিলেন। আমি চা পান রেখে তাকিয়ে আছি। এখন শুধু আঙ্গুল আর দাঁতের শব্দ।
তিনি টাকা গুনেন না। তাঁর কোন দিকে খেয়াল নেই- দৃষ্টি নেই। তাঁর দাঁত নেই-চাকু নেই। তিনি আপেল চিবান্... তুবুও তিনি আপেল চিবান্ ! তাঁর ঠোঁটের ফাঁকে ছিটকে পরে আপেলের রস।