অনিন্দ্যসুন্দরী হেলেন এবং ট্রোজান ওয়ার
হেলেন , ট্রোজান ওয়ার , একিলিস , ট্রয় , প্যারিস
সর্বনাশা রূপ-লাবণ্যের অধিকারিণী অনিন্দ্যসুন্দরী হেলেনকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই।গ্রীক ও রোমান পুরাণের সর্বাধিক আলোচিত নারীচরিত্র। দেবরাজ জিউস এবং স্পার্টার রাজা টিন্ডারিউসের পত্নী লীডার মিলনের ফলে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী হেলেনের জন্ম হয়। পরবর্তীতে স্পার্টার রাজা মেনেলাউসের স্ত্রী ছিলেন হেলেন। ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিস হেলেনকে নিয়ে স্পার্টা থেকে ট্রয়ে পালিয়ে এসেছিল। এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই মেনেলাউস যুদ্ধযাত্রা করে এবং ট্রোজান যুদ্ধের সূত্রপাত হয়।
হেলেনের রূপসৌন্দর্য্যে বিমোহিত হয়ে গ্রীসের বহু রাজপুত্র তাঁর পাণিপ্রার্থী হন। হেলেন তাঁদের মধ্য থেকে স্পার্টার রাজা মেনেলাউসকে স্বামী হিসেবে বরণ করেন। সর্বনাশা রূপ-লাবণ্যের কারণে হেলেন দুবার অপহৃত হন। প্রথমবার তাঁকে অপহরণ করেন গ্রীকবীর থিসিউস। কিন্তু আকাডেমসের (গ্রিকপুরাণে তাকে হারকিউলিসের মতো উপদেবতা বলা হতো ) সহায়তায় হেলেনের দুইভাই ক্যাস্টর ও পলিডিউসিস হেলেনকে উদ্ধার করেন।
প্যারিস কর্তৃক হেলেনকে দ্বিতীয়বার অপহরণের ঘটনা থেকেই ট্রয় ও গ্রীসের যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। গ্রীক বীর একিলিসও হেলেনের অন্যতম পাণিপ্রার্থী ছিলেন। নিজের মাতা থেটিসকে একিলিস অনুরোধ করেন যে হেলেনের সঙ্গে একবারের জন্য হলেও, তিনি যেন মিলিত হতে পারেন।
তবে পুত্রের অনুরোধ রক্ষা করতে থেটিস, হেলেনকে সশরীরে একিলিসের কাছে উপস্থিত করতে পারেননি, কিন্তু মর্ফিউসের (স্বপ্ন দেবতা) মাধ্যমে স্বপ্নের মধ্যে একিলিস হেলেনের সঙ্গে মিলিত হন। এ জন্যই থিসিউস, মেনেলাউস, প্যারিস, ডেইফোবাস ও একিলিসকে হেলেনের পঞ্চস্বামী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
গ্রিক ও ট্রয় (বর্তমান তুরস্ক) পাশাপাশি দুটি রাষ্ট্র; কিন্তু মধ্যে ছিল এজিয়ান নামক বিখ্যাত সাগর। ১২৩০ সালের দিকে ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিস ও হেক্টর আসে স্পার্টায় ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য। স্পার্টার রাজা মেনেলাউস প্যারিস ও হেক্টরকে সাদরে সম্বোধন জানায়। তাদের আগমনে রাজ্যকে লাল-নীল বাতিতে চমৎকারভাবে সাজানো হয়। নৈশভোজের বিপুল সমারোহের পর প্যারিস ও হেক্টরকে সবার সঙ্গেই পরিচয় করিয়ে দেন রাজা মেনেলাউস। এক পর্যায়ে হেলেনের সঙ্গে পরিচয় ঘটে রাজপুত্র প্যারিসের। ব্যবসায়িক আলোচনার জন্য স্পার্টায় বিশদিন থাকার প্রয়োজন হয়ে পড়ে প্যাসিস ও হেক্টরের। হেক্টর ও মেনেলাউস বেশি ব্যস্ত থাকতেন ব্যবসা-বাণিজ্যের চুক্তি নিয়ে। আর গোপনে সবার চক্ষুর আড়ালে প্যারিস দেখা করতেন হেলেনের সঙ্গে। প্যারিসের চেহারা, গায়ের গড়ন, শরীর কাঠামো সবকিছুই হেলেনকে বিমোহিত করে, প্রথমে রাজি না থাকলেও আস্তে আস্তে প্যারিসের প্রতি প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েন হেলেন। যাই হোক নির্ধারিত সময় শেষে ট্রয়ে ফিরে যাবেন হেক্টর ও প্যারিস। ভোর হলেই তারা রওনা দেবেন ট্রয়ের উদ্দেশে। রাজা মেনেলাউসের আপ্যায়নের কোনো কমতি নেই। খাবার-দাবার আর সুন্দরী রমনীদের নাচের দৃশ্য সাজিয়েছে শেষ নৈশভোজ। নর-নারী, প্রহরী ও হেক্টর, রাজা ও ট্রয়ের অতিথিরা যখন আমোদ-প্রমোদ আর নাচ-গান নিয়ে ব্যস্ত তখন প্যারিস গোপনে চুপিসারে যান হেলেনের ঘরে। নিবিড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে একে অপরকে, ভালোবাসার মধুর রসসিক্ত হয় উভয়ের মণ, প্রাণ ও দেহ।
এজিয়ান সাগরের মাঝপথে এসে প্যারিস হেক্টরকে বলেন, হেলেন তাদের সঙ্গে এসেছেন। প্যারিসের কথা শুনে অবাক হয়ে যান হেক্টর! রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে চটে যায় প্যারিসের ওপর। নাবিকদের বলে জাহাজ স্পার্টার দিকে ঘুরাতে। কিন্তু প্যারিসের অনুরোধে আর ক্রন্দনে হেক্টর নিজের মত পরিবর্তন করেন। এদিকে স্পার্টার রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে প্যারিস হেলেনকে অপহরণ করে ট্রয়ে নিয়ে গেছে। মেনেলাউস পাগলের মতো হয়ে সাহায্যের জন্য হাত বাড়ান আপন ভাই আর্পসের রাজা আগামেননের। আগামেনন গ্রিসের সম্মান ফিরিয়ে আনার জন্য গ্রিসের সব রাজাকে অনুরোধ জানান। প্রায় ১ হাজার জাহাজ নিয়ে ট্রয়ের উদ্দেশে রওনা দেয় গ্রিসবাসী। ট্রয়ে হাসি-আনন্দ ভালোবাসার জীবন আর যৌবনের পূর্ণতা পায় সুন্দরী হেলেন।প্রতিদিন শত শত উপহার উপঢৌকন আসতে থাকে হেলেনের ঘরে। প্যারিস নিজের জীবনের স্বার্থকতা আর ভালোবাসার স্পষ্টতা খুঁজে পায় হেলেনের হৃদয়ে। ভালোবাসার অতল সমুদ্রে ভাসতে থাকে প্যারিস আর হেলেন। হঠাৎ রাজ্যময় বিপদ ঘণ্টা বাজতে থাকে। রাজ্যের প্রজারা-বিপদ সংকেতে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। রাজ্য থেকে হেক্টর ও তার বাবা দেখতে পায় হাজার হাজার জাহাজ নিয়ে গ্রিকরা ধেয়ে আসছে ট্রয়ের দিকে। মুহূর্তে কালো মেঘ নেমে আসে হেলেনের চোখে-মুখে। গোপনে রাতে ট্রয় থেকে পালিয়ে যেতে চান হেলেন। কিন্তু ধরা পড়ে হেক্টরের হাতে। হেক্টর তাকে সাহস দেয়। এতে ট্রয়ে থেকে যান হেলেন। জাহাজ থেকে সর্বপ্রথম নামেন গ্রিকবীর একিলিস। নেমেই যুদ্ধ শুরু করেন একলিস ও তার সঙ্গীরা। প্রথম যুদ্ধেই ট্রয়নগরীর বন্দর দখল করেন নেয় গ্রিকরা। এভাবে টানা ১০ বছর বন্দর ও রাজ্য অবরোধ করে রাখে গ্রিকরা। বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধে নিহত হয় একলিসের ভাই উইরোরাস, প্যারিসের বড় ভাই ট্রয়বীর হেক্টর ও নাম না জানা উভয়পক্ষের হাজারও যোদ্ধা। যুদ্ধে সহজে জয়লাভ না করতে পেরে গ্রিকরা প্রতারণার আশ্রয় নেয়। তৈরি করে বিশাল আকৃতির ঘোড়া। যার নাম ট্রোজান হর্স। ঘোড়ার মধ্যে লুকিয়ে রাখে শত শত সৈন্য। উপহার হিসেবে পাঠায় ট্রয় রাজার কাছে। রাজ্যের বাইরে লুকিয়ে থাকে গ্রিকরা কিন্তু এসবই অজানা থাকে ট্রয়বাসীর কাছে।
মহা-আনন্দে আর উৎসাহে ঘোড়াটিকে রাজ্যের ভেতরে নেয় ট্রয়বাসী। কিন্তু বিধি বাম, গভীর রাতে ঘোড়া থেকে বের হয়ে ট্রয়বাসীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায় গ্রিকরা। গ্রিক সৈন্যরা ট্রয় রাজ্যে ধরিয়ে দেয় আগুন। মুহূর্তের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে ট্রয়নগর। আগুনে পুড়ে হাজার হাজার সৈন্য আর নিরীহ নাগরিক মারা যায় কয়েক। একিলিস ছুটে যায় হেলেনকে বাঁচানোর আশায়; কিন্তু প্যারিস তীর বিদ্ধ করে মেরে ফেলে একিলিসকে। পালিয়ে যায় হেলেন, জয়লাভ করে গ্রিকরা। কিন্তু যে হেলেনের জন্য এত কিছু তাকে মেনেলাউস কাছে পেয়েছিল কিনা তা আজও অজানা।
ট্রোজান ওয়ার বা ট্রয়ের যুদ্ধে এ ঐতিহাসিক কাহিনী অবলম্বন করে অন্ধ গ্রিক মহাকবি হোমার একটি বিখ্যাত মহাকাব্য রচনা করেন যার নাম 'ইলিয়াড' ট্রয়ের অপর নাম ছিল ইলিয়াম। এছাড়াও 'ওডিসি'তেও এর কিছু কিছু উল্লেখ আছে।
এই ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিখ্যাত মুভি ট্রয়। আশা করি ট্রয় নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। যারা দেখেন নি এখনও তাদের বলছি, অনেক বড় মিস করেছেন।
বি : দ্র : এই পোষ্ট টি আমার প্রিয় এক ছোট ভাই রিয়েল এবং বড় ভাই দাইফ কে উৎসর্গ করলাম।
জীবনের গল্প
মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
অভিমান
" অভিমান "
তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।
আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার কিছু ভুল!
১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...
অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা
আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন