somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি রাত, একটি দুঃস্বপ্ন

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত দুইটা কি আড়াইটা হবে। হঠাৎ অনেকগুলো জীপ, ট্যাংক......আরো যে কি কি, একটার পিছনে একটা অনেকগুলো। প্রতিটা গাড়ীর হেডলাইট মারাত্মক রকমের চোখ ধাঁধানো আলো ছড়াচ্ছে, অনুভূতিটা খুবই ভয়ংকর......

গাড়ীগুলো আমাদের হলের সামনে এসে দাঁড়ালো। জীপগুলো থেকে আর্মিরা নেমে আসতে থাকলো। গেটে দুমদাম বুটের শব্দ। এতো গাড়ীর শব্দে আর দারোয়ানদের আর্ত চিৎকারে প্রভোস্ট ম্যাডাম দৌড়ে বেরিয়ে এল। বুঝতে পারলেন সামনে কোন বিপদ অপেক্ষা করছে। দ্রুত মাথায় হলের এতোগুলো বাবা-মা ছাড়া মেয়েদের নিরাপত্তার ব্যাপারটি খেলে গেল। তাড়াতাড়ি অফিসরুম খুলে প্রক্টর স্যারকে ফোন দিলেন, দ্রুত সাহায্য চাইলেন। পরনে তখন ম্যাডামের ঘরের আটপৌরে আলুথালু শাড়ী।

এর মধ্যেই আর্মিরা গেট ভেঙ্গে ফেললো। দারোয়ান দাদুদের চিৎকারে, আর্মিদের বিভিন্ন হুঙ্কারে হলের অনেক মেয়েদেরই ঘুম ভেঙ্গে গেল। সবাই ভীত-সন্ত্রস্ত। সবাই যার যার রুমের বন্ধ দরজায় টেবিল-চেয়ার দিয়ে, ২/৩ জন ধরাধরি করে খাট টেনে দিয়ে দরজার উপর চাপ বাড়াতে লাগলো, এইটুকু ভরসা দরজা যেন এক লাথিতে না ভাঙ্গে। একটু যেন বেশী সময় লাগে। সবার গলা শুকিয়ে এসেছে, মেয়েরা কেউ কেউ ভয়ে কান্না-কাটি শুরু করে দিয়েছে। আমাদের রুমেও আমরা খাট দিয়ে সামনের পিছনের বারান্দার দুই দরজা চাপা দিয়েছি, সবাই খাটের নীচে লুকিয়ে আছি, সবাই কাছাকাছি, জড়াজড়ি অবস্থা, চোখে জল, হাত-পা কাঁপছে ভয়ে। ছোটরা বড়দের বলছে, আপু এখন কি হবে? আমরা কি বাঁচতে পারবো না, বাবা-মার সাথে আর কখনো দেখা হবে না?? বড় আপুরা চুপ, কান্না-কাটির মতো মানসিক অবস্থা তাদের নয়। তারা কিছুটা বোঝে, কিন্তু আবার বুঝতেও পারে না সবটুকু, ঠিক কি ঘটতে যাচ্ছে এ জীবনে, দেশের যে অস্থির অবস্থা!! তাদের চিন্তিত ও আতংকিত চেহারা ছোটদের ভরসা দিতে পারছে না।

এদিকে প্রক্টর স্যার চলে এসেছেন, হয়তো ভিসি স্যারও জেনে গেছেন ব্যাপারটা, প্রভোস্ট ম্যাডামসহ আর্মিদের খুব অনুনয়-বিনয় করছেন। প্লীজ আপনারা ভেতরে যাবেন না। এরা আমাদের মেয়ের মতো। এদের কোন ক্ষতি করবেন না, মারবেন না প্লীজ। আমাদের কথা শুনুন, একটু দয়া করুন, প্লীজ.........

কিন্তু না, পাষন্ডদের মন গললো না। আর্মিরা এবার বিভিন্ন রুমের দরজার সামনে চলে এসেছে। হাতে বড় বড় টর্চ, এর মধ্যে হলের আলো নিভিয়ে দেয়া হয়েছে, মনে হয় মেইন সুইচ অফ করে দিয়েছে বর্বররা। দরজায় ঠাস ঠাস লাথি পড়ছে.................................................................



হঠাৎ আমি লাফ দিয়ে উঠে বসলাম। টের পেলাম খুব কাঁপছি, প্রচন্ড ভয়ে। অন্ধকারে চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম। কান খাড়া করে দরজায় লাথির শব্দ শোনার চেষ্টা করছি। না, কোন শব্দ নেই। চারপাশে বারবার দ্রুত তাকালাম। মাথা কিছুটা ঠিক হয়ে এলো। এবার বুঝলাম, আমি স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্ন নয় দুঃস্বপ্ন, প্রচন্ড রকমের দুঃস্বপ্ন!! পাশে আমার ডাবলিংমেট সিনিয়র আপু ঘুমিয়ে আছে। বাইরের আলোতে আস্তে আস্তে অন্ধকার সয়ে এলো চোখে। আস্তে আপুকে ডিঙ্গিয়ে খাট থেকে নেমে এলাম, হাতঘড়িটা নিয়ে জানালার পাশে আলোতে সময়টা দেখলাম। ঠিক আড়াইটা/ তিনটার মতোই বেজেছিল তখন।

যাক্‌, স্বাভাবিক হয়ে আসাতে আর কারো ঘুম ভাঙ্গালাম না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আপুদেরকে দুঃস্বপ্নের কথাটা বললাম। মাস্টার্সের আপুটা বললেন, হলে নতুন এসেছতো, এই দুঃস্বপ্ন নতুন আসা অনেক মেয়েরাই দেখে, আমিও দেখেছি। আসলেই এই দুঃস্বপ্ন আমাদের তাড়া করে ফেরে সবসময়। ব্যাপার না, সব ঠিক হয়ে যাবে।

আমি যে বিল্ডিং-এ থাকতাম, তার সামনে সুন্দর একটি ফুলের বাগান আছে। আপুটি আরো বললেন, ঐ যে বাগানটা দেখছ, এটা একাত্তর সালে পুকুর ছিল, সেসময় অনেক মেয়ে এখানে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে মেয়েরা ভয় পেত বলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এরপর বাগান করা হয়েছে। যতদিন হলে ছিলাম, এই বাগানের সামনে দিয়েই সবসময় চলাফেরা করতে হয়েছে। প্রায়ই সামনে দিয়ে যাবার সময় ভাবতাম, বীরাঙ্গনা বড় আপুরা তোমরা এদেশের জন্য সম্ভ্রম দিয়েছ, জীবন দিয়েছ। আমরা কি তোমাদের ন্যুনতম যোগ্য হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারছি? পারবো কি আমরা এই দেশের জন্য সামান্য কিছুও করতে?









[এই দুঃস্বপ্নটি দেখার পর থেকে সবসময়ের জন্যই মাথায় গেড়ে বসে আছে। আমি কখনো কোন স্বপ্ন এতো স্পষ্ট দেখেনি। বোধ হয় ইতিহাস প্রায়ই পড়া বা শোনা হয় বলেই। আমি যা দেখেছি, বর্ণনার খাতিরে ২/১ লাইন বেশী লিখতে হয়েছে, কিন্তু মূল কাহিনী ঠিকই আছে, অনুভূতিগুলোও একই। এটা সবসময় আমার মাথার ভিতরে একটা পেইন, চেয়েছি পেইনটা দূর করতে, তাই ব্লগে লেখা। জানি না সফল হবো কিনা। আজ অমি পিয়ালের পোস্ট পড়ে আবারো ১২ বছর আগের সেই দুঃস্বপ্নের কথা মনে পড়ে গেল!! হলে উঠেছিলাম১৯৯৭ এর ২ আগস্ট সন্ধ্যায়, ৩ তারিখ থেকে ক্লাশ শুরু। আগস্ট বা সেপ্টেম্বরের কোন এক রাতের স্বপ্ন।]

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১০:০১
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×