somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আনু মোল্লাহ
আন্‌ওয়ার এম হুসাইন। বাংলাদেশী লেখক। দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক বাংলা ও কিশোর বাংলায় গল্প লিখি। প্রকাশিত গল্পের বইঃ প্রত্যুষের গল্প (পেন্সিল)nউপন্যাসঃ এমনি এসে ভেসে যাই (তাম্রলিপি)।

ওভারস্মার্ট

৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চাকরিটা একেবারে নিশ্চিত ছিল। কিন্তু হল না।
তখন সবে মাত্র পাশ করে বের হয়েছি। চারিদিকে ইন্টারভিউ দিয়ে বেড়াচ্ছি। যাকে পাই তাকে বলছি, ভাই একটা জব দরকার খুব। পারলে একটু ব্যবস্থা কইরেন। সবাই মুখে মুখে হাতি-ঘোড়া দেখায়। কাজের বেলায় লব-ডঙ্কা। এর মধ্যে একদিন রাশেদ ভাই আমাদের সিভি নিলেন। আমাদের মানে আমার আর শরীফের। রাশেদ ভাই আমার রুমমেট মাসুম ভাইয়ের বড় ভাই। আমাকে বিরাট আদর করেন। খুব ভালো জানেন। বিরাট এক কোম্পানীতে বড় পদে কাজ করেন। ক্ষমতাধর মানুষ। উনি আশ্বাস দিলেন চাকরি হবে। ওনার অফিসে লোক নিবে। আশ্বাস অনেকেই দেয় কিন্তু রাশেদ ভাইয়ের কথা আলাদা। উনি সবার মত পালতু লোক না। সুতরাং আমরা ধরে নিই যে চাকরি হয়েই গেছে। শুধু লেটারটা হাতে পাইতে দেরী।
সত্যি সত্যি আমাদের একদিন কল করে বসল। কোন রিটেন না, ভাইভা না, আমাদের শুধু দেখা করতে হবে। এইচ আর ডিপার্টমেন্টে। খুশিতে আমরা তিনহাত লম্ফ দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়লাম। এপ্রিল মাসের পনের তারিখ ঠিক সকাল দশটায় আমাদের দেখা করতে হবে।
ঐ দিক সকাল বেলা, শরীরের চামড়া-চুমড়া ঘষে মেঝে, চুলে তেল-জেল মেখে, ক্রীম লোশন দিয়ে, টাই-টুই পরে আমরা রেডি হলাম। সাজ-গোছের এই সমস্ত উপকরণের সব কিছুই আবার আমাদের হাতে ছিল না। এর কাছে ওর কাছে ধার করতে হল। এইসব করতে করতে সকাল বেলা একটু দেরী হয়ে গেল। সময়টা একেবারে টায়-টায় হয়ে গেল।
আমরা দৌড়তে দৌড়তে বের হলাম। যথা-সাধ্য দৌড়ানোর পরেও আমরা ঠিকঠাক পৌঁছাতে পারলাম না। সাড়ে দশটা বেজে গেল। বাংলাদেশের হিসাবে কি এমন দেরী! এখানে টাইম ঠিক রাখা আর কথা ঠিক রাখা এগুলো স্মার্টনেসের মধ্যে পড়ে না। দশটা বললেন এগারোটা বুঝে নিতে হয়।
তবুও বুক দুরু দুরু করে। শরীফ বলল, জ্যাম-ট্যাম এগুলো সবাই বলে। নতুন কিছু বলতে হবে।
পাঁচ মিনিট বসার পর একজন অফিসার এলেন। এর মধ্যে আমাদের চা দিয়েছে। রঙ চা। আমরা মাত্র কোয়ার্টার কাপ চা শেষ করেছি। এর মধ্যে তিনি এসে বললেন, আপনাদের তো দশটায় আসার কথা? এত দেরী? কথাটা এমনভাবে বললেন, যেন আমাদের সকালে আসার কথা আমরা বিকালে এসেছি।
শরীফ বলল, স্যার আমাদের গাড়ির চাকা পাংকচার হয়ে গিয়েছিল।
‘তো কি হয়েছে, অন্য গাড়িতে আসবেন। আপনি তো আর চাকা সারেন নাই।‘
‘স্যার আমাকে তাই করতে হয়েছে। আমি নিজে ড্রাইভ করে এসেছি।‘
শালা এমন ডাহা মিথ্যা কথা বলছে কি করে। ও জীবনে স্টিয়ারিং ধরেছে কি না সন্দেহ।
এবার অফিসার আমাকে বলল, আপনি?
আমিও চান্স নিয়ে বললাম, আমি ওর গাড়িতেই ছিলাম।
অফিসার আর কিছু বলল না। এর মধ্যে আমরা চা শেষ করলাম। লোকটি আবার এসে আমাদেরকে আরেকজন অফিসারের রুমে নিয়ে গেল। রুমে সাইবেরিয়ার ঠান্ডা। আমার কাঁপাকাঁপি লাগার দশা। বুঝলাম ইনি যেনতেন কেউ নন। বিরাট বড় অফিসার হবেন। নইলে রুম এত ঠান্ঠা হবার কথা না। যত বড় অফিসার মেজাজ তত গরম, রুম তত ঠান্ডা, শুনেছি এটাই নাকি নিয়ম।
ইনি খুব সুন্দর করে বললেন, আমাদের খুব ছোট্ট একটা টেস্ট এর মধ্য দিয়ে যেতে হবে। খুব সিম্পল। এটা আমাদের কোম্পানির নিয়ম। ভদ্রলোক খুব আন্তরিক। মধুর ব্যবহার। আমাদের দুজনকে আলাদা দুই রুমে বসিয়ে দিলেন। পড়া লেখায় আমরা খুব একটা খারাপ ছিলাম না। সাইন্স, ম্যাথ, ইকোনমিক্স কোন কিছুতে আমাদের আটকাবার কথা না। আর তো বলল সিম্পল টেস্ট।
সত্যি সিম্পল। একশ মার্কের পরীক্ষা। মাত্র দুটো প্রশ্ন।
দাম বাড়লে চাহিদা কমে বুঝিয়ে লিখ। মার্ক মাত্র দশ। এতো দুধভাত, এইচএসসি লেভেলের কথাবার্তা।
পরের প্রশ্ন, গাড়ির কোন চাকা পাংচার হয়েছিল? মার্ক নব্বই।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:৫৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×