somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিরিয়াস পাঠকরা তাকাতে পারেন---- (ঘোর-কলিযুগের) লেখাটি গুরুত্ত্বপূর্ণ বিবেচনায় রি-পোষ্ট করছি

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



'সন্ত্রাস' বিরোধী যুদ্ধ, সুশীল সমাজ ও সেনাবাহিনী : বাংলাদেশের ১/১১



বাংলাদেশে ২০০৭ সনের জানুয়ারি মাসে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে ক্ষমতা দখল হয় তার চরিত্র ও লক্ষ্য নিয়ে অল্পবিস্তর কথা বলাই এ লেখার উদ্দেশ্য। আরো বিশেষ করে বললে, এবারের অভ্যুত্থানের চরিত্রে নতুনত্ব ও তৎসংশ্লিষ্ট স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাস্তবতা বদলে যাওয়ার শর্ত ও বদলে ফেলার কায়কারবারের অন্দরমহল একটু পরখ করে দেখা। বিষয়টার প্রেক্ষাপট অনেক বড় এবং নানান উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে এগিয়েছে। সামগ্রিকভাবে সবগুলো উপাদান, তথ্য ও ঘটনা ধরে ধরে আলোচনা না করতে পারলে অনেক কিছুর ব্যাখা-বিশ্লেষণ পরিস্কার করা কষ্টকর। তবুও সংপ্তি পরিসরে কাটছাট করার দায় নিয়ে এখানে নোক্তা তোলার প্রণোদনাটা আসে @ ফারুক ওয়াসিফের সাথে একটা আলোচনার প্রাসঙ্গিকতায় (Click This Link)। বলেছিলাম পোস্ট দিয়ে বিশদে বলব। তাই এই অবতারণা।

পেছন ফিরে আবার একটু দেখা ঃ

য়ুরোপখন্ডে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শেষে কয়েকটা গুণগত পরিবর্তন ঘটে। যার ধারাবাহিকতাই নির্ধারণ করে দেয় পরবর্তীতে পরিতর্তিত বিশ্ব-ব্যবস্থায় কে কি নিয়ামক ভূমিকা রাখবে। সরাসরি কলোনী (জবর)দখল আর নিয়ন্ত্রণের যুদ্ধ শেষে এই প্রথম সত্যিকার অর্থে অর্থনীতিক ব্যবস্থার ভিতর দিয়ে বিনিময়-বাজার ব্যবস্থার (World Market) যাত্রা শুরু হয়। আর এ যাত্রার নাবিক, এই প্রথম নিয়ন্তা হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ায় আমেরিকা। সবার শেষে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ, মূল ভূখন্ডে আক্রান্ত না হওয়া ও নিরাপদে যুদ্ধ ব্যবসায় একচেটিয়া বিপুল মুনাফা কামাই-- এসব মিলিয়ে আমেরিকার মেরুদন্ড কেবল সিধা নয় বরং শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে দেয়। যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি আর ধার-দেনা হতে উদ্ধার পেতে আরো বেশি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকট সমর্পন ও শর্তে-বন্দি হওয়া ছাড়া ভিন্ন কোনো উপায় য়ুরোপের কাছে অবশিষ্ট ছিল না। বিধ্বস্ত অবকাঠামো ও অর্থনীতির পুনর্গঠন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেন তদারকি করতে যে দুটো সংস্থা তৈরি হয়-- বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল--তার নিয়ন্ত্রণ ও নীতি প্রণয়নে স্বার্থের প্রতিফলনেও স্বাভাবিকভাবে প্রাধান্য সৃষ্টি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।

পুরো এই ঘটনা চক্রের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম তখন সোভিয়েত রাশিয়া। যুদ্ধে অংশগ্রহণের ধকল সামলিয়ে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে পুনরায় প্রাণসঞ্চার, সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি সঞ্চয়ের কঠোর প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হয় তাকে। মোটা দাগে উৎরে গিয়ে সক্ষম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জায়গা করে নিতে পারলেও তার বাইরে প্রভাব সঞ্চয় ও ক্ষমতা বিস্তারের সুযোগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো রাশিয়ার ছিল না। যেমন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফর মতো প্রতিষ্ঠানের মারফতে নিজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক স্বার্থ ও সুবিধা হাসেলের কোনো সুযোগ ছিল না। পুরোটাই নির্ভর করতে হয়েছে রাজনৈতিক আদর্শ প্রচারের মাধ্যমে নিজের প্রভাবাধীন প্রভাবশালী শক্তি সৃষ্টির উপর। বিনা পয়সায় বইপত্র থেকে বিপ্লব রপ্তানী যার অন্যতম কর্মসুচি হয়ে এসেছে। সেটা ভালো কি মন্দ সে দিকটা এখানকার আলোচনার জন্য মুখ্য নয়। বিবেচ্যও নয়। এই প্রায়োগিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিন্নতাই পরবর্তীতে ঠান্ডা যুদ্ধকালিন পররাষ্ট্রনীতির ছাঁচ তৈরিতে প্রধান নিয়ামক আকারে কাজ করেছে। কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে দিয়েছে।

(ঠান্ডা)যুদ্ধ, পররাষ্ট্রনীতি ও আমাদের রাজনীতি ঃ

দুই ব্লকের প্রতিদ্বন্দ্বীতা ও শক্তির ভারসাম্য আনয়নের কৌশলের মধ্যে প্রধান হয়ে পড়ে তৎকালিন উপনিবেশ-উত্তর সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত বা স্বাধীন হতে চাওয়া দেশগুলোর উপর নিজেদের প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতার প্রচারণায় আদর্শিক বিভাজনকে সামনে রেখে উভয় ব্লকের পররাষ্ট্রনীতি নিজের পক্ষে মেরুকরণে যে রাজনৈতিক শক্তির সমাবেশ ঘটায় তাই তৎকালে পুঁজিবাদী বনাম সমাজতান্ত্রিক বলে বিভক্ত ছিল। ফলে পররাষ্ট্রনীতির প্রায়োগিক লক্ষ্যই ছিল নিজ নিজ শিবিরের মিত্র শক্তিকে রাষ্ট্রমতায় অধিষ্ঠিত করা। আবার অন্যদিক থেকে এরা ছিল ঐ ঐ পৃষ্ঠপোষক শক্তির অনুসৃত নীতি অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে নিজেদের রাজনৈতিক ধারা ও কর্মসূচি পরিচালনায় অনুগত।

এখন ঠান্ডা যুদ্ধকালিন দুই ব্লকের পররাষ্ট্রনীতির এই প্রয়োজনকে মাথায় রাখলে আমরা বুঝতে পারি, 'তৃতীয় বিশ্ব' বা আমাদের মতো দেশে ব্যাপক গণসমর্থন-ধন্য মূলধারার দলেরও সামাজিক আকাঙ্ক্ষা এবং সামাজতান্ত্রিক শক্তি শিবিরের অভ্যন্তরীণ চাপ মোকাবেলায় অন্তত মধ্যবর্তী একটা অবস্থান বজায় রাখতে হতো। মার্কিন নীতির পক্ষাবলম্বন করে সরাসরি তো কখনোই সামনে আসা সম্ভব ছিল না। অন্তত গণসমর্থন বজায় রাখার বিবেচনায়। ঠিক এই সুবিধাটিই ছিল সোভিয়েত রাশিয়ার। সমাজতান্ত্রিক ছাড়াও প্রায় সব জাতীয়তাবাদী (নিয়ন্ত্রীত অর্থনীতি ও মূল অর্থনীতিক ক্ষেত্রগুলো জাতীয় করণের নীতি যারা অনুসরণ করতে চাইতো) ধারার পররাষ্ট্রনীতিক আশ্রয়ও শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠতো রাশিয়া। ফলে শুধুমাত্র ঔপনিবেশিক ভাবধারায় লালিত একটা অংশের রাজনৈতিক শক্তির উপর ভর করে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল একটা রাষ্ট্রশক্তি পরিগঠনের পরিস্থিতি ও বাস্তব অবস্থা তখন মোটেই ছিল না।

সে সমস্যার মুখে, এইসব দেশকে পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্তর্গত করার জন্য যেভাবে স্থানীয় অর্থনীতিকে বিশ্ববাজারের অধীন করা দরকার তারও অনুকুল শক্তি সেহেতু তখন বিশ্বব্যাংকের পক্ষে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বাকি থাকে রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগের সাংগঠনিক শক্তি সেনাবাহিনী। এই হাতের পাঁচ ব্যবহারের আরেকটা লাভ হলো, পাল্টা বলপ্রয়োগের রাজনৈতিক শক্তি সমূহকে কঠোরভাবে দমনের জন্যও তা যথেষ্ট উপযুক্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা বিশ্বব্যাংক নিজেদের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের দেখভাল ও স্থানীয় উৎপাদন ক্ষেত্রকে পুঁজির প্রয়োজনানুসারে বিন্যস্ত করার মূল কাজটাই করতে হয়েছে এভাবে সামরিক হস্তক্ষেপের মারফতে। আর বিপরীতে, সমাজতান্ত্রিক শিবিরের মুখে তখন থেকেই পাল্টা প্রচার অকারে, বিশ্বব্যাংক ও সেনাবাহিনী গালি হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। আমাদের মতো দেশের জন্য একটা অনিবার্য যোগসুত্র ও সাধারণ সমীকরণের মতো দাঁড়িয়ে যায়। বামপন্থীদের কাছে এটা হয়ে যায়, মোটা দাগে সমস্ত কিছূকে ফর্মুলায় ফেলে ব্যাখ্যা আর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখার লজিক। বেশ প্রতিষ্ঠিত এবং অনায়াস। নব্বইতে এসে সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের মাধ্যমে স্নায়ু যুদ্ধের সমাপ্তির পর বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও হরেক রকমের বিপ্লবীপনার গণঅভ্যুত্থানের গল্পগাথা আর সেনাবাহিনীর শান্তি মিশনে যাওয়ার প্রেক্ষিতও তৈরি হয় এখান থেকে। এ বিষয় বিস্তারে প্রবেশ না করে আমাদের জন্য আলোচনার প্রাসঙ্গিকতায় মোটামুটি এটুকু বলা যায়, পুরানা বাস্তবতা ও কৌশলের বড় ধরণের রদবদল ঘটে। পরিস্থিতি পাল্টে যায়।

নিউ ওয়ার্ল্ড অডার, নিও লিবারেলিজম ঃ

সোভিয়েতের পতনের পর পুরানা পররাষ্ট্রনীতির মোড়বদলের প্রধান দিকটা হলো, এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রধান ও একক পরাশক্তি। সমাজতান্ত্রিক শিবিরের প্রভাবাধীনে থাকা শক্তিসমূহের দ্রুত ক্ষয় ও প্রভাব ফুরিয়ে লিবারেল বুর্জোয়া ধারার রাজনীতিতে মিশে যাওয়ার কারণে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মূলধারার দলগুলোকে আর কোনো কার্যকর বিরুদ্ধ চাপের মুখোমুখি থাকতে হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রকাশ্য মিত্র আর বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের দাওয়াই মাফিক অর্থনীতি পরিচালনা একটা নির্বিকল্প সাধারণ গৃহীত নীতি হয়ে পড়ে। যথেষ্ট জরোসোরে সবাই মিলে 'উদার গণতন্ত্র আর অর্থনীতি' আমল করার কাজে লেগে পড়ে। অবাধ বাজার ব্যবস্থা, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা আর ঢালাও বেসরকারি করণের জন্য বলপ্রয়োগী সংস্থার শক্তি ব্যবহার নতুন বিশ্বব্যবস্থার জন্য ( ক্লিনটন এরা) একেবারে গৌণ ও ঝামেলার হয়ে পড়ে। 'গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়' পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্কের বিপুল বিস্তার সম্ভব করে তোলার পথই তখন আমেরিকার নিউ ওয়ার্ল্ড অডারের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রাধান্য পায়। যে কারণে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত মহাআনন্দে স্বৈরাচার হটিয়ে 'সংসদীয় গণতন্ত্র'র সুখ নিতে থাকে। কিন্তু বিপত্তি বাধে ২০০১, আলকায়েদা আর তালেবান ফেনমেনায়।

'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ', সুশীল সমাজ ও সেনাবাহিনী ঃ

বলা যায় টুইন টাওয়ারের পরিক্রমায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশ করে তৃতীয় পর্যায়ের পররাষ্ট্রনীতিতে। যদিও সমস্যাটার সুত্রপাত ১৯৯৮সনের দিক থেকে। কিন্তু সেটা ডিসাইসিভ রূপ নিয়ে আর্বিভুত হয় এঘটনায়। সিভিল ফর্মের পুরানা ধরণে রাষ্ট্রক্ষমতা চর্চার পরীক্ষা নিরিক্ষার সুযোগ দানের জন্য দক্ষিণ এশিয়াকে (মূলত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর বিবেচনায় নিতে পারল না। প্রথমেই মোশারফের সামরিক সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে যুদ্ধের সঙ্গী বানাতে হয়। হাতের কাছে তৎক্ষণাত সেটাই ছিল অপশন। যদিও পরবর্তীতে সেটাকে অকার্যকর গণ্য করে বেনজির হয়ে এখন জারদারি টাইপের সিভিল-জাতীয় সরকারে এসেছে। মূল লক্ষ্যটা হলো যথাসম্ভব বেশি দল নিয়ে ( ইসলামি নামধারি দলগুলোকে বাদ দিয়ে পারলে ভাল) সম্মিলিতভাবে এইধারার মোকাবেলা করা। নিরাপত্তা কাউন্সিল আর জাতীয় সরকার হলো রাষ্ট্রশক্তি সাজানোর কৌশল। এর মাধ্যমে চলমান সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের সমর্থন ও আভ্যন্তরীণভাবে মোকাবেলার রাস্তা তৈরি করা। যুদ্ধটা চালিয়ে যাওয়া।

বাংলাদেশের বাস্তবতায় একটা বিশেষ সুবিদা ইতোমধ্যেই এখানে বিপুল শক্তি নিয়ে এনজিও কার্যক্রমের ফলে একটা অমল যোগ্য শক্তি গড়ে উঠেছে। যারা পরাশক্তির স্বার্থ রক্ষা ও বাস্তবানের জন্য অন্য যে কারো চাইতে বেশি উপযুক্ত ও সক্রিয়। অন্যদিকে তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এদেরকে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে সরাসারি চর্চাও অংশিদার হওয়ার বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। জাতীয় সরকারের মতো করে রাষ্ট্রপরিচালনার পরীক্ষার জন্যও বেশ লাগসই ব্যবস্থা। এদের নেতৃত্বে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ধাপগুলো শুরু হয়ে যায় এক এক করে। সুশীল সমাজকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংগঠিত করার জন্য তৈরি হয় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশান। টিআইবিকেও কাজে লাগানো হয় জনমত সৃষ্টি ও প্রভাবিত করার কাজে। সাথে দেবপ্রিয়'র যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন আর ড. ইউনূস সাহেবের দল করার ক্ষেত্র প্রস্তুতের যোগাড়-যন্ত্র।

তো অন্যদিকে, আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে আগে থেকে থাকলেও, মূলত ২০০১-এ নির্বাচনে জোট-সরকার ক্ষমতায় আসার পর একে মোকাবেলার জন্য আরেকটি জোটবদ্ধ শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ, বাম ও সেকুলার ধারা বলে পরিচিত দলগুলো নিয়ে পাল্টা ১৪দলীয় জোট গঠন করে। এই ঘটনাটা যদি নিছক বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিক মেরুকরণের ফলাফল দ্বারা পরিচালিত হতো বা আরো পস্ট করে বল্লে, এর সাথে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির গুরত্বপূর্ণ মোড়-বদলের প্রতিক্রিয়ায় গৃহিত নীতির সাথে মেলবন্ধন না ঘটত; অভ্যন্তরীণভাবে ঘটাবার সক্রিয় চেষ্টা করা না হতো তা হলে হয়তো এরূপ নিয়ে আজকের ''সেকুলার প্লান'' আত্মপ্রকাশ করতো না। যেটা আগেই উল্লেখ করেছি ৯/১১, মার্কিন তথা পরাশক্তিজোটের শত্রু-মিত্র, বিদেশনীতি, টার্গেট ও যুদ্ধ কৌশল একেবারে নতুন করে সাজাতে বাধ্য করে। এর ধারাবাহিকতায় আমাদের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের ভাগ্যও নির্ধারিত হয়ে যায়। এই যুদ্ধের অন্যতম টার্গেটে আমার পরিণত হই, চাই বা না চাই-- দোষ থাকুক বা না থাকুক।

বাংলাদেশের বেলায় গৃহীতি পররাষ্ট্রনীতি (সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের আওতায়) ঠিকঠাক করে বাস্তবায়নের কালপর্বে প্রবেশ করতে করতে ২০০৩ সাল শুরু হয়ে যায়। এর আগেই যেহেতু স্থানীয় রাজনীতিক শক্তির মেরুকরণে অলরেড়ি ইসলামিক নামধারি শক্তিগুলো বিএনপির সাথে গাটছাড়া বেধেঁ ফেলেছে, ফলে স্বভাবত এই ''অক্ষশক্তি'' মার্কিনদের জন্য আশু বিপদ ও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মোটা দাগে থিসিসটা ছিলো এতে বাংলাদেশে এইসলামিক রাজনীতির প্রাধান্য ও শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে হুমকি স্বরূপ (আলকায়েদার মতো) দলগুলো এখানে নিজেদের জায়গা করে নিবে। সবচেয়ে বিপদের দিক হলো এর মধ্যে আফগানিস্তান ও ইরাকে শুরু হওয়া যুদ্ধের কারণে সমাজিকভাবে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ''মিলিট্যান্ট ইসলামিক ফোর্স'' এর উন্খান ঘটতে পারে। ফলে ক্ষমতাসীন রাজনীতিক দলগুলাকে এদের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে দমনের জন্য ব্যবহারের প্রয়োজনীয় বাস্তব আবস্থা নাই। এটা ছিলো মূল মার্কিন থিসিস বা তাদের বাংলাদেশ পারসেপসান্স। এখানে আমি ভারত-ইসরায়েলের তারো আগে থেকেই গৃহীত নীতি ও কৌশলের দিকটিতে যাচ্ছি না।

তো, এই দিকটা মাথায় রেখে যারা টেররিজম গবেষণা বা প্রচার প্রপাগান্ডার ধরণ-ধারণগুলো বুঝতে চান তাদের জন্য হাডসন ইন্সটিটিউটের জার্নাল কাজে লাগবে। আরো অনেক আছে, এখানে বিশেষ করে নাম নিলাম, কারণ বাংলাদেশের অন্তত দুইজনের লেখা এতে পাওয়া যাবে। এক. ইমতিয়াজ আহমেদ ও দুই. আমেনা মোহসিন। সেই তখন থেকেই মার্কিন পারসেপসান্সের আলোকে সেখানে লেখালেখি হাজির আছে। এই ধারার সাম্পতিক উদাহরণ আলী রিয়াজের গতবছর বের হওয়া বইটি। তো, অ্যাকাডেমিক আর মিড়িয়ার মাধ্যমে যে জিনিষটা প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করার আয়োজন চলছিলো, তার সাথে প্রায়োগিকভাবে অর্থাৎ রাজনীতি ও রাষ্ট্রক্ষমতার পুনর্গঠনেরও কর্মসূচি এগিয়েছে সমান তালে (১/১১ যার চুড়ান্ত পরীক্ষা)। এখানেই স্থানীয় রাজনীতির সাথে আন্তর্জাতিক সমীকরণের সম্পর্ক; জায়মান অভ্যন্তরীণ বিরোধের সাথে কিভাবে পরাশক্তির যুদ্ধের মিত্র অনুসন্ধানের মওকা মিলে তার নজির।

ঠিক এখানেই আ. লীগ জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ''সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে'' যুদ্ধের স্থানীয় অংশীদার না হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতি চর্চা করতে পারে নি। বরং নিজেকে আগবাড়িয়ে নির্ভরযোগ্য মিত্র প্রমাণের চেষ্টায় উদগ্রীব থেকেছে। এটাকেই জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন আর সরকারে যাওয়ার, এমনকি জাতীয় সরকার নামক ভাগাভাগির পার্ট (সামরিক ও সুশীল মিত্রদের সাথে) হতেও আপত্তি রাখেনি।

এ অনুকুল পরিস্থিতিকে সঙ্গী করে সুশীল সমাজের তত্বাবধানে সেনা বাহিনীকে পেছনে রেখে জরুরি অবস্থা জারি করে ক্ষমতাটা দখল করে ফেলা হয়। গৃহীত নীতি ও কৌশল হিসেবে প্রিন্সিপাল ফোর্স আকারে থাকে সুশীল সমাজ। সামরিক বাহিনীকে সামনে আসতে দেওয়া হবেনা বা সামরিক সরকারের আভরণ থাকবে না এই আশ্বাস দূতাবাসের গ্রীণজোন থেকে নিশ্চিত করেই আদাজল খেয়ে মিডিয়া মোঘল আর সুশীল সমাজ ঝাপিয়ে পড়ে। ডেসালিয়ান কিম্বা ডেইলি স্টার গ্রুপের কথা সবার জানা, তাই আর বাগবিস্তারের প্রয়োজন নাই। এ হলো সংক্ষেপে বাংলাদেশে বর্তমানে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধেরত 'সিভিকো' শাসনের ভেদ কথা। ১/১১'র মরতবা।







৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×