somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আর কতদিন রব মেরুদন্ডহীন নপুংসকতা নিয়ে?

১০ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ছবিটি দেখে চিনতে পারেন? এটিই মৌলভিবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি হাম হাম জলপ্রপাত। নির্জন-নির্মল পাহাড়ের প্রায় দেড়’শ ফুট উঁচু থেকে টলমলে স্বচ্ছ পানির ধারা নিষ্ঠুর পাথরের গা লেপটে গড়িয়ে পড়ছে আর প্রবল স্রোতে কলকলিয়ে বয়ে যাচ্ছে একেবেকে..........এই সেই অনিন্দ্য সৌন্দর্য যার মায়ায় চোখ ফেরানো অসম্ভব বলে সবাই!

এই অপরিচিত স্থানটি কিছুদিন ধরে আমাদের সবার পরিচিত হয়ে উঠেছে। দুর্গম পাহাড়ি এই ঝর্ণা ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে প্রতিদিন। যোগাযোগ ব্যবস্থা আর প্রচারণারকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে ভ্রমণপ্রিয় বাংলাদেশীরা পরম আগ্রহে হাম হাম নামের এই জলপ্রপাতটির মায়ায় ভাসতে যাচ্ছিল প্রতিনিয়ত। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে হঠাৎ এমন কিছু ভ্রমণপ্রিয় মানুষ সেখানে গিয়ে বি এস এফ এর বাধা পায়।ঘটনাটি যেহেতু কোন পেপারে আসে নি কিংবা অনেকেই বি এস এফ এর বাধা পায়নি, তাই ধরে নিচ্ছি বি এস এফ ঐ জায়গায় অবস্থান করেছিল কিছু সময়ের জন্য, যেটা সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে অহরহ ঘটে যাচ্ছে।

সীমান্তবর্তী কুরমা বন বিটের দুর্গম পাহাড়ের অভ্যন্তরে নয়নাভিরাম ও রোমাঞ্চকর এই হাম হাম জলপ্রপাতটির ঠিক পূর্ব দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। কমলঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কি.মি পূর্ব দক্ষিণে রাজকান্দি রেঞ্জের কুরমা বন বিটের প্রায় ৮ কি.মি অভ্যন্তরে দৃষ্টিনন্দন এই হাম হাম জলপ্রপাত অবস্থিত। স্পষ্টত বাংলাদেশের সীমানায় অবস্থিত হাম হাম ভারতের সীমানায় যাবার কোন কারণ নেই। নিভৃতে কোন জাদুকরের জাদুর ছোয়ার বাংলামায়ের অপরূপ সৌন্দ্যর্যে তবে কি ভাগ বসাতে চাচ্ছে ওরা? তথাপি বাংলার মাটিতে বি এস এফ এর অবস্থানও
দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য চরম হুমকি!

কবে বন্ধ হবে এই বন্ধুসুলভ শোষণ?

১৯৭৫ সালে কলকাতা বন্দরকে রক্ষার অজুহাতে ফারাক্কা চালু করেছিল ভারত। লোকদেখানো পানিচুক্তির কোন বাস্তবায়ন চোখে পড়েনি আপাত দৃষ্টিতে। এক ফারাক্কা প্রতি বৎসর বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করে যাচ্ছে বাংলাদেশের। শুকিয়ে মরে যাচ্ছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। বাংলাদেশকে প্রায়ই বড় বন্যার সম্মুক্ষিন হতে হচ্ছে। গড়াই নদী এখন সম্পূর্ণ ভাবে বিলুপ্ত। খুলনা অঞ্চলের মাটির লবনাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। । পানির স্তর অনেক নেমে যাওয়ার দক্ষিণ অঞ্চলের প্রায় ১২১,৪১০ হেক্টর জমি মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যদি বাংলাদেশের পরোক্ষ ক্ষতির হিসাব করা হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক গুণ ছাড়িয়ে যাবে।

বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের পর এবার পূর্বাঞ্চল ধ্বংসের পরিকল্পনায় হচ্ছে টিপাইমুখ বাধ, যা নির্মিত হলে রিখটার স্কেলের ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে এর পার্শ্ববর্তী ২০০ বর্গকি.মি. এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হতে পারে। হুমকির মুখে পড়বে ঐ অঞ্চলে বাংলাদেশের সকল সেচ প্রকল্প। মরে যাবে মেঘণা নদী। ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে এবং মরুকরণ নিশ্চিৎ হবে।

বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করার আরেকটি সুতীক্ষ পরিকল্পনায় রয়েছে ভারতের আন্তণনদী সংযোগ প্রকল্প। এতে হিমালয় থেকে প্রবাহিত নদীগুলিকে যুক্ত করা হবে ১৪টি সংযোগকারী খালের মাধ্যমে৷ যেমন, কোশি-ঘাগরা, ঘাগরা-যমুনা, ফরাক্কা-সুন্দরবন, ব্রহ্মপুত্র-গঙ্গা, সুবর্ণরেখা-মহানদী, গঙ্গা-দামোদর-সুবর্ণরেখা ইত্যাদি৷ গঙ্গা ও তিস্তার উজানে ভারতীয় ব্যারেজের ফলে এমনিতেই বাংলাদেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশেরও বেশি এলাকায় মরুকরণ ঘটেছে। সেই সাথে আছে মেঘনার উজানে টিপাইমুখ বাধ ও ফুলের তল ব্যারেজের হুমকী। বাকি ছিল ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা। এখন আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে সরিয়ে নেয়ার মানে হলো বাংলার ব্রহ্মপুত্রকে মেরে ফেলা।

বাংলাদেশকে রক্ষা করার কোন পরিকল্পনা ও প্রতিবাদ ছাড়াই সরকার ভারতেকে খুশি করার চিন্তায় বিমগ্ন রয়েছে। সিলেট সীমান্তে যৌথ জরিপের নামে বাংলাদেশের ২৬১ একর ভূমি ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এর মাঝে হামহাম নেই এটুকু নিশ্চিৎ হওয়া গেছে। হামহামে বি এস এফ এর নীরব অবস্থান কি ইংগিত করছে সেটা কি ভেবে দেখার সময় এখনও আসে নি?

বিডিআর হত্যাকান্ডের পর গঠিত হয় বিজিবি। এবং তারপরই শুরু হয় বি এস এফ এর সীমান্ত ধ্বংসযজ্ঞ। বি এস এফ এর গুলিতে পাখির মত বাংলাদেশীরা মারা যাচ্ছে সীমান্তে। মন চাইলেই বাংলাদেশীদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে ওরা। উলংগ করে ওদের শক্তি পরখ করে নিচ্ছে। মানবাধিকার কতটুকু লঙ্ঘন করতে পারে ওরা সেটা প্রমাণ হয়েছে কিশোরী ফেলানী’র মৃত্যুতে! ৩০ ঘন্টা কাটাতারে ঝুলে ছিল বাংলাদেশের ইজ্জত। সীমান্তে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী মানুষ হত্যা ইসরাইল-ফিলিস্তিন সিমান্তে হয় না, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন অনুসারে সেটা ঘটে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তেই! ২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্তই বি,এস,এফ এর গুলিতে মারা যায় ৩১৫ জন বাংলাদেশী এবং বাকি দু'বছরের ঘটনা তো সবাই জানেন!

১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে নিস্বঃ করে দিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান নামক ঘাতক রাষ্ট্র। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পংগু করে দেবার পরও সেটা মাথা তুলে দাড়াতে পেরেছে। আর আজ এই হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আমাদের পরমবন্ধুর দাবিদার ভারত। ট্রানজিটের নামে আমাদের নদীর বুকে রাস্তা করে মেরে ফেলা হচ্ছে নদী। ভারতীয় অপসংস্কৃতি আজ জাতির শিরায় শিরায় বইছে, হাজার বছরের আমাদের ঐতিহ্যকে মুছে দেবার তাড়নায়!

বি এস এফের নির্যাতনের প্রতিবাদ এর আগেও হয়েছে এবং হয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাকও এসেছে প্রতিবাদস্বরূপ। কিন্তু ট্রাকে ট্রাকে ইলিশ পাঠিয়ে কিংবা দেশমাতার বুক কেটে ট্রানজিট দিয়েই পদলেহনে ব্যাস্ত বাংলাদেশ সরকার। গত বৃহস্পতিবার রাতেও সীমান্তসংলগ্ন বিরামপুর গ্রামে ঢুকে তান্ডব চালায় বি এস এফ। কিন্তু গ্রামবাসীদের প্রতিবাদের মুখে কাউকে টেনে হিচড়ে ভারত নিয়ে যেতে পারেনি ওরা! কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলবে? হামহামের পর কোনদিকে নজর ওদের? এই কালোনজরকে রুখে দিতে হবে। এ কেমন বন্ধুত্ব যাতে কোন বোধ নেই? আর নতজানু পররাষ্ট মন্ত্রনালয়ই বা কার ভয়ে মাথা লুকিয়ে আছে? সমুদ্রজয়ের জুজু দেখিয়ে কি এসব লুকানো যাবে?

সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে, দেশ ধ্বংস হতে চলেছে। বাংলার মাটিতে তরুণদের জাগরণে পালিয়েছিল পাকিস্তান। সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিবাদ-প্রতিকারের সময় নেই আর। নতজানু মস্তক উঠিয়ে মনে বসাতে হবে,
"দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ!"

বি: দ্র: হামহামে বি এস এফ এর অবস্থানের ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বাংলাদেশের মাটিতে বি এস এফ কে মনমত ঢুকে বাংলাদেশীদের ধরে নিয়ে যাবার অধিকার কেউ দেয়নি এবং বিরামপুরে ঘটে যাওয়া ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

আপডেট: বিজিবি হামহাম থেকে একরকম তাড়িয়ে বের করেছে বি এস এফ দের, যা ঐ এলাকার লোকজনের কাছে জানা গেছে। হামহাম থেকে ফিরে এক বন্ধুর কাছে জানা গেল খবরটা।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৩১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×