যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করে আমরাই অপরাধী হয়ে গেছি। কেবল শহীদদের কাছে নয়, আমরা আমাদের নিজেদের কাছেও এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছেও। এ ব্যর্থতার জন্য ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রতিহিংসার ব্যাপার নয়। এটা হচ্ছে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার এবং একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের ব্যাপার। এত বড় অপরাধের বিচার হয়নি বলে দেশে বিচার ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমেছে। এরকম ভয়ঙ্কর অপরাধ করেও যদি অপরাধীরা পার পেয়ে যায় তাহলে ছোটখাটো অপরাধের বিচার হবে এটা আমরা আশা করবো কীভাবে?
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে আগের কোনো সরকারই আগ্রহ দেখায়নি, কারণ তারা ব্যস্ত ছিল নিজেদের স্বার্থ নিয়ে। জনগণ যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রধান শক্তি ছিল তারা কিন্তু কখনো এ অপরাধ ও অপরাধীদের ক্ষমা করতে পারেনি। কেননা জনগণ এদের নৃশংসতার ভুক্তভোগী। শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষ দেখেছে এরা কেবল সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা পায়নি, এরা রাষ্ট্রক্ষমতারও অংশীদার হয়ে গেছে এবং তাদেরই প্ররোচনা ও আনুকূল্যে দেশে জঙ্গিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। যেমনটি পাকিস্তানি আমলেও দেখা যায়নি। যুদ্ধাপরাধীরা কেবল গণহত্যা করেনি, তারা জাতি হত্যায় উদ্যত হয়েছিল। তাদের রণক্ষেত্রে পরাজিত করা গেছে। তবে রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে পরাজিত করা যায়নি। তাদের তৎপরতার পেছনে বিশ্ব পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের সমর্থন রয়েছে। আমাদের দেশের সরকার পুঁজিবাদে বিশ্বাসী, তাই তারা ইসলামি জঙ্গিদের যতটা না শত্রু মনে করে তারচেয়ে অধিক শত্রু মনে করে তাদের যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাকে ধারণ করে এবং রাষ্ট্র ও সমাজকে গণতান্ত্রিক করতে চায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিটি এখন জোরদার হয়েছে তার কারণ জনগণ এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এ ব্যাপারে সচেতন হয়েছে। তারা মনে করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যর্থতা তাদের জন্য অপমানকর এবং গ্লানিময়। তারা সোচ্চার হয়েছে বলেই দাবিটি জোরদার হয়েছে এবং বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে অঙ্গীকার করেছে। দেশবাসী আশা করবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ পর্যন্ত হবে। এ ব্যাপারে আপসের কোনো সুযোগ নেই
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১২ সকাল ১১:২৫